skip to Main Content

কভারস্টোরি I সাসটেইনেবল লিভিং

স্মার্ট সিটির ধারণা নগরব্যবস্থায় বিশ্বব্যাপী এক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। একদিকে এটি পরিবেশ রক্ষা করবে, অন্যদিকে নাগরিক জীবনযাত্রা সহজ করে তুলবে। লিখেছেন জাহিদুল হক পাভেল

গত শতকে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর পৃথিবীজুড়ে যে প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে দ্রুত ঘটেছে, তা হলো নগরায়ণ। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০০৯ সালের পর থেকে প্রতি মাসে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। যার প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে উন্নত জীবনব্যবস্থা ও ভালো উপার্জনের সুযোগ। আপাতদৃষ্টিতে নগরায়ণ একটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ, নগরায়ণ মানেই শিল্পকারখানার বিস্তার। কিন্তু এই বিস্তারের পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। যেমন জনসংখ্যার ঘনত্ব, সম্পদের বণ্টন, আবর্জনা অপসারণ, পরিকাঠামোর ওপর চাপ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দূষণের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টকরণ ইত্যাদি। এই সব সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্ভাবিত ধারণাটি হচ্ছে সাসটেইনেবল সিটি ম্যানেজমেন্ট।
সাসটেইনেবল সিটি এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে মানুষ পরিবেশগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এর সুফল ভোগ করবে। অর্থাৎ এটি হলো দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী উন্নয়ন। সাসটেইনেবল সিটি ম্যানেজমেন্টের মূলে রয়েছে স্মার্ট সিটি। ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন স্থায়ী উন্নয়ন। স্মার্ট সিটির ধারণা সাসটেইনেবল সিটি ম্যানেজমেন্টকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। যেখানে জীবনব্যবস্থা আরও উন্নত, আধুনিক ও সহজ। স্মার্ট সিটি বলতে এমন এক নগরায়ণকে বোঝায়, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত করা হয়। যা প্রশাসনিক কর্মকা- ও সেবা ত্বরান্বিত করবে, আজকের আগামী প্রজন্মের পরিবেশগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা নিশ্চিত করবে।
স্মার্ট সিটি তৈরি করতে বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন জার্মানির বিজ্ঞানীরা। তারা অবশ্য এর নাম দিয়েছেন ফিউচার সিটি বা ভবিষ্যতের শহর। কেননা তারা মনে করেন, একটি আদর্শ স্মার্ট সিটি তৈরি করতে আরও প্রায় ৫০ বছর লেগে যাবে। দেশটির স্টুটগার্টের ফ্রাউয়েনহোফার ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতের মহানগরীগুলোকে আরও বসবাসের উপযোগী ও টেকসই করে গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা। শহরগুলো কীভাবে আরও শান্ত, পরিষ্কার ও পরিবেশবান্ধব করা যায়, সেদিকেই প্রথম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে এ রকম। ভবিষ্যতের বাড়িঘর ও দালানকোঠাগুলো নিজেদের প্রয়োজনীয় শক্তি নিজেরাই তৈরি করবে। নগরায়ণের ফলে যেহেতু জায়গার পরিমাণ কমে আসছে, তাই বাড়ির ছাদকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির ছাদও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেখানে বাগান তৈরি হতে পারে। হতে পারে চাষাবাদও। যা অনেক দূর থেকে নগরে খাবার পরিবহনের চাপ কমাতে সহায়ক হবে। ফ্রাউয়েনহোফার ইনস্টিটিউটের একজন মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বর্তমানে মিলিয়ন মিলিয়ন বর্গমিটার ছাদ শুধু শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি রাখার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এসব ছাদকে ফসলের মাঠ মনে করলেই চাষাবাদকে শহরে নিয়ে আসা যায়। সঙ্গে পশু পালনও সম্ভব। বর্তমানে অনেক দেশে নানা ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে, ছাদের ছোট্ট জায়গায় চাষাবাদ কিংবা পশুপালনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ কিংবা নগরের খাদ্য চাহিদার জোগান দিতে এই জায়গা ব্যবহার করা যেতে পারে কি না, তা-ও বিবেচনা করা হচ্ছে।
ফ্রাউয়েনহোফার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ভিলহেল্ম বাওয়ার কিছু সমস্যার কথা বলেছেন, সেগুলো ভবিষ্যতের নগরে একেবারেই থাকবে না। তাঁর বক্তব্য, ‘বর্তমানে রাস্তায় যানজট ও অন্যান্য সমস্যা, ব্যয়বহুল জ্বালানি, বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যাসহ অনেক জটিলতা বিশ্বের বিভিন্ন শহরে রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতের শহরে এসব থাকবে না। বরং গাড়ি বাতাস বিশুদ্ধ করবে। বিভিন্নভাবে জ্বালানি সাশ্রয় করা হবে। আমরা ভবিষ্যতের একটি মহানগরী তৈরির চেষ্টা করছি, যেখানে সব সময় উচ্চমানের জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আর এমন নগরের সুবিধা সবাই যাতে গ্রহণ করতে পারে, সেদিকটাও বিবেচনা করছি। বলা বাহুল্য, ভবিষ্যতের মহানগরী এখনো টেলিভিশনের পর্দায় সীমাবদ্ধ। তবে এসব ধারণা একদিন আমাদের মহানগরীগুলোকে আরও বসবাসযোগ্য ও টেকসই করে তুলবে, এমন আশা করাই যায়।
প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা সংস্থা আর্কেডিসের গবেষণা অনুযায়ী, শুধু স্মার্ট শহর তৈরি করলেই সাসটেইনেবল সিটি প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে না। তাদের মতে, এই ধারণা তিনটি মূল বিষয়ের ওপর নির্ভর করে— প্রকৃতি, ব্যবসা ও জনসংখ্যা।
প্রকৃতি
নগরায়ণের সরাসরি প্রভাব পড়ে প্রকৃতির ওপর। একটি নগরের খনিজসম্পদ, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের হার, মোট আয়তনে সবুজের পরিমাণ, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি, খাওয়ার পানি, পয়োনিষ্কাশন, বায়ুদূষণ ইত্যাদির ওপর গবেষণা করেই সাসটেইনেবল সিটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে ইউরোপের কয়েকটি শহরে গত এক দশকে গ্রহণ করা কিছু সাসটেইনেবল উদ্যোগ তুলে ধরা যায়। যেমন—
ইউরোপের সবুজ শহর : স্টকহোমকে বলা হয় বিশুদ্ধ বাতাসের শহর। সুইডেনের এই রাজধানী শহরে চলাচলরত যানবাহনের প্রায় ৭৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে। এ ছাড়া এই শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে রাস্তায় যানজট হলে, সেখানকার বাসিন্দাদের ‘যানজট কর’ দিতে হয়। এ জন্য অনেক মালিক নিজের গাড়ি ছেড়ে গণপরিবহন ব্যবহার করে। ফলে স্টকহোম হয়ে উঠেছে বিশুদ্ধ বাতাসের শহর।
কার্বন-নিরপেক্ষ শহর : ইতালির ‘সিয়েনা’ শহরকে ইতিমধ্যেই ইউরোপের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ শহর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কম। বায়োমাস ও জিওথার্মাল উৎস থেকে উৎপাদিত জ্বালানির ব্যবহার বেশি এবং বন রক্ষা করা হয় শতভাগ। এসব কারণে সবার আগে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে সিয়েনা।
হাইড্রোজেন বাস : ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকেভিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায় দেশটির সরকার। ২০৫০ সালের মধ্যে পুরো শহরকে জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত করা হবে। এ জন্য এখন থেকেই শহরটির গণপরিবহনে হাইড্রোজেন ব্যবহার শুরু হয়েছে।
নঁতে ট্রাম : ফ্রান্সের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর নঁতে। শহরটিতে বায়ুদূষণ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমাতে বিদ্যুচ্চালিত ট্রাম চালু করা হয়েছে। একটু ধীরগতির হলেও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শহরের বাসিন্দারা তা মেনে নিয়েছে। আর সেখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ ভবনে জিওথার্মাল উৎস থেকে উৎপাদিত জ্বালানির ব্যবহার হচ্ছে।
সবুজের সমাহার : পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়ুসেও দিন দিন যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও বাড়ছে না বায়ুদূষণ। সেখানকার বাতাস ইউরোপের অন্য অনেক শহরের চেয়ে ভালো। এর কারণ শহরকে ঘিরে রয়েছে বড় বন, বাগান আর পার্ক। সরকারিভাবেই যেগুলোর ব্যাপক পরিচর্যা করা হয়। এগুলো রক্ষায় রয়েছে কঠোর আইন।
আবর্জনা হয় উষ্ণতা: শীতপ্রধান দেশে ঘর গরম রাখতে প্রচুর কাঠের ব্যবহার করতে হয়। ইংল্যান্ডের ডিডকট শহরের বাসিন্দারা তাই খুঁজে নিয়েছে ভিন্ন উপায়। নিজেদের আবর্জনা দিয়ে গ্যাস উৎপাদন করে, সেটা দিয়ে ঘর গরম করে তারা।
বৃষ্টির পানি ধরে রাখা : সুপেয় পানির সংকট দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই জার্মানির বার্লিন শহরে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে পরে সেগুলো কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি এই পানি ভবনগুলোর টয়লেটে ও অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহার করা হয়।
জনসংখ্যা
একটি শহরের জনসংখ্যা কত হবে, তা নির্ধারণ করা না গেলেও এর বিদ্যমান পরিসংখ্যান থাকা জরুরি। সাসটেইনেবল সিটি ম্যানেজমেন্টে অবশ্যই একটি শহরের মানুষের সব ধরনের তথ্য থাকা আবশ্যক। কেননা এই পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে তৈরি হবে তাদের নাগরিক সুবিধা। এখানে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, আয়ের সমতা, একে অন্যের ওপর নির্ভরযোগ্যতার হার, অপরাধ, কাজ ও জীবনের ভারসাম্য, গৃহায়ণ খরচ— মোটকথা নাগরিকদের জীবনমান নির্ধারিত হবে।
জনবহুল শহরের প্রধান একটি সমস্যা যানজট। এখানে নাগরিকদের সময়ের যে অপচয় হয়, তা অর্ধেকে কমিয়ে আনা গেলে জীবনযাত্রা আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে, গতিশীল হবে। এখানে স্মার্ট সিটির ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হয় এমনিতেই। প্রথমে এটি বাস্তবায়ন করে যুক্তরাজ্যের শহরগুলো। যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিগত গবেষণায় হুয়াওয়ে বিশ্বব্যাপী অন্যতম প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি স্মার্ট সিটির সূচক তথ্য ও মূল্যায়ন শীর্ষক এক প্রতিবেদনে পৃথিবীজুড়ে স্মার্ট সিটির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরে। হুয়াওয়ে মূলত দুটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে। তা হলো পরিকল্পনা কৌশল ও বাস্তবায়ন। এদিক থেকে লন্ডনের পয়েন্ট ৮০.৫। অন্য ১৭টি শহরের শীর্ষে অবস্থান এই শহরের। একে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের জন্য যে প্রকল্পগুলো প্রথমেই শুরু করা হয়, তা হলো লন্ডন ডেটা স্টোর। এর মাধ্যমে জনসাধারণ শহরের সব তথ্য সম্পর্কে সব সময় জানতে পারে। অপর প্রকল্পটি হলো কার্বন নিঃসরণ কমানো। এ ক্ষেত্রে শহরটি কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এই লক্ষ্যমাত্রা হলো ১৯৯০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার ৬০ শতাংশ কমানো। লন্ডনের অন্য প্রকল্পগুলো হলো শহরে ট্রাফিক সেন্সর, পার্কিং সেন্সর ব্যবহার করে যাতায়াতের বিকল্প পথ তৈরির মাধ্যমে নাগরিকদের মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা। টেকসই পরিবেশগত লক্ষ্য অর্জন করা। অনেকটা এভাবেই লন্ডন শহরকে অনুসরণ করে বাকি শহরগুলোও স্মার্ট সিটির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হুয়াওয়ের তালিকায় ৮০.২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ব্রিস্টল শহর। ‘ব্রিস্টল স্মার্ট এনার্জি সিটি’ নামে একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে, যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমনকি কিছু কিছু শহর স্বয়ংক্রিয় যানবাহন নিয়েও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যেরই ৪টি শহর স্বয়ংক্রিয় যানবাহন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। মিল্টন কিন্স সেগুলোর একটি। এই শহর ২০১৫ সাল থেকে স্বয়ংক্রিয় যানবাহন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে এবং এটি নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে বিকল্প যাতায়াতব্যবস্থা তৈরির চেষ্টাও চালাচ্ছে। পাশাপাশি শহরটি আবর্জনা রাখার পাত্রে, পার্কিং এলাকায়, মাটির আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য সেন্সর ব্যবহার শুরু করেছে। আরও কিছু ছোট ছোট প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যাতে রাস্তায় যানবাহনের ঘনত্ব কমে, শহরে সবুজের পরিমাণ বাড়ে এবং মানুষজন বাইরে বের হতে উৎসাহী হয়।
যে সমস্যা অথবা সমস্যার পূর্বাভাস থেকে সাসটেইনেবল সিটি ম্যানেজমেন্ট ও স্মার্ট সিটির ধারণা এসেছে, তা দিয়েই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব। তবে এ জন্য বিশ্বের অন্যান্য শহরকেও এগিয়ে আসতে হবে।
ব্যবসা
শহরের সব রাস্তার মোড়ের চিত্র প্রায় একই রকম। কিছু চায়ের দোকান, মুঠোফোন, মুদি আর কিছু অন্য দোকানপাট। তবে কয়েক দশক পর আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এ চিত্রের কতটা পরিবর্তন করবে? প্রযুক্তিবিদদের মতে, ভবিষ্যতের শহরে ব্যবসার সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি থাকবে। বিবিসির প্রযুক্তিবিদেরা তৈরি করেছেন এমনই একটি মডেল। যেখানে বলা হয়েছে, অর্থনীতির চাকা না ঘুরলে কোনো ধরনের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এই চাকা ঘোরাতে প্রয়োজন ব্যবসা। এখানে অর্থনৈতিক উন্নতি, ব্যবসার সহজ সুযোগ, যাতায়াত অবকাঠামো, জিডিপি, পর্যটন, বৈশ্বিক ব্যবসা শহরের প্রশাসনিক গুরুত্ব, মোবাইল যোগাযোগ, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং ব্যবহারের সুযোগ, কাজের সুযোগ ইত্যাদির তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণা প্রধান একটি কাজ। ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রমও হবে ভিন্ন। যেমন—
ভাবনা জানার প্রযুক্তি : কোনো পণ্য বা নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ড দেখে একজন ক্রেতার চেহারায় যে পরিবর্তন হয়, তা থেকে তার ভাবনা জানা যাবে। এমন একটি সফটওয়্যার ইতিমধ্যেই ব্যবহৃত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়াগোতে।
স্মার্টফোনই মানিব্যাগ : পণ্যের দাম পরিশোধ হবে স্মার্টফোনের মাধ্যমে। ইতিমধ্যেই ফ্রান্সের অকহান, ডিআইওয়াইসহ অনেক চেইন সুপারমার্কেটে এ পদ্ধতিতে পণ্যের দাম পরিশোধ করা হয়।
অব্যাহত বিজ্ঞাপন ও তথ্য : বাজারের মধ্যে থাকা ক্রেতার স্মার্টফোনে কোনো পণ্যের বিশেষ ছাড়সহ এর বিশেষত্ব সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হবে। লন্ডনের রিজেন্ট স্ট্রিটের দোকানগুলো ইতিমধ্যে এ সেবা চালু করেছে।
স্মার্ট লেবেল : ভবিষ্যতে পণ্যের গায়ে থাকবে স্মার্ট লেবেল। এতে ব্যবহৃত শনাক্তকরণ যন্ত্র, প্রদর্শন পর্দা (ডিসপ্লে) ও যোগাযোগপ্রযুক্তিপণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে ক্রেতাকে বিস্তারিত জানাবে। নরওয়ের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান থিনফিল্ম ইতিমধ্যে এর ব্যবহার শুরু করেছে।
পণ্য পৌঁছে দেবে ড্রোন : অনলাইনে কেনাকাটা ভবিষ্যতে আরও জনপ্রিয় হবে। আর পণ্য পৌঁছে দিতে মানুষের বদলে ব্যবহৃত হবে ড্রোন। যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই ড্রোনে এক ঘণ্টার মধ্যে পণ্য পৌঁছানোর সেবা চালু করেছে উনউন নামক একটি প্রতিষ্ঠান।
ডিজিটাল পরিবর্তন ঘর : পোশাক মানানসই ও মাপমতো হবে কি না, তা বোঝার জন্য পরে দেখতে হবে না। ভবিষ্যতে ট্রায়াল রুমের বদলে থাকবে বড় আকৃতির ডিসপ্লে, যেখানে শরীরের মাপ অনুযায়ী পোশাক মানানসই ও মাপমতো হবে কি না, তা জানা যাবে। ম্যাজিক মিরর নামে এমন প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
ভার্চ্যুয়াল স্টোর : দোকান হতে হলে সারি সারি শেলফে পণ্যবোঝাই থাকবে— এমন ধারণার পরিবর্তন হবে। দেয়ালে লাগানো ডিসপ্লেই দোকান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেখানে পর্দায় প্রদর্শিত পণ্য কিনে নেওয়া যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ইতিমধ্যে এমন সেবা চালু হয়েছে।
পছন্দেই পণ্য তৈরি : ভবিষ্যতে থ্রিডি প্রিন্টার আরও ব্যাপকতা লাভ করবে। তখন দোকানেও এ প্রিন্টার দেখা যাবে, যেখানে ক্রেতা পছন্দমতো নকশা দিয়ে তৈরি করে নিতে পারবে পণ্য।
রোবট-সেবা : বাজার করতে গিয়ে প্রয়োজন হয় একজন সহকারীর, যে কেনা পণ্য বহন করে। ভবিষ্যতে সহকারী হবে রোবট। সিউলের অনেক শপিং সেন্টারে ইতিমধ্যে সহকারী রোবট দেখা যায়।
শহরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়ণের ফলে সামগ্রিকভাবে যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা মোকাবিলায় পৃথিবীর অনেক দেশ সাসটেইনেবল সিটি ম্যানেজমেন্টের ধারণা সাদরে গ্রহণ করেছে এবং করছে। মনে করা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ এমন টেকসই শহরব্যবস্থায় জীবনযাপন করবে।
এর ৩৫ শতাংশের অবস্থান ইউরোপে। পরের অবস্থানে আছে এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা। শহর বাড়ছে, বাড়ছে মানুষ। বাড়ছে পরিবেশগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোও। এসবের মোকাবিলায় টেকসই শহরব্যবস্থা ও স্মার্ট সিটির পরিকল্পনা এবং সেই অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়াই বাস্তবসম্মত।

মডেল: অভিনেত্রী সারিকা সাবরিন
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: এমব্রেলা
কৃতজ্ঞতা: বিটিআই ও মিনিমাল ফার্নিচার
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top