ফোকাস I চিনি কম
যেকোনো শুভ কাজ বা সুখবরে আনন্দের সঙ্গে মিষ্টিমুখ একটি প্রচলিত প্রথা। বেহিসেবি মিষ্টি খাওয়ায় আমরা অদম্য ও অনন্য। কেননা অনেকেই জানি না, আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের সবচেয়ে খারাপ উপাদানটি হলো চিনি। যেসব অসুস্থতার জন্য চিনি দায়ী, সেগুলোর তালিকাটাও বেশ বড়। যেমন ওবেসিটি, টাইপ টু ডায়াবেটিস, হৃদ্যন্ত্রের অসুস্থতা, দাঁতক্ষয় ইত্যাদি। চিনি প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত রাসায়নিকের কারণে হতে পারে ক্যানসারও। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ গ্রাম, পুরুষদের জন্য ৩৭ গ্রাম চিনি গ্রহণ করা যেতে পারে। কিছু বুদ্ধি খাটিয়ে রোজকার খাবারে চিনি গ্রহণের পরিমাণ কমানো যায়।
সম্প্রতি নানা গবেষণায় চিনিকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে ‘সাদা মৃত্যু’ হিসেবে। এই মৃত্যুকে গ্রহণ বা বর্জনের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে ভোক্তাকে। চিনির অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তাও দেখানো হয়েছে কিছু গবেষণায়। প্রক্রিয়াজাত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের চিনি শরীরের জন্য বেশি ক্ষতিকর। প্রথমেই উভয়কে না বলুন। বেছে নিন প্রাকৃতিক অথবা ক্যালরিমুক্ত চিনি। যেমন ফল-সবজিতে যে চিনি পাওয়া যায় তাকে স্বাস্থ্যকর মানা হয়। কারণ, এতে প্রাকৃতিক চিনির সঙ্গে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। খাদ্যতালিকায় যোগ করুন মিষ্টি ফল, মধু, সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট ইত্যাদি। আর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন এই তালিকার সুস্বাদু খাবারগুলো:
চিনিযুক্ত পানীয়
কোমল পানীয়, সোডা, এনার্জি ড্রিংক, ফলের কৃত্রিম রসে প্রচুর চিনি ব্যবহার করা হয়। পানীয়ের সঙ্গে এই চিনি গ্রহণ করলে দ্বিগুণ ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। কেননা চিনি তো শরীরে যাচ্ছেই, উল্টো পানীয়ে পেট ভরে না। ফলে পেট ভরাতে আরও ক্যালরি গ্রহণ করা হয়। বাড়তি এই ক্যালরি ওজন বাড়ায়। তৃষ্ণা মেটাতে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশপাশি ফলের জুসের সঙ্গে সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
ডেজার্টে না
যত সুস্বাদু হোক, ডেজার্টে পুষ্টিগুণ বলতে তেমন কিছু নেই। এই খাবারগুলোর মূল উপাদান হচ্ছে চিনি, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। সঙ্গে ক্লান্তি, ক্ষুধা এবং আরও বেশি ডেজার্ট খাওয়ার ইচ্ছা বাড়তে পারে। ডেজার্ট খাওয়ার খুব বেশি ইচ্ছা হলে তাজা ফল খাওয়া যায়। পুষ্টিতে পরিপূর্ণ, সুস্বাদু, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও আঁশসমৃদ্ধ ফল শরীরে ডেজার্টের উল্টো ভূমিকা রাখবে। খাওয়া যেতে পারে খেজুর। বেশ মিষ্টি বলে এটি ডেজার্ট খাওয়ার ইচ্ছা পূর্ণ করে দেয়। তবে ডেজার্ট যদি খেতেই হয়, তাহলে সেখানে চিনির পরিবর্তে সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট ব্যবহার করা উচিত। এতে ডেজার্টের মিষ্টি স্বাদে কোনো পরিবর্তন হয় না।
সসের সঙ্গে চিনি
কেচআপ, বারবিকিউ, চিলির মতো সসগুলো অনেকের রান্নার প্রধান উপাদান। খাবার সুস্বাদু করে তুলতে সসের বিকল্প নেই। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এক টেবিল চামচ সসে থাকে এক চা-চামচ চিনি। এ জন্য সুস্বাদু হলেও এই খাবার পরিহার করাই ভালো। সসের বদলে কাঁচা মরিচ, ভিনেগার, কাসুন্দি, মেয়নেজ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মেয়নেজে প্রচুর চর্বি থাকে, তাই সাবধান হওয়া ভালো।
পূর্ণ ননিযুক্ত খাবার
ওজন কমাতে চাইছেন এমন কেউ নিঃসন্দেহে পূর্ণ ননিযুক্ত খাবারের নামে চমকে উঠবেন। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো তথ্য এটাই যে কম ননিযুক্ত খাবারে বেশি চিনি আর ক্যালরি থাকে। যেহেতু শুধু ননি আর চর্বি নয়, চিনিও ওজন বাড়াতে পারে। যারা খাদ্যতালিকা থেকে চিনি ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন, তাদের জন্য ভালো হবে পূর্ণ ননিযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া।
আট সপ্তাহে নতুন অভ্যাস
গবেষণা বলে, যেকোনো অভ্যাস বন্ধ করতে ৬০ দিন লাগে। তাই চিনির সঙ্গে দৃঢ় যে বন্ধন তৈরি করা হয়, তা থেকে মুক্ত হতে ৬০ দিন সময় লাগবে। এরপর শরীর নিজেই বুঝে যাবে, তার ঠিক কতটুকু চিনির প্রয়োজন। দৈনন্দিন কতটুকু চিনি খাবেন, ঠিক করে নিন। সেটা চামচে করে কাঁচা চিনি হতে হবে এমন নয়। ডেজার্টে থাকা চিনিও রুটিনের চিনির মাঝে ধরুন।
সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট ব্যবহারে উপকারিতা
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে।
চা, কফি ও পায়েসের সঙ্গে সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট ব্যবহার করলে এর স্বাদ সাধারণ চিনির মতোই মনে হবে।
প্রেসারের ঝুঁকি কমাবে।
ডায়াবেটিক রোগীরাও সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট খেতে পারবেন।
সব বয়সী মানুষ সব খাবারের সঙ্গে সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট ব্যবহার করতে পারবেন।
যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, এই চিনি খেলে তাদের অবসাদ দূর হয়ে যাবে।
সব রকম খাবারে সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট ব্যবহার করা যাবে। যেমন: দই, মিষ্টি, পায়েশ, শরবতসহ মিষ্টি জাতীয় নানা খাবার।
বাজারে অনেক সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট পাওয়া যায়। দাম সাধারণ চিনির মতোই। তবে দেখেশুনে আসল সুক্রালোজ বেজড অ্যাসপার্টেইম মুক্ত সুগার সাবস্টিটিউট কিনতে হবে। এজন্য ভালো ব্র্যান্ড বেছে নেয়া জরুরি।
এই চিনি শুধু খেলেই ডায়েট সম্পন্ন হবে না। সঙ্গে ব্যায়ামও জরুরি। অনেকে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার সময় পান না। তারা বাসায় হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
শুধু অতিরিক্ত মোটা বা মেদবহুল মানুষ সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট খাবেন, এমন কোনো কথা নেই। যারা স্বাস্থ্যসচেতন, যারা আগামী দিনে সুস্থ থাকতে চান, সুন্দর স্বাভাবিক জীবন চান, তাদের এটি খাওয়া উচিত। এটি খেলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। ডাক্তাররাও ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষকে সাধারণ চিনি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেকেই চায়ে কম চিনি খান অর্থাৎ এক কাপে এক বা দেড় চামচ চিনি খান। কিন্তু কম চিনি খেলেও তাতে ক্যালরি ঠিকই থাকে। তাই যতটুকু সম্ভব সুক্রালোজ বেজড সুগার সাবস্টিটিউট খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অর্থাৎ ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হাইপ্রেসার ও কোলেস্টেরল কম হবে।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট