ফিচার I স্লিপ রিংকল
ঘুমের মধ্যেই বিপত্তি ঘটতে পারে ত্বকে। তাই এমন দাওয়াই দরকার, যাতে নিদ্রিত অবস্থায় কার্যকর থাকে সৌন্দর্যরক্ষার উপায় ও উপাদানগুলো
একদম ফুল নাইট বিউটি স্লিপ। সকালে ঝরঝরে শরীর, চনমনে মন। কিন্তু আয়নাতে মুখ দেখেই মেজাজ গরম! মুখভর্তি বালিশের ভাঁজের চিহ্ন। তা স্থায়ী হয় না ত্বকে, এটাই স্বস্তি। কিন্তু যদি নিয়মিত একই ঘটনা ঘটতে থাকে, তাহলে মুশকিল। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, ধীরে ধীরে ত্বকে স্থায়ী হতে শুরু করে এই ভাঁজ। পড়ে যায় বলিরেখা। সমস্যার নাম স্লিপ রিংকল। টার্মটা নতুন। কিন্তু এর উপস্থিতি বহু পুরোনো। অনেকের অজানাও নয়। মূলত ঘুমানোর সময় বালিশের ওপর চাপ দিয়ে শোবার ফলে ত্বকের কোলাজেন ভাঙতে শুরু করে। সৃষ্টি হয় বলিরেখা। তাই সাবধানতা প্রয়োজন শোবার সময়ও। স্লিপ রিংকল এড়াতে।
গোড়া যখন গলদ
বিছানায় উপুড় হয়ে ঘুমাবার অভ্যাস? অথবা পাশ ফিরে? সে ক্ষেত্রে কিন্তু স্লিপ রিংকেল হতে পারে। কারণ, এতে মুখত্বক বালিশের কিংবা হাতের সংস্পর্শে বেশি আসে। তখন ত্বকে চাপ পড়ে তৈরি হতে শুরু করে অনাকাঙ্ক্ষিত স্লিপ রিংকল। এ ক্ষেত্রে চিত হয়ে শোবার অভ্যাস চমৎকার অপশন। কিন্তু অভ্যাস না থাকলে তা করে নেওয়া ত্বকের জন্যই হিতকর হবে। আর কোনোভাবেই যদি চিত হয়ে শোবার অভ্যাস আয়ত্তে না আনা যায়, তাহলে ভিন্ন সমাধান। স্লিপ রিংকলের ক্ষেত্রে বালিশটাই বড় বিপদ। তাই সাবধানতা প্রয়োজন শুরুতেই। সে জন্য বালিশের কাভার কী কাপড়ে তৈরি, তার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এমন কাভার ব্যবহার করা যাবে না, যেগুলোয় শোবার পর ত্বকে বাড়তি চাপ পড়বে বা ত্বকে টান লাগবে। সে ক্ষেত্রে সুতি একদম বাদ। বরং বেছে নিতে হবে সিল্ক অথবা স্যাটিনের তৈরি কভার। এগুলো ত্বকের জন্য কোমল, যা বাড়তি চাপ ফেলে না। ফলে বলিরেখা, সূক্ষ্মরেখা আর বালিশের ভাঁজের চিহ্ন থেকে বেঁচে যায় ত্বক। অনেকের আবার আরেক অভ্যাস! হাতের ওপর মাথা রেখে ঘুমানো। তা-ও সমান ক্ষতিকর। ঘুমের এ দীর্ঘ সময়ে হাতের সঙ্গে মুখত্বকের ঘর্ষণে আর টানাটানিতে স্লিপ রিংকল পড়ে যেতেই পারে। তাই ঘুমানোর সময় যেকোনো ধরনের সারফেসের সংস্পর্শে যদি না আসে ত্বক, স্লিপ রিংকল এড়ানো যাবে সহজে।
প্রতিরোধ পরিকল্প
ঘুমানোর আগে একটু বাড়তি যত্নআত্তি স্লিপ রিংকল প্রতিরোধ করার জন্য দারুণ কার্যকর। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি নাইট মাস্কের ব্যবহার। এটি ঘুমের সময় ত্বককে তার নিজস্ব স্থানে ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে বালিশের চাপ কিংবা হাতের সংস্পর্শে কোনো কিছুতেই তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না ত্বক। এগুলো সাধারণত ভারী ফর্মুলায় তৈরি হয় এবং আলট্রা ময়শ্চারাইজিং বলে ত্বককে পুষ্ট দেখাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া যারা বালিশে মুখ গুঁজে ঘুমাতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য দরকার এক্সট্রা ফার্ম পিলো। বালিশে মাথা রাখার সময় একটু সাবধান হওয়াও জরুরি। অর্থাৎ এমনভাবে, যেন মুখের নিচের অংশটুকু বালিশের বাইরে থাকে। এতেও স্লিপ রিংকল অনেকটা এড়ানো যায়।
ট্রিটমেন্ট ট্রিকস
যাদের স্লিপ রিংকল পড়েই গেছে, ত্বকে তাদের জন্যও যত্ন জরুরি। কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে মাইক্রোনিডলিং থেকে লেজার ট্রিটমেন্ট কিংবা হাইএন্ড অ্যান্টি এজিং প্রডাক্ট— সবই ব্যবহার হতে পারে প্রয়োজন বুঝে। মাইক্রো-অ্যালগি, সুপারফ্রুট আর পেপটাইডের হাই কনসেনট্রেশনযুক্ত ওভারনাইট সিরাম রাতে ঘুমানোর সময় ত্বককে মেরামত করতে সাহায্য করে। এগুলোর নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের পরিপুষ্ট ভাব বাড়ায়। ফলে স্লিপ রিংকল সারে সহজে। বাড়তি প্রাপ্তি হিসেবে ত্বককে দূষণ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। স্লিপ রিংকল সারাতে রেনিটলও দারুণ কার্যকর। এতে থাকা হায়ালুরনিক অ্যাসিড ও গ্লুকোজ কমপ্লেক্স কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়, যা ত্বকের বলিরেখা সারাতে সহায়ক। তাই রেনিটলযুক্ত বিউটি প্রডাক্ট ব্যবহারের অভ্যাস করা গেলে ভালো উপকার মিলবে। ব্যবহার করা যেতে পারে কেমিক্যাল পিল। এটা ত্বকে রিসারফেসিং করে কমায় বলিরেখার দৃষ্টিগোচরতা। আর স্লিপ রিংকলের ওপর সরাসরি কার্যকর বলে এর ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরাও। তবে যারা প্রাকৃতিক উপায়ে স্লিপ রিংকল সারাতে চান, তাদের জন্যও থাকছে অপশন। নারকেল তেল এ ক্ষেত্রে কাজ করে জাদুর মতো। আর্দ্রতা জোগায়, সঙ্গে বলিরেখাও সারায়। রাতে ঘুমানোর আগে এটা ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভার্জিন কোকোনাট অয়েল বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া কোল্ড কমপ্রেসও স্লিপ রিংকল সারাতে সাহায্য করে। গ্রিন টি বা সাধারণ টি ব্যাগ ঠান্ডা করে নিয়ে যদি বলিরেখাযুক্ত জায়গায় চেপে ধরা যায়, তাহলে উপকার মিলবে। এতে থাকা ক্যাফেইন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে। করে তুলবে পুষ্ট ও বলিরেখামুক্ত। সকালে ঘুম থেকে উঠে বলিরেখাযুক্ত জায়গাগুলোতে যদি হালকা হাতে ম্যাসাজ করে নেওয়া যায়, তাতেও উপকার পাওয়া যাবে। রক্তসঞ্চালন বাড়বে, দূর হবে স্লিপ রিংকল। আর সানস্ক্রিন মাস্ট। প্রতিদিন এর নিয়মিত ব্যবহার রিংকল তো রুখবেই, সঙ্গে সারিয়ে তুলবে আগের দাগছোপও।
জাহেরা শিরীন
মডেল: এফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন