ফিচার I আলোকসম্ভব
পর্যাপ্ত আলোর অভাবে ভেস্তে যেতে পারে পারফেক্ট মেকআপ লুক তৈরির পরিকল্পনা। উপায়?
টুল থেকে টেকনিক— সবেতেই শয়ে শ। তারপরেও সাজ ফুটে উঠছে না চেহারায়। এর কারণ কিন্তু হতে পারে আলোর আড়াল। ‘ব্যাড লাইট ইজ টক্সিক’— এমন একটা কথা প্রচলিত আছে সৌন্দর্যবিশ্বে। এ থেকেই বোঝা যায়, সাজে আলোর গুরুত্ব অসীম। আলোর সামান্য হেরফেরে অনেক সময় পাল্টে যায় পুরো মেকআপ লুক। হয়তো ঘরের আলোয় মেকআপ এক রকম দেখাচ্ছিল, বাইরে গিয়ে দেখা গেল তাতে আকাশ-পাতাল ফারাক। হয়তো চোখেই পড়েনি, কিন্তু ফাউন্ডেশনটা বেশি হয়ে গেছে, ব্লেন্ড হয়নি পুরোপুরি। ব্লাশঅনটাও একটু বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মেকআপ করার আগে আলোর সেটআপটা যদি ঠিকঠাক করে নেওয়া যায়, দেখবেন মেকআপ একদম অনপয়েন্ট। আত্মবিশ্বাসী দেখাবে দিনের যেকোনো সময়।
প্রাকৃতিক আলোই প্রকৃষ্ট
জনপ্রিয় সব সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞের ওই একই মত। প্রাকৃতিক আলোর কার্যকারিতাকে পিছে ফেলে দেয় এমন আলো এখনো আবিষ্কৃত হয়নি পৃথিবীতে। মেকআপ করার জন্য তাই এটাই সেরা। দিনের ঝকঝকে আলোয় যদি সেরে নেওয়া যায় সাজের পুরোটা, একদম নিখুঁত দেখাবে। কারণ, এই আলোতে চেহারায় নির্ভুল প্রতিবিম্ব দেখা যায়। ফলে খুঁটিনাটি ত্রুটিগুলো নজরে আসে সহজে। মেকআপ দিয়ে সেগুলো ঢাকতেও সুবিধা হয়। তা ছাড়া মেকআপ যদি ঠিকমতো ত্বকে না মেশে, তা-ও চোখে পড়ে। ধরা পড়ে মেকআপের ভুলচুক। তাই একদম নিখুঁত মেকআপ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সবচেয়ে ভালো হয়, যদি ঘরের জানালার পাশ বা বারান্দা ব্যবহার করা যায়, যেখানে আলোর কোনো কমতি নেই।
বাধা নেই বাল্বেও
সূর্যালোক যখন সহায় নয়, তখন উপায় একটাই— বাল্ব! তবে সে ক্ষেত্রে যেনতেন বাল্ব চলবে না। মেকআপ করার জন্য ব্যবহারের আগে জানা চাই কোন ধরনের বাল্ব এ জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। জরিপ বলে, ডে লাইট বাল্ব এ ক্ষেত্রে থাকবে শীর্ষে। এগুলো হলদেটে আলো ফিল্টার করে দেয়। ফলে একদম পরিষ্কারভাবে রঙ ধরা দেয় চোখে। বাজারে ডে লাইট বাল্বের কিছু ডিমেবল ভার্সন আছে। যেগুলোর আলো দরকার বুঝে বাড়িয়ে, কমিয়ে নেওয়া যায়। ফলে কাস্টমাইজড আলোতে সেজে নেওয়া যায় স্বচ্ছন্দে। বিভিন্ন আলোকসজ্জায় মুখের মেকআপ কেমন দেখায়, তা-ও দেখে নেওয়া যাবে। ঘরের কোণে, বাথরুম বা মেকআপ মিররের চারপাশজুড়ে যদি বসিয়ে নেওয়া যায় এই উষ্ণ সাদা আলো— ব্যস, তৈরি হয়ে গেল মেকআপ করার পারফেক্ট সেটআপ।
এড়িয়ে যেতে হবে
মেকআপ করার সময় এড়িয়ে যাওয়া আলোর তালিকাটা বেশ বড়। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে কুল ফ্লুরোসেন্ট হোয়াইট লাইট। এত উজ্জ্বল যে, চোখ তো ধাঁধিয়ে যায়ই, সঙ্গে সবকিছু একটু বেশি ধরা পড়ে চোখে। ফলে খুঁত ঢাকতে ফাউন্ডেশন, ব্রোঞ্জার বা ব্লাশের প্রলেপ বেশি পড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে চেহারায়। ফলাফল, বাইরের প্রাকৃতিক আলোতে মুখ নয়, মুখোশই দেখাবে চেহারা। এড়াতে হবে হলদেটে আলোও। কারণ, এ ধরনের আলো চেহারায় ক্লান্ত, অসুস্থ ভাব ফুটিয়ে তোলে। যা ঢাকতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাউডার আর কনসিলার ব্যবহারের ঝুঁকি রয়ে যায়। গোলাপি আলোয় ত্বককে দেখায় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও নিখুঁত। কিন্তু সাবধান! পুরোটাই সেই আলোর কারসাজি। চোখের ভ্রম। ফলে গোলাপি আলোতে সাজারও রয়েছে সমস্যা। প্রয়োজনের তুলনায় কম মেকআপ ব্যবহার করেও এই আলোয় তাই দেখায় পিকচার পারফেক্ট। কিন্তু আলো থেকে সরলেই দেখা যায় মেকআপের অসংগতি।
সঠিক সেটআপ
মেকআপ করার জন্য শুধু বাল্বেই কাজ শেষ নয়। এর যথাযথ অবস্থান প্রয়োজন। নইলে বাধবে বিপত্তি। মেকআপ বিশেষজ্ঞদের মতে, আলো যেন সব পাশ দিয়ে চেহারায় পড়ে। অর্থাৎ উপর, নিচ, ডান আর বাম— সবদিক থেকে সমান আলো এলেই মেকআপ করা যাবে সঠিকভাবে। ফলে এমনভাবে লাইটের সেটআপ করা উচিত, যেন তা সরাসরি সামনে থেকে চেহারার ওপরে আলো ফেলে। মাথার উপর থেকে কিংবা চেহারার নিচের দিক থেকে ফেলা আলো বাজে ছায়া তৈরি করে চেহারায়। মুখ ঠিকমতো দেখা যায় না বলে মেকআপের পরিমাণ বেশি কিংবা কম হয়ে যায়।
আলোকসজ্জার আগে
মেকআপ করার জন্য লাইট কেনার আগে জেনে নেওয়া চাই তা কতটুকু কার্যকর। লুমেন দিয়ে মাপা হয় এ কার্যকারিতা। একটা লাইট কতটুকু আলো ছড়াবে, তার পরিমাপক হচ্ছে লুমেন। আগে ওয়াটে পরিমাপ করা হতো। সাধারণত ৫০০০ লুমেনে তৈরি লাইটগুলো দিনের মতো আলো ছড়ায়। এগুলোই বেশি উপযোগী সাজসজ্জায়। এ ছাড়া বিল্ট ইন লাইটিং যুক্ত মেকআপ মিরর এখন দারুণ জনপ্রিয় সৌন্দর্যসচেতনদের মধ্যে। নানা আকার ও আকৃতিতে মিলে যায় বলে বেছে নেওয়া যায় প্রয়োজন আর পছন্দ অনুসারে। মিলবে রিং লাইট মেকআপ মিররও। এখন শুধু বেছে নেওয়ার সময়।
জাহেরা শিরীন
মডেল: তুরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন