আলাপন I মোদের গরব মোদের আশা
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। আর তিনি চেয়েছেন শিক্ষক হয়ে মানুষকে বদলে দিতে। ফলে, শুরুটা শিক্ষকতায়। জীবন তাঁকে নানা বাঁকে ঘুরিয়ে নিয়ে চললেও একদিন তিনি ফিরে যাবেন শিক্ষকতায়। শেখ সাইফুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে অনেক বিষয়ের সঙ্গে এই আকাক্সক্ষার কথাই জানিয়েছেন ড. রুবানা হক
একাত্তর। তখন কতই-বা বয়স। বড়জোর পাঁচ। একরত্তি মেয়েটি আদমজী থেকে ঢাকায় চলে আসে বাবা-মায়ের সঙ্গে। এলিফ্যান্ট রোড আর পুরানা পল্টন। নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর কাঁধে চড়ে ঘোরা। কালোসাদা জামা পরে। বাচ্চু গাইতেন মোদের গরব মোদের আশা। মেয়েটিও গলা মেলায়। দেশ স্বাধীন হয়। শৈশব থেকে কৈশোর। বাঁক নেয় জীবন। ছোটবেলার গড়পড়তা ছাত্রী ক্লাস সেভেনে উঠে অধ্যবসায়ে ভালো ছাত্রী হয়ে ওঠে। আগের বছর অঙ্কে মাত্র ১৯ থেকে পরের বছর ৯১। গানে তার গলা ভারি মিষ্টি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে রীতিমতো তালিম। নতুন কুঁড়িতে পুরস্কার। স্কোয়াশ খেলা।
জীবন এগিয়ে যায়। এরই মাঝে ঠিকই মায়ের কাছ থেকে শেখা হয় বাঙালির চিরায়ত মূল্যবোধ। ম্যাট্রিক থেকে ইন্টারমিডিয়েট। ভিকারুননিসা থেকে হলি ক্রস। মাত্র ষোলো নিজের খরচ চালানোর জন্য টিউশনি। এই সময়ে বিটিভির অনুষ্ঠানে বুয়েটের সঙ্গে হলি ক্রসের বিতর্ক। আর তুমুল তর্কে মুগ্ধ উপস্থাপক। মেয়েটি ভ্রুক্ষেপহীন। বোর্ডে স্ট্যান্ড। ম্যাট্রিকে, ইন্টারমিডিয়েটে। এবার আরও বৃহত্তর জগৎ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ইংরেজি। লেখালেখি। শিক্ষকতা। মানুষকে বদলানোর মহৎ উদ্দেশ্য। এরই মাঝে মাকে পটিয়ে (তাঁরই কথায়) ঠিকই রাজকন্যের হৃদয়হরণ সেই তরুণের। রূপকথা হলে লেখা যেত এরপর তাহাদের ঘর আলো করিয়া জন্ম নেয় চার-চারটি ফুটফুটে সন্তান। অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল। সেখানে মুড়িয়ে যায় গল্পের নটে গাছটি।
কিন্তু পাঠক, এ তো রূপকথা নয়। তাই নটে গাছও মুড়োয় না এত তাড়াতাড়ি। বরং এ যে কেবল গল্পের মুখপাত।
আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, লক্ষ্যে স্থির, চড়াই আর উতরাই পেরোনো সেই মেয়েটিকে আজ কে না চেনে। স্বনামে। খ্যাতি তাঁর জগৎজোড়া। এক কুড়ি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। সম্পৃক্ত নানাভাবে, নানা ক্ষেত্রে। এর মধ্যে আবার ডক্টরেটও করেছেন। এই প্রসঙ্গ তুলতেই উচ্ছল হন। হাসতে হাসতে অবলীলায় বলেন, কোনো কিছু নিয়ে আমার ফুটানি নাই। কিন্তু এটা নিয়ে আমার দারুণ ভালো লাগা আছে। অনেক কষ্ট করে করেছি। তাঁর গবেষণার বিষয়টাও প্রশংসার দাবি রাখে। এ নিয়ে পরে আলোকপাত করা যাবে।
সেই মেয়েটির নানা পরিচয় এখন। পরিবারের মা শব্দটি ছাপিয়ে দাদি এবং নানি শব্দ দুটো চার দেয়ালের নানা দৃশ্যের মাঝে অনুরণিত হয়। তিনিই এবার ক্যানভাসের প্রচ্ছদব্যক্তিত্ব। ছবি তোলার সঙ্গে আলাপচারিতা। তাঁর দেওয়া সময়মতোই টিম ক্যানভাসের উপস্থিতি তাঁর ডেরায়; ঠিক আটটায়। এক ঘণ্টার বেশি পাওয়া যাবে না। নারায়ণগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে যেতে হবে। বাইরে অপেক্ষমাণ পুলিশের এসকর্ট ভ্যান। তাই চটজলদি ছবি তোলা হলেও কথা হয় না। অগত্যা সহযাত্রী হই। যাওয়া আর আসার পথে কথা হয়। জরুরি ফোন, নানা নির্দেশনায় ছেদ পড়ে আলাপন। খেই ধরিয়ে দিলে শুরু হয় পুনরায়। তবে জমে উঠতে সময় লাগে না।
অনেক পরিচয়ের সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে একটি। সঙ্গে পাহাড়সমান দায়িত্ব। বলতে গেলে ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তিনি এখন বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট। প্রথম নারী এবং ডক্টরেট প্রেসিডেন্টও। এরপর আর নাম বলে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
দেখতে দেখতে চার মাস পেরিয়েছে নতুন দায়িত্বে। এ প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, এটাকে আমি বলি চার মাসের চাপ। আর সে চাপ এতটাই যে আমি নিজের কিছুই করতে পারছি না। পড়তে পারছি না, লিখতে পারছি না। ঘুমাতে পর্যন্ত না। তবে অনেক কিছু তো বলা যায় না। এই সময়টা নিয়ে তাঁর চেয়ে বরং আমি একটা ডকুড্রামা করে দিতে পারব।
বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যে কতটা তৎপর, তা সহযাত্রী হয়ে টের পাওয়া গেল বিলক্ষণ। সদস্যদের সুবিধা-অসুবিধা, আইনি বিষয়-আশয় নিয়ে একের পর এক ফোন করলেন। সমব্যথী হলেন। ফোনে আবার অন্যায়ের প্রতিবাদও করলেন।
নিজের অনেক কিছুই হয়তো এই সময়ে ত্যাগ করেছেন, সামনে আরও করতে হবে। তবে শিল্প খাত যে একটা পরিকাঠামো পাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত। এরই মধ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা দারুণ ইতিবাচক।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছ থেকে সাপ্তাহিক প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার ওপর ভিত্তি করেই এই শিল্পের গতিপথ নির্ধারণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন। বলছিলেন, বর্তমানে বিশ্ব ম্যানমেইড ফাইবারের দিকেই ঝুঁকছে। অথচ বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টো পথে। অন্যদিকে রয়েছে ফ্যাশনকে টেকসই করে তোলার চ্যালেঞ্জ। এসব অনুধাবনে আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল খোলা হচ্ছে। এর একটি পার্ট হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি, আরেকটি লেবার আর অন্যটি এনভায়রনমেন্ট। পরিবেশের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে পলিউশন কন্ট্রোল, ক্লাইমেট অ্যাকশন বা রিসাইক্লিং আর ক্লাইমেট পজিটিভ। প্রথম দুটোর জন্য সবাইকে বোঝানো হচ্ছে। সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আর তৃতীয়টিকে বলছেন সার্কুলার ফ্যাশন।
—এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি বটে, কিন্তু অন্তরায় হলো বেসিক জায়গায় ফ্যাক্টরি করা। এ জন্য ক্লাইমেট পজিটিভ হওয়া দুরূহ।
এসব প্রতিবন্ধকতা মাথায় রেখেও তাঁর ইতিবাচক উচ্চারণ—যাত্রাটা তো অন্তত শুরু করতে হবে। পরিবেশ নিয়ে আমরা যথেষ্ট সোচ্চার থাকব।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাতের অগোছালো বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছেন। নতুন বাজার সৃষ্টি, বায়ারদের কম দামে পোশাক কেনার প্রবণতা রোধ থেকে দক্ষ জনশক্তি তৈরি—সবেতেই মনোযোগ দিতে হচ্ছে। দেশের এই শিল্প খাতে যে আয়, তা সিংহভাগই চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। সেটা যে জানেন না তা নয়; পরিস্থিতির বদলে তাই নিচ্ছেন নানা পরিকল্পনা। তবে তাঁর পা রয়েছে একেবারেই বাস্তবের মাটিতে। সেটা টের পাওয়া যায়, যখন জিজ্ঞেস করি: পঞ্চাশে পঞ্চাশ কি সম্ভব?
—ঝটিতি উত্তর, না।
—তবে অসম্ভব নয়, বরং পঞ্চাশে এক শও সম্ভব। আসলে এটা নয়, টার্গেট হওয়া উচিত ভ্যালু এডিশন। আর সেটা না করতে পারলে এই ইন্ডাস্ট্রিকে টেকসই মনে করার কারণ নেই। আসলে আমরা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কথা বলি না। এক্সপানশনে গেলেও ডিটেইলে কাজ করি না। মার্কেটগুলো ভালো করে বুঝি না। এসব কারণেই বিজিএমইএর রিচার্স সেল শক্তিশালী করা হচ্ছে।
আমাদের সফলতার গল্প বলায় দুর্বলতা কোথায়?
—আমাদের অ্যাম্বাস্যাডারশিপ, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডারশিপ খুবই দুর্বল। আমরা গল্পটা গুছিয়ে বলতে পারি না। পিআর স্ট্র্যাটেজিও আমাদের একদম নেই।
প্রতিবছর ঈদ এলেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না দেওয়ার খবর হয়। এর থেকে কি মুক্তি নেই? অবসান ঘটানো কি সম্ভব না?
—অবশ্যই। এটা আসলে আর ভালো লাগে না। তাই মিডিয়ায় প্রশ্ন ওঠার আগেই যেন সব দেওয়া হয়ে যায়, সেটা মনিটর করার চেষ্টা করব।
পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি তৈরির দিকে নজর দিচ্ছেন তিনি। কারণ, পড়াশোনা আর পেশাদারত্বকে সমসময়েই গুরুত্ব দেন।
তৈরি পোশাক খাত থেকে স্থানীয় ফ্যাশন বাজারে এসে অনেক ব্র্যান্ডই ভালো করছে। এ ক্ষেত্রে তাঁর কোনো ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার ইচ্ছে আছে কি না?
—আমাদের একটা আছে তো। তবে খুবই ছোট। আমার মেয়ে দেখে। নাম ভিজ। (সঙ্গে আরও যোগ করলেন) বাংলাদেশের ব্র্যান্ডগুলোকে পরিচিত করানোর জন্য গুগল আগ্রহী হয়েছে। এটা নিয়েও কাজ করছি। ইচ্ছে আছে লোকাল ডিজাইনারদের গ্লোবাল মার্কেটের উপযোগী ডিজাইন নিয়ে কাজ করার।
লোকাল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আরএমজির ব্যবধান ঘোচানোর চেষ্টা করা যায় কি না?
—হ্যাঁ, যায়। সেই প্রয়োজন আমি নিজেও অনুভব করি। ডিজাইনার, ডিজাইন, কাপড়—সব নিয়েই কাজ করতে হবে।
আবারও ফিরে আসি ব্যক্তিগত বিষয়ে। আলাপ করি পরিবারিক বন্ধন নিয়ে। বিষয়টি তিনি অতীব গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। মনে করেন অগ্রজদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা না থাকলে নিজেও সেই অবস্থানে গেলে সেটা পাওয়া যাবে না। কারণ, এটা একটা বাঁধন। পরিবারের বন্ধনকে বাঁচিয়ে না রাখলে অর্থের পেছনে ছুটে যে কৃত্রিম সমাজে আমরা বাস করছি, সেটাকে সুন্দর একটা সমাজ রূপান্তর করা যাবে না।
আবার ফেরেন পরিবারে। নিজের আর আনিসুল হকের সম্পর্ক এবং দুই পরিবারের কথা বলেন। এরই সূত্র ধরেই বলেন, সংসারে নানা জোড়াতালি থাকে। সেগুলো টিকিয়ে রাখতে হয়। ভেঙে ফেলা তো সহজ। কিন্তু জোড়া লাগানো কঠিন। আর এই জোড়া লাগানোর প্রসঙ্গে জাপানি আর্ট ফর্ম কিনসুগির উদাহরণ দেন। যেখানে ভাঙা পাত্রের টুকরা সোনা দিয়ে জোড়া লাগানো হয়। জীবনের জোড়ায় এই সোনাকে তিনি অভিজ্ঞতা আর বোধের সঙ্গে তুলনা করেন। বলেন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে অন্তরের সম্পর্ক, বন্ধনটা প্রয়োজন। বহু কিছু মনের ঔদার্য দিয়ে অতিক্রম করা যায়। আর সেই আনন্দ অপার।
জীবনকে এভাবেই দেখেন। আর চেষ্টা করেন নিজের মতো করে বাঁচতে। তাই নিয়ম করে দুটি গান শোনেন সকালে উঠে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। সকালে শোনেন রবীন্দ্রনাথের ‘আমি বহু বাসনায় প্রাণপণে চাই’। আর রাতে ‘নয় নয় এ মধুর খেলা’।
—জীবনের কতগুলো পাঞ্চ দরকার হয়। মাথাটাকে ফ্রেশ রাখতে। আমি আনিসকে দেখেছি। ননস্টপ কাজ করেছে। মেন্টাল ব্রেক নেয়নি। এ জন্য আমি মাঝে মাঝে আমার কাছে এক-দুজন বন্ধুকে ডাকি। তারা আসে। জীবনের মানে কী, তা নিয়ে আলোচনা করি। অর্থ খোঁজার চেষ্টা করি।
সংগত কারণেই প্রশ্ন করার লোভ সামলাতে পারি না। আপনার জীবনের অর্থ কী?
—আমার শুরুটাও জানি না। আমার শেষটাও বোধ হয় জানব না। আমার মনে হয়, বয়ে যাওয়াটাই জীবন।
অপূর্ণতাও যে আছে, কথার পিঠে সেটাও জানাতে ভোলেন না। ফোন-বিঘ্নতার দরুন খেই ধরিয়ে দিলে আবারও বলতে শুরু করেন দীর্ঘশ্বাস না লুকিয়ে।
—আনিসের সাথে বেড়ানো হয়নি, আড্ডা দেওয়া হয়নি। একসাথে বুড়ো হওয়া হলো না। বিছানার একটা দিক এখন দেবে যাচ্ছে। মানসিকভাবে মিস করি না। কারণ, আমরা স্বামী-স্ত্রীর চেয়েও ভালো বন্ধু। ভালো পার্টনার ছিলাম। বোঝাপড়াটা সাংঘাতিক ছিল। এখন এক দেহে দুই জীবনযাপনের অবস্থা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে চাপটা তো পড়েই।
কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে। আর্দ্র হয়ে আসে চোখ। মুছে নিয়ে আবারও যোগ করেন: বাচ্চারা তাঁর কোনো আক্ষেপ রাখছে না। সম্প্রতি বেড়িয়ে এসেছেন সবাই মিলে। তাঁকে চোখে হারিয়েছেন সবাই। তাদের উৎকণ্ঠা আর ভালোবাসায় তিনি আপ্লুত। তাঁরও প্রজন্মান্তর হচ্ছে। মা থেকে দাদি-নানির নতুন পরিচয়।
তবু সেই ধরা গলায় বললেন, এত তাড়াতাড়ি জীবনের বাঁক বদলে যাবে, বুঝিনি। আনিসের বাবা ১০০ বছর বেঁচেছিলেন। ভেবেছিলাম, ও ১১০ বছর বাঁচবে।
শোক এটাই তো প্রথম নয়, এর আগেও পেয়েছেন। ছয় বছরের সন্তান শারাফকে হারিয়ে। শোককে বরাবরই শক্তিতে পরিণত করে এগিয়েছেন তিনি। কীভাবে?
—(উচ্চারণ করলেন একটিমাত্র শব্দ) আম্মা।
—(একটু থেমে যোগ করলেন) আম্মা বলতেন, ঝড় যখন যাবে তখন না, শেষ হলে কাঁদবে। তবে ঝড় আসলে শেষ হয় না। সব সামলাতে গিয়ে এখন আর ক্লান্তও হই না।
—মানুষ যত হারায় ততই শেখে।
আনিসুল হকের প্রসঙ্গেই থাকি। জানতে চাই তাঁর অসমাপ্ত কাজের জন্য মেয়র হওয়ার কথা কখনো ভেবেছেন, কিংবা রাজনীতি করার?
—না (সাফ উত্তর)। কারণ, সবকিছুই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
গায়ক, খেলোয়াড় কিংবা অন্য কিছু নয়, শিক্ষক হতে চেয়েছেন। তবে বাল্যবন্ধু স্থপতি ইকবাল হাবিব এলে দুই বন্ধু মিলে গলা ছেড়ে গান করেন।
আর বলেন, কবিতা লিখি কষ্ট হলে। একটাই মাত্র বই বেরিয়েছে। টাইম অব মাই লাইফ। এটা আবার পুরস্কার পেয়েছে। তবে অনেক কবিতা জমেছে। আনিস চলে যাওয়ায় বেশ কিছু লেখা হয়েছে। এবার একটা বই করব।
বাইরে রোদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে। শরতের উজ্জ্বল নীলাকাশে উচ্ছল মেঘেদের ভেসে চলা। ভেতরে মন কেমন করা পরিবেশ। চলে যাই তাই প্রসঙ্গান্তরে। সেই পুরোনো বিষয়। তাঁর থিসিসের সাবজেক্ট: পি লাল এবং তাঁর প্রকাশনা সংস্থা হিজ রাইটার্স ওয়ার্কশপ। তাঁর গবেষণার ভাষায় ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’। কিন্তু কেন পি লাল (পুরুষোত্তম লাল)।
এখানে একটু বলে রাখা প্রয়োজন, পাঞ্জাবের এই আলোকিত মানুষ সারা জীবন কলকাতায় থেকেছেন। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়েছেন এবং পড়িয়েছেন। বিশে^র নানা বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়িয়েছেন। আর লেখকদের পাশে থেকেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত হয়েছে হাজার তিনেক বই। অথচ এই শিক্ষাব্রতী, লেখক-সুহৃদকে নিয়ে কোনো কাজ হয়নি।
সরাসরি শিষ্য না হয়ে যেন এ তাঁর গুরুদক্ষিণা। একলব্যের মতো। কলকাতার বিড়লা কলামন্দিরে এক বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়েই তাঁকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ জাগে। তারই ফল এই থিসিস। তবে পি লাল তাঁকে বলেছিলেন, মা, জীবনটা যে একটা কুরুক্ষেত্র।
ঝড়ঝঞ্ঝা, চড়াই-উতরাই, আনন্দ-বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতার না বাঁক পেরোনো জীবনে পি লাল-প্রতীতিতে তাই তিনি অনড়।
এতক্ষণ অনেক কথাই হয়েছে। কিন্তু জানা হয়নি স্বপ্নের কথা। আছে কি কোন?
এক দন্ড দেরি না করে জানিয়ে দেন, তিনি আবার ফিরে যাবেন শিক্ষকতায়। পড়াবেন। কারণ এর মধ্যে দিয়েই মানুষকে বদলে দেয়া সম্ভব। উত্তর প্রজন্মকে তিনি আলোকিত মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্নটাই দেখেন।
পরিবার, অগ্রজদের প্রতি শ্রদ্ধা মায় সত্যভাষণ সারা জীবনই প্রাধান্য পেয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে চান। এ জন্যই সমে এসে জুড়ে দেন: সত্য বলে বোকা হতে চাই।
sksaifurrahman@gmail.com
ছবি: ক্যানভাস ও ঢাকাইয়া