সম্পাদকীয়
বেশির ভাগ মানুষের জীবনে বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্ভবত নেই। এর অজস্র কারণের একটি হলো, এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে মানুষ নতুন এক প্রাত্যহিকতায় প্রবেশ করে। বদলে যায় জীবনধারা। যত ব্যক্তিক হোক না কেন, এর প্রভাব পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নানা মাত্রায় প্রসারিত। ফলে এতে প্রয়োজন হয় বিচিত্র আনুষ্ঠানিকতার। এসবের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি ও পরিবারের বাইরে বৃহত্তর পরিমন্ডলের মানুষদের সম্পৃক্তি ঘটে এবং দুই নর-নারীর যৌথ যাপন স্বীকৃতি লাভ করে। বিয়ে ঘিরে যা কিছু হয়- সবই একে রীতিমতো কার্নিভ্যালে পরিণত করে। এমন একটি উৎসবের প্রস্তুতি থাকবে না, তা কি হয়? কিন্তু কেমন করে? এর বিস্তারিত ও বিচিত্রমুখী জবাব পেতেই ক্যানভাসের এই ব্রাইডাল ইস্যু। বর্ধিত কলেবরে। প্রতিবছরের নভেম্বরে আমাদের আয়োজন। বিবাহ-ইচ্ছুক এবং যেসব পরিবারে বিয়ের প্রস্তুতি চলছে- সবার জন্য।
ক্যামেরা উদ্ভাবনের পর থেকে বহুকাল ধরে বিয়েতে ছবি তোলা একটা প্রথা। অনেকেরই এটা একধরনের অবসেশন। আগে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিল ছিল, ফলে অনুষ্ঠানস্থলে বরাদ্দ ওই ফিতায় সীমাবদ্ধ থাকত ছবির সংখ্যা। এ নিয়ে কত টেনশন! ছবি ঠিকমতো উঠল কি না, ডেভেলপের পর জ্বলে যাবে কিংবা ঝাপসা হবে কি না, কোন ধরনের অ্যালবামে রাখলে দাগ পড়বে না ইত্যাদি। এখনকার ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এসব নিয়ে ভাবতে হয় না। ভিডিও তো হয়ই, তা থেকে বিশেষ মুহূর্তগুলোর স্থিরচিত্র তৈরি করে নেওয়া যায়। এই আলাপের কারণ এবারের কভারস্টোরি ওয়েডিং ফটোগ্রাফি ট্রেন্ড। ভিডিওগ্রাফির প্রসঙ্গটিও রেখেছি।
বিয়ে-সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে আলো ফেলা হয়েছে বর্তমান সংখ্যায়, প্রতিবারই যা ক্যানভাস করে থাকে। তবে কিছু ব্যতিক্রমী অথচ জরুরি প্রসঙ্গও এবার বিবেচ্য হয়েছে। যেমন প্রি অ্যান্ড পোস্ট-ম্যারেজ কাউন্সেলিং। এ নিয়ে একটা বৈঠকির আয়োজন করেছি। বিবাহপ্রত্যাশী ও দম্পতিদের তা কাজে লাগবে, আশা করি। এ ছাড়া নিয়মিত ও বিশেষ রচনাগুলোয় চমকের কমতি নেই।
ক্যানভাসের ব্রাইডাল সিগনেচার এই সংখ্যার আড়ম্বর বাড়িয়ে দিয়েছে লক্ষণীয়ভাবে। এ নিয়ে পৃথক দুটি মলাটের মধ্যে আপনারা পাবেন পাঁচ তরুণী তারকার কনেসাজ। পাঁচ রকমের ব্রাইডাল মেকওভার। একে বলা যেতে পারে কনেসাজ-সংক্রান্ত প্রস্তাবের একটা প্যাকেজ, বিয়ের চলতি মৌসুমের জন্য। চেহারা, পোশাক আর আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে যেকোনো একটি মেকআপ বেছে নেওয়া যেতে পারে। বিয়ের মঞ্চে নতুন, ট্রেন্ডি ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার জন্য।
ক্যানভাসের এই মিলনান্ত আয়োজনের মধ্যেই দুটি বিয়োগান্ত ঘটনা ব্যথিত ও শোকার্ত করেছে আমাদের- কালিদাস কর্মকার ও হুমায়ুন সাধুর আকস্মিক প্রয়াণ। প্রথমজন উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিত্রকর; দ্বিতীয়জন জনপ্রিয় অভিনেতা, ফিকশন পরিচালক ও লেখক। উভয়েই বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তাঁদের কীর্তি ও অর্জনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
জীবন সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও সুখকর হোক।