ফিচার I মিলেই শুভারম্ভ
দুজনের ঐক্যেই সংসারে সুখের নিশ্চয়তা। তবে তা যদি বিয়ের মঞ্চ থেকে শুরু করা যায় সাজপোশাকের রঙে ও ফ্যাব্রিকে, গাঁটছড়াটা অতিথিদের নজর কাড়ে বৈকি! লিখেছেন ফাহমিদা শিকদার
বিয়ের সম্ভবত সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো বর-কনের সাজসজ্জা। এ সম্পর্কে অতিথিদেরও আগ্রহের কমতি নেই। বর-কনে চান এই দিনে তাদের সাজ হোক অনন্য ও আকর্ষণীয়। তাই বিয়ের সাজপোশাক কী হবে, তা নিয়ে চিন্তার শেষ থাকে না। আজকাল নিজেরাই বিয়ের শপিং সেরে ফেলেন। দৈনন্দিক পরিধেয়র মতো বিয়ের পোশাকও হওয়া চাই ট্রেন্ডি। কয়েক বছর ধরে ম্যাচিং আউটফিট ট্রেন্ডটি খুব চলছে। অর্থাৎ বর-কনের পোশাকে মিল। এই মিল অনেকভাবেই হচ্ছে। রঙে, পোশাকের কাপড়ে, আনুষঙ্গিকে আরও অনেক কিছুতেই সামঞ্জস্য বা মিল রেখে বিয়ের পোশাক বাছাই করা হচ্ছে। এতে উভয়কেই দারুণ লাগে। অনেকেই এমনটি চান, কিন্তু বুঝতে পারেন না কীভাবে মেলাবেন। সে ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলেই চলবে।
রঙ মিলান্তি
বর-কনের পোশাকে রঙের মিল করা খুবই সহজ। বিয়ের শাড়ির রঙের সঙ্গে পাঞ্জাবি বা শেরওয়ানির রিসেপশনের গাউনের রঙের সঙ্গে বরের স্যুটের রঙ মিলিয়ে নেওয়া যায়। যেমন কনে যদি বিয়েতে মেরুন বা লাল শাড়ি পরে, তাহলে বরের পাঞ্জাবি বা শেরওয়ানির রঙ হতে পারে একই। বরের ধূসর বা কালো স্যুটের সঙ্গে মিল রেখে কনে পরতে পারে কালো গাউন বা লেহেঙ্গা।
এই মিল কেবল যে পোশাকেই হতে হবে, তা নয়। একই রঙের পোশাক না পরেও, আনুষঙ্গিকের রঙের সঙ্গে সমন্বয় করে পোশাক পরা যায়। যেমন বরের পাগড়ির রঙের সঙ্গে মিল থাকতে পারে কনের শাড়ি বা লেহেঙ্গার। পাগড়ির সঙ্গে মিল হতে পারে কনের দোপাট্টার রঙের। উল্টোটাও হতে পারে। যেমন কনের দোপাট্টার রঙের সঙ্গে মিল করে বর পরতে পারে শেরওয়ানি বা স্যুটের সঙ্গে পরা শার্ট। আবার বরের বটমের (চুড়িদার বা সালোয়ার) রঙ আর কনের শাড়ি বা লেহেঙ্গার রঙ এক হতে পারে। অনেক বরই শেরওয়ানির সঙ্গে নেকলেস বা কিলাঙ্গি পরছে অ্যাকসেসরিজ হিসেবে। নেকলেস বা কিলাঙ্গির রঙের সঙ্গে কনের শাড়ি লেহেঙ্গার মিল থাকতে পারে। বরের পকেট স্কয়ার আর বউয়ের শাড়ি লেহেঙ্গা গাউন বা শারারার রঙও এক হতে পারে। কনের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে বরের কটি। আরেকভাবে রঙের মিল হতে পারে যেমন কনের পোশাকের এমব্রয়ডারি বা প্রিন্টের সঙ্গে বরের পোশাকের রঙের মিল হতে পারে। কিংবা বরের শেরওয়ানির প্রিন্ট বা এমব্রয়ডারির সঙ্গে কনের পোশাকের রঙ।
কাপড়ে-কাপড়ে মিল
অনেকভাবেই কাপড়ে মিল রাখা যায়। ধরুন, বউ পরল বেনারসি, বরের শেরওয়ানিও একই রঙসমেত এই কাপড়ের হতে পারে। বরের স্যুট ভেলভেটের হলে কনেরও হতে পারে তাই। যারা পুরো পোশাকে কাপড়ের মিল রাখতে চান না, তারা কেবল আনুষঙ্গিকের কাপড়ে মিল রাখতে পারেন। যেমন বউয়ের শাড়ি বা লেহেঙ্গার কাপড় আর বরের পাগড়ি, দোপাট্টা বা পকেট স্কয়ারের কাপড় এক হতে পারে।
প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারি
শেরওয়ানির প্রিন্ট কনের পোশাকেও সঞ্চারিত। লেহেঙ্গার ক্ষেত্রে বেশি। এমব্রয়ডারির বেলাতেও একই কথা খাটে। বরের শেরওয়ানি বা পাঞ্জাবির এমব্র্রয়ডারির সঙ্গে মিল থাকতে পারে কনের লেহেঙ্গা, দোপাট্টা, গাউন এমনকি ব্লাউজের এমব্রয়ডারির।
রঙের খেলা
বর-কনের আউটফিটে মিল রাখতে গিয়ে শুধু একটি রঙকে প্রাধান্য দিতে হবে, তা নয়। দুটি রঙের কন্ট্রাস্ট করেও কিন্তু পোশাকের রঙে সামঞ্জস্য আনা যায়। ঠিকমতো রঙ বাছাই করতে পারলে বর-কনের পুরো সাজটাই হয়ে উঠতে পারে নজরকাড়া। রঙ ঠিক করতে পারেন এভাবে- যেমন কনে যদি গাঢ় গোলাপি রঙ পরে, তাহলে বর পরতে পারে সাদা, ক্রিম, হালকা গোলাপি, উজ্জ্বল সবুজ, রয়্যাল ব্লু, পান্না সবুজ। কনে গাঢ় নীল পরলে বর পরতে পারে হালকা নীল, প্যাস্টেল গোলাপি, পিচ কালার। একই রঙের দুটি শেডও বাছাই করতে পারেন। যেমন হালকা সবুজ-পান্না সবুজ, হালকা নীল-গাঢ় নীল, গাঢ় হলুদ-হালকা হলুদ ইত্যাদি। এ রকম রঙের খেলায় প্যাস্টেল শেডগুলোই জুতসই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, এতে অনেক অপশন আছে।
বর-কনে যদি আউটফিটে ব্যতিক্রমী হতে চান, তাহলে আত্মপ্রত্যয়ী হতে হবে। রঙ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক বিবেচনা গ্রাহ্য নয়। ডিজাইনের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। তাই কনের পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে পোশাক নিশ্চিন্তেই পরা যেতে পারে। রঙ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক অপ্রচলিত কালার চলে আসে। বিশেষ দিনটি স্মরণীয় করে তুলতে খানিকটা রীতিবিরুদ্ধ হলে ক্ষতি কী। বরং বিয়ে নামক প্রথাগত অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রমী লুকে অতিথিদের তাক লাগিয়ে দেওয়া যাবে অনায়াসেই।
মডেল: মাসুমা রহমান নাবিলা
ওয়্যারড্রোব: শামীমা নবী
জুয়েলারি: নাবিলা
ফ্লোরাল জুয়েলারি: ফ্লাওয়ার ব্লুমস্
মডেল: জোবইদুল হক রিম
ওয়্যারড্রোব: নাবিলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন