ফিচার I গয়নার ঝাঁপি
ভারী গয়নার ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে কনেরা এখন প্রবেশ করেছেন হালকা গয়নার ট্রেন্ডে। আড়ম্বরের থেকেও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে স্টাইল ও স্মার্টনেস। তবে অনুষ্ঠানের সময় আর ধরন পোশাক ও মেকআপের সঙ্গে মিলিয়ে
বেনারসি আর ভারী গয়না- একসময় কনের বেশভূষা এমনই ছিল। দিন পাল্টেছে। এখন কনে মানেই গা ভর্তি অলংকার নয়, তা যে সোনাতেই তৈরি হবে এমন কোনো কথা নেই। এখনকার বেশির ভাগ কনে ভরি ভরি গয়না না পরে হালকা কিছু গয়নায় বিয়েটা সেরে ফেলছেন। করছেন এক্সপেরিমেন্টও। অনেকেরই সাবেকিয়ানায় ঝোঁক। পছন্দের তালিকায় তারা রাখেন ঐতিহ্যবাহী গয়না। তাদের কেউ কেউ মা-নানি-দাদির গয়না পরেন। যে কালেরই হোক না কেন, মানানসই অলংকার কনের সাজকে অসামান্য করে তোলে। কয়েক দশক আগে দেখা যেত, মেয়ে যখন ছোট তখন থেকেই মা-বাবা বিয়ের গয়না বানিয়ে রাখতেন। উচ্চমূল্যের কারণে তা এখন আর সম্ভব হয় না।
বিয়েতে আজকাল সোনার চেয়ে রুপার গয়না বেশি জনপ্রিয়। পাশাপাশি গোল্ড প্লেটেড তো আছেই। এ ছাড়া সোনা বা রুপার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ইমিটেশনের অলংকার। আছে হীরা, মুক্তা, হোয়াইট গোল্ড।
বিয়ের একেক অনুষ্ঠানে পরা হয় একেক রকম গয়না। যেমন পানচিনি কিংবা আংটিবদলের অলংকার হালকা। বিয়েতে বা আক্দে একটু ভারী গয়না। রিসেপশন বা বউভাতে ছিমছাম, না ভারী অথবা না হালকা গয়না পরা যেতে পারে।
গলা, হাত, কান, পা, মাথা- গয়নার সাজে বাদ যায় না কোনোটি। গলার অলংকারকে হার বা নেকলেস বলা হয়। কাট ও ডিজাইনভেদে এর রয়েছে অনেক নাম। এগুলো হলো চন্দ্রহার, চারনবি, অর্ধহার, একাবলি, ইন্দ্রচ্ছদ, কণ্ঠী, গোটহার, গুঞ্জার, চেইন, পাটিহার, পাঁচনরি, প্রাণশ্চ, প্রালম্বক, সীতাহার, মাদুলি ইত্যাদি। এসবের মধ্যে চোকার, চন্দ্রহার ও সীতাহারের চাহিদা বেশি। চোকার অনেক রকমের হয়। ছোট চাপা চোকার আর বড় ছড়ানো চোকারই বেশি দেখা যায়। চন্দ্রহার গলার লম্বা হার, যা একটি বা দুটি স্ট্রিংয়ের হয়ে থাকে। ভারী গয়না যাদের কম পছন্দ, তারা গলায় কেবল একটি সুন্দর ছড়ানো এবং লম্বা চন্দ্রহার পরতে পারেন। তবে এটি চোকারের সঙ্গে বেশি মানানসই। এই দুটির সহাবস্থান আজও অমলিন। ট্র্যাডিশনাল সাজে আগ্রহীরা মধ্যম আকারের চোকারের সঙ্গে লম্বা চন্দ্রহার পরতে পারেন। যারা হালকা সাজে অভ্যস্ত, অনাড়ম্বর ডিজাইনের চোকারের সঙ্গে মাঝারি সাইজের চন্দ্রহার তাদের ভালো দেখাবে। পরা যায় সীতাহারও। এই হার গলার যেকোনো অলংকারের চেয়ে মানানসই।
কানে হালকা গয়না ভালো দেখায় না। লম্বা ভারী ঝুমকা অথবা চান্দবালি কাটের অনেক ধরনের দুল আছে, সেগুলোর যেকোনোটি কনেমাত্রেরই উপযোগী। এ ছাড়া বেছে নেওয়া যায় ঝোলানো শ্যান্ডেলিয়ার বা পোলকি এবং ওয়াটারফল ডিজাইনের কানের দুল।
নাকের গয়না মানেই গোল বড় চেইন সংযুক্ত নথ। সঙ্গে ছোট নথ। নাকের গড়ন অনুযায়ী অলংকারটি বেছে নিতে হয়।
কাঁকন, চুড়ি, চূড়, বালা, মানতাসা, শাঁখা, টাড়- সবই হাতের গয়না। এ ছাড়া পরা যায় বাজুবন্ধ, হাতফুল। আংটি মাস্ট। চুড়ির সঙ্গে বালা বা কাঁকন পরেন অনেকে। কারও কারও কঙ্কণে ঝুলতে থাকে ঝুনঝুনি বা ঝুমকা। যাদের হাতভর্তি চুড়ি পছন্দ নয়, তারা মানতাসা পরতে পারেন। হাতফুল বা রতনচূড় গয়না হিসেবে আকর্ষণীয়। চুড়ির সঙ্গে আংটির সংযোগ থাকতে পারে নকশার চেইনে। এক বা একাধিক। হাতফুলের বিকল্প হতে পারে বড় আংটি। সম্প্রতি নানা ডিজাইনের বড় আংটি পরার চল বেড়েছে। বাহুতে পরা যায় বাজুবন্ধ। তবে মাঝারি হাতে বাজুবন্ধই বেশি মানানসই।
এখন কনেরা মাথায় বিভিন্ন গয়না পরেন- সিঁথিমোর, শেখর, কিরীট, টোপর, তাজ, টায়রা, টিকলি, মুকুট, কলগা, শিরোমণি ইত্যাদি। গত কয়েক বছর ছোট টিকলি চললেও ইদানীং তা বড় নকশায় দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া পরতে পারেন টায়রা- এক লহরি থেকে পাঁচ লহরির। যারা ব্যতিক্রমী সাজ চান, তারা টিকলি টায়রার বদলে সিঁথির এক পাশে ঝাঁপটা বসিয়ে দিতে পারেন। খোঁপার কাঁটাও কিন্তু একধরনের গয়না। বেণিরও আছে। আজকাল লম্বা বেণি করে তাতেই গয়না পরা হচ্ছে।
এত কিছুর পর কোমরই-বা বাদ যাবে কেন! আমাদের দেশে কোমরের বিছা জনপ্রিয়। অনেক কনেই এক বা তিন-চার লহরের বিছা পরেন। এখন আরেক ধরনের অলংকার দেখা যাচ্ছে, যাকে বলা হয় ছাল্লা। বড় টিকলির মতো দেখতে। কোমরে ঝোলানো হয়। যেকোনো শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে যায়।
সব কনেই নিজেকে মনের মতো সাজাতে চান। তাই সাজপোশাকের পাশাপাশি গয়না বাছাইয়ে বিশেষ দৃষ্টি দরকার। পারিবারিক গয়না থাকলে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে শাড়ি বা লেহেঙ্গা বাছাই করতে হবে। সেগুলো পলিশ করাও জরুরি। বিবর্ণ হওয়া পারিবারিক গয়নায় কপার, ব্রাস বা মিক্সড মেটালের গোল্ড, সিলভার অথবা অক্সিডাইজ করা যেতে পারে। প্যাস্টেল শেডের শাড়ির সঙ্গে মুক্তা বা হীরার গয়না মানানসই। এতে সাজে স্নিগ্ধভাব আসবে। পোশাকের রঙে মিল রেখে অলংকারে পাথর, বিডস থাকতে পারে।
মডেল: আন্নি ও মৌসুম
জুয়েলারি: আমিন জুয়েলার্স
মেকওভার: পারসোনা
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: রুবাবা দৌলা
ছবি: সৈয়দ অয়ন