ফিচার I সাজ সাজ বর
ট্রেন্ডি আউটফিট ও অ্যাকসেসরিজ চাই বরের জন্য। তবে খেয়াল রাখতে হবে কনের সাজপোশাকের সঙ্গে মানানসই কি না
একসময় বিয়েতে সব স্পটলাইট ছিল শুধু কনের জন্য। সেই দিন আর নেই। এখন বরের সাজেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিয়ের একেকটি অনুষ্ঠানে বদলে যায় তার সাজপোশাক।
পাঞ্জাবি
বরের পাঞ্জাবিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। নানা রঙের পাঞ্জাবি পরা হচ্ছে পানচিনি, গায়েহলুদ ও আকদে।
পানচিনি, আংটি বদল এবং আকদে হালকা বা ভারী ডিজাইনের পাঞ্জাবি পরা যেতে পারে। এইদিনের পাঞ্জাবির রঙ হতে পারে অফ হোয়াইট, নেভি ব্লু, রয়েল ব্লু, গাঢ় মেরুন, লাল, গোলাপি, মিক্সড অথবা কালো। রোমান্টিক সাজের জন্য পরা যেতে পারে প্যাস্টেল শেড বা ফ্লোরাল প্রিন্টের পাঞ্জাবি।
গায়েহলুদ মানেই সবকিছু হলুদ নয়। কয়েক বছর আগেও ছেলেরা হলুদ নয়তো গেড়ুয়া বা হলদে শেডের পাঞ্জাবি পরত। এখন এ অনুষ্ঠানের পাঞ্জাবিতে লালচে, কমলা, সবুজ, নীল, কচি কলাপাতা, জলপাই রঙ, সোনালি রঙের প্রাধান্য বেশি।
বিয়ের উৎসবের জন্য সেমি লং পাঞ্জাবির চল কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে শেরওয়ানি কাটে একই পোশাক। রুচি অনুযায়ী হালকা বা ভারী কারুকাজের পাঞ্জাবি বর বেছে নিতে পারেন। কাপড়ের ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানভেদে পরিবর্তন হতে পারে। যেমন দিনের বেলার গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের জন্য সুতি পাঞ্জাবি বেছে নেওয়া যায়। অনুষ্ঠানটি সন্ধ্যায় হলে সিল্কের বা মসলিনের পাঞ্জাবিতে ভালো মানাবে। এন্ডি সিল্ক, এন্ডি কটন, জয়শ্রী মসলিন, জয়শ্রী সিল্ক, সিল্ক- যেকোনো ফ্যাব্রিকের পাঞ্জাবি বিয়ের উৎসবের জন্য মানানসই। বটম হিসেবে সরু কাটের কিংবা চুড়িদার পায়জামা সব প্যাটার্নের পাঞ্জাবির সঙ্গে মানিয়ে যায়। অফবিট বটম হিসেবে সালোয়ার, ধুতি বা পালাজো কাট পায়জামাও মন্দ নয়।
বিয়ের উৎসবে কয়েক বছর ধরে পাঞ্জাবির সঙ্গে কটি পরার চল খুব দেখা যাচ্ছে। হালকা রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে গাঢ় রঙের কটি এবং গাঢ় রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে হালকা রঙের কটিই সবচেয়ে ভালো মানায়। যেমন সাদা রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে লাল, মেরুন, নীল কিংবা নেভি ব্লু, হলুদ পাঞ্জাবির সঙ্গে নীল, সবুজ, ম্যাজেন্টা, নীল পাঞ্জাবির সঙ্গে লাল কটি ইত্যাদি আরও নানাভাবে কন্ট্রাস্ট করে পরা যেতে পারে। এ ছাড়া বেছে নিতে পারেন প্রিন্ট বা এমব্রয়ডারি। খাটো কটি যেমন আছে, তেমনি লম্বাও।
শেরওয়ানি
ভারতীয় উপমহাদেশে সমকালীন বরের প্রধান পোশাক হচ্ছে শেরওয়ানি। পাশাপাশি আচকান। অনেকে পোশাকটিকে শেরওয়ানি বলে ভুল করে থাকেন। আচকান দৈর্ঘ্য-প্রস্থে শেরওয়ানি থেকে ছোট হয় এবং এর কোনো পকেট থাকে না।
বাজারে মোগল ঘরানার পাশাপাশি ট্রেন্ডি নকশার শেরওয়ানি পাওয়া যাচ্ছে। রঙের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে লাল, অফ হোয়াইট, বেগুনি, রয়েল ব্লু, নেভি ব্লু। তবে কালোর কদর কম নয়। এ ছাড়া ধূসর, সাদা, প্যাস্টেল শেডের শেরওয়ানিরও চাহিদা বেশ। হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, নকশিকাঁথার ফোঁড়, জারদৌসির পাশাপাশি সেলফ ওয়ার্কের (যে রঙের কাপড় সেই রঙের নকশা বা প্রিন্ট) শেরওয়ানি আছে পছন্দের তালিকার শীর্ষে। ভেলভেট, ব্রোকেড, সিল্ক এমনকি বেনারসি কাপড়ের ব্যবহার করা হচ্ছে এই পোশাকে। অনেকে টেইলরিং শেরওয়ানি বানাচ্ছেন স্যুটের কাপড় দিয়ে। ফরমাশ দিয়ে বানালে এই এক মজা! ফ্যাব্রিক, কাট নকশায় করা যায় অনেক এক্সপেরিমেন্ট। পাঞ্জাবির ওপর লেয়ারিং করেও শেরওয়ানি পরা যায়। এতে কন্ট্রাস্ট না করলেও চলে। অর্থাৎ যে রঙের পাঞ্জাবি, সেই রঙের শেরওয়ানি পরা যেতে পারে।
শেরওয়ানি বাছাইয়ে কিছু দিক খেয়াল রাখতে হয়। বর কোন লুক চান- গর্জাস নাকি সিম্পল? শাড়ি বা লেহেঙ্গার সঙ্গে তার পোশাক কি ম্যাচিং হতে হবে? ইত্যাদি। তবে বিশেষভাবে সতর্ক হওয়া দরকার, রঙ আর কাপড় বাছাইয়ে। কারণ, ম্যাচ করে যে শেরওয়ানি কেনা হলো, তাতে বরকে ভালো না-ও লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে কন্ট্রাস্ট করলে সবচেয়ে ভালো হয়। বিশেষ নজর রাখতে হয় আনুষঙ্গিকের দিকে। কারণ, একটি ছোট অনুষঙ্গও সাধারণ লুককে বিশেষ করে তুলতে পারে।
স্যুট
নব্বইয়ের দশক থেকে বিয়ের উৎসবে স্যুটের কদর বাড়তে থাকে। বিশেষত রিসেপশনে। আগে কেবল কালো, ধূসর, নীল রঙের স্যুটের চাহিদা বেশি থাকলেও এখন অনেকে গাঢ় মেরুন, খাকি, বারগেন্ডি, বাদামি, স্যুট পরে থাকেন। সিঙ্গেল বা ডাবল ব্রেস্টেড স্যুট যেমন পরা যায়, তেমনি বিশেষ দিনটির জন্য বেছে নেওয়া যায় একটি টাক্সেডও। ব্যতিক্রমী লুকের জন্য কোটের পরিবর্তে কেবল কটিও পরা যায়। গাঢ় রঙের স্যুটের সঙ্গে অবশ্যই ক্ল্যাসিক সাদা শার্ট পরা ভালো। এটি পরতে না চাইলে যেকোনো রঙের হালকা শেডের শার্ট পরা যায়। সঙ্গে বো টাই। কারণ, সরু চিকন টাই তো অফিসেও পরা যায়! প্রিন্স স্যুটও বিয়েতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একে যোধপুরি স্যুটও বলা হয়ে থাকে। কালো, রয়েল ব্লু, নেভি ব্লু ইত্যাদি এক রঙের প্রিন্স স্যুট যেমন আছে, তেমনি রয়েছে ব্রোকেড বা প্রিন্টেড কাপড়েরও।
ফাহমিদা শিকদার
মডেল: হাসিন, রাজ ও রাব্বী
ওয়্যারড্রোব: জুরহেম
মেকওভার: পারসোনা মেনজ্
ছবি: সৈয়দ অয়ন