কুন্তলকাহন I যথা যত্ন
নিষ্প্রাণ ও অবিন্যস্ত চুল সাজের উপযুক্ত করে তুলতে হয়। সে অনুশীলন জরুরি বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত। হেয়ার কাট, কালার, ট্রিটমেন্ট- সবই এর অন্তর্ভুক্ত
কনে হয়ে ওঠার দিনটির জন্য চুল যাতে ঠিকঠাক তৈরি থাকে, সে প্রস্তুতি আগে থেকেই নিতে হয়। যেকোনো ধরনের স্টাইল যেন করে নেওয়া যায়। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল ছেড়ে রাখলেও ভালো দেখায়। তাই জেনে নেওয়া চাই শাইনি, হেলদি পিকচার-পারফেক্ট চুল পেতে কী করা প্রয়োজন।
হাতে যদি যথেষ্ট সময় থাকে, তবে তিন থেকে ছয় মাস আগে তৈরি হওয়া শুরু করতে হবে। চুল ভালো দেখাতে হলে আগে একে ভেতর থেকে মেরামত করা চাই। ভিটামিনের ঘাটতির কারণে তা নিস্তেজ ও ভঙ্গুর হতে পারে। এমন চুল বিয়ের দিনগুলোতে কেউই চায় না। কয়েকটি সাপ্লিমেন্ট বা পরিপূরক খাবার গ্রহণে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। চর্বিযুক্ত প্রোটিন, সবুজ শাকসবজিসহ সুষম খাদ্য দেয় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের নিশ্চয়তা। প্রতিদিনের খাবারে থাকতে পারে তাজা ফল, বাদাম ও শস্যজাতীয় খাবার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার মলিন চুলকে উজ্জ্বল করে তোলে। কারণ, চুল নিস্তেজ হয় ভিটামিন বি এর ঘাটতি থেকে। অ্যাভোকাডো, বাদাম, স্পিরুলিনা, ডিম ও কুইনোয়ায় ভিটামিন বি রয়েছে। এগুলো চুল ঘন রাখতে, বৃদ্ধিতে ও ভঙ্গুরতা রোধে সহায়তা করে। জিঙ্কও চুলের জন্য ভালো। মুরগি, বাদাম, দইয়ের মতো খাবারে প্রচুর জিঙ্ক রয়েছে। চাইলে মাল্টিভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্টও নেওয়া যেতে পারে।
বিয়ের তিন মাস আগে হেয়ার ট্রায়াল নেওয়া ভালো। স্যালন এক্সপার্টরাও এমন পরামর্শই দেন। খোঁজ নিতে হবে ট্রেন্ডি, আকর্ষণীয় ব্রাইডাল হেয়ারস্টাইলের। অথবা পছন্দের কোনো প্রফেশনালের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এতে কাক্সিক্ষত স্টাইল, কালার ও লেন্থ পাওয়া সহজ হবে। মাথায় পরার যেকোনো উপকরণ বা অলংকরণ আগে থেকে পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। চুল বাড়াতে চাইলে তা কাটতে হবে। ঘাবড়ে গেলেন? চুলের প্রান্তভাগের কথা বলা হচ্ছে। নিয়ম করে চুলের ডগা ট্রিম করে নিতে হবে। চুল ভেঙে যাওয়া ও ডগা ফাটা যত কমবে, বিয়ের দিনটি ঘনিয়ে আসতে আসতে চুল কাটাও কমাতে হবে। নতুন হেয়ার কালার পরীক্ষা করে দেখতে চাইলে এখনই উপযুক্ত সময়। রঙ যদি পছন্দ না হয়, সে ক্ষেত্রে এটি পাল্টানোর বা চুল বাড়তে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় তো থাকছেই। ভালো হয় হেয়ারড্রেসারকে ছয় থেকে আট সপ্তাহ হাতে রেখে ট্রিম ও কালারের জন্য বুক করে নিলে। তবে ফাইনাল কালারটি দিতে হবে বিয়ের দুই সপ্তাহ আগে। এতে চুল ফ্রেশ আর ভাইব্রেন্ট দেখাবে। এ সময় একটি ভালো শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করাও গুরুত্বপূর্ণ। কড়া রাসায়নিকযুক্ত শ্যাম্পু যা চুলকে শুষ্ক ও নিস্তেজ করে তোলে, সেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত সব সময়। ব্যবহার করতে হবে ডিটক্সিফায়িং শ্যাম্পু, যা চুলকে আরও সতেজ ও পরিষ্কার করবে। সাপ্তাহিক হেয়ার রুটিনে যোগ করতে হবে ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক। বেছে নেওয়া যেতে পারে একটি প্রোটিন-বেসড ট্রিটমেন্ট। এটি প্রয়োগের পর ভালো করে চুল আঁচড়ে নিয়ে হট টাওয়েলে মুড়ে রাখতে হয়। এই প্রক্রিয়া শাইনি ও হেলদি চুল পেতে চমৎকার কাজ করে। শিয়া বাটার ও অর্গান অয়েল সমৃদ্ধ হেয়ার প্যাকও ভালো। এটি চুলকে দৃঢ় ও পুষ্ট করে তুলবে।
আর এক মাস বাকি? তাহলে চুল রাঙানোর এখন সেরা সময়। দুই বা তিন টোনের হেরফেরে হাইলাইট করে নিতে পারেন চুলে। পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে। যা চুলে গভীরতা ও ঘনত্ব যোগ করবে। হেয়ারস্টাইলিস্টের পরামর্শে মুখের শেপের সঙ্গে মানানসই হেয়ার কাট নেওয়া যেতে পারে। তবে এতে বড় কোনো পরিবর্তন না করাই ভালো। কারণ, তা যদি মুখাবয়বের সঙ্গে মানিয়ে না যায়, এই পর্যায়ে তা শুধরে নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকে না। তবে ফেটে যাওয়া ডগা ও অবিন্যস্ত অংশ ট্রিম করে নিতে হবে। যতেœ যোগ হতে পারে আল্ট্রা-হাইড্রেটিং হেয়ার মাস্ক। হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গোড়া থেকে চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে সহায়তা করবে।
চুল ডাউন বা হাফ-আপ করার সিদ্ধান্ত থাকলে চুল যতটা সম্ভব সুস্থ রাখা চাই। সে ক্ষেত্রে পরিচর্যা শুরু করতে হবে দুই সপ্তাহ আগে। ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট এখন সবচেয়ে জুতসই। এটি চুলে আবরণই তৈরি করবে না, চুলের গ্রন্থিকোষে পুষ্টির বাড়তি চাহিদা পূরণে শক্তি জোগায়। হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে। উঁচু করে চুল বেঁধে নিতে চাইলে ট্রিটমেন্টটি এড়ানোই ভালো। এতে চুল আরও টেক্সচারযুক্ত হবে। সহজে বেঁধে নেওয়া যাবে চুলে। আর অন্য কোনো পরিচর্যা নিতে চাইলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শই শ্রেয়।
মঞ্চে ওঠার আগের দিনও চুলের যত্নআত্তি জরুরি। পছন্দের কন্ডিশনার দিয়ে একটি হোম ট্রিটমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। চুলের চকচকে ভাব বাড়াতে অর্গানিক হেয়ার অয়েলের সঙ্গে অ্যাভোকাডো চটকে তাতে ডিমের কুসুম দিয়ে ঘরে তৈরি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া শুধু অর্গানিক অয়েল ব্যবহার করতে চাইলে জোজোবা দারুণ অপশন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ এ তেল কেবল চুল নয়, পুষ্টি জোগায় মাথার ত্বকেও। বিয়ের পুরো আয়োজনে চুলের ওপর যে অত্যাচার যায়, তা থেকেও সুরক্ষা দেয়, রাখে সুস্থ। আর চটজলদি ধুয়ে নেওয়া যায় জোজোবা অয়েল। ধোয়ার পর তেলের কোনো ধরনের বাড়তি গন্ধ থাকে না চুলে।
চুলের চাকচিক্য দীপ্তি ছড়াক পুরো সাজসজ্জায়।
তাসমিন আহমেদ
মডেল: আনিকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন