কুন্তলকাহন I জলস্পর্শহীন
না ধুয়েও চুল সুস্থ ও সুন্দর রাখা। সঠিক কৌশলে কাজটি সহজই বটে। আলস্যময় এ মৌসুমে হেয়ারস্টাইলিংও থাকবে মনমতো
শীতে গোসল কঠিনই বটে। আলসেমি তো আছেই, সঙ্গে ঠান্ডার ভয়। আবার গোসল না করে কিংবা চুল না ধুয়েও লুক ঠিকঠাক রাখতে হয়। এই মৌসুমে সহজে শুকায় না বলে চুল ধুতে চান না অনেকে। তাই বলে স্টাইলিং বাদ দিতে হবে, তা কী করে হয়! দরকার সঠিক উপায় খুঁজে বের করা। জুতসই শ্যাম্পুটি খুঁজে পাওয়া। সহজে চুল শুকানোর ব্যবস্থা। অনেকেই এ সময় শ্যাম্পু করা বন্ধ রাখেন। কেননা তারা চুল শুকিয়ে নিতে আলসেমি করেন এবং সব সময় কোনো না কোনো স্টাইলে সেট করে রাখতে চান। ধরন অনুযায়ী শুধু একটি শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার খুঁজে নেওয়াটা আরও বড় সংকটের কাজ। তাতে যখন আর চলছে না তখন বিকল্প কিছু তো বেছে নিতেই হবে। শ্যাম্পু ছাড়া চুল ধুয়ে নেওয়ার উপায় রয়েছে। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ এতে সম্মত হয়েছেন যে নিয়মিত ফোমি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার মধ্যে তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই। প্রত্যেকের যেমন আলাদা ত্বকের ধরন ও গঠন রয়েছে, তেমনি মাথার ত্বকের তেলগ্রন্থিরও আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি হরমোন লেবেলের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হতে থাকে। চুলের গঠন ও রঙের ওপর নির্ভর করে চুল কতবার ধুতে হবে বা কত দিন না ধুলেও চলবে। তবে পদ্ধতিটা জেনে নেওয়া চাই।
ড্রাই শ্যাম্পু হচ্ছে, না ভিজিয়ে চুল পরিপাটি ও চকচকে রাখার সেরা উপায়। তাই স্টাইলিংয়ের জন্য এ ক্ষেত্রে হেয়ার এক্সপার্টরা এটি ব্যবহারের পরামর্শই বেশি দিয়ে থাকেন। ড্রাই শ্যাম্পু শুধু চুলের গোড়ায় ব্যবহার করতে হয়। চিটচিটে হয়ে যাওয়ার আগেই। যদি চুলের ডগা ফেটে যাওয়া এবং ভারী অনুভব করা অবধি অপেক্ষা করেন ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করার ক্ষেত্রে, তবে তা ভুল। চুল যথেষ্ট ঝরঝরে থাকতেই এর প্রয়োগে ভালো ফল পাওয়া যায়। ওয়ার্কআউট বা ঘুমাতে যাবার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে হেয়ারলাইনে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। নির্দেশনা অনুযায়ী। চুলের গোড়ায় ড্রাই শ্যাম্পু স্প্রে করে অপেক্ষা করতে হয় তা শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এরপর ব্রাশ করে পাউডার ঝেড়ে ফেলতে হয়। ড্রাই শ্যাম্পুর এই পাউডারি পার্টিকেল অতিরিক্ত তেল শুষে নেওয়ার পাশাপাশি চুলকে এক্সট্রা ভলিউম ও টেক্সচার দেয়।
চুলে দীর্ঘ সময় শ্যাম্পু ব্যবহার না করলে কিছুদিন পর যে কারও মাথা থেকে হ্যামস্টারের খাঁচার মতো গন্ধ ছড়াতে পারে। এর মোক্ষম দাওয়াই সুগন্ধিযুক্ত ড্রাই শ্যাম্পু, যা দুর্গন্ধ ঢেকে দেয়।
ঘুমানোর সময় সুতার তৈরি রাবার ব্যান্ডে পনিটেইল করে নেওয়া যেতে পারে। তবে চুল পাতলা হলে বা ভালো থাকলে এটি না করলেও চলবে। আরেকটি উপায় হলো সিল্কের কাপড়ে চুল বেঁধে রাখা। ফ্ল্যাট বা ফাঙ্কি হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষায়। সকাল ও রাতে বোর ব্রিসল ব্রাশে চুল আঁচড়াতে হবে। ঘন ব্রিসলযুক্ত এ ব্রাশগুলো ময়লায় জট পাকানো চুলকে আলাদা করে। এটি মাথার ত্বকে উৎপন্ন হওয়া তেল পুরো চুলে ছড়িয়ে দেয়, যা কন্ডিশনার ছাড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করে।
ডগায় শুষ্কতা চুলের স্বাভাবিক দীপ্তি নষ্ট করে। হারানো এ উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে এবং সেগুলো পরিপাটি রাখতে ড্রাই শ্যাম্পুর কাউন্টার পার্ট হলো ড্রাই কন্ডিশনার। এটি প্রথম দিনেই চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত উজ্জ্বল করে তোলে এবং ড্রাই শ্যাম্পুর যেকোনো ধরনের মন্দ প্রভাবকে প্রতিহত করে।
যদি ড্রাই শ্যাম্পু খরুচে মনে হয়, তবে তার বদলে সস্তা উপায় হিসেবে বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে মাথার ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এ ছাড়া কিছু স্কিন কেয়ার প্রডাক্টও চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে একে সামলে নেওয়ার জন্য। যেমন গায়ের ত্বকের মতো ক্লিনজিং জরুরি চুল ও মাথার ত্বকের জন্য। গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত সামগ্রী যেগুলো ড্রপারে পাওয়া যায়, সেগুলো এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ভ্রমণের জন্য কার্যকর একটি উপাদান। রাতে ব্যবহারের সিরাম ও ফেসওয়াশ নিয়ে ব্যাগ ভারী না করে একটি ক্লিনজারেই চুল ও মুখত্বক উভয়ই ঠিক রাখা সম্ভব হবে। স্যালিসাইলিক সমৃদ্ধ স্কিন কেয়ার প্রডাক্টও এ ক্ষেত্রে কার্যকর। সাধারণত ত্বকযত্নের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত স্যালিসাইলিক মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে সমান ফলপ্রদ। এটি তেল ও সিবাম উধাও করে দিতে পারে।
হেয়ার টনিক অনেকটা ড্রাই শ্যাম্পুর মতো। এটি অ্যালকোহলমুক্ত এবং চুলের স্টাইলিং প্রডাক্ট, ময়লা ও মৃতকোষ অপসারণ করতে পারে শুষ্ক করে ফেলা ছাড়াই। তাই যাদের মাথার ত্বক শুষ্ক, তাদের জন্য এটি ভালো উপায় হতে পারে।
এ ছাড়া চুলের জন্য ভালো, এমন খাদ্য গ্রহণ বাড়িয়ে দিতে হবে চলতি মৌসুমে। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে অনেকটা সময় চুল না ধুয়ে থাকলেও ভালো দেখাবে। পরিমিত পানি পানের মাধ্যমে লিপিডগুলো পরিপূর্ণ করে শরীরকে পরিপুষ্ট রাখতে হবে। এতে চুলও ভালো থাকবে।
তাসমিন আহমেদ
মডেল: নিকি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন