এই শহর এই সময় I ঐতিহ্য ও পরম্পরা
বাংলাদেশের চিত্রকরেরা পাশ্চাত্য শিল্পরীতির অনুসরণ করলেও তাদের একটা বড় অংশ অন্বেষণ করেছে এখানকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির শিকড়। এ ক্ষেত্রে তাদের অভিমুখ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে গ্রামীণ ভূদৃশ্য, ভৌগোলিকতা, জনমানুষ এবং প্রকৃতির সঙ্গে তাদের সংযোগ।
আবুল খায়েরের সংগৃহীত শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘ব্রেকিং গ্রাউন্ড: মডার্ন আর্ট ইন ট্রানজিশন’ শীর্ষক দুই মাসব্যাপী চিত্রকলা প্রদর্শনী। উদ্দেশ্য, গ্রামবাংলার শৈল্পিক ভাষা উদ্ঘাটন। প্রদর্শনীতে ত্রিশের দশক থেকে সত্তরের দশকের প্রধান চিত্রকরদের শিল্পকর্ম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে প্রতিফলিত হয়েছে প্রাচীন শিল্পচর্চায় আধুনিকতার অভিমুখ। ১৭ ডিসেম্বর এই চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন।
প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আধুনিক চিত্রকলার রূপরেখা নির্মাণের একটি গতিপথ সন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে। আবুল খায়েরের ব্যক্তিগত সংগ্রহের মধ্যে এই অনুসন্ধান দৃশ্যমান। প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যামিনী রায়, জয়নুল আবেদিন, এস এম সুলতান, কামরুল হাসান প্রমুখ চিত্রকরের চিত্রকলা। আরও রয়েছে সফিউদ্দীন আহমেদ, রশিদ চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীরসহ বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিল্পীদের চিত্রকর্ম।
বিদায়ী ২০১৯-এর শেষে আরও একটি চমৎকার প্রদর্শনীর সাক্ষী থাকল এই শহর। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হলো স্থপতি সাজিদ-বিন-দোজার ‘নানান রঙের মানুষ’ শীর্ষক একক কার্টুন প্রদর্শনী। ঢাকার মতো ঘিঞ্জি মহানগরীর রাস্তা, ফুটপাত, গলি-তস্যগলি পেরিয়ে যেতে যেতে, কত অগণন মুখই যে দেখতে পাওয়া যায়! এসব মুখ, যদিও প্রথম দৃষ্টিতে অচেনা মনে হয়, তবু তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব পরিচয় এবং এই সমাজের অগুনতি ক্ষুদ্র অস্তিত্ব হিসেবে তারা বিভিন্ন দায়িত্ব ও চরিত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে। ক্ষীয়মাণ পারস্পরিক যোগসূত্রে, চেহারাগুলোও ক্রমে অপরিচয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে এবং তাদের ব্যক্তিসত্তা ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে অজ্ঞানতায়, আর সেই সঙ্গে মানুষ হারিয়ে ফেলছে তাদের বোধ ও বোধি।
ড. সাজিদ-বিন-দোজা এই অজ্ঞানতাকে জ্ঞানে পরিণত করতে যা প্রয়োগ করে থাকেন, তার ভাষায় তাকে বলে ‘সামাজিক ব্যঙ্গচিত্র’। তিনি এই ঘিঞ্জি ঢাকা মহানগরীর রাস্তা, ফুটপাত, গলি-তস্যগলিতে যত মুখের মুখোমুখি হন, দর্শকদের সামনে তাদের পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করেন কখনো হয়তোবা একটুখানি ব্যঙ্গের রেশ থাকে তাতে। এই মুখগুলো চারপাশের উপচারসহ রঙিন হয়ে ওঠে, আর উপযুক্ত পরিবেশ সংলগ্নতায় চরিত্রগুলো হয়ে ওঠে স্পন্দিত। তরুণ এবং প্রাজ্ঞ, উভয় প্রজন্মের দর্শকেরাই সমান উপভোগ করতে পারেন এই কার্টুন। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয় গত ২০ ডিসেম্বর। বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কার্টুনিস্ট মেহেদী হক ও নাসরিন সুলতানা মিতু।
ক্যানভাস ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ