skip to Main Content

ফিচার I নব্বই থেকে নব্য

গত শতাব্দীর শেষ দশকের ফ্যাশন নানাভাবে ফিরে এলো এখন। আউটফিট থেকে অ্যাকসেসরিজ— সবকিছুতেই। তবে নতুন রূপে। লিখেছেন ফাহমিদা শিকদার

একবার দেখা দিয়ে ফ্যাশন হারিয়ে যায় না, বরং ঘুরেফিরে আসে। চলতি দশকেও ঘটেছে তাই। সিকি শতাব্দীর আগের ফ্যাশন ফিরে এসেছে। অনেক গবেষক ও ডিজাইনারের মতে, নব্বই ছিল ফ্যাশনের সেরা দশক। তাই তো সে সময়ের ট্রেন্ড ফিরিয়ে আনতে কোনো কার্পণ্য করেনি সংশ্লিষ্টরা। একটি বা দুটি আইটেম নয়; তখনকার ফ্যাশনের ৮০ শতাংশই পুনরাবৃত্ত হয়েছে বলা যায়। এমনকি ২০০০ সালের পর যাদের জন্ম, তারাও আস্তে আস্তে গ্রহণ করছে নব্বইয়ের ফ্যাশন ধারা। পোশাক, জুতা, অ্যাকসেসরিজ— কিছুই বাদ থাকছে না। নব্বই এখন নতুন।
স্লিপ ড্রেস
একসময় স্লিপ ড্রেস শুধু বেডরুমের পোশাক হিসেবেই পরা হতো; নব্বই দশকের মাঝামাঝি এই পোশাককে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে এসে পরা শুরু করতেই সবদিকে কেমন হইচই পড়ে গেল। এরপর বন্ধুদের হ্যাংআউট থেকে ডেট অথবা বিয়ের দাওয়াত থেকে রেড কার্পেট— সবখানেই স্লিপ ড্রেসের জয়জয়কার। আবার তা ফিরে এসেছে। আগের মতোই এই ড্রেস এখন পরা হচ্ছে টি-শার্টের উপরে। সে ক্ষেত্রে সাদা টি-শার্টই সবার প্রথম পছন্দ। অনেকে স্লিভলেসও পরছেন। শর্ট, নি লেন্থ বা লং— সব সাইজের স্লিপ ড্রেসই এখন পাওয়া যাচ্ছে। শীতে লং স্লিভের টার্টল নেক সোয়েটারের উপর লং লেন্থের স্লিপ ড্রেস দারুণ মানিয়ে যায়।
ডেনিম অন ডেনিম
ফ্যাশনবোদ্ধাদের মতে, এটি একটি টাইমলেস লুক। এটি বিখ্যাত হয় নাইন্টিসে। ডেনিম প্যান্টের উপর ওভারসাইজড ডেনিম শার্ট অথবা ডেনিম জ্যাকেট, নারী-পুরুষ, টিনএজার— সবার পছন্দের ক্যাজুয়াল আউটফিট ছিল। ফিরে এসেছে এই ধারা। ডেনিম প্যান্টের উপর ওভারসাইজড ডেনিম শার্ট, যার নিচে ইচ্ছা করলে যেকোনো রঙের টি-শার্ট পরা যেতে পারে। ডেনিম প্যান্ট ও জ্যাকেটের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। আবার এখন শুধু ডেনিম প্যান্ট নয়, ডেনিম স্কার্টের ওপরও ডেনিম টপস, শার্ট, জ্যাকেট আর কটি পরা হচ্ছে।
মম জিনস
কয়েক দশক স্কিন টাইট জিনসের রাজত্ব শেষে মায়েদের পছন্দের জিনস আবার ফিরে এসেছে! বলা হয়ে থাকে, নব্বই দশকের শেষে আর প্রথম দশকের শুরুর দিকে আমেরিকার মধ্যবয়স্ক নারীরা ঢোলা হাইওয়েস্টেড জিনস বেশি পরত বলে এর নাম হয় মম জিনস। তবে এখন এই অনুজ্জ্বল, হাই ওয়েস্টেড, স্টোন ওয়াশড জিনস শুধু মধ্যবয়স্ক নারী নয়, সব বয়সী মেয়েদের পছন্দের। কারণ, এটি স্কিনি জিনসের চেয়ে বেশি আরামদায়ক। সব সাইজের বডিতে খুব ভালো মানিয়ে যায়।
ওভারওল
নব্বইয়ের দশকের একটি হিট ফ্যাশন আইটেম। আবারও এই ট্রেন্ড ফিরে এলো সুপারহিট হয়ে। নব্বই দশকের স্টাইল বুক ঘাঁটলে কেবল একধরনের ওভারওল বেশি দেখা যায়। তা হলো ডেনিম ওভারওল। এখন ডেনিম ছাড়াও অনেক ফ্যাব্রিকে নানা রঙের ওভারওল পাওয়া যাচ্ছে। একসময় এটি ছিল ইউনিসেক্স ড্রেস। এখনো তাই আছে, তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে পোশাকটি হয়েছে আরও স্টাইলিশ। পাওয়া যাচ্ছে এর ড্রেস, শর্টস ভার্সন। ফিটেড, নন-ফিটেড, ফুল শোল্ডার, ওয়ান শোল্ডার— সবভাবেই পরা যায় ওভারওল।
ফ্লানেল শার্ট
মম জিনস একা নয়, এর জুটি ফ্লানেল শার্টও ফিরে এসেছে স্বমহিমায়। প্যান্ট, শর্টস বা স্কার্টের উপর শুধু এই শার্ট পরা যেতে পারে; তবে টি-শার্টের উপর লেয়ারিং করলেই বেশি ভালো দেখায়। বলে রাখা ভালো, ফ্লানেল শার্ট ওভারঅলের মতোই ইউনিসেক্স ড্রেস।
মেশ টপ
খুব মজার আর আকর্ষণীয় পোশাক। এটি নব্বইয়ের দশকে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময় ফ্যাশনটাই ছিল লেয়ারিংয়ের, আর এতে অন্য মাত্রা নিয়ে আসে এই টপগুলো; যেসব এখন টিনএজ মেয়েদের প্রিয় হয়ে উঠছে। ক্রপ টপের উপর ফুল অথবা হাফস্লিভ মেশ টপ পরা যেতে পারে। আনা যেতে পারে পার্টি লুক। সে ক্ষেত্রে এমব্রয়ডারি মেশ টপ বেছে নেওয়া যেতে পারে।
বোম্বার জ্যাকেট
ইউনিসেক্স পোশাকের মধ্যে বোম্বার জ্যাকেট অন্যতম। নব্বইয়ের ফ্যাশনে যখন এই জ্যাকেট এলো, তরুণ-তরুণীরা লুফে নিল। বর্তমান জেনারেশনের প্রিয় পোশাকের তালিকায় এগিয়ে বোম্বার জ্যাকেট। এটি সিম্পল তবে যেকোনো ক্যাজুয়াল লুককে করতে পারে গর্জাস। মোটামুটি সব রঙের বোম্বার জ্যাকেটই পাওয়া যায়।
ফ্লোরাল থেকে প্লেইড
ফিরে এসেছে ফ্লোরাল আর লেপার্ড প্রিন্ট। ড্রেস, শার্ট, টপস, স্কার্ট— সবকিছুতেই এই দুই প্রিন্টের আধিপত্য বেশি। স্যুট ও শার্টে এখন চেক অথবা প্লেইড প্যাটার্ন সবার পছন্দের শীর্ষে।
কমব্যাট বুট
বুট সব সময় ফ্যাশনে ছিল, তবে নব্বই ছিল কমব্যাট বুটের। নারী-পুরুষ সবাই এই ফুটওয়্যারে বুঁদ হয়ে ছিল। ফরমাল পোশাক ছাড়া সব ক্যাজুয়াল পোশাকে এটি মানিয়ে যায়। ফিরে আসা এই কমব্যাট বুট যেমন ফাঙ্কি এবং স্টাইলিশ, তেমনি আরামদায়কও বটে।
প্ল্যাটফর্ম স্নিকার
শুধু শু বা হিল জুতাই কয়েক ইঞ্চি উঁচু হয় তা নয়, স্নিকারও যে উঁচু হতে পারে, সেটা প্ল্যাটফর্ম স্নিকার না দেখলে বোঝা যাবে না। এগুলো নব্বই দশকে প্রথম বাজারে আসে। সাড়া ফেলেছিল তরুণদের মধ্যে। এখনো এই স্নিকারের কাটতি অনেক বেশি। যেকোনো পোশাক এমনকি ফরমাল স্যুটের সঙ্গেও পরা হচ্ছে এই প্ল্যাটফর্ম স্নিকার একেএ ক্লাঙ্কি স্নিকার।
অ্যাকসেসরিজ
চোকার, স্ক্র্যাঞ্চি, বেরেট আর স্ন্যাপ ক্লিপ, ফ্যানি প্যাক, বাকেট হ্যাট, মিনি ব্যাক প্যাক, টাইনি স্কিনি অথবা টাইনি রাউন্ড সানগ্লাস— সবই ছিল নব্বইয়ের স্টেপল ট্রেন্ড।
চোকার নাইন্টিসে যেমন জনপ্রিয় ছিল, এখনো তেমনি। লেস, ভেলভেট, মেটাল, নট স্টাইল, লেদার চোকারগুলোই বেশি চলছে।
চুল সাজাতে আবারও ফিরে এসেছে বেরেট আর স্ন্যাপ ক্লিপ। ছোট বড় সব ধরনের চুলে অন্য রকম লুক আনতে এই ক্লিপের জুড়ি মেলা ভার। তবে পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ। লাইট ক্যাজুয়াল ড্রেসের সঙ্গে মিল রেখে বা কনট্রাস্ট করে ক্লিপ বাছাই উচিত। নরমাল ইলাস্টিক রাবার ব্যান্ডকে হটিয়ে সবার মন জয় করেছে স্ক্র্যাঞ্চি ব্যান্ড। স্যাটিন আর কটন ফ্যাব্রিকের এই স্ক্র্যাঞ্চি শুধু সৌন্দর্যবর্ধনই করে না, ইলাস্টিক রাবারের জন্য চুলে যে ভাঙন হয়, তা থেকে রক্ষা করে।
মিনি ব্যাকপ্যাক নব্বইয়ের একটি আইকনিক ফ্যাশন ট্রেন্ড। এখনো সেই আগের মতোই সবার প্রিয় হয়ে উঠেছে এই ব্যাগ। নব্বইয়ে শুধু মেয়েরা এই ব্যাগ ব্যবহার করত। এখন ছেলেরাও ঝুঁকেছে। প্রয়োজনীয় সবকিছুই এর ভেতরে ঢুকিয়ে নিশ্চিন্তে যেখানে খুশি যাওয়া যায়। এখন ফরমাল মিনি ব্যাকপ্যাকও পাওয়া যাচ্ছে, যা অফিসেও ব্যবহারযোগ্য।
ফ্যানি প্যাক নাইন্টিসে মধ্যবয়স্কদের মাঝে বেশ প্রিয় ছিল। এয়ারপোর্ট বা কোথাও ঘুরতে গেলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা জিনিসপত্র কোমরের (পড়ুন হাতের) নাগালে রাখার জন্যই ছিল এটি। অনেকে এখনো একে পাসপোর্ট ব্যাগ বলে। এখন যারা ফ্যাশন স্টেটমেন্টে বেশ বোল্ড, তারাই ফ্যানি প্যাককে ফিরিয়ে এনেছে ট্রেন্ডে। আজকাল শুধু মধ্যবয়স্করা নয়, তরুণ-তরুণীরা এর গ্রাহক।
দ্য ম্যাট্রিকস মুভিটি মুক্তির পর থেকেই টাইনি সানগ্লাস ফ্যাশনে কয়েক বছর বেশ ভালোই চলেছে। ২০০০ সালের দিকে হঠাৎ করে তা হারিয়েও যায়। শোনা যাচ্ছে, দ্য ম্যাট্রিকসের চতুর্থ কিস্তি আসতে চলেছে। তার আগেই সানগ্লাসের বাজার আবার দখল করেছে টাইনি ক্যাট আই আর চারকোনা ফ্রেমের সানগ্লাস।

মডেল: এফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top