ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I নিউ রিভাইভাল
নতুন দশকের ফ্যাশন। সাসটেইনেবল, সহজলভ্য, সর্বজনগ্রাহ্য, বৈচিত্র্যময়। অন্যদিকে পুরোনোর নতুন হাতছানি
দেখতে দেখতে আমরা পা রাখলাম আরেকটি নতুন দশকে। মানে, টুয়েন্টিসে! আজ থেকে ১০০ বছর আগে ১৯২০ সাল থেকে শুরু হয়েছিল ফ্যাশন বিশ্বের বিপ্লব। সেই সময়টি চিহ্নিত হয়েছিল ‘রে্যারিং টুয়েন্টিস’ নামে। কোকো শ্যানেল, এলসা স্কিয়াপারেল্লি, জিন পাটোও— এদের মতো ফ্যাশন ডিজাইনারদের হাত ধরে শুরু হয় পোশাক জগতের নতুন অধ্যায়। তখনকার ফ্যাশন এলিট সোসাইটি থেকে সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে থাকে। কিন্তু এখন কেমন হতে চলেছে এই বিশের ফ্যাশন বিশ্ব? সেই ইশারা আমরা উনিশ সালের রানওয়েগুলো থেকে পাই। এ ছাড়া সেলিব্রিটি ট্রেন্ড সেটাররা তো আছেই। তবে এটুকু নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যেতে পারে যে এই দশকে বিশ্ব ফ্যাশনে সাসটেইনেবল ফ্যাশনের বীজ বপন করে যে চারা গজিয়েছে, আগামী বছরগুলোতে তা ডালপালা মেলবে।
নিউ কালার
ট্রেন্ড সম্পর্কে জানার আগে নতুন বছরের রঙের ধারণা পাওয়া জরুরি। প্যান্টন কালার ইনস্টিটিউশন প্রতিবছর একটি রঙকে বাছাই করে কালার অব দ্য ইয়ার হিসেবে। আর তা সমকালীন সমাজের রুচির প্রতিনিধিত্ব করে। ঘুরেফিরে ফ্যাশনের আনুষঙ্গিক উপাদানগুলোতে এই রঙের ব্যবহার দেখা যায়। প্যান্টন এবার বেছে নিয়েছে ‘ক্ল্যাসিক ব্লু’।
প্রতিষ্ঠানটির মতে, এই ধ্রুপদি নীল রঙ উজ্জীবিত হয় গভীর অনুরণনের সঙ্গে এবং এটি খাঁটি ও নির্ভরযোগ্য
ট্রেন্ড অব টুয়েন্টি
শি সেইড সো
প্রথমে বলি আনা উইন্টরের কথা। বিশ্বের সেরা ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ ইউএসএর এডিটর-ইন-চিফ সম্প্রতি এক ইন্টারভিউতে সিজনের টপ ট্রেন্ড নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি যেগুলোকে শীর্ষে রেখেছেন, সেসব ফ্যাশন উইকের স্প্রিং সামার-২০২০ শোগুলোয় কর্তৃত্ব করেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট শু, শর্টস, এমব্রয়ডারি, ট্রেঞ্চ কোট, প্রিন্টস, রাফিয়া ও র্যাটান ম্যাটেরিয়াল। এ ছাড়া রিসাইকেলিং ফ্যাশনকেও তিনি এগিয়ে রাখছেন।
# স্টেসাসটেইনেবল
ক্ল্যাসিক রুচি আর ফ্যান্টাসি ব্যবহার করে এ সময়ের ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাদের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যা এখন কেবল একটি ইমেজের জন্য নয়, তাতে আইডিয়াও প্রকাশিত হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিবাদের ভাষা। ফ্যাশন হয়ে উঠছে নিজস্বতা উদ্্যাপনের উৎস। নতুন বছরের তা মহাসাগর, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও আবহাওয়া রক্ষার জন্য লড়বে। এমনই প্রতিজ্ঞা করেছে বিশ্বের বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড। তাই সাসটেইনেবিলিটি বিশের সবচেয়ে বড় ট্রেন্ড।
আবার সত্তর
সত্তর যেন পিছুই ছাড়ছে না! উনিশের মতো বিশ ফ্যাশন ট্রেন্ডেও থাকবে এই দশকের বোহিমিয়ান ঘরানার পোশাক। থাকছে কালারফুল টেইলরিং স্যুটস। আসছে নান্দনিক পঞ্চোও। আর সত্তরের ক্রোঁশে ‘ইজ দ্য নিউ এমব্রয়ডারি’। সিলুয়েটের সঙ্গে বোল্ড প্রিন্টের শোভা আর ডিসকো ভাইব— সব মিলিয়েই সত্তরের দাপট।
ডেনিমের ওপর ডেনিম
অন্য সব সময়ের চেয়ে বেশি বিলাসিতার সঙ্গে রাজত্ব করবে ডেনিম। সত্তর, আশি, নব্বই এর কোনো লুকই নাকি বাদ যাবে না। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে ডেনিম অন ডেনিম। নতুন দশকের ডেনিম সাসটেইনেবল; অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব। এই বছরে তা সাধারণ মানুষের বাজেটের মধ্যে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্যুটস বাট শর্টস!
উইন্টর বলেছেন শর্টস, আর ফ্যাশন ডিজাইনাররা এর সঙ্গে যোগ করেছেন স্যুটস। এই সিজনের পোশাকে টমবয়িশ ভাইব তৈরির জন্য। সেই প্রভাবকে অন্য মাত্রায় নিতে শর্টসের ওপর দেখা যাবে টাক্সেডো। এর সঙ্গে একটু ফেমিনিন ডিটেইলস হতে পারে ট্রান্সপারেন্ট ব্লাউজ, নব্বইয়ের ফ্যাশন থেকে আসা ব্রালেটস আর ডিপ নেকলাইন।
ট্রপিকুল
মিলান ফ্যাশন উইকে ভারসাচি শোতে শো-স্টপার জেনিফার লোপেজ ট্রপিক্যাল প্রিন্টের যে পোশাক পরে ঝড় তুলেছেন, এই বছরে বিভিন্ন পোশাকে থাকছে তার প্রভাব। ছোটখাটো নয়, বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড যেমন ডলশে অ্যান্ড গ্যাবানা, লুই ভিতোঁ— এরাই ট্রপিক্যাল প্রিন্টের পোশাক আনছে বাজারে।
পোলকা
উনিশ ছিল লেপার্ড প্রিন্টের, আর বিশ হতে চলেছে পোলকা ডটের। বিভিন্ন পোশাকে দেখা যাবে এর উপস্থিতি। তবে খুব একটা একা নয়। উজ্জ্বল রঙ আর অন্যান্য প্রিন্টের সঙ্গে জোড় বেঁধে আসছে ষাটের পোলকা ডট।
পালক ও ঝালর
পোশাকে বাড়বে ফেদার আর ফ্রিঞ্জের ব্যবহার। হাই ফ্যাশনেবল গাউনে যেমন, তেমনি নরমাল ক্যাজুয়াল ড্রেসেও থাকবে এদের সাড়ম্বর উপস্থিতি।
নিয়ন টু বি কন্টিনিউড
কয়েক বছর ধরেই ফ্যাশনে চলছে নিয়নের খেলা। তা চলতে থাকবে। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে খুবই উজ্জ্বল সবুজ নিয়ন। ফরমাল, ক্যাজুয়াল— সব পোশাকেই এই রঙের ছোঁয়া। আর এর সঙ্গে কনট্রাস্ট করার জন্য ক্ল্যাসিক ব্লু রঙ তো থাকছেই।
পাওয়ার স্লিভ
ভোগের একটি ইন্টারভিউতে হালের সেনসেশন সেলেনা গোমেজ একবার বলেছিলেন যে, তিনি চান না ট্রেন্ডে শোল্ডার প্যাড ফিরে আসুক। তবে তাকে হতাশ করে আশির দশকের এই জনপ্রিয় স্লিভ ট্রেন্ডটি ফিরে আসছে। আর এর সঙ্গে আসছে এর কাজিন পাফ স্লিভ। ফিরে এসেই হয়ে যাচ্ছে এবারের পাওয়ার স্লিভ।
জুয়েলারি
কানের দুল, গলার চেইন বা নেকলেসে দেখা যাবে বলের ব্যবহার। ওয়াই এবং বোলো নেকলেস থাকবে ট্রেন্ডে। চোকার এবার আসছে অন্যরূপে। গত বছরের রানওয়েতে গোল্ডেন লেয়ারিং চোকার বেশি দেখা গেছে। তাই বলা হচ্ছে, এটি হতে চলেছে এ বছরের স্টেটমেন্ট জুয়েলারি। এক কানে একটি বড় দুল পরার চল ফিরে আসছে। এ ছাড়া ট্রেন্ডে থাকবে হুপ আর কলার ব্রেসলেট।
শু
মিনিমালিস্ট আর ম্যাক্সিমালিস্ট— এই দুই রকমের জুতাই দেখা যাবে এবারের ফ্যাশনে। মিনিমালিস্ট জুতায় থাকছে লেসের স্যান্ডেল, তবে এই লেসে থাকবে বিভিন্ন রকমের ফ্যাব্রিক, সুতা আর বিডসের ব্যবহার। লোফারে টুইস্ট আনতে আসছে প্ল্যাটফর্ম হিল আর বাকল বেল্ট। ম্যাক্সিমালিস্ট হিলে থাকছে রকিং ভাইব আর অনেক উঁচু প্ল্যাটফর্ম হিলের ব্যবহার। এবারের ট্রেন্ডে আরও আছে চাঙ্কি বুট, স্কয়ার স্ট্র্যাপি স্যান্ডেল।
অ্যাকসেসরিজ
বিশে থাকবে বাহারি ব্যাগ। মাল্টিকালারড, বাকেট আর ব্যাগের সঙ্গে ছোট মিনি পাউচের জোড় যেমন, তেমনি মিনি ব্যাকপ্যাকও থাকছে। আরও আছে নরম ও আদুরে ক্লাচ। উনিশে এসেছিল হেডব্যান্ড আর বিশে ব্যাড হেয়ার ডের ত্রাতা হয়ে থাকবে এর প্যাডেড ভার্সনগুলো। রোদচশমার ফ্রেমে থাকছে রঙের বৈচিত্র্য। কোমর বন্ধনীতে ওয়াইড ওয়েস্ট ব্যান্ড। যেকোনো সাধারণ পোশাক এই বেল্টের ব্যবহারে হয়ে উঠবে স্টাইলিশ। আর হ্যাটে ফিরে এসেছে বাকেট স্টাইল। প্রায় সব ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গেই এটি মানিয়ে যায়। চুলের সুরক্ষার জন্যও পড়া যায় না।
ফাহমিদা শিকদার
ছবি: ইন্টারনেট