সম্পাদকীয়
একটি তথ্য দিয়ে শুরু করা যাক। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ভাষা প্রায় ৬০০০। এগুলোর মধ্যে বহু ভাষা আছে, যেগুলো একটিমাত্র ভৌগোলিক অঞ্চলের বাসিন্দারাই ব্যবহার করত। বংশধরদের অভাবে সেগুলো বিলুপ্ত হয়েছে।
সমীক্ষা বলছে, প্রতি ১৫ দিনে একটি করে ভাষা মুছে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে। কয়েকটি ভাষা অবশ্য সরকারি বদান্যতায় স্বমহিমায় ফিরেও এসেছে। যেমন ওয়েলস ভাষা যুক্তরাজ্যের প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তায় আর নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পৃথিবীর প্রাচীনতম আদিবাসী মাওরির ভাষা টিকে গেছে।
তথ্যটি এই সত্য বুঝতে আমাদের সাহায্য করে যে, রাষ্ট্র বা সরকারের সুদৃষ্টি থাকলে বিলীয়মান ভাষাকেও টিকিয়ে রাখা সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় বা প্রধান ভাষা পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিয়েছে অন্য অনেক ভাষাকে। সেগুলোর রক্ষার ব্যর্থতায় আমাদের অজুহাতের অভাব নেই। যেমন—নিজস্ব বর্ণমালার অনুপস্থিতি, ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তি, প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা ইত্যাদি। কিন্তু যেকোনো ভাষাই সমগ্র মানবজাতির সম্পদ, এর সংরক্ষণ রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। জাতিসংঘেরও সেই নির্দেশনা আছে।
হ্যাঁ, এবার আমাদের প্রধান প্রতিপাদ্য হলো ভাষা। এ নিয়ে কভারস্টোরি ‘ভাষাবদল’। আলাপনে অংশগ্রহণ করেছেন দেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ সলিমুল্লাহ খান, তাঁর সঙ্গে কথাবার্তাও ভাষা নিয়ে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ ও ভাবনা উঠে এসেছে এই আলাপচারিতায়। বিশেষ একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে এবার, যাতে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের বাইরে শিলচর ও মানভূমে সংগঠিত দুটি আন্দোলনের বর্ণনা রয়েছে। তাতে জানা যাচ্ছে ভাষা আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সম্পর্কেও।
ফেব্রুয়ারি কেবল ভাষার নয়, ভালোবাসারও। আর আছে বাঙালির চিরায়ত পয়লা ফাল্গুন। মহৎ মানবিক অনুভূতি নিয়ে রঙে-ঘ্রাণে-রূপে-ঐতিহ্যে মিশে যাওয়া। ক্যানভাসের নিয়মিত বিভাগগুলো সেভাবেই সাজানো হয়েছে এবার। বিশেষ ও ব্যতিক্রমী বিষয় দিয়ে।
একটা বিয়োগান্ত ঘটনা দিয়ে শেষ করি। আমাদের নাট্যজগতের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ইশরাত নিশাত আর নেই। জীবনভর মঞ্চকে তিনি ধ্যানজ্ঞান করেছেন, শিল্পকলার অনুরাগীদের জন্য যা অনুকরণীয়। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
ভালোবাসা। সবাইকে।