সঙ্গানুষঙ্গ I অঙ্গুরীয়
আঙুলের সৌন্দর্যে হালের ফ্যাশন। দামি ধাতুর বালাই নেই। পরা যায় ইচ্ছামাফিক
আঙুলের সৌন্দর্যে চাই আংটি। ফ্যাশনে এটি প্রধান এক অনুষঙ্গ। গেল দশকের শেষ দিকে আঙুলে ফিরেছে নাকল রিং। একে টি রিং বা মেমোরি রিংও বলা হয়। একটি নয়, বরং এখানে ফ্যাশন কয়েকটিতে। আঙুলের নাচনে মেটালিক দ্যুতি নজর কাড়ে। আকারেও থাকে ভিন্নতা। তথাকথিত নকশা নয়, নাকল রিং এর বিশেষত্ব স্টাইলিংয়ে।
সিম্পল ডিজাইনে নাকল আকর্ষণীয়। জ্যামিতিক নকশা ট্রেন্ডি এখন। ফুল চিরন্তন হলেও এখানে প্রস্ফুটন কম। পাথর, বিডস, পার্লের ব্যবহার বেশ দেখা যায়। কিন্তু নকশা যা-ই হোক না কেন, মিনিম্যালিস্টিক ধারাতেই তা সুন্দর।
নাকল রিং এখন ফ্যাশনে ইন হলেও, একদম নতুন কোনো উদ্ভাবন নয়। বেরনহারড স্ট্রিগেলের আঁকা একটি তেলচিত্রে ধনকুবের এক নারীকে খুঁজে পাওয়া যায়, যিনি হাতে নাকল রিং পরে আছেন। ছবিটি ১৫০০ থেকে ১৫২৫-এর মাঝে আঁকা হয়েছিল। নাকল রেনেসাঁর। একবিংশে প্রত্যাবর্তন।
ফ্যাশন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জুয়েলারি ডিপার্টমেন্টের প্রধান মিশেল কোয়ান বিস্ট ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আঙুলে বেশ কয়েকটি আংটি ধারণা দেয় ধনী পরিবারের। যাদের মাঠে কাজ করতে হয় না। কিংবা গৃহপালিত পশুর দেখভাল করতে হয় না। বেশির ভাগ কাজ গৃহভৃত্যদের দিয়ে করানো হয় এমন পরিবারের সদস্যের হাতেই নাকল শোভা পায়।’ এত বছর পরে নাকলের ফিরে আসার বিষয়ে কোয়ান বলেন, ‘নেইল আর্টের জনপ্রিয়তা হতে পারে এর ফিরে আসার কারণ। বর্তমানে মানুষের মাঝে হাতের যত্নের প্রতি খেয়াল বেড়েছে। নখ আর হাতের সৌন্দর্যের প্রতি মনোযোগ থেকেই এ ধরনের অলংকার এখন মূল ফ্যাশনধারায় স্থান পেয়েছে।’
এই রিং এখন জ্বলজ্বলে আমাদের দেশি ট্রেন্ডিদের হাতে। বেহিসেবি এই রিংয়ে আঙুল গলিয়ে নেওয়ার আগে একটু হিসেবি হলে খারাপ লাগবে না। নাকল রিং একটি আঙুলের নয়, বরং হাতজুড়ে থাকে। বিধিবদ্ধ কোনো রীতি নেই এতে আঙুল গলানোর। বরং এখানে নিয়ম ভাঙাই নিয়ম। যেমন খুশি তেমন করে সাজানো যায়। তবে একটি আঙুলে দুটির বেশি রিং না পরলেই ভালো। সবার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রঙের বিষয়ে। কোন হাত কোন মেটালে মানানসই হয়, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মেটালের মিশেল এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এক হাতে সোনা রং পরলে অন্য হাতে রুপালি থাকুক। কিন্তু কোনোভাবেই সোনালি আর রুপালির মিশেল নয়। রোজ গোল্ডের চল বেড়েছে বেশ কয়েক বছরে। তাতে সোনালির সমন্বয় কিন্তু হতেই পারে। প্লাটিনামের সঙ্গে রুপালি বেশ আকর্ষণীয়।
রং আর ধাতুর বাইরে গুরুত্ব দিতে হবে টেক্সচারকে। এতে একঘেয়েমি আসবে না। প্রকাশ পাবে অভিনবত্ব। পুরো সেটের মধ্যে যদি একটি জেম স্টোনের রিং থাকে, তবে তা অনায়াসেই অনন্য হয়ে উজ্জ্বলতা ছড়াবে।
দশ আঙুলে দশটি না পরে পাঁচটির একটিতে পরা যায় নাকল রিং। এভাবে দশটিতে দুটি। সেখানে রিং থাকুক একাধিক। বেছে নিতে পারেন মধ্যমা। আঙুলের শুরু থেকে শেষ অবধি নির্দিষ্ট ছন্দে মিলিয়ে আংটি থাকতে পারে।
পাশাপাশি তিনটি আঙুলে ত্রিভুজের মতো করে পরা যায়। তিনের মিলনে নান্দনিক হয়ে উঠবে আঙুলের সাজ। অনামিকা, মধ্যমা আর রিং ফিঙ্গারে নাকল পিরামিডের মতোই দর্শনীয়।
রিংয়ের মাপের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে! সঠিক আকারের নাকেল ছাড়া কোনোভাবেই সৌন্দর্য ফুটে উঠবে না। আঙুলের যেখানে পরা হবে, সে স্থানের সঙ্গে সঠিক মাপের রিং শ্রেয়। আরও একটি বিষয় ভাবা চাই, সেটা হচ্ছে কোনো রকমের অস্বস্তি যেন না হয়। খুব আটকে থাকা কিংবা একেবারেই ঢলো ঢলো রিং স্বস্তিকর নয়।
নাকল রিং নিজের ইচ্ছামাফিক পরা যায়। এতে স্টাইল তৈরির স্বাধীনতা আছে। কিছু রিংয়ের দিক ঘুরিয়ে পরা যায়, এতে তৈরি হবে নিজস্বতা। জ্যামিতিক নকশার নাকল রিংয়ের ক্ষেত্রে এমনটি করা যেতে পারে। ত্রিভুজের তীক্ষ্ণ দিকটি সব সময়েই ওপরের দিকে থাকতে হবে এমন নয়।
সঙ্গে রেগুলার রিং পরা যায়। আলাদা করে খুলে রাখার দরকার নেই। কিন্তু এমন কম্বিনেশন করতে হলে রেগুলার রিংটিই প্রথমে পরা চাই। কেননা এটি আঙুলের গোড়ার দিকে থাকে।
নাকল রিং নিয়ে বাড়তি বাজেটের প্রয়োজনই নেই। কেননা এটি পরা হয় কেবল ট্রেন্ডের সঙ্গে থাকার জন্য। সে ক্ষেত্রে দামি এক সেটের চেয়ে কয়েক সেট সস্তা নাকলই ভালো। এতে আউটফিটের সঙ্গে স্টাইলিংয়ের অপশনটাও বেড়ে যায়।
সারাহ্ দীনা
মডেল: শ্রাবণী
জুয়েলারি: বিটস অ্যান্ড পিসেস
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন