সম্পাদকীয়
নিজের সত্তা ও অধিকার সম্পর্কে নারী প্রামাণ্যরূপে সচেতন হতে শুরু করে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে, গত শতাব্দীতে তা পরিগ্রহণ করে তাত্ত্বিক ভিত্তি। আজ অব্দি এর বিকাশ চলছে। এটা এমন এক প্রক্রিয়া ও সংগ্রাম, যার লক্ষ্য সব ধরনের লৈঙ্গিক অবমাননা ও বৈষম্য থেকে মুক্তি, আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা। কিন্তু কেবল নারীরাই তা চান? সমাজে অনেক মানবতাবাদী পুরুষ আছেন, তারাও আশা করেন নারীর থাকুক নিজের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার, আত্মবিকাশের অনুকূল পরিবেশ। তাই আমি বারবার বলি, নারীমুক্তি আন্দোলন মানে পুরুষের প্রতি বিদ্বেষ এবং তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নয়; বরং সমান অংশীদারত্বের ভিত্তিতে একসঙ্গে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে চলিষ্ণু এক সংগ্রাম। আমি আবার বলব, অর্থনৈতিক মুক্তিই নারীর জন্য বেশি দরকার, কেননা এটি তাকে পরনির্ভরশীলতা থেকে রক্ষা করবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দেবে, গড়ে তুলবে সম্মানজনক জীবনযাপনের পরিসর। যখন কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করেন—নারীর জন্য আপনার প্রথম চিন্তাটি কী? তখন বলি—কর্মসংস্থান। কারণ, আমরা জানি, মানুষমাত্রই কাজের মধ্য দিয়ে নিজের সম্মানজনক অস্তিত্বটি অনুভব করে, পরিবারে ও সমাজে আত্মপ্রতিষ্ঠার আস্বাদ লাভ করে।
সবকিছু আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি। এটাও মনে করি, যত প্রতিকূলতা থাকুক, মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। আজকের নারীর দিকে দেখুন। তারপর দুই দশক আগে ফিরে যান। পার্থক্য বুঝতে পারবেন। কুড়ি বছর বেশি সময় নয়। এই সামান্য ব্যবধানেই আমাদের নারীরা অনেক দূর এগিয়েছেন। কত কীর্তিমতীর জন্ম হয়েছে! নিজেদের যোগ্যতাবলে তারাই আজ সমাজ পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের প্রেরণার উৎস। হ্যাঁ, তাদের মধ্য থেকে আমরা বেছে নিয়েছি ১৪ জন প্রসিদ্ধ নারীকে, যারা দেশের বিভিন্ন সেক্টরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বমহিমায়।
এ ছাড়া প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় নিবন্ধ থাকছে। নিয়মিত বিভাগের জন্য এমন কিছু রচনা রয়েছে, যেগুলো পাঠকদের ভালো লাগবে। কাজেও আসবে, বোধ করি।
প্রখ্যাত সাংবাদিক দীপু হাসান আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গণমাধ্যমের সেবায় তিনি আত্মনিবেদিত ছিলেন। তার অকালপ্রয়াণে ব্যথিত বোধ করছি।
মহান স্বাধীনতা দিবস ও নারী দিবসের শুভেচ্ছা, সবার প্রতি।