বিশেষ ফিচার I ডাকটিকিটে আমাদের স্বাধীনতা
গত প্রায় পাঁচ দশকে বাংলাদেশের ডাকটিকিট ধারণ করেছে এই ভূখণ্ডের ইতিহাস ও জনচৈতন্য। নানা প্রতীকে, বিভিন্ন বর্ণে। লিখেছেন উদয় শংকর বিশ্বাস
চিঠি পাঠাতে সাধারণত স্ট্যাম্প বা ডাকটিকিট ব্যবহার করা হয়। সাধারণের কাছে এর বাইরে কোনো মূল্য নেই, কিন্তু সংগ্রাহকদের কাছে এর রয়েছে বহুবিধ গুরুত্ব। সামান্য একটি ডাকটিকিট অসামান্যভাবে প্রতিনিধিত্ব করে দেশকে এবং সেখানকার মানুষের চেতনাকেও। সে জন্য সব দেশেই রয়েছে ভিন্নমাত্রিক এক কদর। ১৯৭২ সালের ২৯ জুলাই বিমান মল্লিকের নকশাকৃত আটটি ডাকটিকিট প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তার পথচলা শুরু করে। নানা বিষয়ে ছয় শতাধিক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। এগুলোর মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ নতুনভাবে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ডাকটিকিটের সিংহভাগ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় দিবস, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারির মতো গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ নিয়ে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসকে নিয়ে স্মারক ডাকটিকিট (Commemorative Stamp) উদ্বোধনী খাম (First Day Cover), সিল (Cancellar) সহ বিভিন্ন পোস্টাল স্টেশনারি (Postal Stationary) প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। এসব পোস্টাল স্টেশনারির মাধ্যমে সহজেই স্বাধীনতা তথা জাতীয় দিবসের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা যেমন জানতে পারি, তেমনি বহির্বিশ্বে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে প্রতীকীরূপে প্রকাশ করতে পারি।
স্বাধীনতা দিবসের প্রথম টিকিট
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রথম স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ৩৯ী২৯ মি. মি. আকারের ২০, ৬০ ও ৭৫ পয়সা মূল্যমানের তিনটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। লাল, নীল ও বেগুনি রঙের টিকিট তিনটিতে আগুনের লেলিহান শিখার ইমেজ ব্যবহার করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী নিতুন কুন্ডু সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মূল প্রেরণাকে টিকিট তিনটিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলেন। তিনি টিকিটে ‘২৬ মার্চ প্রথম ১৯৭২ প্রথম স্বাধীনতা বার্ষিকী’ কথাটি ব্যবহার করেন এবং উপরে বাংলায় ‘বাংলাদেশ’ এবং নিচে ইংরেজিতে BANGLADESH কথাটি লেখেন। টিকিটগুলো ভারতের সিকিউরিটি প্রিটিং প্রেস (নাসিক) থেকে ছাপিয়ে আনা হয়। কারণ, তখন দেশে ডাকটিকিট ছাপানোর প্রযুক্তি ছিল না। শুধু তা-ই নয়, প্রথম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ একটি বিশেষ সিলমোহর ও উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করে।
দশম স্বাধীনতা বার্ষিকী
১৯৭২ সালে প্রথম স্বাধীনতা দিবসের পর দশ বছর অপেক্ষা করতে হয় দ্বিতীয়বার স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশের জন্য। ১৯৮১ সালে পালন করা হয় স্বাধীনতার দশম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ৫০ পয়সা ও ২ টাকা মূল্যমানের দুটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। প্রাণেশ ম-লের নকশায় প্রকাশিত টিকিট দুটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল প্রেরণা ও অর্জনকে দেখানো হয়। ৫০ পয়সা মূল্যমানের টিকিটটিতে দেখা যায় এক হাতে অস্ত্র ও অন্য হাতে বাংলাদেশের পতাকা হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে উল্লাস করতে, যা আমাদের স্বাধীনতা লাভের উচ্ছ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ। আবার সমৃদ্ধ বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলা হয়েছে ২ টাকার মূল্যমানের অপর টিকিটে। এ ছাড়া প্রকাশিত উদ্বোধনী খামে উল্লাসরত জনতার যে ছবি রয়েছে, তা বীর বাঙালির চিরায়ত শৌর্য-বীর্যেরই প্রতীক হয়ে ধরা দিয়েছে। ডাকটিকিটগুলো লিথোগ্রাফ প্রযুক্তিতে অস্ট্রিয়ার বিখ্যাত ব্রুডার রোজেনবাম (Bruder Rosenbaum) থেকে মুদ্রিত।
স্বাধীনতার ২০তম বার্ষিকী
আবার দীর্ঘ বিরতি, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ১৯৯১ সালে স্বাধীনতার ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পাঁচটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। প্রতিটি টিকিটের মূল্য ৪ টাকা। বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিটিং করপোরেশন থেকে ছাপানো এসব টিকিটের নকশায় মুক্তিযুদ্ধের পাঁচটি ভাস্কর্যের স্কেস ব্যবহার করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা, জয়দেবপুর চৌরাস্তার মুক্তিযোদ্ধা, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণ এবং সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ নিয়ে টিকিটগুলোর নকশা করা হয়। নকশাবিদ মাহবুব আকন্দ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে টিকিটের নকশা করেন। সাদা-কালো-গোলাপি রঙের সংযত ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি টিকিটগুলোকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। আমাদের অর্জিত স্বাধীনতার বীরত্বগাথা এই পাঁচটি টিকিটে সম্পূর্ণরূপে ধরা পড়েছে। শুধু ডাকটিকিট নয়, এ উপলক্ষে প্রকাশিত উদ্বোধনী খাম ও বিশেষ সিলমোহরেও একই রকম শিল্পের ছোঁয়ার দেখা মেলে।
স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী
যেকোনো দেশের জন্য স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ২৫ বছর উদ্যাপন অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু সেই বীজ রোপিত হয় ওই বছরের ২৬ মার্চ। এ জন্য প্রতিবছর মার্চের ২৬ তারিখে আমরা স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস একই সঙ্গে পালন করি। ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী পালিত হয় নানা আয়োজনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ঐতিহাসিক দিনটির স্মরণে বিশেষ আয়োজন করে। এ উপলক্ষে ছয়টি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। প্রতিটি টিকিটের মূল্য সমান অর্থাৎ ৪ টাকা। টিকিটগুলোর নকশা করেন আনোয়ার হোসেন, মোজাম্মেল হক, মো. শামসুজ্জোহা এবং মো. মতিওর রহমানের মতো অভিজ্ঞ নকশাবিদেরা। তারা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ও বাণিজ্যে বাংলাদেশের অর্জিত উন্নয়নকে তুলে ধরতে। একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা ও সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধকে নিয়ে টিকিটের নকশা করা হয়। এগুলোর আকার ৪৮ মি.মি.x৩২ মি.মি. যা প্রচলিত টিকিটের থেকে কিছুটা বড়। টিকিটগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করার কথা মাথায় রেখে উদ্বোধনী খামের আকারও বড় করা হয়। বিশেষ সিলমোহরে সূর্যের ছটা ব্যবহার করা হয় স্বাধীনতার অর্থকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য।
বঙ্গবন্ধুর প্রথম উপস্থিতি
মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত ডাকটিকিটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম উপস্থিতি মেলে ১৯৯৭ সালে, ৪ টাকা মূল্যের স্মারক ডাকটিকিটে। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত এ টিকিটে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু তার চিরাচরিত ভঙ্গিতে আঙুল উঁচিয়ে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন। আর পেছনে আছে স্বাধীনতার সময়কার লাল-সবুজ ও হলুদ রঙের মানচিত্রখচিত পতাকা ও তেজদীপ্ত জনতা। মো. মতিওর রহমানের নকশাকৃত টিকিটটির আকার ৪৮ মি.মি.x৩২ মি.মি.
জিয়াকে নিয়ে প্রকাশিত ডাকটিকিট
২০০৪ সালের ২৪ মার্চ তারিখে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ৫ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয় শিল্পী মৃণাল চক্রবর্তীর নকশায়। এতে ব্যবহার করা হয় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছেন এমন একটি ছবিকে। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৫ সালে একই কাজের পুনরাবৃত্তি করা হয়। এবার স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ১০ টাকা মূল্যের আরেকটি স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম, সিলমোহর ও তথ্যকণিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত টিকিটে দেখা যায়, জাতীয় স্মৃতিসৌধ রয়েছে এক পাশে এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি রয়েছে আরেক পাশে। এটির নকশা করেন আমিরুল ইসলাম সিকদার। এটিও স্বাধীনতা দিবসের দুই দিন আগে অর্থাৎ ২৪ মার্চ তারিখে প্রকাশিত। ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশিত হয় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের স্মারক টিকিট ও উদ্বোধনী খাম। ১০ টাকা মূল্যের টিকিটটিতে সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের মুখাকৃতি বাংলাদেশের মানচিত্রের মধ্যে দেখানো হয়েছে। এবারও নকশায় রয়েছে বাংলাদেশের পতাকা ও স্মৃতিসৌধ। আগের বছরের টিকিটটির সঙ্গে অনেক মিল আছে। শুধু রঙের যা পার্থক্য। নকশাকারও একই ব্যক্তি।
জাতীয় সংগীত
২০০৮ সালে প্রকাশিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের টিকিটটির কথা আলাদা করে বলতে হয়। দেশবরেণ্য শিল্পী কে জি মুস্তাফার নকশাকৃত টিকিটে দেখা যায় বিজয় উল্লাসরত দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে। সেই সঙ্গে আমাদের প্রিয় পতাকাকেও দেখানো হয়েছে এখানে। প্রকাশিত উদ্বোধনী খামে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়। খামটির নকশা করেন বিশিষ্ট ফিলাটেরিস্ট এ টি এম আনোয়ারুল কাদির।
উদ্বোধনী খামে শেখ হাসিনার উপস্থিতি
২০০৯ সালে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ৩ টাকা মূল্যের যে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়, সেখানে বঙ্গবন্ধুকে চিরাচরিত রূপে দেখা যায়। এটি প্রকাশিত হয় ২৫ মার্চ। কেন এক দিন আগে বের করা হয়, তার কারণ ডাক বিভাগ জানায়নি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রথমবারের মতো দেখা যায় প্রকাশিত উদ্বোধনী খামে। খামটিতে দেখা যায় তিনি শান্তির পায়রা উড়াচ্ছেন। এ ছাড়া জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও জাতীয় পতাকার উপস্থিতিও রয়েছে এখানে। সব মিলিয়ে বলা যায়, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত উদ্বোধনী খামগুলোর মধ্যে দৃষ্টিনন্দন একটি প্রকাশনা। টিকিট ও খাম উভয়েরই নকশা করেন নকশাবিদ জসিম উদ্দিন।
মিনিয়েচার শিট
২০১০ সালের স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত মিনিয়েচার শিটে প্রতিটি ৫ টাকা মূল্যমানের চারটি টিকিট আছে। মুক্তিযুদ্ধের চারটি স্মারক সৌধ নিয়ে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য সিরিজ’ টিকিটগুলোর নকশা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মারক স্মৃতিসৌধের মধ্যে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাবলিক লাইব্রেরি, গাজীপুরের সফিপুর এবং রংপুরের ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের স্মৃতিসৌধ। বঙ্গবন্ধুর ইমেজও এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। উদ্বোধনী খামে নিতুন কুন্ডুর অমর সৃষ্টি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাবাস বাংলাদেশ’-এর জলছাপ রয়েছে। একই রকম আরেকটি মিনিয়েচার শিট প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। স্বাধীনতার ৪০তম বার্ষিকীতে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য সিরিজের দ্বিতীয় পর্যায়ে তা প্রকাশিত হয়। এখানে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্কয়ার ফোয়ারা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, চট্টগ্রামের বাংলার বিজয় এবং কিশোরগঞ্জের দুর্জয় ভৈরব ভাস্কর্য স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া এখানে আছে চিরচেনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ২০ টাকা মূল্যমানের আরেকটি স্মারক ডাকটিকিট। এটির আকার অন্য চারটি থেকে অনেক বড়।
বেশি মূল্যের টিকিট
২০১২ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ থেকে স্বাধীনতা দিবসে আবার ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় আনোয়ার হোসেনের নকশায়। এতে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে জাতির জনকের ভাষণের বিখ্যাত আলোকচিত্র ব্যবহৃত হয়। সেই সঙ্গে ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ অমর উক্তিটি লেখা হয় ২৬ টাকা মূল্যমানের টিকিটটিতে। সম্ভবত ২৬ মার্চকে স্মরণ করে টিকিটের দামে এমন অভিনবত্ব আনা হয়। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২০১০ সালে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ৩৫ বছর পূর্তিতে ৫০ টাকা মূল্যমানের টিকিট প্রকাশ করেছিল, এরপর এবারই এত দামি টিকিট প্রকাশ করে। উদ্বোধনী খামে অস্ত্র হাতে উল্লাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে বাঙালি হিসেবে যে কারোর বুক ভরে যায়। উল্লেখ করার বিষয়, এবার প্রকাশিত ডাটাকার্ড প্রথমবারের মতো চার রঙে ছাপানো হয়েছে।
আরও যত ডাকটিকিট
২০১৩ সালে প্রকাশিত টিকিটের দাম আগের মতন ১০ টাকা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আত্মকথা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র প্রচ্ছদে যে আলোকচিত্রটি রয়েছে, টিকিটেও একই চিত্র দেখা যায়। আনোয়ার হোসেন এর নকশা করেছিলেন। ৪৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে প্রকাশিত ১০ টাকা মূল্যমানের টিকিটে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার ছবি আছে। নকশা করেন অভিজ্ঞ নকশাকার জসিম উদ্দিন। অপর দিকে আনোয়ার হোসেনের নকশায় ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালের স্বাধীনতা দিবসে। বঙ্গবন্ধুকে এবারও সম্মান জানানো হয়। পোস্টমার্কে ‘২৬শে মার্চ’ কথাটি আছে। ২০১৬ সালের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে প্রকাশিত স্মারক টিকিট ও উদ্বোধনী খামেও ভাষণরত বঙ্গবন্ধুকে দেখা যায়। বিশেষ সিলে ‘৩০ লাখ শহীদ’ কথাটি লিখে মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী শহীদদের স্মরণ করা হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধে নিহত শহীদদের সংখ্যা নিয়ে যে বিতর্ক বিরোধী শিবির তুলেছে, সেটিকে ভুল প্রমাণ করার জন্য এ কাজ করা হয়। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ আবারও স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। বহুরংবিশিষ্ট টিকিটটিতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতাস্তম্ভ ও পদ্মা সেতুকে স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে। ম্যুরালে অস্পষ্টভাবে বঙ্গবন্ধু রয়েছে। অপর দিকে বিশেষ সিলে মুষ্টিবদ্ধ উঁচানো হাত রয়েছে। বাঙালির প্রিয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। খামে আছে ২৬টি উড়ন্ত পায়রা। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রায় প্রতিবছরই স্বাধীনতা দিবসে ডাকটিকিট-উদ্বোধনীসহ বিভিন্ন ফিলাটেলিক উপকরণ প্রকাশ করে চলেছে।
লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষক
ছবি: লেখকের সংগ্রহ থেকে