বিশেষ ফিচার I প্রতিকূলতা পেরিয়ে পালোয়ান
একটি বা দুটি নয়, বাংলাদেশের প্রথম নারী খেলোয়াড় হিসেবে ইতিমধ্যে দশটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ‘ট্যালেন্ট হান্ট ২০০৮’ থেকে উঠে এসেছেন শিরিন সুলতানা। পরের বছর থেকে কুস্তিতে জাতীয় পর্যায়ে জিততে শুরু করেন স্বর্ণপদক। ২০১৭ পর্যন্ত প্রতিটি পদকই পুরে নিয়েছেন ঝুলিতে। অন্য খেলাতেও শিরিন অদম্য। রোইয়িং, কাবাডি, উশুতেও পেয়েছেন স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার মেয়ে শিরিন বিশ্বাস করেন, যোগ্যতার কোনো সদর বা মফস্বল হয় না। বরং নিজ শক্তিতে যেকোনো ক্ষেত্রে সফল অবস্থান তৈরি করে নেওয়া সম্ভব। বাকিটা জানাচ্ছেন জাহেরা শিরীন
রেসলিং বা কুস্তি কেন?
উত্তর: বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বের নারীরা প্রতিনিয়তই যৌন হয়রানিসহ নানা রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন। তা থেকে নিজেকে রক্ষা, সেই সঙ্গে আমার আশপাশের সব নারীকে নিরাপদ রাখার প্রচেষ্টায় শামিল হওয়ার ইচ্ছা থেকেই কুস্তিতে আসা।
রেসলিংয়ের সবচেয়ে পছন্দের ব্যাপার?
উত্তর: পছন্দ বা পেশা নয়, এটা তো এখন প্যাশন। রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে মনে হয়। হা হা হা…
পুরো পথচলায় নারী হবার কারণে কী কী বাধা পেরোতে হয়েছে?
উত্তর: নারী মানেই তো সংগ্রাম। ‘জিরো থেকে হিরো’ হতে গেলে যা যা করণীয়, তার সবই করতে হয়েছে। লোকের বিরূপ দৃষ্টি বা মন্তব্য কখনোই কানে তুলিনি আমি। যেমন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আমরা যখন অনুশীলন বা শরীরচর্চা করতাম, আশপাশের মানুষজন এমনভাবে ঘিরে থাকত যেন আমরা অদ্ভুত কোনো প্রাণী। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, দেশের পরিবেশ পরিবর্তন করা খুব জরুরি। নারীদের প্রতি মানসিকতা পাল্টে তাদেরকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। পাশে থাকা চাই।
আপনার মতো এই সেক্টরে যারা আসতে চায়, তাদের জন্য পরামর্শ?
উত্তর: রেসলিং খুব শক্ত খেলা। প্রচুর শারীরিক শক্তি দরকার হয় এর জন্য। হতে হয় শক্ত সমর্থ, তাই ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। আমি যখন ক্যাম্পে থাকি, জাতীয় দলের জন্য তিন থেকে ছয় ঘণ্টা নিয়মিত ব্যায়ামের পর আমি আলাদা করে আরও দুই ঘণ্টা বাড়তি সময় দিই শরীরকে ফিট রাখার জন্য। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে খাবারও খেতে হবে। সে সঙ্গে মানসিকভাবেও নিজেকে প্রস্তুত করা চাই প্রতিনিয়ত।
সবচেয়ে পছন্দের প্রতিযোগী? আর এমন কেউ যাকে হারিয়ে মজা পেয়েছিলেন?
উত্তর: ২০১৮ গোলকোস্ট অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে আমাকে নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। দারুণ ছিল সে লড়াই। আর কেনিয়াকে হারিয়ে খুব মজা পেয়েছিলাম।
কুস্তিগীর না হয়ে যদি অন্য কিছু হতে চাইতেন?
উত্তর: বাবা চেয়েছিলেন, আমি পুলিশ অফিসার হয়ে দেশের সেবা করি। মায়ের স্বপ্ন ছিল আমাকে শিক্ষিকা হিসেবে দেখার। আর আমি হতে চেয়েছিলাম ডাক্তার। হা হা হা…
কোন খেলায় আপনি অপটু?
উত্তর: আমি ভলিবলে খুবই খারাপ।
হারকে উতরে যাওয়ার জন্য কী করেন?
উত্তর: এত দিনের সংগ্রামের পর এই অবস্থান, এখানে থেমে যাওয়া চলবে না—এভাবেই নিজেকে বোঝাই। আজকে খারাপ করেছি, কাল ভালো করব—সে প্রত্যয় নিয়ে ধৈর্য ধরে থাকি।
জয়কে উদ্্যাপন করেন কীভাবে?
উত্তর: যখন জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে, যখন দেশের পতাকা ওড়ে—তখনই উদ্্যাপনটা আসলে হয়ে যায়।
যেকোনো ম্যাচের আগে যা অবশ্যই করেন?
উত্তর: সম্পূর্ণ মনোযোগ খেলার দিকে দেওয়ার চেষ্টা করি, যেন জিততে পারি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
উত্তর: তৃণমূলের খেলোয়াড়দের কোচ হিসেবে কাজ করার ইচ্ছা আছে আমার। তাদেরকে পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় দলে জায়গা করে দিতে চাই। তারাও যেন আমার মতো একটা দীর্ঘ সময় ধরে দেশের জন্য পদক নিয়ে আসতে পারে।
ওয়্যারড্রোব: সিকোসো
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন