কুন্তলকাহন I স্ক্যাল্প অ্যাকনে
চুলের আড়ালে বেড়ে ওঠা এই উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রয়েছে নানা উপাদান। বাড়িতে বসেই সেসবের ব্যবহার সম্ভব
মাথার ত্বকে ব্রণ হওয়ার মতো অস্বস্তিকর কিছু সম্ভবত নেই। এর ফলে চুলের আঁচড়ানো ও সঠিক যতœ নেওয়া কঠিন। ভঙ্গুরতাও দেখা দেয়। মাথার ত্বকে হওয়া খুশকি সারিয়ে না তুললে সেটি জমে লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। সৃষ্টি হয় ব্রণ। ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থযুক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার, তেল চিটচিটে ভাব, অপরিচ্ছন্নতাও এর কারণ।
প্রাকৃতিক উপায়ে মাথার ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায়
নিমপাতা পানিতে জ্বাল দিয়ে মিশ্রণটি ঠান্ডা করে নিতে হবে। ওই পানি ছেঁকে নিয়ে মাথার ত্বকে ঘষতে হবে। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণ দিয়ে মাথা ধুলেও উপকার মিলবে।
দুই টেবিল চামচ মেথিগুঁড়া দিয়ে পেস্ট তৈরি করে তা মাথার তালুতে মাখিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে মাথা ধুয়ে নিতে হবে।
দুই টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে সমপরিমাণ দারুচিনিগুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। তা মেখে আধা ঘণ্টা পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। দারুচিনির প্রদাহবিরোধী ও মধুর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান মাথার ব্রণ দূর করতে সহায়ক।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেল এবং ব্রণ হওয়ার ব্যাকটেরিয়া দূর করে। সঙ্গে পিএইচের ভারসাম্য রক্ষা করে। সমপরিমাণ পানি এবং অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে স্ক্যাল্পে দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে মিনিট পাঁচেক। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে অ্যাকনে তো সারবেই; চুলও হয়ে উঠবে মসৃণ, চকচকে।
অ্যালোভেরার রস হতে পারে স্ক্যাল্প অ্যাকনে সারানোর মোক্ষম দাওয়াই। এর নিয়মিত ব্যবহারে মাথার চুলকানি কমে যায়, আর ব্রণের ব্যাকটেরিয়াও দূর হয়।
টি ট্রি অয়েল মাথার ত্বকের শুষ্কতা কমায়। এটি পুষ্টি জুগিয়ে করে তোলে কোমল। টি ট্রি অয়েলে রয়েছে ‘টার্পিনস’, যা প্রাকৃতিকভাবেই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। ফলে এটি যেকোনো ধরনের সংক্রমণেরও ভালো দাওয়াই। হাতের তালুতে বেশ কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল নিয়ে মাথার ত্বকে সরাসরি মেখে খুব ভালোভাবে দশ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। সারা রাতের জন্য রেখে পরদিন চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দু-তিনবার।
লেবুর আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড ব্রণ দূর করে। লেবুর রস ভেজানো তুলা অথবা পরিষ্কার সুতির পাতলা কাপড় দিয়ে স্ক্যাল্পে ঘষে নিতে হবে কিছুক্ষণ। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুতে হবে। ব্রণ তো দূর করবেই, খুশকি থেকেও মুক্তি দেবে।
চটকানো পেঁপে স্ক্যাল্পে মাখিয়ে রেখে দিতে হবে ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে চুল। তেলতেলে ভাব ও মরা কোষ দূর হবে। ব্রণের সমস্যা তো কাটবেই। এ ছাড়া চুলের সুস্থতায় কার্যকর।
টমেটোর রস মাথার তালুতে মেখে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এটি মাথার ত্বকের সংক্রমণ দূর করার পাশাপাশি চুলের গোড়া শক্ত করে।
করণীয় আরও কিছু
একটি বড় দাঁতওয়ালা চিরুনি সব সময় ব্যাগে রাখতে হবে। নিয়মিত দিনে কয়েকবার চুল আঁচড়ালে রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে এবং লোমকূপ বন্ধ হওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে ব্রণের আশঙ্কা কমে।
ব্রণ প্রতিরোধ করতে খাদ্যাভ্যাসের প্রতি সচেতন হওয়াটা বিশেষভাবে জরুরি। ভাজাপোড়া বা প্রসেসড ফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে খাবারের তালিকায় পানি ও শাকসবজির পরিমাণ বাড়াতে হবে।
সরাসরি চুলে না দিয়ে পানিতে মেশানো শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
মাথার ত্বক ও চুলের ধরন বুঝে কন্ডিশনারসহ সৌন্দর্যপণ্যের অন্যান্য ব্যবহার সমীচীন।
কিছুতেই ব্রণ খোঁটা যাবে না, এতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
মাথা মোছার তোয়ালে ও চিরুনি সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
ব্রণের প্রকোপ খুব বেশি হলে ভালো ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যেতে হবে।
সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: বর্ণ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন