রূপরসদ I ব্লু অ্যালগি
এত দিন এর ব্যবহার ছিল শারীরিক সুস্থতার জন্য। খাদ্য হিসেবে। আর এখন এটি হয়ে উঠছে যেকোনো ত্বকে সব রকম সমস্যার কার্যকর সমাধান
সব স্কিনকেয়ার ট্রেন্ড সবার জন্য নয়। যেমন স্যালিসাইলিক অ্যাসিড শুধু অ্যাকনে আর পোর সারাতে কাজে লাগে, সালফার তৈলাক্ত ত্বকের বন্ধু। আর ব্লু অ্যালগি? এ হলো সব স্কিনের সব ধরনের সমস্যা দূর করার মহৌষধ। ত্বকের পোর ডিটক্স করার দরকার? ময়শ্চার প্রয়োজন? অথবা, ত্বকে সদ্য উঁকি মারা ফাইনলাইন মুছে দিতে হবে? সবকিছুতেই কার্যকর হতে পারে ব্লু অ্যালগি। ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়ায়। স্কিনকেয়ারের জন্য এই প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার নতুন নয়। ষাটের দশকে প্রথম বিখ্যাত জার্মান লাক্সারি কসমেটিক ব্র্যান্ড লা মের তাদের ময়শ্চারাইজার ক্রিমে এটি ব্যবহার করে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা জানেন যে ব্লু অ্যালগির পিগমেন্ট অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি দুর্দান্ত উৎস। তবে এখন আরও অনেক নামী কসমেটিক ব্র্যান্ড একে লুফে নিচ্ছে সুপার ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে। আর হয়ে উঠেছে ত্বকচর্চার প্রধান একটি উপাদান।
ব্লু অ্যালগির অনেক নাম। কায়ানো ব্যাকটেরিয়া বা স্পিরুলিনা। স্পিরুলিনা শব্দটি অনেকের পরিচিত। পুষ্টিবিদেরা একে সুপারফুড বলে থাকে। আফ্রিকা, মেক্সিকোতে রান্না করে খাওয়া হয়। আর এখন এর বহুগুণের জন্য স্বাস্থ্যসচেতন মানুষেরা স্মুদি, স্যুপ, স্যালাড—এসবে মিশিয়ে খাচ্ছে। এটি আদতে একধরনের শেওলা, যা নোনা, মিঠা—সব পানিতেই জন্মে।
এতে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এ, ই, কে, বিটা ক্যারোটিন, বি কমপ্লেক্স, লিপিড। ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড এবং খনিজ যেমন আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, কপার এবং গামা-লিনোলেনিক অ্যাসিড। সর্বোপরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দারুণ এক উৎস স্পিরুলিনা।
সব ধরনের ত্বকের জন্য এটি খুব ভালো উপাদান। সংবেদনশীল ত্বকের জন্যও। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এই উপাদানের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। বিভিন্ন স্কিন কেয়ার প্রডাক্টে তো থাকেই, আবার আলাদা করে ট্যাবলেট, পাউডার বা ফ্লেক হিসেবেও কিনতে পাওয়া যায়।
ব্লু অ্যালগিতে থাকা ক্লোরোফিল ও ক্যারোটিন স্কিন ডিটক্সিফাইয়ের কাজ করে। ভিটামিন ই ছাড়াও এতে রয়েছে সেলেনিয়াম এবং টাইরোসিন, যা শক্তিশালী অ্যান্টি এজিং প্রোপার্টি। অনেকেই জানেন, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে টাইরোসিনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যাল নির্মূল করে এবং ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। আর গামা-লিনোলেনিক অ্যাসিড কোষ মেরামতে সহায়তা করে। কোলাজেন ও ইলাস্টিসিটি বাড়িয়ে বলিরেখা কমায়। মসৃণতা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধির জন্য এটি খুবই ভালো একটি উপাদান। এর ভেতর থাকা প্রোটিন থেকে তৈরি অ্যামিনো অ্যাসিড ও অন্যান্য খনিজ উপাদান ত্বকের পানি ধরে রেখে আর্দ্রতা বাড়িয়ে তোলে। তাই শুষ্ক ত্বকের জন্য ব্লু অ্যালগি আদর্শ খাদ্য।
নানা ধরনের দূষণে শহুরেদের ত্বকে নানা উপদ্রব দেখা দেয়। ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়, স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে যেতে থাকে। অনেক সময় বয়স হওয়ার আগেই ত্বকের পরিণতি ঘটে। প্রতিদিনের স্কিন কেয়ার রুটিনে যদি ব্লু অ্যালগি রাখা হয়, তাহলে এ ধরনের সমস্যা খুব সহজেই মোকাবিলা করা যায়। স্কিন কেয়ার সিরাম, ময়শ্চারাইজার, অ্যান্টি এজিং ক্রিম, এক্সফোলিয়েটর মাস্ক—সবকিছুতেই এর ব্যবহার হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না ফেসওয়াশও। চাইলে বাসায় ব্লু অ্যালগি পাউডার কিনে মাস্ক বানিয়ে ব্যবহার করা যায়। এতে একসঙ্গে ত্বক এক্সফোলিয়েটেড ও টান টান হয়ে উঠবে। ব্রণ অপসারণের ক্ষমতাও এর আছে।
উপকরণের ধরন: হাইড্রেটর, ডিটক্সিফায়ার, এক্সফোলিয়েটর।
মূল কাজ: ত্বকের বলিরেখা কমানো, আর্দ্রতা বাড়ানো, মৃতকোষ দূর করা।
যে ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা যায়—সব ত্বকেই।
পদ্ধতি: মাস্ক, স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ক্রিম বা লোশন ফর্মে প্রয়োগযোগ্য।
ফাহমিদা শিকদার
মডেল: মৌসুম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন