ফিচার I শাড়িতে নতুন চমক
জমকালো যেকোনো অনুষ্ঠানের বাইরেও নিজেকে সাজানো যেতে পারে এই শাড়িতে। আরামদায়ক ফ্যাব্রিক ও চমকপ্রদ ডিজাইনের বদৌলতে
এই অঞ্চলে কোনো মেয়ের শাড়ি পছন্দ নয়, এমনটি বিরল। উপমহাদেশীয় নারীর সাধারণ এই পরিধেয় অসাধারণ হয়ে ওঠে স্টাইলিং ও বিচিত্র নকশার কারণেই। শাড়ি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট কম হয়নি, এখনো হচ্ছে। এর ম্যাটেরিয়ালে যেমন ভিন্নতা এসেছে, তেমনি ডিজাইনেও যোগ হয়েছে নতুন নতুন থিম আর নানান মোটিফ। এমনকি ফিউশনও। উৎসবে থিমভিত্তিক শাড়ি আজকাল পোশাক সংস্কৃতির অংশ। এখন প্রথাও ভেঙে ফেলতে চাইছেন ডিজাইনাররা। তবে গতানুগতিকতাই বেশি চোখে পড়ে।
অনেক ডিজাইনারের কাছে পোশাক এখন ক্যানভাস। তাতে শিল্পকলার চর্চা করছেন তারা। তেমনি শাড়িতেও পটচিত্র, ফুল, রিকশা পেইন্ট, মুখোশ ইত্যাদি চিত্রিত হচ্ছে। ব্যতিক্রমও আছে। যেমন শাড়িতে যামিনী রায়ের ছবির সঙ্গে জামদানি মোটিফের ফিউশন, পারসিয়ান টিউলিপ কিংবা টাইলস ডিজাইন বা মৈথিলীর মধুবনী মোটিফ, রামায়ণের চরিত্র, নেটিভ আমেরিকান কোনো মেয়ের দৃঢ়তা নয়তো অচেনা কিছু মুখ- এই সব থিম আর মোটিফ নিয়ে কাজ করেছেন অনেকেই। বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক উপাদান দেশীয় পোশাকের অংশ হয়ে উঠেছে। ফ্যাব্রিকেও গতানুগতিক ধারার বাইরে আসার প্রয়াস লক্ষণীয়। বিশেষত তাঁত, খেস কটন, খাদি, দেশি সিল্ক ও মসলিনে। কাপড়ের সর্বোচ্চ মান অক্ষুণ্ন রেখে।
সপুরা, উষা, মোল্লা সিল্ক এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। রাজশাহী অঞ্চলে উৎপাদিত রেশমের কাপড়ও উল্লেখযোগ্য। সপুরা মসলিন ও সিল্ক ফিউশনেও কাজ হচ্ছে এখন। প্রথমটির বিশেষত্ব হলো, এটি টিস্যুর মতো ফুলে থাকে না। স্থিতিস্থাপকতায় তা সিল্কের সঙ্গে তুলনীয়। উল্লেখ্য, হাতের কাজের শাড়িতেও ফুটে উঠছে এসব ফর্মের নানান নকশা। এ ধরনের পরিধেয় সুলভ করে তোলাই এখন অনেক শাড়ি ডিজাইনারের মূল লক্ষ্য।
তা ছাড়া বিভিন্ন ট্রেন্ডি ডিজাইন যেমন মনস্টেরা, এরাবিয়ান ফ্লাওয়ার মোটিফ আর পারসিয়ান অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট ইত্যাদি কাজ হচ্ছে শামু সিল্কের ওপর। এগুলো ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে ডিজিটাল প্রিন্ট।
শাড়িতে মানুষের নানান এক্সপ্রেশন এখন খুব জনপ্রিয়। এ ক্ষেত্রে নেটিভ আমেরিকান ও সাব-কন্টিনেন্ট মানুষের বিচিত্র অভিব্যক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে দেদার। হাসি, চাউনি, দৃঢ়তার প্রকাশ এতে লক্ষণীয়। এক্সপেরিমেন্টাল এ ধরনের কাজ নিয়ে ডিজাইনারদের মত হলো- মানুষের মুখের চেয়ে বড় কোনো গল্প তো আসলে হয় না।
ডিজিটাল প্রিন্টের আরও কিছু কাজ হচ্ছে জামদানি ও ইন্ডিয়ান ফোক আর্ট নিয়ে। জামদানি মোটিফের একক ব্যবহারই যথেষ্ট। এতে বাড়তি কিছু যোগ করার দরকার পড়ে না। অন্যদিকে ফোক আর্টের প্রতি ঝোঁক থেকেই অনেক শাড়ি নকশাকার ফিউশনের চেষ্টা করছেন।
সিল্ক নিয়ে বিস্তর কাজ হচ্ছে। সঙ্গে ডিজাইন আর রঙ সেগুলোয় দিচ্ছে অনন্যতা। বিয়ের অনুষ্ঠানে জমকালো সাজের বাইরে আলাদা মাত্রায় নিজেকে সাজাতে চাইলে এর জুড়ি নেই। শাড়ি তৈরি হচ্ছে মধুবনী মীন মোটিফ ও মরোক্কান ডিজাইনেও। সঙ্গে জমাটি জোড় একই মোটিফের এমব্রয়ডারি করা ব্লাউজ।
এন্ডি আঁচলের হ্যান্ডলুম কটনের নরম শাড়িতে ব্লক আর এমব্রয়ডারির মিশেলেও কাজ রয়েছে অনেক ডিজাইনারের কালেকশনে। ব্লকে জামদানি মোটিফ এবং এমব্রয়ডারিতে মধুবনী আর বুটি। ব্লক বাটিকে আনা হচ্ছে ভিন্নতা। একেকটি ডিজাইনে। সঙ্গে এমব্রয়ডারি কিংবা হাতের কাজের মিশেল।
এমনই অভিনব সব থিম আর মোটিফে শাড়ি তৈরির কাজ করছে তরুণ উদ্যোক্তা সানজিদা রহমান অমির ফ্যাশন হাউজ অম’স অ্যালে। প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে, নানান নিরীক্ষায় তৈরি এ প্রতিষ্ঠানের শাড়িগুলো অন্যতর লুক তৈরিতে চমৎকার বিকল্প হতে পারে। এ ছাড়া পটের বিবি, ওয়্যারহাউস, শৈলীসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানেও মিলবে এক্সপেরিমেন্টাল সব প্রিন্ট আর প্যাটার্নের শাড়ি।
শুধু যে শাড়ির নকশা নিয়ে নিরীক্ষা হচ্ছে তা নয়। স্টাইলিংয়েও এসেছে অভিনবত্ব। অভ্যস্ততা থেকে বেরিয়ে নতুন সব লুকে নারীরা শাড়ি জড়িয়ে নিচ্ছেন ছকভাঙা নিয়মে। সেলাইবিহীন বারো হাতি ক্ল্যাসিক এ পোশাক হয়ে উঠছে স্টাইল স্টেটমেন্টের অংশ। একসময়ের মা-খালাদের ওয়্যারড্রোব এসেনশিয়াল কিংবা বড়জোর বিয়ের স্টেপল হিসেবে ব্যবহৃত এ পোশাক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মিলেনিয়ারদের মধ্যেও। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম থেকে টুইটার- সোশ্যাল মিডিয়ার পেজগুলো এই ট্রেন্ডের জোরালো জানান দিচ্ছে। প্রিন্ট, প্যাটার্ন থেকে পরার ধরনে ভিন্নতা এসেছে বটে, কিন্তু বিলুপ্ত হবার নয় শাড়ি। হ্যাশট্যাগ মাই শাড়ি মাই ওয়ে বা শাড়ি নট সরির মতো স্লোগানগুলোতেই তা সুস্পষ্ট। তবে এর সমকালীন ধারায় আঁচল নিয়েই বেশি মাতামাতি। কখনো কাঁধের চারপাশে জড়িয়ে অফ শোল্ডার স্টাইল তো কখনো ক্রস র্যাপের মুনশিয়ানা। কাঁধে ফেলে না রেখে স্কার্ফের মতো গলায় পেঁচিয়ে পরাটাও এখন ট্রেন্ডি। কুঁচিতেও দেখা যায় নানান নিরীক্ষা। তাতেই শাড়ি কখনো দেখায় স্কার্টের মতো, তো কখনো ধুতি, প্যান্ট অথবা গাউনের মতো। কেপ, কোট এমনকি জ্যাকেট জড়িয়ে নেওয়ার চলও বেশ কয়েক বছর ধরেই জনপ্রিয়। সঙ্গে কোমর বন্ধনীতে পরিপাটি কেতাদুরস্ত লুক পছন্দ করছেন অনেকেই। তাই শাড়ি এখন ছোটদের, বড়দের- সকলের। যেমন বাসায় পরার, তেমনি দাওয়াতে যাওয়ার আবার ফরমালও। রোজকার অফিস, মিটিং, প্রেজেন্টেশন পেরিয়ে দেশের বাইরেও চমকপ্রদ পরিধেয় এটি।
তাসমিন আহমেদ
মডেল: শিলা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: অম’স অ্যালে
ছবি: সৈয়দ অয়ন