ই-শপ I টিপ
বৈশাখের বাঙালিয়ানায় টিপ নারীর অপরিহার্য অনুষঙ্গ। চিরায়ত লাল টিপের পাশাপাশি বিচিত্র উপাদানে অলংকৃত টিপের চলও শুরু হয়েছে। ভার্চ্যুয়াল দোকানগুলো সাজিয়েছে এসবের পসরা।
অহং
২০১৯ সালে শুরু। কর্ণধার নিশাত ফেরদৌস আনিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী। নিজেও টুকটাক হাতে তৈরি টিপ কিংবা গয়না পরতে পছন্দ করেন। সে থেকেই ভাবনা আসে বাজেট ফ্রেন্ডলি কিছু তৈরির। অহং শব্দটার আক্ষরিক অর্থ হলো আমিত্ববোধ। আনিকার মতে, ‘নিজেকে নতুন রূপে সাজিয়ে দেখার জন্য ছোটখাটো গয়না বা টিপের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই ভাবনা থেকেই নামটা বেছে নিই।’ অনলাইনে চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অফলাইনেও বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেয় অহং। ভার্চ্যুয়াল এই দোকানে হাতে তৈরি টিপ বিক্রি হয়। বিভিন্ন আকারের টিপের পাশাপাশি উপকরণেও ভিন্নতা আছে। কড়ি, ঝিনুক, শঙ্খ, কাঠের চার্ম কিংবা মেটাল- এসবই শোভা পায় এতে। হাতে আঁকা কিছু টিপ ছাড়া এদের প্রায় সবই পুনরায় ব্যবহার উপযোগী। আঠা শেষ হয়ে গেলেও সহজেই অন্য টিপের উপর বসিয়ে নেওয়া যায়। ক্রেতাদের সুবিধার্থে তারা বিভিন্ন আকার এবং রঙের প্লেইন টিপও সংগ্রহে রাখেন। মূল্য সাধ্যের মধ্যে। ডিজাইন টিপ ২০ থেকে ৮০ টাকা। প্লেইন টিপের বক্স ৪০ থেকে ৫০০ টাকা। এগুলো ছাড়াও কাস্টমাইজড টিপ তৈরি করে থাকে এই ই-শপ। শাড়ি কিংবা যেকোনো আউটফিটের সঙ্গে ম্যাচ করে অর্ডার করা যায়। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছু চার্জ যোগ হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা বিবেচনায় রেখে টিপ ও গয়না তৈরির অর্ডার নিয়ে থাকে অহং। টিপের পাশাপাশি বিভিন্ন গয়না এবং অনুষঙ্গ যেমন আংটি, চাবির রিং, লকেট কিংবা চুড়ি পাওয়া যায় এখানে। সবকিছুই কাস্টমাইজ করা যায়। খুব কম সময়েই পেজটি পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। পেজটির লিঙ্ক: https://www.facebook.com/ohongKothon/
অয়োময়
২০১৬ সালের জুলাইতে যাত্রা শুরু। টিপকে শৈল্পিক ও আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টায় অয়োময়ের সূচনা করেন ইশরাত জিনাত চৌধুরী। এখানকার সব পণ্যেই হস্তশিল্পের প্রাধান্য। হাতে আঁকা মোটিফের মধ্যে বেশি কাজ দেশীয় ফুল নিয়ে। ইশরাতের মতে, এসব ফুল বরাবরই অবহেলিত। কাশ, কদম, শিমুল কিংবা পলাশ, অথবা কচুরিপানা- এসব ফুলের মাধ্যমেও খুব সহজে আমাদের সংস্কৃতিকে বহির্বিশ্বে উপস্থাপন করা যায়। টিপ কিংবা পরিধেয় বস্ত্রে এই ফুল এঁকে ইশরাত ছড়িয়ে দিতে চান সবার মধ্যে। তার ই-শপে প্রতিটি টিপ ৩০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। হাতে আঁকা বড় টিপ ৫০ টাকা। বর্তমানে মেটাল চার্ম বসানো টিপগুলোর অনেক চাহিদা। প্রতিটি ৬০ টাকা। চার্ম বসানো ছোট টিপ, ৩০ টাকা। অয়োময় মসলিন, এন্ডি কটন, সিল্ক, লিনেন এবং কটনের মতো আরামদায়ক কাপড় ব্যবহারে পরিধেয় বস্ত্রের কাজও করে থাকে। ইশরাত বলেন, ‘আমাদের প্রোডাক্ট গ্রাহককে আনন্দ দিলে আরও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।’ দেড় বছর ধরে কাজ করে আসা এই ই-শপের বর্তমান ফলোয়ার প্রায় ৫ হাজার। পেজটির ফেসবুক লিঙ্ক: https://www.facebook.com/AuyomoyArt/। ই-শপটি কলকাতার হাওড়ায় ভারতীয় পণ্যের পাশাপাশি নিজেদের সামগ্রী প্রদর্শন এবং একটি ফ্যাশন শোতে অংশ নেয়, যেটি ‘দুই বাংলার মৈত্রী উৎসব’ নামে পরিচিত ছিল। ভারতে তাদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে।
ক্রোমা
এক নারীকে নিজের বানানো কাঠের গয়না পরতে দেখা থেকেই আসে ই-শপের প্রেরণা। সোহানা লাবণী, আর্কিটেকচার ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। শুরুতে তিনি শুধু কিছু কাঠের গয়না বানিয়ে নিজেই পরার কথা ভাবছিলেন। দেখলেন, অন্যদের মধ্যেও এসবের চাহিদা আছে। অনলাইনভিত্তিক কিছু পেজের তুলনায় ভালো কাজ করার আত্মবিশ্বাসও ছিল তার। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে ‘ক্রোমা’। মূলত কাঠের গয়না নিয়ে কাজ করলেও তাদের টিপগুলো অনন্য। সবাই নকশা কিংবা ফুলকেন্দ্রিক টিপ পরেন, সেগুলো থেকে ক্রোমা একেবারেই আলাদা। লাবণী বলেন, ‘বেশির ভাগ কাজ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট কিংবা ফ্রেম করা ডিজাইনের। কাজগুলো হয়তো কোনো নির্দিষ্ট ট্রাইবকে চিত্রিত করবে অথবা কোনো অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ফর্ম।’ টিপের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত পাঁচ ধরনের ফর্মে কাজ করেছে ক্রোমা- বুদ্ধ, প্রকৃতি, পূজা, বৈশাখ আর গেমিং। ভবিষ্যতে আরও বিমূর্ত কিছু ফর্ম নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে তাদের। বড় টিপের উপর কাঠ কেটে বসিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। প্রতিটি ২৫ টাকা। তবে পাঁচটার সেট ১২০ টাকা। ভার্চ্যুয়ালি দোকানটির ফলোয়ার ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। পেজটির ফেসবুক লিঙ্ক: https://www.facebook.com/Chromajewelries/। লাবণী বলেন, ‘ক্রোমা থেকে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি নিজেকে অন্বেষণ করতে পারা!’ যারা কাঠের গয়না পরতে ভালোবাসেন, তাদের কাছেও এই ই-শপ পছন্দের ঠিকানা। এরই মধ্যে মনুমেন্টস অব ঢাকা, বৈশাখ, পূজা আর ইজিপশিয়ান চিত্রলিপির মতো বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে কাঠের গয়না তৈরি করেছে ক্রোমা।
শিরীন অন্যা
ছবি: ইন্টারনেট