কভারস্টোরি I বইয়ের বৈভব
জ্ঞানই আনন্দ। উৎস প্রকৃতি, অভিজ্ঞতা, বই। তবে মানুষ যা শিখেছে, জেনেছে, বুঝেছে এবং ভেবেছে- সবই প্রামাণ্য হয়ে আছে তাদেরই লেখা অজস্র বইয়ে। সত্য সেখানেই। আনন্দও। লিখেছেন স্বকৃত নোমান
মানবসভ্যতা বিকাশে বইয়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। জ্ঞানসমুদ্রের তরঙ্গধ্বনি শোনা যায় বইয়ের পাতায়। যুগে যুগে অনুসন্ধিৎসু মানুষ যে বিচিত্র জ্ঞান আহরণ করেছে, তারই লিখিত রূপ বই। এটি সভ্যতার অগ্রগমনের পথপ্রদর্শক।
বইকে মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলা হয়। কারণ অনেক। তবে যেটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, সেটি হলো, বই থেকে অর্জিত জ্ঞান আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে, ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। চিন্তা ও কল্পনায় গতি সঞ্চার করে। অবিকশিত মানবসন্তান পূর্ণাঙ্গ মানুষ নয়। মানুষের আকার ও পরিচয় সে বহন করে মাত্র। বাস্তবে সে তখন অন্যান্য প্রাণীর মতোই। জ্ঞান তাকে এই দশা থেকে মুক্তি দেয়। মানুষের ইতিহাস জ্ঞানের ইতিহাস। জ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়েই মানুষ হিসেবে তার বিকাশ ঘটেছে। ইতিহাস-পূর্ব কালে কেবল অভিজ্ঞতাই ছিল মানুষের সম্বল; বর্ণমালা আয়ত্তের বহুকাল পর যখন মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার হলো, তখন থেকে সভ্যতার আমূল বদল ঘটলো। বই হয়ে উঠলো তার বিকাশের প্রধান সূচক।
মানুষ বই পড়ে মনের খোরাকের জন্য, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং নিজেকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার জন্য। মানবজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার সংরক্ষণাগার হচ্ছে বই। মানুষের চিরন্তন অভিপ্রায় হলো অজানাকে জানা। বিশ্বপ্রকৃতির আদি-অন্তহীন রহস্যের উন্মোচনে সাহায্য করে বই। দেয় নতুন তথ্যের জোগান, নতুন আনন্দ। মনীষী স্পিনোজা বলেছিলেন, ‘ভালো খাদ্যবস্তু পেট ভরায়, কিন্তু ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।’ দার্শনিক দেকার্তে বলেছিলেন, ‘ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সঙ্গে কথা বলা।’ নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল।’ জন মেকলের মতে, ‘প্রচুর বই নিয়ে গরিব হয়ে চিলেকোঠায় বসবাস করবো, তবু এমন রাজা হতে চাই না যে বই পড়তে ভালোবাসে না।’ নরমান মেলর বলেন, ‘আমি চাই পাঠরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়।’ ফরাসি ঔপন্যাসিক জ্যঁ-মারি গুস্তাভ ল্য ক্লেজিও বলেছিলেন, ‘বই হচ্ছে সেই মহামূল্যবান ধন, যা যেকোনো স্থাবর সম্পত্তি কিংবা টাকাপয়সার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।’ কবি ওমর খৈয়াম তাঁর কল্পিত স্বর্গভূমিতেও বইয়ের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেছিলেন। মার্টিন এফ টুপার বলেছিলেন, ‘একটি ভালো বই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু, আজ এবং চিরকালের জন্য।’ সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত-যৌবনা- যদি তেমন বই হয়।’ রুশ কথাসাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে যদি উত্তম বলে কিছু থাকে, তার জন্য আমরা বইয়ের কাছে ঋণী। বই আমাদের জন্য অতীত আর ভবিষ্যতের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দেয়।’ লেভ তলস্তয় বলেছেন, ‘জীবনে তিনটি জিনিস প্রয়োজন- বই, বই এবং বই।’
যুগে যুগে এমনিভাবে শত শত মনীষী বই পড়ার গুরুত্ব মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। বই পড়লে আমাদের চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ে এবং তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। সময়ের সঙ্গে এগিয়ে থাকা যায়। গ্রিসের থিবসের লাইব্রেরির দরজায় খোদাই করা আছে যে কথাটি, সেটি হলো ‘আত্মার ওষুধ’। অর্থাৎ গ্রিকদের বিশ্বাস, বই হলো আত্মার চিকিৎসার প্রধান উপকরণ। চীনারা বলত, ‘বই হলো এমন একটা বাগান, যা পকেটে নিয়ে ঘোরা যায়।’ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বই পড়ার প্রতি এত বেশি মনোযোগী ছিলেন যে লাইব্রেরি কক্ষে কর্মচারীরা তাঁর উপস্থিতি পর্যন্ত টের পেতেন না। তাই বহুবার তিনি লাইব্রেরি কক্ষে তালাবন্দি হতেন। বই পাঠের প্রতি মনোযোগী ছিলেন বলেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন অগাধ পান্ডিত্য ও বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী।
আমরা সব সময়ই শুনে এসেছি যে বিশ্বকে জানতে হলে বই পড়তে হবে। যত বেশি পড়বো ততই আমরা মানুষ চিনবো। কিন্তু বই যে আমাদের নিজেদেরও চিনতে শেখায়, তা কি আমরা জানি? আমরা যা ভাবছি, আমাদের সবটুকু কি শুধু ততটুকুই? এর বেশি আর কিছুই কি লুকিয়ে নেই আমাদের মধ্যে? নিশ্চয়ই আছে। বই আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিষয়কে চিনতে শেখায়। যে অভিজ্ঞতা আমাদের বাস্তব জীবনে হয়নি, বা হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই, ঠিক তেমনই কোনো পরিস্থিতিতে নিয়ে যায় বই। যে কষ্টের ছিটেফোঁটাও আমাদের জীবনে নেই, ঠিক সেই কষ্টের অভিজ্ঞতা আমরা এতে পাই। যাকে হয়তো বাস্তব জীবনে নিজের আশপাশে কল্পনাও করতে পারি না, কোনো না কোনো বইয়ের বদৌলতে ঠিক সেই মানুষটিকেই আমরা দেখতে পাই। আপনি যা পড়ছেন, তা মূলত কারও বিশেষ জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা। জ্ঞানের কথা, সেই অভিজ্ঞতার কথা আপনি জানতেন না। বই পড়ার মধ্য দিয়ে জানলেন। সমৃদ্ধ হলেন। একটি ভালো বই আপনাকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়।
বই পড়ার অভ্যাসের মধ্য দিয়ে আমাদের শব্দভান্ডার বাড়ে। আমরা যত বেশি বই পড়ি, তত বেশি আমাদের ভান্ডারে নতুন নতুন শব্দ যোগ হতে থাকে। নিজের ভাষার অনেক শব্দ আমাদের আয়ত্তে নেই। হয়তো সেসব অজানা শব্দ আমাদের অনুভূতি, আমাদের চিন্তা অন্যের কাছে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্যই সৃষ্ট। বই পড়ে আমরা নতুন নতুন শব্দ শিখি, সেগুলো ব্যবহার করে অন্যের সামনে নিজেকে আরও স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে পারি। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আমরা তো সমাজে একা বসবাস করতে পারি না। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আমাদের চলতে হয়। যোগাযোগ আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যারা বই পড়ে, তারা সহজেই অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তারা জানে, কোন পরিস্থিতিতে কী কথা বলতে হয় এবং কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। যারা বই পড়ে না, তারা অনেক বিষয়েই অজ্ঞ এবং সচেতন নয়। যারা কিছুই জানে না, তাদের আসলে অন্যকে বলারও কিছু থাকে না। বই-ই পারে আপনাকে পৃথিবীর সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে যুক্ত করতে।
আইনস্টাইন বলেছিলেন, জ্ঞান থেকে বেশি জরুরি হচ্ছে কল্পনা। কেননা, জ্ঞান সীমিত আর কল্পনা সীমাহীন। আমরা অসম্ভব কোনো কিছুকে সম্ভব শুধু তখনই করতে পারি, যখন আমাদের সেই অসম্ভবকে কল্পনা করার ক্ষমতা থাকবে। আমাদের চারদিকে আজ যত আবিষ্কার, যত যুগান্তকারী আইডিয়া- সবটাই কিন্তু কল্পনা থেকেই শুরু হয়েছে। মানুষ চাঁদে যাওয়ার আগে চাঁদ কী, চাঁদে কীভাবে যাওয়া যায়, তা ভেবেছে। মঙ্গলে যাওয়ার আগে মঙ্গলগ্রহ কী, সেখানে কীভাবে যাওয়া যায় তা কল্পনা করেছিল। কম্পিউটার আবিষ্কারের আগে এই যন্ত্র সম্পর্কে কল্পনা করেছে মানুষ। কল্পনা হচ্ছে সৃষ্টির প্রথম শর্ত। আপনি যদি কল্পনা করতে না পারেন, তবে আপনাকে দিয়ে সৃষ্টি হবে না। যে মানুষটি কল্পনা করতে পারে না, সে তো পরিপূর্ণ মানুষ নয়। বই আমাদের এই কল্পনাশক্তিকে জাগিয়ে তোলে, বাড়িয়ে দেয়।
ধৈর্য মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যে মানুষ যত বেশি ধৈর্যশীল, সে তত বেশি সফল। নিয়মিত বই পড়া মানে ধৈর্যের অনুশীলন। একজন পড়ুয়া মানুষের মনোযোগ এবং ধৈর্য নিঃসন্দেহে অন্য যে কারও চেয়ে বেশি হয়। যারা বই পড়তে ভালোবাসে, তাদের একটি বই শেষ না করে উঠতে পারার পেছনে ধৈর্য নয়, হয়তো বইয়ের বিষয়বস্তু কিংবা কাহিনির প্রতি অদম্য আকর্ষণ কাজ করে। কিন্তু সেই সঙ্গে এটিও আমাদের বুঝতে হবে যে, এই আকর্ষণ কখনোই এক দিনে গড়ে ওঠে না। উল্লেখ প্রয়োজন, তথ্যপ্রযুক্তির এখনকার যুগে তরুণদের মধ্যে একাগ্রতা, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের যে অভাব- তার মূলে বইবিমুখতারও একটা হাত আছে। কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ট্যাব ইত্যাদি মানুষের অনেক কাজ সহজ ও সংক্ষেপ করে দিয়েছে। বই বাদ দিয়ে যারা এর ফাঁদে পড়েছে, তাদের মস্তিষ্ক হয়ে পড়েছে যন্ত্রনির্ভর। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বই পড়ে না, কিন্তু স্মার্টফোনে বেশি সময় কাটায়, তারা অধৈর্য ও অস্থির হয়ে থাকে। একগুঁয়েমি ও আত্মসর্বস্বতা তাদের চালিত করে। আমরা ধরে নিই যে, তারা অনেক বুদ্ধিমান; কিন্তু মোটেই তা নয়। তারা চিন্তায় একমুখী, বুদ্ধিতে যান্ত্রিক। অথচ বই পড়লে তাদের ভাষাবোধ থেকে শুরু করে চিন্তা ও কল্পনা, বিবেক ও মনুষ্যত্ব- সবই নানা মাত্রায় বিকশিত হতে পারতো। প্রতিদিন যদি বই পড়ার অভ্যাস করা যায়, তবে দেখবেন, আপনার মনোযোগ ও ধৈর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজে যাওয়ার আগে ১৫-২০ মিনিট পড়ার অভ্যাস করলে অবাক হয়ে দেখবেন যে, আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী হতে পারছেন, ধৈর্যশীল হয়ে উঠছেন।
তরুণ প্রজন্মকে বইপাঠের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। তাদের মধ্যে কীভাবে এই অভ্যাস গড়ে তোলা যায়? লেখা বাহুল্য নয়, প্রথমে তা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। পরিবার হলো মানুষের জীবনে প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ স্কুল। নৈতিক-সামাজিক যত ধরনের গুণাবলি আছে, সবকিছুর শিক্ষা হতে হবে পরিবার থেকে। ছোটবেলা থেকেই সন্তানের হাতে তুলে দিতে হবে বই। পাঠযোগ্য একটি বই আপনার সন্তানের মনোজগৎকে প্রভাবিত করবে। আলোড়িত করবে। বয়স অনুযায়ী বইগুলো সন্তানের হাতে নিয়মিত তুলে দিতে হবে। খেলাধুলা, পারিবারিক বিনোদনের পাশাপাশি মনের বিকাশের জন্য বইয়ের বিকল্প নেই। তবে তা হাতে তুলে দিলেই যে আপনার সন্তান পড়তে বসে যাবে, এমন নয়। পরিবারে সেই পরিবেশ থাকতে হবে। আপনাকেও পড়তে হবে। প্রতিদিনই শিশুর সঙ্গে কিছু না কিছু আপনিও পড়ার চেষ্টা করুন। বই পড়তে আপনার সন্তানকে উৎসাহিত করুন। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বইয়ের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে সবার আগে অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। ছুটির দিনগুলো কাটাতে বইকে বন্ধুর মতো সঙ্গে রাখুন। কোথাও বেড়াতে গেলে পরিবারের প্রত্যেকের জন্য অন্তত একটি করে বই ব্যাগে ভরে নিন।
একটা গল্প বা উপন্যাস পড়ে আপনার ভালো না লাগার মানেই কি দুনিয়ার সব বই একই রকম একঘেয়ে বা বিরক্তিকর? তা মোটেই নয়। কাজেই বই পড়াকে অর্থহীন বলার আগে কয়েক রকম বই পড়ে দেখতে পরামর্শ দিন আপনার সন্তানকে। তার কাছ থেকে জেনে নিন, কোন বইটি পড়তে ভালো লাগছে। তারপর সে রকম আরও কিছু বই কিনে দিন তাকে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, সমাজ, প্রকৃতি- এইসব বিষয়ে রচিত বইয়ের পাশাপাশি মনীষীদের জীবনী পড়তে ধীরে ধীরে আগ্রহী করে তুলুন।
বইয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পাঠাগার এবং পাঠচক্র বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। পাঠাগারকে শুধু শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই কাজে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। আজকাল দেখা যায়, পাঠাগার মানেই শুধু চুপচাপ বই পড়া। সঙ্গে যদি তরুণদের আড্ডার ব্যবস্থাও করা যায়, তাহলে তারা সুন্দর ও সমৃদ্ধ একটা সময় কাটাতে পারে। এতে পড়ার পাশাপাশি বই নিয়ে মুক্ত আলোচনা করার সুযোগও পাবে।
পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার সহায়ক মাধ্যম হতে পারে পাঠচক্র। তা স্কুল-কলেজ, সংগঠন বা মহল্লাভিত্তিক হতে পারে। এর মাধ্যমে বই পড়া এবং বই নিয়ে আলোচনা- দুটিই হয় বলে জ্ঞানচর্চা বিনিময়মূলক ও গতিশীল হয়।
একসময় প্রিয়জনকে বই উপহার দেয়ার প্রচলন ছিল। এখন ‘শিক্ষিত’রাও এটা ভাবতে পারেন না। কিন্তু বইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উপহার আর কিছু কি আছে? নেই। সচেতন ও জ্ঞানপিপাসুর কাছে বই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। অন্যান্য উপহারসামগ্রীর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেও একটি ভালো বইয়ের প্রয়োজন কখনো ফুরায় না।
মানুষের চিন্তা ও সৃষ্টির সূচক বই। যে জাতির পাঠক যত বেশি, সে জাতি তত সভ্য। যে সমাজে বইয়ের কদর বেশি, সে সমাজ তত অগ্রসর। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের দেশে পাঠক কমছে। দিন দিন বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এই ভূখন্ডের মানুষ। আজকাল তারা ফেসবুকে সময় কাটায়, টিভি, সিরিয়াল আর রিয়্যালিটি শো দেখে ইউটিউবে সিনেমা দেখে। ছাত্রছাত্রীরা নিতান্ত বাধ্য হয়েই পাঠ্যবই পড়ে। এবং আদৌ তারা কি পড়ে? পরীক্ষার জন্য মুখস্থ করে। এবং ফল প্রকাশের আগেই ভুলে যায়।
মনীষী বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছিলেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, পৃথিবীর যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’ বইপাঠই সেই ভুবন সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। আপনার মন খারাপ? কিছুই ভালো লাগছে না? নিঃসঙ্গতার অথৈ সমুদ্রে আপনি বিপন্ন? প্রচ- মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে জীবন কাটাতে হচ্ছে? জীবনে যখন এই ধরনের সমস্যা এসে হাজির হয়, যখন কোনো সমাধান পাওয়া যায় না, তখন আপনার পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়াতে পারে একটি ভালো বই। মানবজীবনের সুন্দর অভ্যাসগুলোর মধ্যে পাঠাভ্যাস শ্রেষ্ঠ। শুধু জ্ঞানার্জনের উপায়ই নয়, সত্য ও সুন্দরের অনুভূতিতে তরঙ্গ জাগাতে পারে বই। অতএব, আসুন, বই পড়ি।
মডেল: শ্রাবণী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান
ওয়্যারড্রোব: সিকোসো