skip to Main Content

ঘরেবাইরে I গৃহকোণে পত্রপল্লব

বাসার মধ্যেই প্রকৃতির আস্বাদ। অবরুদ্ধ সময়ের অবসন্নতা থেকে মুক্তির জন্য

অতিমারিতে সবাই কমবেশি অবসাদগ্রস্ত। এখন একটু ঘুরে বেড়ানো, সবুজের ছোঁয়া প্রয়োজন। সেটা যখন প্রায় অসম্ভব, তখন সবুজকেই ডেকে নেওয়া যেতে পারে ঘরের ভেতরে বা বারান্দায়। ছাদ থাকলে তো কথাই নেই। হুট করে বেড়ে গেছে গৃহচাষির সংখ্যা। অনেকেই বারান্দায় লাউ-কুমড়োর চাষ করছেন, কিংবা ছাদে ফুলের গাছ। ঘরের ভেতরটাও বাদ পড়ছে না রকমারি গাছের আনাগোনা থেকে।
ঘরে গাছ রাখার উপকারিতা অনেক। স্ট্রেস কমানো, বায়ু শুদ্ধকরণ আর দৃষ্টির প্রশান্তি তো রয়েছেই। অনেক গাছ অনায়াসে ঘরে রাখা যায়। সহজলভ্যও। কিছু আছে দুষ্প্রাপ্য, তবে খানিকটা সময় দিলে সেগুলোও ঘরে বেড়ে উঠতে পারে।
ঘরের ভেতরে বাগানের জন্য কতটুকু জায়গা বরাদ্দ থাকছে, সেটা দেখার ব্যাপার। সেখানকার তাপমাত্রা কত থাকে, কতটুকু আলো পাবে, কতটা সময় নেবে পুরোপুরি বেড়ে উঠতে- এসব ভাবনাও জরুরি। লেটুস, স্পিনাচ, বিভিন্ন হার্ব, বকচয় শুরুর দিকের ইনডোর বাগানিদের জন্য আদর্শ গাছ। এগুলো কম তাপমাত্রায় আর পরোক্ষ আলোয় বেশ ভালো হয়, জলদি বেড়ে ওঠে।
একটু আর্দ্র ও গরম আবহাওয়ার জন্য ফুল গাছ, মানিপ্ল্যান্ট জাতীয় লতা এবং মরুভূমির উপযোগী ক্যাকটাস। প্রতিটি গাছকেই অভিযোজিত হতে হয় তাপমাত্রা, আলো, পানির মান আর পুষ্টির সঙ্গে। তবে প্রজাতিভেদে ভিন্ন গাছের প্রয়োজনও আলাদা। তাই যেকোনো গাছ সংগ্রহ করার আগেই একটু দেখে নেওয়া প্রয়োজন, সেসবের চাহিদা ঘরের ভেতরে বাগানের জায়গাটি পূরণ করতে পারছে কি না!
কত সময় পার হলে পানি দিতে হয়, তা নির্ভর করে গাছের প্রজাতির ওপর। অনেকগুলো মাটি শুকালে পানি দিতে হয়, কিছু আছে সপ্তাহে এক দিন, আবার কোনোটির চাহিদা প্রতিদিনের। ক্যাকটাসের ফি হপ্তায় পানি প্রয়োজন, যদিও পাতাযুক্ত গাছের থেকে তার চাহিদা কম। অধিকাংশ ইনডোর গাছই নিচে থেকে দেওয়া পানি পছন্দ করে। অর্থাৎ একটি প্লেটে পানি দিয়ে টবের নিচের দিকের ফুটো থেকে মাটি তা শোষণ করে নেয়। অধিকাংশ গাছই ২৫ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করে। কখন পানি দেওয়া প্রয়োজন, তা জানতে ময়েস্ট মিটারও ব্যবহার করেন অনেকে। এ ছাড়া একটা সহজ অযান্ত্রিক পদ্ধতি আছে: তর্জনী পুরোটা মাটিতে ঢুকিয়ে দেখা যায়, যদি আঙুলে ভেজা ভেজা মাটি আসে, তবে পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। পুরো শুকনা থাকলে পানি দিতে হবে।
গাছ আলো, পানি আর মাটির সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাবার তৈরি করে। তবে তার আরও পুষ্টির প্রয়োজন হয়, যেমন: নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম। ঘরে টবের মাটিতে প্রকৃতি থেকে পাওয়া এসব উপাদানের ঘাটতি পূরণ করতে নিয়মিত গাছে সার দেওয়া প্রয়োজন। লিকুইড, প্যালেট, স্লো রিলিজ ট্যাবলেট অনেকভাবেই সেগুলো পাওয়া যায় এখন। প্রতি তিন মাসে একবার দেওয়া ভালো। এখানেও গাছভেদে, টবে মাটির পরিমাণ বুঝে সার দেওয়া দরকার। তবে শীতের চেয়ে গরমকালে দেওয়া ভালো। কারণ, অনেক গাছই শীতে অ্যাকটিভ থাকে না (যেমন: অ্যারো হেড, মানিপ্ল্যান্ট ইত্যাদি)।
গাছভেদে আলোর চাহিদা ভিন্ন। কোনোটির প্রচুর আলো দরকার, কোনোটির কম। বেশি আলোর চাহিদা রয়েছে, সেগুলো দিনে অন্তত ৬ ঘণ্টা এবং মডারেট আলোর জন্য ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যালোক প্রয়োজন। যেসব গাছের জন্য পরোক্ষ আলো, সেগুলো দরজা-জানালা থেকে কয়েক ফুট দূরে রাখাই ভালো।
বড় গাছের জন্য প্রশস্ত জায়গার প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া ১২ থেকে ১৮ মাস পরপর গাছ নতুন করে রিপটিং করা দরকার।
ঘরের ভেতরে রাখা গাছের ধরন আলাদা। শুরুর দিকে বিভিন্ন ধরনের পথোস, লতানো জাতের ফিলোডেন্ড্রন আর স্কিনডিপসাস জাতের মানিপ্ল্যান্ট লাগানো যেতে পারে। এগুলো মাটিতে এবং বোতলের পানিতেও দিব্যি বেঁচে থাকে। পানিতে রাখলে সপ্তাহে অন্তত একবার কলের পানি থিতিয়ে বা মিনারেল ওয়াটারে রাখা যেতে পারে।
ইদানীং পিস লিলি, বিভিন্ন উপপ্রজাতির বোস্টন ফার্ন, রাবার প্ল্যান্ট, ক্রোটন বেশ জনপ্রিয় ঘরের শোভা বাড়ানোর জন্য। বাতাস বিশুদ্ধ করতে সহায়ক জিজি প্ল্যান্ট (টয়লিন ও জায়লিন দূর করে), রাবার প্ল্যান্ট (ফরমালডিহাইড তাড়ায়), ফিডল লিফ ফিগ (আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ ও পলিউট্যান্ট অপসারণ করে), এরিকা পাম (বেনজিন ও ফরমালডিহাইড মুক্ত করে), বিভিন্ন প্রজাতির মনস্টেরা (ফরমালডিহাইড দূর করে)।
এগুলো ছাড়া অ্যালো, অ্যানথুরিয়াম, অ্যাসপারাগাস, পিস লিলি, পেপেরোমিয়া, ¯েœক প্ল্যান্ট, কাস্ট আয়রন প্ল্যান্ট, ক্রিসমাস ক্যাকটাস, ডিফেনবাকিয়া, চায়নিজ এভারগ্রিন, ড্রাকেনা, ইংলিশ আইভি, ফাইকাস, হোয়া, পারলার পাম, ফিলোডেন্ড্রন, স্পাইডার প্ল্যান্ট, ওয়ান্ডারিং জিউ, সুইডিশ আইভি, অ্যারোহেড ভাইন ইদানীং ঘরের ভেতর সাজানোর জন্য জনপ্রিয়।
ঘরে বাচ্চা ও পোষা প্রাণী থাকলে সতর্ক থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রজাতির ক্যালাথিয়া, বোস্টন ফার্ন, ক্রিসমাস ক্যাকটাস, ওয়াক্স প্ল্যান্ট, পেপেরোমিয়া, এয়ার প্ল্যান্টস, ফিটোনিয়া, পলকা ডট প্ল্যান্ট, পারলার পাম আর ক্লাব মস ধরনের গাছগুলো আদর্শ। বাগান টেকসই না হলে চায়নিজ এভারগ্রিন, ডিফেনবাকিয়া, গোল্ডেন পথোস, স্টেক প্ল্যান্ট আর জিজি প্ল্যান্ট দিয়ে নতুন করে শুরু করা যেতে পারে। কারণ, বলা হয়, এগুলো মেরে ফেলা প্রায় অসম্ভব!
ঘরে গাছপালায় পোকামাকড়ের উৎপাত হলে মাটির পরিবর্তে কোকোপিট, শুকনো সার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হয়। অন্যান্য সার যেমন গোবর, হাড়ের গুঁড়া প্রয়োগ করলে প্রতি ১৫ দিনে একবার ফাঙ্গিসাইড আর নিমের তেল মেশানো পানি স্প্রে করা যেতে পারে।

 আল মারুফ রাসেল
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top