skip to Main Content

কুন্তলকাহন I চুলের জন্য ফুল

সুস্থ ও সুন্দর চুলের জন্য ফুল এক অব্যর্থ দাওয়াই। সাজেও এটি বিকল্পহীন

সৌন্দর্যচর্চায় ফুলের ব্যবহার বেশ পুরোনো। চুল ও ত্বকের সুস্থতায় এর শক্তি জাদুকরি। বিভিন্ন উপায়ে তা ব্যবহার করা যায়। কিছু ফুল ত্বক ও চুলের সমস্যা সারাতে সহায়ক। কোনোটি জ্বলুনিরোধক এজেন্ট বা স্ট্রেস বুস্টার হিসেবে কাজ করে। এমন কিছু ফুলের কথা জেনে নেওয়া যাক, যেগুলো সহজলভ্য এবং চুলের সৌন্দর্য রক্ষা ও বৃদ্ধিতে সহায়ক।
জবা
গন্ধহীন এই ফুল চুলের প্রায় সব সমস্যার সমাধানে কাজ করে। ঝরে যাওয়া রোধ, উজ্জ্বল, কালো ও ঝলমলে করে। জবা গাছের ফুল ও পাতা দুটোই কাজে লাগে। অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই অ্যাসিড কেরাটিন নামক বিশেষ ধরনের স্ট্রাকচারাল প্রোটিন তৈরি করে, যা চুলের বিল্ডিং ব্লক মজবুত রাখে। ফলে চুল ভেঙে যায় না। এটি নারকেল তেলের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। ঠান্ডা হলে বোতলে সংরক্ষণ করা যায়। তেলটি ব্যবহারে চুলের রঙ গাঢ় হয়, ঝরে যাওয়ার প্রবণতা কমে। জবা ফুল পেস্ট করে লাগালে চুলের পিএইচ ভারসাম্য বজায় থাকে এবং খুশকি দূর হয়।
গোলাপ
রূপচর্চায় দারুণ সহায়ক। এতে এমন সব উপকরণ রয়েছে, যেগুলো চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট থাকায় মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে পারে। পরিষ্কার থাকে স্ক্যাল্প। ফলে ফলিকল ঘন, দৃঢ় ও স্ট্যান্ডগুলো শক্তিশালী হয়। গোলাপের পাপড়ি একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কার্যকর। চুলকে ময়শ্চার করে এবং খুশকি হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। এতে জটমুক্ত থাকে, শুষ্ক হয়ে পড়ে না এবং সান ড্যামেজ থেকে রক্ষা পায়। তা ছাড়া গোলাপের ব্যবহারে চুল সুরভিত থাকে।
ময়শ্চারাইজিংয়ের জন্য নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে গোলাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এনজাইম আর পুষ্টি জোগাতে এবং উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত করে তুলতে গোলাপের পাপড়ি পেস্ট বানিয়ে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। আরেকটি ভালো হেয়ার টনিক তৈরি করে নেওয়া যায়, যা চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অসামান্য।
একমুঠো তাজা গোলাপের পাপড়ি রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। আধা কাপ নারকেল তেল মাঝারি আঁচে দুই মিনিট জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা হলে পাঁচ ফোঁটা রোজমেরি অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে এতে। আগে থেকে রোদে শুকিয়ে নেয়া পাপড়ি কালচে বাদামি রঙ ধারণ করলে সেগুলোকে ভেঙে মিহি গুঁড়া করতে হবে। এবার এক টেবিল চামচ পাপড়ি গুঁড়া তেলের মিশ্রণের সঙ্গে ভালোভাবে মেশানোর পালা। এরপর এক টেবিল চামচ মধুও মিশিয়ে নেওয়া যায় মসৃণ করে। একটি বড় দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে চুলের জট ছাড়াতে হবে। তেলের মিশ্রণটি হালকা গরম থাকা অবস্থায় চুলে দেওয়ার নিয়ম। খেয়াল রাখতে হবে চুলের শুষ্ক হয়ে যাওয়া অংশে এবং ফেটে যাওয়া ডগার দিকে। মাথার তালু আঙুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। এবার পঁয়তাল্লিশ মিনিট রেখে ধুয়ে নিতে হবে একটি মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে। এরপর একটি লাইট কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে।
শিউলি
পারিজাত শ্রেণির এই ফুল চুল ঝরে যাওয়ার চিকিৎসায় দারুণ কার্যকর। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, জীবাণুরোধী শক্তি মাথার ত্বকের সাধারণ সমস্যাগুলো দূর করে। এটি জ্বলুনি প্রতিরোধকও বটে। ঝরে পড়া রোধ করতে সহায়ক। চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে শিউলির তেল ব্যবহার করা হয়।
গাঁদা
এ ফুলের তেল জ্বলুনিরোধে বিশেষ উপযোগী। এটি মাথার ত্বকের জ্বালাপোড়া সারাই এবং চুল ঝরে যাওয়া কমাতে সহায়তা করে। নারকেল তেল, অ্যাভোকাডো অয়েল ও ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে গাঁদা ফুল বেটে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে কাচের বোতলে ঢুকিয়ে ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায়। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ঝরে পড়া বন্ধ হবে এবং চুলের ময়শ্চার বজায় থাকবে। হালকা গরম পানিতে গাঁদা ফুল সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সেই পানি শ্যাম্পু করার পর ব্যবহারে চুলের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়।
জুঁই
চুলের সুন্দর গন্ধ তৈরি করতে জুঁই ফুলের জুড়ি নেই। এটি প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট হিসেবে কাজ করে। এর তেল বেশ ভালো মানের ন্যাচারাল কন্ডিশনার। চুলের সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করতে দশ থেকে বারোটি ফুল পরিমাণমতো পানিতে সেদ্ধ করতে হবে। গোসল শেষে এই পানি মাথায় দিতে হবে। জুঁই ফুলের তেল মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
পদ্ম
ফুলটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও সি-র ভালো একটি উৎস। এর পাপড়ি পেস্ট করে তাতে অ্যালোভেরা জেল, একটি ডিম ও কিছুটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করা যায়। চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে এক ঘণ্টা পর ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। পদ্ম থেকে তৈরি তেল চুল ঝরে পড়া, অকালে পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করে। এক কাপ নারকেল তেল, এক কাপ অলিভ অয়েল, কয়েকটি আমলকী থেঁতো ও পদ্ম পাপড়ি হালকা আঁচে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। ছেঁকে কাচের বোতলে সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে তৈরি পদ্ম ফুলের তেল সপ্তাহে দু-তিনবার ব্যবহারেই ভালো ফল মিলবে।
শুধু চুলের সুস্থতা ও বৃদ্ধিতে নয়, নিজেকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতেও ফুলের বিকল্প নেই। উৎসব শেষে ফুল সরিয়ে রাখার পরেও এর সৌরভ অনেকক্ষণ জড়িয়ে থাকে চুলে।

 তাসমিন আহমেদ
মডেল: নিকি
ছবি: কৌশিক ইকবাল
মেকওভার: পারসোনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top