ফিচার I ‘চাল’ সূত্র
ভেতো বাঙালির রূপচর্চায় জুতসই এক উপাদান। ত্বক আর চুলের লাবণ্য ও সুরক্ষার জন্য
শুধু উদর পূর্তিতে নয়, রূপচর্চায়ও ভাতের কদর বহু পুরোনো। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় চাল। ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেল, ভিটামিন আর অ্যাসিডে ঠাসা এই উপাদান। চকচকে, পেলব, লাবণ্যময় ত্বক ও ঝলমলে মসৃণ চুল- সবই সম্ভব এর ব্যবহারে। রূপচর্চায় এই অনুষঙ্গের চল প্রথম শুরু করে কোরিয়ান নারীরা। তাদের ঈর্ষণীয় ত্বক আর চুলের পেছনের রহস্য অনেকটাই এটির ওপর নির্ভরশীল। এমনটাও শোনা যায়, শুধু এই খাদ্য উপাদানের সঠিক ব্যবহারের কারণেই তাদের চুল ৫০ থেকে ৬০ বছর পরও বিবর্ণ হতো না।
চালের গুণগুলো
এতে আছে ফেরুলিক অ্যাসিড এবং অ্যালানটোনিন; যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক ও চুলকে বাঁচাতে সাহায্য করে। তা ছাড়া সানবার্ন, ট্যান ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকর।
দাগছোপ কমিয়ে, ডার্ক সার্কেল সারিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এর জুড়ি মেলা ভার।
মুখ তো বটেই, মাথার ত্বকের মৃতকোষ দূর করতেও চালের গুঁড়া দারুণ সহায়ক।
প্রয়োজনীয় ভিটামিন আর মিনারেলের জোগান দিয়ে ত্বকের বলিরেখা, ফাইন লাইন ইত্যাদি কমিয়ে টান টান রাখতে সাহায্য করে।
চালের স্টার্চ চুল মসৃণ ও সোজা রাখে। এর পানির নিয়মিত ব্যবহার চুলকে করে কোমল।
চালের পানিতে ত্বকের লোমকূপের মুখ ছোট হয়ে আসে। ফলে ব্ল্যাকহেডস আর হোয়াইটহেডসের সমস্যাও কমে।
প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবেও চাল চমৎকার।
চাল দিয়ে
সানট্যান সারাইয়ে: খুব শক্ত সানট্যান দূর করতে চালের গুঁড়া এবং দুধ মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। সপ্তাহে দুবার এর ব্যবহারে ট্যান সারতে শুরু করবে। বাড়বে ত্বকের উজ্জ্বলতা।
ডার্ক সার্কেলের সমস্যায়: ২ চা-চামচ মিহি চালের গুঁড়ার সঙ্গে অর্ধেক পাকা কলা আর ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে তৈরি হবে জাদুকরি মিশ্রণ। আন্ডার আই ক্রিম হিসেবে চমৎকার। ১৫ থেকে ২০ মিনিট মাখিয়ে রাখতে হবে চোখের তলায়। উপকার পাওয়া যাবে নিয়মিত ব্যবহারে।
মসৃণ ত্বক পেতে: সেমি ফাইন চালের গুঁড়া, অল্প চিনি আর পরিমাণমতো মধু। এই স্ক্রাব মুখের পাশাপাশি পুরো শরীরে ব্যবহারের উপযোগী।
বয়স রুখতে: চালের গুঁড়া, ডিমের সাদা অংশ, পরিমাণমতো মধু এবং টক দই দিয়ে তৈরি করা যায় অ্যান্টিএজিং ফেস প্যাক। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক থাকবে টান টান, কমবে ফাইন লাইন আর বলিরেখা।
অ্যাকনে কমায়: চালের গুঁড়ার সঙ্গে পাতিলেবুর রস আর শসার রস দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করে তা মাখাতে হবে ব্রণের ওপর। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিতে হবে। তবে ত্বক স্পর্শকাতর হলে বা ক্রনিক অ্যাকনের সমস্যা থাকলে এ মিশ্রণ ব্যবহার না করাই ভালো।
ক্ষতিগ্রস্ত চুল সারাইয়ে: সমপরিমাণ চালের গুঁড়া ও মুলতানি মাটি মিশিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে গোলাপজল। তৈলাক্ত চুলের জন্য এই প্যাক দারুণ। ড্যামেজড এবং রুক্ষ চুলের জন্যও ভালো। নরম এবং মসৃণ হবে নিয়মিত ব্যবহারে।
আন্ডার আর্মের যত্নে: কালো দাগছোপ সরিয়ে মসৃণ ও কোমল করে তুলবে প্যাকটি। চালের গুঁড়ার সঙ্গে কমলালেবুর খোসা গুঁড়া আর বেকিং সোডা মিশিয়ে তাতে দিতে হবে পরিমাণমতো অলিভ অয়েল। প্রতিদিন গোসলের আগে আন্ডার আর্মে এর ব্যবহারে মিলবে সুফল।
লুজ পাউডার: মিহি চালের গুঁড়া ব্যবহার করা যাবে লুজ পাউডার হিসেবে। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেবে।
শুধু গুঁড়াই নয়, রাইস ওয়াটার রূপচর্চায় খুব পরিচিত। কার্যকরও বটে। চালের সব গুণই পাওয়া যাবে এতে। তবে সাধারণ চাল ধোয়া পানিতে চলবে না। নির্দিষ্ট উপায়ে তৈরি করতে হবে এটি। জেসমিন, ব্রাউন বা সাধারণ বাসমতী চাল থেকে তা বানানো যায়। পরিমাণমতো চাল পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখার পালা। যত বেশি সময় রাখা যাবে, তত ভালো। পারলে এক-দুই দিন রেখে দেওয়া যেতে পারে। এতে পানি ফারমেন্টেড হওয়ার সুযোগ পাবে। এই পানি ব্যবহারই সবচেয়ে উপকারী। চাল ছেঁকে সাদা পানি আলাদা বোতলে পুরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। এটি সপ্তাহখানেক ভালো থাকবে। এ ছাড়া পানিসহ চাল ৫ থেকে ৭ মিনিট ফুটিয়েও নেওয়া যেতে পারে। তারপর পানি ছেঁকে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে প্রায় এক সপ্তাহ। তবে খেয়াল রাখতে হবে, রাইস ওয়াটার যেন গন্ধ না হয়। তা হলে ব্যবহার করা যাবে না।
রাইস ওয়াটার সরাসরি ব্যবহার করা যায়। আবার ফেসপ্যাক বা হেয়ারমাস্কের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
ক্লিনজার হিসেবে রাইস ওয়াটার একাই এক শ। কটন প্যাড এতে ডুবিয়ে পুরো মুখে একবার বুলিয়ে নিতে হবে। ত্বকের উপরিভাগে জমে থাকা ময়লা দূর হয়ে যাবে।
সমপরিমাণ রাইস ওয়াটার আর গোলাপজল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায়। রোদ থেকে ফিরে পরিষ্কার ত্বকে স্প্রে করে নিলে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। ট্যানও পড়বে না।
সাধারণ পানির বদলে রাইস ওয়াটার দিয়ে চুল ধুলে বেশি দিন মসৃণ, কালো ও চকচকে থাকবে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: সূর্য
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল