রূপরসদ I জাদুকরি শঙ্খচূর্ণ
ত্বকের সুস্থতায়। জেল্লা বাড়াতেও। কিন্তু কেমন করে এটি ব্যবহৃত হতে পারে?
রূপচর্চার জন্য শঙ্খচূর্ণ প্রায় সব ধরনের ত্বকেই মানিয়ে যায়। এর সাদা গুঁড়ায় থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম এবং নানা ধরনের খনিজ, যেমন আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। বড় শামুক বা শঙ্খ কেটে মেয়েদের হাতে পরার শাঁখা বানানোর সময় শাঁখারিদের হাত গলে ছড়িয়ে পড়ে এর গুঁড়া। চক পাউডারের মতো দেখতে সেই সাদা ধবধবে চূর্ণই হয়ে ওঠে রূপচর্চার অন্যতম অনুষঙ্গ। এতে রয়েছে জিংক অক্সাইড, যা রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে মুক্ত করে। কালচে ছোপের হাত থেকে রক্ষায়ও এটি দারুণ কার্যকর।
ত্বকের ধরন বুঝে নানাভাবে শঙ্খচূর্ণ ব্যবহার করা যায়।
শুষ্ক ত্বক
এতে কালচে ছোপ পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের দাগ দূর করার জন্য এই প্যাক কাজ করে। ১ টেবিল চামচ শঙ্খচূর্ণ, ২ চা-চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার, ৪-৫ ফোঁটা কাঠবাদামের তেল, ভিটামিন সি ট্যাবলেট বা ১টি সিভিট গুঁড়া ও সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিবর্তন বোঝার জন্য টানা দুই সপ্তাহ ব্যবহার করতে হয়।
তৈলাক্ত ত্বক
ব্রণ ও ব্ল্যাক হেডসের সমস্যা থাকলে ২ টেবিল চামচ তুলসী পাতার রস, ১ টেবিল চামচ শঙ্খের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে হবে ভালোভাবে। এবার সামান্য বাদামি চিনি দিয়ে গুলে সারা মুখে মিশ্রণটি লাগাতে হয়। ৫ মিনিট পর একটু ঘষে তুলে ফেলতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকে সপ্তাহে এক দিন ও ব্রণযুক্ত ত্বকে প্রতিদিন প্যাকটি লাগালে উপকার পাওয়া যায়। শঙ্খ গুঁড়া ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
সব ধরনের ত্বকের জন্য
১ টেবিল চামচ শঙ্খগুঁড়া, লেবুর খোসাবাটা আধা চা-চামচ, ৩-৪ ফোঁটা গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগাতে হয়। ৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রতিদিন একবার করে প্যাকটি লাগালে রোদের প্রভাবজনিত কালচে ভাব দূর হয়ে যায়।
সারা শরীরে শঙ্খগুঁড়া
পুরো শরীরেও শঙ্খচূর্ণের প্যাক ব্যবহার করা যায়। এটি দিলে সাবান মাখার দরকার হয় না। গলা, ঘাড়সহ শরীরের যেসব স্থানে কালচে ভাব হয়েছে, সেটি তুলে ফেলবে নিয়মিত ব্যবহারে। এক কাপ শঙ্খগুঁড়ার সঙ্গে এক কাপ মসুরের ডালের বেসন, একটি ডিম ও লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণটি তৈরি করা যায়। প্যাকটি সারা শরীরে লাগিয়ে রাখতে হবে মিনিট দশেক। তারপর ছোট রুমাল বা টাওয়েল ভিজিয়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলতে হবে। সপ্তাহে এক দিন প্যাকটি ব্যবহারই যথেষ্ট।
আরও যেভাবে ত্বকচর্চা করা যায়
পরিষ্কার শঙ্খের ভেতরে রাখা পানি দিয়ে প্রতিদিন সকালে ত্বক ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে বিভিন্ন চর্মরোগ, র্যাশ, আল্যার্জির মতো সমস্যা সেরে যাবে। এক মাস প্রতিদিন এভাবে মুখ ধুলে ত্বকের শ্বেতী রোগের প্রাদুর্ভাব কমে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও রিঙ্কেল দূর করতে প্রতিদিন গোসলের সময় শঙ্খগুঁড়া আর সমপরিমাণ মুলতানি মাটি পানিতে মিশিয়ে মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে।
শঙ্খচূর্ণ গোলাপজলের সঙ্গে পরিমাণমতো মিশিয়ে চোখের নিচে সাবধানে লাগাতে হয়। শুকিয়ে যাওয়ার আগে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর হয়।
চুলের যত্নে
রাতভর শঙ্খের খোলসে রাখা পানির সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুলের স্বাভাবিক রঙ বজায় থাকবে এবং তা হয়ে উঠবে মসৃণ।
সতর্কতা
সংবেদনশীল ত্বকে শঙ্খচূর্ণ ব্যবহারে কিছুটা সাবধানতা দরকার। পাউডারজাতীয় হলেও যেহেতু এই গুঁড়া শক্ত শামুকের খোল থেকে তৈরি, তাই ব্যবহারের সময় জোরে ঘষাঘষি না করাই ভালো। সামান্য অসাবধানতায় ত্বক কেটে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যবহারের আগে চিকন ছিদ্রের চালুনি দিয়ে চেলে নিলে কিছুটা নিরাপদ হতে পারে। শঙ্খগুঁড়া কখনোই সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা ঠিক নয়।
মনে রাখতে হবে, খাঁটি শঙ্খগুঁড়া ত্বকে লাগালে সামান্য গরম অনুভূত হয়, কিন্তু নকল গুঁড়ায় একেবারেই সেটা অনুভব করা যায় না।
সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: নাজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল
মেকওভার: পারসোনা