সঙ্গানুষঙ্গ I জুয়েলারি বাই এথিকস
ব্যবসার নৈতিকতা ও প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা- এ দুয়েই গড়ে উঠেছে এথিক্যাল ফ্যাশনের ধারণা। গয়নাও এর বাইরে নয়। তাতে নিসর্গ থেকে উপাদান সংগ্রহ করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। এই চর্চা চলতি মৌসুমে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে
পৃথিবীর প্রতি মমত্ব বেড়েছে মানুষের। প্রকৃতির জন্য আজ বড্ড হাহাকার। ফ্যাশনেও তাই এখন নিসর্গের আকুলতা। গয়নায় তা সঞ্চারিত। পোশাকের মতো নিত্যনতুন বদলের ঢেউয়ে অলংকারের পথ বদল দ্রুত নয়। ধীর লয়। রুচিগত ও নৈতিক অবস্থান ফ্যাশনের অংশ হিসেবে গয়নায়ও প্রভাব ফেলে।
নতুন ট্রেন্ড যখনই আসে, রঙ-রূপ আর শৈলী প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। ফলে মূল ভাবনাটি আড়ালেই থেকে যায়। এথিক্যাল জুয়েলারির কথাই ধরা যাক। নামই বলে দেয় এখানে প্রথমে নীতি আর যুক্তি। তারপর নকশা। এ ধরনের গয়নার মূলকথা ফেয়ার ট্রেড। এতে শ্রমের যথাযথ মূল্য, ব্যবসার স্বচ্ছতা, সুন্দর কর্মপরিবেশ, নৈতিকতা ইত্যাদির অগ্রাধিকার জরুরি। এর বাইরে ব্যবসা নয়। নয় উপাদান জোগাড়ের চেষ্টা। পরিবেশের সামান্য ক্ষতিও নয়, নয় প্রকৃতির সন্তান মানুষকে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দেওয়া। নকশায় নৈপুণ্য যেমন আবশ্যক, ঠিক তেমনি প্রয়োজন আর্টিসানের সঠিক মূল্যায়ন। এথিক্যাল জুয়েলারিতে বেশ কিছু বহুজাতিক ব্র্যান্ড নিশ্চিত করে সেভেনথ জেনারেশন আর্টিসান নীতি। এ ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা রাখে বি-কর্প। এখানে সবকিছুর সঙ্গে ভোক্তার কাছে ব্যবসার তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন নিশ্চিত করা হয়; যা বিক্রেতাকে দেয় মর্যাদা আর ক্রেতাকে নিশ্চয়তা। বি-কর্পের বি মানে বেনিফিট। এটি শুধু ক্রেতাস্বার্থ নিশ্চিত করে, এমনটি নয়। বিক্রেতা নিয়মকানুনে বাঁধা পড়েন ঠিকই, কিন্তু নিশ্চিত হয় মুনাফা।
এবারের সামারে এথিক্যাল জুয়েলারির কদর বেড়েছে। প্রাকৃতিক উপাদান ইন ট্রেন্ড। সে মূল ধাতুর কথাই হোক বা নকশা।
জল থেকে শুরু করে পাহাড়- সবখানেই জুয়েলারির উপাদান খুঁজে বেড়িয়েছেন ডিজাইনাররা। সমুদ্রের কথাই ধরা যাক। নীল জলরাশি থেকে ঝিনুক, শামুকের খোলস সংগ্রহ করে তাকে অলংকারে বসিয়ে দেওয়ার চল বেশ চোখে পড়ার মতো। আর মুক্তা? সে তো চিরদিনেরই।
পাহাড়ের চূড়া থেকে খুঁজে আনা হয়েছে রঙিন পাথর। স্থান পেয়েছে গয়নায়। চলতি সামার কালেকশনে এর ব্যবহার ব্যাপক।
জুয়েলারিতে স্বচ্ছ কাচের পাশাপাশি আয়নাও দারুণ জনপ্রিয়। মনে হতে পারে, আয়নামহলের রাজকীয়তা ডিজাইনারদের অনুপ্রাণিত করছে।
ঝকঝকে-চকচকের গল্প তো বলা হলো। এর বাইরেও আছে প্রকৃতিকে অলংকারে ধারণের উদাহরণ। জুয়েলারি নকশায় ব্যবহৃত হচ্ছে খড়। কাঠের ব্যবহার তো অনেক আগে থেকেই হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতির প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতার সূত্রে অনেক বিধিনিষেধের চর্চা চলছে। ফলে গয়নায় কাঠের ব্যবহারও নৈতিক সীমায় আবদ্ধ এখন।
সোনা-রুপা তো ছিলই। কয়েক বছর হলো রানওয়েতে ফিরেছে তামা ও পিতল। আনকোরা বিষয়টি হলো অলংকারের ডিজাইনাররা বদলেছেন তাদের ব্যাকরণ। ঘষে-মেজে নিখুঁত করার প্রয়াস কমেছে। যেমন আছে, তেমন থাকুকে মন মজেছে। চকচকে ম্লান হয়েছে ম্যাট পলিশে।
চলতি বছরে জনপ্রিয় জুয়েলারির মধ্যে পায়ের জন্য শেলে তৈরি গয়না উল্লেখযোগ্য। গোড়ালি জড়িয়ে শামুক-ঝিনুকের ভালোবাসাবাসি। ব্র্যান্ড ইকোজিপসির নকশা এটি। ভিক্টোরিয়া সিক্রেটসের মডেলদের পায়েও এটি দেখা গেছে; যা বাড়িয়েছে এর জনপ্রিয়তা। সৈকতে বেড়ানোর জন্য এটি সংগ্রহে থাকলে মন্দ হয় না।
শক্তপোক্ত কাঠ কিন্তু বেশ জায়গা করে নিয়েছে জুয়েলারি ফ্যাশনে। ভারী নয়। সরল নকশাতে সপ্রতিভ। সংগ্রহে থাকতে পারে। কাঠের জুয়েলারিতে এবার জুড়ে দেওয়া হচ্ছে মুক্তা। এ ছাড়া প্রাকৃতিক পাথর, রিসাইকলড গোল্ড, গ্লাস বিট এবং শেল দারুণ মানিয়ে যায়। কাঠের চুড়ির পাশাপাশি দুল চাহিদার চূড়ায় এখন। কাঠের গয়নায় উপাদান হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে দ্রুত বেড়ে ওঠা গাছগাছালি। বাঁশ, পাইন, ইউক্যালিপটাস ব্যবহার করা হয় সব থেকে বেশি। এথিক্যাল ফ্যাশনে প্রকৃতির ক্ষতি একদমই বারণ।
রাফিয়া। একধরনের পামগাছ। এর পাতার আঁশ দিয়ে তৈরি গয়না বেশ জনপ্রিয় এখন। এথিক্যাল ব্র্যান্ড ‘নুনডে কালেকশন’-এর দ্য রয়াল রাফিয়া ইয়ার রিং ফ্যাশন ডিভাদের রূপ বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্বিগুণ। এর পশ অথচ কেয়ারফুলি কেয়ারলেস ডিজাইন দৃষ্টি কেড়ে নিতে পারে।
বেলি চেইন, খুব চেনা গয়না। ভারতীয় উপমহাদেশে কোমরের বিছা আভিজাত্যের প্রতীক। বেলি চেইন বিছার ২০২০ ভার্সন। ৪০০ বছর আগের এই ফ্যাশন হারিয়ে তো যায়ইনি, বরং ফিরে এসেই উদ্ভাসিত। পেটানো নকশা আর ম্যাট লুকে অনবদ্য এই সিজনের বেলি চেইন।
টানা আর পোড়েনের এক নট থেকে অপর নটেই তৈরি হয় ফ্যাব্রিক। সেই নটের নকশা এবার কানের গয়নায়। নান্দনিকতায় এটি নতুন।
দ্যুতিময় হীরা কোনোকালেই পুরোনো হয়নি। হবেও না। তাই তো বলা হয়, ডায়মন্ডস আর ফরেভার। হীরা দ্যুতির সঙ্গে কলঙ্ক মিলেমিশে থাকে। আমরা সবাই জানি ব্লাড ডায়মন্ডের কথা। এথিক্যাল জুয়েলারিতে তাই ল্যাব ডায়মন্ডই জুতসই।
সারাহ্ দীনা
মডেল: সূর্য ও নাজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল
জুয়েলারি ও ওয়্যারড্রোব: ঋ