skip to Main Content

ফিচার I তারুণ্যের বিবাহ জিজ্ঞাসা

সামাজিক এই রীতি সম্পর্কে কী ভাবছেন এখনকার তরুণেরা? কেমন দাম্পত্য চাই তাদের? সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তিন সম্ভাবনাময় মুখ এসব জিজ্ঞাসায় অংশ নিয়েছেন

বিয়ের মধ্য দিয়ে দুই নর-নারীর যৌথজীবন শুরু হয়। দৈনন্দিন যাপনের প্রচলিত ছক থেকে বেরিয়ে তারা প্রবেশ করে ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও নতুন সামাজিক শৃঙ্খলার মধ্যে।
তরুণ-তরুণীদের বিয়ের আগে দরকার হয় মানসিক প্রস্তুতি। প্রথমেই আসে পাত্র-পাত্রী পছন্দের বিষয়টি, যদি তা প্রেম বা পূর্বপরিচয়ের বিয়ে না হয়। পারিবারিক যোগাযোগের মাধ্যমে এটি ঘটলে সাক্ষাৎ, আলাপ এবং পরস্পরের জানা-বোঝার পর্ব চলে কিছুদিন ধরে। তা ছাড়া বিবাহ-পরবর্তী জীবন সম্পর্কেও থাকে পরিকল্পনা। এসব বিষয়ে এ প্রজন্মের তিন তরুণ-তরুণী জানিয়েছেন তাদের ভাবনা।

হুট করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চাই না। বিয়ে করার আগে অন্তত পরস্পরকে জেনে নেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি। সে ক্ষেত্রে একসঙ্গে থাকতে পারব কি না, সেটা বোঝা যায়। তবে বিয়ের পরে যদি কোনো সমস্যা হয়, আমরা কথা বলব। সমস্যা খুঁজে বের করে দুজনেই তার সমাধান করব -মাহমুদা মাহা

মঞ্চ অভিনেত্রী এবং চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপিকা মাহমুদা মাহা বিয়ের ক্ষেত্রে সঙ্গীর সঙ্গে বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দিতে চান। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অবশ্যই সে কতটা আমার বন্ধু হতে পারছে, সেটাই আগে বিবেচনায় রাখব। আমি অনেক বেশি শান্তিপ্রিয় মানুষ। সুতরাং শান্তিতে থাকতে পারাটা আমার কাছে অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। হুট করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চাই না। বিয়ে করার আগে অন্তত পরস্পরকে জেনে নেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি। সে ক্ষেত্রে একসঙ্গে থাকতে পারব কি না, সেটা বোঝা যায়। তবে বিয়ের পরে যদি কোনো সমস্যা হয়, আমরা কথা বলব। সমস্যা খুঁজে বের করে দুজনেই তার সমাধান করব। হুট করে রেগে গিয়ে সংসার ভেঙে দিতে চাই না। এ জন্য আমি প্রেমের বিয়েতে বিশ্বাসী। সুস্থ, সুন্দর, আন্ডারস্ট্যান্ডিং, বন্ধুত্বপূর্ণ, হাস্যরসে ভরপুর প্রেমের বিয়ে। আমি তার সঙ্গে প্রাণ খুলে হাসতে চাই। আমার মধ্যে একটু সেকেলে ব্যাপার কাজ করে, তাই চাইব এমন কাউকে যার কাছে চিঠি লেখার ব্যাপারে বা শিল্প, সাহিত্য নিয়ে আগ্রহ থাকবে। রেস্তোরাঁয় সময় কাটানো আধুনিকতায় আমি বিশ্বাস করি না। মাঝে মাঝে হুটহাট ঘুরতে বেরিয়ে যাওয়া- কখনো বান্দরবান কখনো শান্তিনিকেতন, হয়তো কখনো প্যারিস। তবে তা সময় এবং অর্থের উপর নির্ভর করবে। সততার সঙ্গে সংসারে সচ্ছলতার নিশ্চয়তা থাকলেই আমি খুশি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ‘জ্ঞান’ ব্যাপারটাকে প্রাধান্য দেব, যাতে করে তার সঙ্গে যেকোনো কিছু নিয়ে কথা বলা যায়। এটা ভীষণ জরুরি।’
সন্তানের আকাক্সক্ষা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি মা হতে চাই। সে ক্ষেত্রে দুটো সন্তান চাইব। সন্তান লালন-পালনের ব্যাপারে একদম ছাড় দিতে চাই না। কাজ কমিয়ে দিয়ে যতটা সম্ভব বাচ্চাকে সময় দেব। এ বিষয়ে আমার মা এবং শাশুড়ির সাহায্য নেব।’ তিনি ছোট পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি দায়িত্বশীলতা থাকবে। কর্মজীবী নারী হিসেবে শাশুড়ির সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো হলে যৌথ পরিবারে থাকতে তার আপত্তি নেই।

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সংসারে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই ভীষণভাবে সহযোগিতা দরকার। ঢাকা শহরের মতো ব্যয়বহুল জায়গায় স্বামীর উপর সংসারের সকল দায়িত্ব চাপিয়ে দেব না। তা ছাড়া স্ত্রীকে ঘরের কাজে সাহায্য করা আলাদা করে বলার মতো কোনো বিষয় নয়। এটি খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে মনে করি। যতটা পারে সে সাহায্য করবে, সেটাই আশা করব।’

পুরো একটা জীবন যার সঙ্গে জড়াব সেখানে অবশ্যই বুদ্ধি, মানবিকতা, বিচক্ষণতা, সুস্বাস্থ্য, সামাজিক মূল্যবোধের উপস্থিতি থাকা অপরিহার্য। এসব যেখানে অনুপস্থিত, সেখানে সৌন্দর্য শূন্যের ঘরে-মুজাহিদ আহমদ

লিটল ম্যাগাজিন কোরাস-এর সম্পাদক কবি মুজাহিদ আহমদ বলেন, ‘সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের জন্যই বিয়ে। এর মাধ্যমেই পুরুষের জীবনসঙ্গী শব্দের পূর্ণতা পায়। সে ক্ষেত্রে মেয়ে পছন্দ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো একটা জীবন যার সঙ্গে জড়াব সেখানে অবশ্যই বুদ্ধি, মানবিকতা, বিচক্ষণতা, সুস্বাস্থ্য, সামাজিক মূল্যবোধের উপস্থিতি থাকা অপরিহার্য। এসব যেখানে অনুপস্থিত, সেখানে সৌন্দর্য শূন্যের ঘরে। সেখানে শান্তি থাকে না। তা ছাড়া সৌন্দর্যের ধারণাটি মনের সঙ্গেও সম্পর্কিত।’ তিনি মনে করেন, ‘যেকোনো চাকরি বা কাজ হলো মানুষের যোগ্যতার স্বীকৃতি। মেয়েদের যদি যোগ্যতা থাকে; চাকরি করবে। এটি হবে তার মানসিক প্রশান্তির জায়গা। একজন বিচক্ষণ মানুষ সংসার ও চাকরি তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরিচালনা করতে পারেন, এটিই বর্তমান সচেতন সমাজের রূপ হওয়া উচিত। তবে একটু প্রেম, একটু জানা-শোনা- বিয়ের ক্ষেত্রে এসব তো মন্দ নয়। একেবারে অচেনা, সেটি একসময় ছিল, এখনো আছে। বাপ-দাদার আমলে বিয়ে তো অচেনা ছেলেমেয়েদের মধ্যেই হতো। তবে পরস্পরকে চিনে বা বুঝে নিতে বেশ কিছু সময় চলে যায়। জীবন তো খুব ছোট, বোঝাপড়ায় এত সময় নষ্ট করার আদৌ প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।’
তিনি বলেন, ‘জীবন-সংসার, চাকরি, উপার্জন- সবই একটি আরেকটির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। কোনো একটি বাদ পড়লে ছন্দপতন হবে। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চাকরি করলে জীবনের গতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যা সমাধান করা যায়। যেমন দুজনের কর্মক্ষেত্র দুই এলাকায় হলে কখনো প্রয়োজনবোধে স্যাক্রিফাইস করতে হবে। দরকার হলে কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তন আনা যেতে পারে। তা ছাড়া সংসার, সন্তান তো একজনের না। স্বামী-স্ত্রী দুজনের যৌথ লালন-পালনে সন্তান বড় হবে, এটাই স্বাভাবিক। পারস্পরিক বন্ধন অটুট রাখতে এটির প্রয়োজনও আছে। সন্তান পরিবারের সকলের সম্মিলিত আদরে, লালন-পালনে, যত্নের স্পর্শ পেয়ে পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে বড় হবে, বেড়ে উঠবে।’ তিনি মনে করেন, ‘বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণে একান্নবর্তী পরিবার পরিচালনা সম্ভব হয়ে উঠছে না। জীবন-জীবিকা, সন্তান-সন্ততির পড়ালেখার বিষয়টি চিন্তা করে শহুরে জীবন যে বা যারাই যাপন করছেন, তাদের পরিবারের একটা অংশ তো গ্রামেই রয়ে গেলেন। তার মানে পরিবারের যৌথ বাস হচ্ছে না। তবে পরিবারের সদস্যদের মাঝে মিল-মহব্বত ও দায়িত্বের পাঠ নেওয়ার জন্য যৌথ পরিবারের বিকল্প নেই।’ কবি মুজাহিদ আহমদ নিজের বিয়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘বিয়ের বিষয়ে আমার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। কোনো রকমের স্থির আয়-রোজগারের ব্যবস্থা না করেই আমরা বিয়ে করি। জীবনের সবকিছুতে আমি গণিতের ব্যবহার করি না। অঙ্কের দরকার আছে, তার মানে এই নয় যে, সকল কাজের জন্যই খাতা-কলম, ক্যালকুলেটর নিয়ে বসতে হবে। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ।’

যেহেতু যৌথজীবনে দুজনের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ, সে জন্য স্ত্রীকে অবশ্যই চাকরি করতে দিতে চাই, তাহলে সংসার নামক বোঝা উভয়ের পক্ষেই বহন করা সম্ভব হবে-কামরুল হাসান মিথুন

আলোকচিত্রী কামরুল হাসান মিথুন বলেন, ‘বিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের এক চূড়ান্ত ব্যবস্থা। তাই প্রচন্ড মানসিক চাপের ভেতরেও প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া এড়াতে বউ যদি দশটা কথা বলে, আমি বলব একটা। তবে প্রথমে প্রেম, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ম্যারেজ, আর শুরু ও মধ্যম ঠিক থাকলে সবশেষে অবশ্যই সেটেল হবো। তাই একটি ভালো মেয়ের সন্ধানে আছি, যার সঙ্গে মানসিক বোঝাপড়ার ব্যাপারটা স্পষ্ট থাকবে। যেহেতু যৌথজীবনে দুজনের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ, সে জন্য স্ত্রীকে অবশ্যই চাকরি করতে দিতে চাই, তাহলে সংসার নামক বোঝা উভয়ের পক্ষেই বহন করা সম্ভব হবে। দুজনের কাজের জায়গা একই শহরে না হলে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এনজয় করাই উচিত। তা ছাড়া এখন যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এবং প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ফলে আলাদা আলাদা অঞ্চলে কাজের ক্ষেত্র হলেও খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। মোট কথা, একটি চাপমুক্ত সাংসারিক জীবন যাপন করতে চাই। তবে এমন অবস্থায় সন্তান লালন-পালন হয়তো একটু জটিল হয়ে উঠবে। কারণ, বাবা-মা দুজনেরই সঙ্গ দরকার সন্তানের।’ এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে কামরুল বলেন, ‘আমি সন্তানকে লালন করব আর আমার স্ত্রী তাকে পালন করবে। এ-ই হবে আমাদের ভূমিকা।’

বিয়ের পর একক পরিবার না যৌথ পরিবারে থাকবেন? এমন ভাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখনো আমি একক পরিবারে আছি, বিয়ের পরেও তাই থাকার ইচ্ছা আছে।’

 লাইফস্টাইল ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top