skip to Main Content

এডিটরস কলাম I জীবনের রূপবদল এবং বিয়ে

উত্তর যেমনই হোক, প্রবহমানতাই জীবনের ধর্ম। আর মানুষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য, বিদ্যমান থেকে সে উত্তরণ চায়। মুক্তি খোঁজে। সব স্থবিরতা ও অস্থিতিশীলতাকে অতিক্রম করাই তার অভিপ্রায়

পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে থাকাই মানুষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। পারিপার্শ্বিকের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, যাবতীয় নেতিবাচকতার মধ্যেও বেঁচে থাকার নিরন্তর প্রয়াসই তার অভিপ্রায়। এভাবে মানবজীবনের বিস্তার ঘটতে থাকে। নিরবচ্ছিন্নভাবে। সংগ্রামের এই শিক্ষা সে পেয়েছে প্রকৃতি থেকে। কেননা, প্রকৃতিও নিরুপদ্রব, স্থির নিশ্চিত কিছু নয়। তারও আছে বদল আর আত্মনির্বাচনের বিচিত্রমুখী প্রবণতা। মানুষ তো এরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফলে দেখা যায়, যখনই মানুষ প্রকৃতিবিমুখ হয়েছে, তখনই নেমে এসেছে বিপর্যয়। কিন্তু সে শেষ পর্যন্ত অজেয়, বাধা যত অলঙ্ঘনীয় হোক না কেন!

দুই
সময়ের পটে সবকিছু পাল্টায়, কিন্তু কিছুই থেমে থাকে না। জীবনের এই যে চলিষ্ণুতা, তার মধ্যে সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা এবং বহুদিনের সাংস্কৃতিক অভ্যাসগুলোরও রূপ বদলে যায়। লকডাউনের বাস্তবতায় তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাল্টে গেছে বিবাহ নামক পারিবারিক ও সামাজিক আনুষ্ঠানিকতার ধরন। সংকুচিত হয়েছে বিয়েকে কেন্দ্র করে চিরায়ত যাবতীয় উৎসব। অতিথি সমাগম, আপ্যায়নের রীতি, পোশাক-আশাক, এমনকি সাজপ্রস্তুতিও এর বাইরে নয়। বদলে গেছে ভেন্যুর ধারণাও।
পারিবারিক ও সামাজিক উৎসবগুলোই মূলত এই অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের উৎস। বিয়ের রীতি পালন করতে গিয়ে যত অনুষ্ঠান, বিনোদন ততই প্রলম্বিত। কোভিড-১৯ সেই সময়ের এই দৈর্ঘ্যমাত্রাও সংকুচিত করে দিয়েছে। কিন্তু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, কিছুই থেমে নেই। বিউটি পার্লারগুলো সেবা দিতে শুরু করেছে কয়েক মাস হয়ে গেল। আর এখন তো ব্রাইডাল মেকআপের মৌসুম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সৌন্দর্যকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। কনে সাজাচ্ছেন। যদিও তাকে কোনো কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হলের মঞ্চে দেখা যাবে না। বাড়ির ছাদে শামিয়ানা ঘেরা চৌহদ্দির এক প্রান্তে অথবা ড্রয়িংরুমে তার অধিষ্ঠান হবে। অতিথিরা নির্ধারিত দূরত্ব মেনে সেখানে হাজির হবেন।

তিন
এই পরিবর্তন কি সাময়িক? নাকি যে অভ্যাস গড়ে উঠছে, তা এই পরিস্থিতি অপসৃত হওয়ার পরেও টিকে থাকবে? অথবা মানুষ একেই স্বাভাবিক বলে চলতি জীবনধারাটি বহাল রাখবে? বা একধরনের গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে জীবনের নতুন এক সংস্কার গড়ে উঠবে? এসব প্রশ্ন মনে আসে। উত্তর যেমনই হোক, প্রবহমানতাই জীবনের ধর্ম। আর মানুষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য, বিদ্যমান থেকে সে উত্তরণ চায়। মুক্তি খোঁজে। সব স্থবিরতা ও অস্থিতিশীলতাকে অতিক্রম করাই তার অভিপ্রায়। সে জন্য প্রথমে মানুষকে বুঝে নিতে হয় পরিস্থিতির কার্যকারণসূত্রগুলো। বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ এই শিক্ষাটা আরও স্পষ্ট করেছে আমাদের সামনে। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলতে পারি, হাজার হাজার মানুষ যখন মারা যাচ্ছিল, কিছু বুঝে ওঠার আগেই, তখন সে ভাইরাসটির গতি-প্রকৃতি শনাক্ত করার প্রয়াস চলেছে। তারপর ভ্যাকসিনের জন্য গবেষণা। কত দিনে পাওয়া যাবে সেটি? এই প্রশ্নে পৃথিবীতে অস্থিরতার কমতি ছিল না। গবেষণা চলছে, তবে প্রসঙ্গটি এখন প্রায় মৃত। বাস্তবতা এই যে, পৃথিবীতে এমন অনেক রোগ আছে, যেগুলোর প্রতিষেধক আজ অব্দি আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু মানুষ সেই সব জরাকে জয় করে টিকে আছে। থাকবে। যেমন টিকে আছে তার সাংস্কৃতিক রীতি ও অভ্যাসগুলো। আগেই বলেছি, সময়ের প্রয়োজনে, পরিস্থিতির চাপে সেসবের রূপবদল ঘটেছে।

চার
বোঝা যাচ্ছে, পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তা ধারণ করতে পারলে অতিক্রমও সম্ভব। এই দুর্যোগের মধ্যেও যেমন বিয়ে হচ্ছে, এটিকে কেন্দ্র করে যা যা দরকার, কিছুই অবশিষ্ট থাকছে না। তবে সীমিত আকারে। সামাজিকতার গন্ডি ছোট করে। কেবল পরিবারের প্রতিনিধিত্বশীল সদস্যদের নিয়ে। আয়োজন যা-ই হোক, লক্ষ্য একটাই- দুজন নর-নারীকে একই ছাদের নিচে এনে জীবনের স্বাভাবিক ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ন রাখা। কেননা, এটি বাদ দিয়ে মানবসমাজের পরম্পরা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব।
পৃথিবীতে কোনো ঘটনারই সব দিক মন্দ নয়। মানে, সদর্থক কিছু শেষ পর্যন্ত থাকে। সবচেয়ে বেশি যা থাকে, তা হলো শিক্ষা। কোভিড-১৯ আমাদের শিখিয়েছে, কী করে জীবন থেকে বাহুল্যকে বাদ দেওয়া যায়। শরীর থেকে মেদ ঝরে গেলে তা নির্ভার ও সুন্দর হয়ে ওঠে।

ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top