ফিচার I প্রস্তুতির আহার্য
বর-কনে হয়ে ওঠার জন্য চাই সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার। উভয়ের সৌন্দর্য রক্ষায়ও যা সহায়ক
বিয়ে নিয়ে পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা শুরু থেকে বর-কনের উভয়কে গুছিয়ে নেওয়া দরকার। প্রত্যেকের স্বপ্ন থাকে বিয়ের দিন যেন তাকে সবচেয়ে সুন্দর, পারফেক্ট দেখায়। তবে তা পূরণে অনেক সময়ই বাদ সাধে শরীরের বাড়তি ওজন। দ্রুত তা কমানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য বিয়ের এক-দেড় মাস আগেই সঠিক একটি খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা জরুরি। নির্দিষ্ট কিছু টিপস মেনে চলতে পারলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধান পাওয়া যায়।
ওজন কমাতে বর-কনের বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা দরকার। বিয়ের কেনাকাটার জন্য বেশি সময় বাইরে থাকতে হয়, এ জন্য চেষ্টা করতে হবে বাসায় তৈরি ছোটখাটো খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া। সেটা সব সময় সম্ভব না হলে তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে কম ক্যালরির পদ বেছে নেওয়া ভালো। যেমন স্যুপ, টাটকা ফলের জুস, ফ্রুট স্যালাড ইত্যাদি। দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য যেমন মাখন অথবা পনির পরিপাক হতে অনেক সময় নেয়। এসব খাবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, পেট ফাঁপাসহ পাকস্থলীর বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি করে। এ-জাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
চিনির তৈরি এবং মিষ্টিজাতীয় খাবারের চেয়ে সবজি, ফলমূল, ফলের রস শরীর সুস্থ রাখতে সহায়ক। এতে বাড়তি মেদ জমবে না, এনার্জি বৃদ্ধি পাবে, ত্বকও থাকবে সুস্থ এবং উজ্জ্বল।
একই সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। এতে শরীরের সব ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যায়। শরীর, মুখের ত্বক ও চুল সুস্থ রাখে। এমনকি বাড়তি ক্যালরি কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পানি পানের ফলে শরীরে মেটাবলিজমের মাত্রা বাড়ে। এতে ওজন দ্রুত কমে।
হবু কনের ডায়েট
বেশির ভাগ সময় হবু কনেরা বাড়তি ওজন, মেদ নিয়ে চিন্তায় থাকে। বিয়ের আগে তাদের ওজন কমানোর দিকে ঝুঁকতে দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে সঠিক খাদ্যতালিকা মেনে চলা উচিত। প্রতি সপ্তাহে ১ পাউন্ড ওজন কমানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তাই প্রতিদিনের খাদ্য থেকে কমপক্ষে ৫০০ ক্যালরি কমাতে হয়। এ জন্য সারা দিনের খাবার গ্রহণের পরিমাণ জানা চাই।
সকাল: ৭:৩০
হালকা গরম পানিতে ১ চামচ মধু এবং ১ টুকরা লেবুর রস পান করা যেতে পারে।
নাশতা: ৮:৩০
রুটি ২টি, সবজি, দুধ চিনি ছাড়া চা বা কফি এক কাপ।
বেলা ১১:০০
গ্রিন টি ১ কাপ, ১ পিস বিস্কুট।
দুপুর ১২:০০
শসা বা গাজরের জুস ১ গ্লাস
দুপুরের খাবার: ১:৩০
ভাত ১ কাপ, সবজি, মাছ ১ টুকরা, স্যালাড, পাতলা ডাল।
বিকেল ৪:০০
কলা, কমলা, আপেল, আম, আমড়া যেকোনো ১টি।
বিকেল ৫:৩০
গ্রিন টি ১ কাপ, পাউরুটি ১ পিস অথবা বিস্কুট (চিনি ছাড়া) ২ পিস।
রাতের খাবার: ৮:৩০
ভাত ১ কাপ বা রুটি ৩টি। সঙ্গে সবজি আর মাছ।
অনেকেরই অভ্যাস, রাতে খাওয়ার পরও টিভি দেখতে দেখতে বাড়তি খাদ্য গ্রহণ। ওজন কমাতে চাইলে এসব পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। বিয়ের এক মাস আগে তো বটেই, নিয়মিত এই রুটিন মেনে চলা জরুরি। সঙ্গে সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম। তাহলে বাড়তি ওজন কমিয়ে শরীর হয়ে উঠবে ঝরঝরে ও স্লিম।
হবু বরের জন্য
ছেলেরা সাধারণত নিজেদের চেহারা, শরীর, খাদ্যাভ্যাস, ফিটনেস নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়। তবে বিয়ের আগে হঠাৎ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় পেটের বাড়তি মেদ নিয়ে। এ জন্য তাদেরও দরকার সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করা। ছেলেদের খাবার তালিকায় থাকতে হবে হরমোন টেস্টোস্টেরন লেভেলকে প্রমোট করে, ফার্টিলিটি বাড়ায় এবং সার্বিকভাবে দেহকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে- এমন খাবার। খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে বিয়ের আগের এক মাস নিয়মিত ব্যায়ামও করতে হবে। এতে শারীরিক ফিটনেসের পাশাপাশি ত্বক পাবে সজীবতা এবং এনার্জি।
শুরুতে দীর্ঘ সময় এবং কঠিন শরীরচর্চা করা যাবে না। এতে গায়ে ব্যথাসহ ছোটখাটো চোট-আঘাতও লাগতে পারে। তাই ধীরে ধীরে এক্সারসাইজের সময় এবং তীব্রতা বাড়াতে হবে। শুরু করা যেতে পারে বডি ওয়েট ব্যায়াম দিয়ে। স্কোয়াট, লাঞ্জেস, পুশ আপ, হরাইজন্টাল পুল আপ- এসব এক্সারসাইজ কৌশল শিখে নিলে ভালো। এক-দেড় মাস আগে থেকেই নিয়ম মেনে জোরে হাঁটা বা দৌড়ানোতে সুফল মিলবে। বিয়ের আগে এক মাস খাওয়া যেতে পারে কিছু ফলমূল ও শাকসবজি। পুরুষেরা সময় বেঁধে খাবার খেতে খুব একটা পছন্দ করে না বললেই চলে। এ জন্য নির্ধারিত সময় উল্লেখ না করে হবু বরদের খাদ্যতালিকায় আবশ্যিক কয়েকটি খাবারের গুণাগুণ রাখা হলো-
লালশাক, পালংশাক, শসা-গাজর আর পেঁপের স্যালাড, রসুন, বিভিন্ন সবজি, বাদাম, কলা, ড্রাগন ফল, তরমুজ ও বিট।
কলায় বিদ্যমান ভিটামিন-বি৬, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম শরীরের ক্লান্তি দূর করে এবং শরীরকে করে তোলে শক্তিশালী; ত্বকও হয় সজীব। রসুনে রয়েছে এলিসিন নামক পদার্থ, যা রক্তপ্রবাহকে সঠিক রেখে শরীরকে দেয় সজীবতা। রসুনের নানা পুষ্টিগুণ। শরীর ভালো রাখা ছাড়াও বিশেষ কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে এটি প্রায় বিকল্পহীন। লালশাকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট- সবই রয়েছে। এটি শরীরের রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে। পালংশাকের ফলিক অ্যাসিড ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তনালির সক্রিয়তা বাড়ায়। তরমুজ ও বিটে বিদ্যমান লাইকোপিন এবং বিটা-ক্যারোটিন রক্তনালির সুস্থতা বজায় রাখে। কম ক্যালরির হওয়ায় এগুলো ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও কমায়।
ইতি আফরোজ
ছবি: ইন্টারনেট