ফিচার I হবু কনের হেয়ারস্টাইল
এবার মাস্কে মানানসই। পরীক্ষাপ্রাণিত এবং বাস্তবসম্মত, কিন্তু দৃষ্টিনন্দন। উৎসবস্পন্দিত তো বটেই
কনের সাজে জরুরি, কিন্তু প্রক্রিয়াটি জটিল। স্বীকারোক্তি খোদ বিউটিশিয়ানদের। চুল বেঁধে রাখা হবে নাকি খোলাই থাকবে? ফুল পরানো হবে কি না? এমন কথা ভাবতে হয় ব্রাইডাল হেয়ারস্টাইলিংয়ের সময়। ওড়না আর হেডপিসের সেটিংও গুরুত্ব পায়। এখন তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন অনুষঙ্গ। মাস্ক। তাই হেয়ারস্টাইল এমন হওয়া চাই, যা বারবার এই মুখাবরণ খোলা বা পরার কারণে এলোমেলো হয়ে না যায়। অন্যদিকে মানাবেও মাস্কপরা লুকের সঙ্গে। হেয়ারস্টাইলিস্টরা কনেদের জন্য এমনই অভিনব কিছু কেশসজ্জা উদ্ভাবন করেছেন। চালু হয়েছে মজার কিছু হ্যাকও, যা মেনে চললে কানের ওপর মাস্কের চাপ কমবে। দিনভর আরামেই থাকবে কনের কানজোড়া। সনাতন থেকেই অনুপ্রাণিত এসব হেয়ারস্টাইল। তবে তাতে দেওয়া হয়েছে যুগোপযোগী টুইস্ট। চলতি সময়ের ওয়েডিংয়ের সঙ্গে মানিয়ে।
হাফ আপ না হাফ ডাউন
কখনোই আউট অব স্টাইল হয় না এই কেশসজ্জার ধারা। শর্ট, মিডিয়াম কিংবা লং- কনের চুল যেমনই হোক না কেন, সাজিয়ে নেওয়া যাবে অনায়াসেই। হাফ আপ হাফ ডাউন হেয়ারস্টাইলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ওড়না, হেড পিস এমনকি হালের মাস্ক সেট করার জন্য এটি মাথায় মজবুত ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যা নিউ নরমাল ব্রাইডাল ইভেন্টগুলোর জন্য পারফেক্ট। এই স্টাইলিং সেরে নেওয়া যায় নানাভাবে। ব্রেইডেড হাফ আপ হাফ ডাউন এ ক্ষেত্রে ক্ল্যাসিক। অনেক টেক্সচার এবং ডিটেইলযুক্ত হেয়ারস্টাইল চাইলে এটা করে নেওয়া যায়। লুকে বোহো ভাইবও দেয় এটি। মাথার উপরিভাগের চুলগুলো আলাদা করে নিয়ে দুপাশ থেকে পেছন অব্দি বেণিতে বেঁধে নেওয়া হয়। বাকি চুল ছেড়ে রাখা যায় সফট কার্ল বা একদম স্ট্রেইট করে। এই কেশসজ্জা চেহারার চারপাশজুড়ে একটা ফ্রেম তৈরি করে। যার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় মাস্কের স্ট্রিং বা ইলাস্টিক। ফলে মুখাবরণের সঙ্গে এই ব্রাইডাল হেয়ারস্টাইল চমৎকার দেখায়। হাফ আপের অংশটিতে বেণি করতে না চাইলে টুইস্টও করে নেওয়া যায়। আরও সিম্পল লুক চাইলে তা-ও সম্ভব। শুধু এই অংশটায় পুফি স্টাইলে ভলিউম তৈরি করলেই চলবে। অনেকে আপার হাফে পনিটেইল বেঁধে নিতেই পছন্দ করেন। কনে গার্লি লুক চাইলে এভাবে চুল বাঁধা যেতে পারে।
খোলা চুলের খেয়ালি
কনের এলো খোলা চুলের মায়া এড়ানো যায় না সহজে। এ হেয়ারস্টাইল অদ্ভুত এক আকর্ষণ তৈরি করে সাজে। বিয়েতে খোঁপা বা বেণি বেঁধে নিতে হবে তেমন কোনো নিয়ম নেই; বরং দু-একটা অনুষ্ঠানে চুল খোলা রাখলে লুকে বৈচিত্র্য আসবে। সঙ্গে যদি জড়িয়ে নেওয়া যায় ফুল, তাহলে তো কথাই নেই। অনেকেরই ধারণা, শুধু বাঁধা চুলেই ফুল মানায় বা গুঁজে নেওয়া যায়। খোলা থাকলেও সম্ভব। এ জন্য কিছু জিনিস খেয়াল রাখা দরকার। প্রথমেই পার্টিংটা বেছে নিতে হবে। মিডল বা সাইড- দুটোই সই। চুল খোলা রাখলে তা টেক্সচারযুক্ত এবং ঢেউ খেলানো হলেই ভালো। এতে ড্রামাটিক ভাবটা বজায় থাকে। ফুল পরে নেওয়ার কাজও সহজ হয়। খোলা চুলে কানের এক পাশে গুঁজে নেওয়া যায়। এতে সুবিধা হচ্ছে ফুল পরার সময় ব্যবহৃত ববি পিনগুলোতে অনায়াসেই আটকে নেওয়া যায় মাস্কের স্ট্রিং। ফুল পরার কারণে স্ট্রিং ঢেকেও থাকে। ঢেকে যায় ববিপিনও।
ব্রেইডেড বানে বিউটিফুল
খোঁপা না বেণি? দুটোই একসঙ্গে বেঁধে নেওয়া যায়। এলোমেলো হলেও ভালো দেখায়। ব্রাইডাল মাস্ক লুকের সঙ্গে এর জোড় জম্পেশ। একটু ট্রিক খাটিয়ে নিলে কনের কান জোড়াকেও আরামে রাখা যায়। ওয়ান বা টু সাইডেড ক্রাউন ব্রেইডে বেঁধে নেওয়া যায় মাথার সামনের দিকের চুল। রাখা যায় সাধারণও। শুধু সিঁথি করে টেনে আঁচড়ে নিয়ে পেছনের দিকের চুলগুলো বাঁধা হয় খোঁপায়। সে ক্ষেত্রে অপশন অনেক। মেসি, ডাচ, টুইস্টেড- সবই সুন্দর দেখাবে। এই খোঁপার বেজের সঙ্গে আটকে দেওয়া যেতে পারে মাস্কের স্ট্রিং। তারপর তা ঢেকে দেওয়া যেতে পারে ফুলে। এতে মাস্ক কানে আটকাতে হলো না। স্ট্রিংটাও ঢেকে গিয়ে সৌন্দর্য বাড়ল পুরো লুকের।
ফরগেট ফ্লোরাল
ফুল ছাড়াও কনে যে সুন্দর হয়ে উঠতে পারে, তারই প্রমাণ হালের এ ট্রেন্ড। এই হেয়ারস্টাইলিংয়ে ফুল নয়, বরং চুলে জুড়ে দেওয়া হয় হেয়ার অ্যাকসেসরিজ। হেয়ার পিন এ ক্ষেত্রে এগিয়ে। মূলত নব্বইয়ের দশক থেকে চল আছে এ লুকের। পরে নিচ্ছেন এখনকার ফ্যাশনসচেতন কনেরাও। এ জন্য বেছে নিতে হবে উৎসবসম্মত হেয়ার পিনগুলো। কালো নয়; লাল, নীল, আকাশি, গোলাপি ছাড়াও সোনালি আর রুপালি রঙা ববি পিন বেশি জুতসই। পার্ল, পাথর বা ক্রিস্টাল বসানো পিনও ব্যবহার করা যায়। মাথার মাঝে বা এক পাশে সিঁথি করে নিতে হবে। তারপর একটি বা দুটি নয়, একসঙ্গে অনেক ববি পিন আটকে দিতে হবে চুলে। সে ক্লিপেই আটকাতে হয় মাস্কের স্ট্রিং। বাকি চুল খোলা রাখা যেতে পারে। স্ট্রেইট বা কার্লিও করে নেওয়া যায়। অনেকে আবার বেঁধে নিতে চান চুল। সেটাও সম্ভব।
জাহেরা শিরীন
মডেল: মৌসুম, লিসা ও মানশী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ফারাবী তমাল