ফিচার I করোনা জয়ের পরে
সংক্রমণ থেকে সুস্থতায় ফিরে আসার পর মেকআপ নিতে গেলে ত্বকের প্রস্তুতি চাই। মাস্ক তো ইতিমধ্যেই নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। ত্বকসাজে তা-ও বিবেচ্য
লকডাউন, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, নিউ নরমাল- এ সবকিছুর সঙ্গে আমাদের শরীর ও মন ওতপ্রোত। অতিমারির আগের এবং পরের জীবন অনেকটাই ভিন্ন। করোনায় আক্রান্ত যারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাদের জন্যও এখন নিজেদের সতেজ রাখা জরুরি।
‘পোস্ট কোভিড সিনড্রোম’ থেকে সেরে ওঠার অন্যতম উপায় ঘুমের রুটিন ঠিক রাখার চেষ্টা করা এবং রাত না জাগা। দিনে সক্রিয় থাকতে হবে। রাতের ঘুম জরুরি। পর্যাপ্ত পানি, ফলের রস পান এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। প্রতিদিন গোসল ও পরিষ্কার কাপড় পরার অভ্যাস অব্যাহত রাখতে হবে। বন্ধু, স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং পরিবারের মধ্যে সময় কাটানোর অভ্যাস অটুট রাখাও দরকার। মানসিক অবসাদ তীব্র হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা সবচেয়ে জরুরি।
সব সময় মাস্ক পরার কারণে ত্বকের ওপর নানা রকম প্রভাব পড়ে। তাই ত্বকের যত্ন নেওয়া দরকার।
মাস্ক এখন একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে, ঘরে ও বাইরে। দীর্ঘদিন একটানা এই মুখাবরণ পরলে ত্বকের অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠিক যেমন একটানা ঘড়ি পরতে পরতে ওই জায়গাটায় ত্বকের রঙে তফাত হয়ে যায়। সঙ্গে ব্রণ, অ্যালার্জি, র্যাশের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ঠিকভাবে মাস্ক পরলে তা নাক আর মুখের উপর চেপে বসে, ফলে প্রয়োজনীয় বাতাস ঢুকতে পারে না। এতে ওই অংশের তাপমাত্রা আর আর্দ্রতা খুব বেড়ে যায়। মাস্ক পরলে মুখ গরম আর ভেজা ভেজা লাগতে শুরু করে কিছুক্ষণ পর থেকেই। গরম ও ঘাম একসঙ্গে ত্বকে বিক্রিয়া করে; ফলে ব্রণ, ত্বকের রঙে তফাত, ট্রমা লাইনের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
করোনা থেকে সেরে উঠলেই আগের জীবনে ফিরে যাওয়া যাবে এমন ভাবার সুযোগও নেই। ফের আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েই গেছে। তাই মাস্ক পরার অভ্যাস ত্যাগ করা যাবে না। তবে জেনে রাখতে হবে কিছু কৌশল, যাতে ত্বকটাও বাঁচে।
সর্দি-কাশির মতো কোনো উপসর্গ না থাকলে বাড়ির ভেতরে মাস্ক পরে থাকার দরকার নেই। বাইরে যাওয়ার সময় ব্যাগে ওয়েট টিস্যু রাখতে হবে। মুখ ঘেমে গেলে টিস্যু দিয়ে মুছে নেওয়া যায়। সুতির কাপড়ের তৈরি মাস্ক পরলে গরম একটু কম লাগবে।
ত্বক সেনসিটিভ হলে মাস্কের কারণে লাল হয়ে যাওয়ার বা র্যাশ বেরোনোর আশঙ্কা থেকে যায়। অনেক সময় জায়গাটা চুলকায়, আঁশের মতো চামড়া উঠতে থাকে। বাড়ি ফিরেই মাস্ক খুলে মুখ ঠান্ডা জলে ধুয়ে নেওয়া জরুরি। তারপর অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে নিলে ধীরে ধীরে লালচেভাব কেটে যাবে।
একটানা কোনো জায়গা চাপা থাকলে সে অংশে রঙের তফাত ঘটে। অর্থাৎ মাস্কের ঠিক নিচের অংশটুকুর রং মুখের বাকি অংশের চেয়ে হালকা দেখাবে। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে পুরো মুখ ঢেকে ফেলা জরুরি। বাইরে বেরোলে মাস্কের বদলে সুতির নরম স্কার্ফ বা ওড়না দিয়ে মুখমন্ডল ও মাথা জড়িয়ে নিলে ভালো। চোখে পরতে হবে রোদচশমা। তাতে কোভিড থেকে বাঁচা যাবে, ত্বকও সতেজ থাকবে।
ত্বকের যত্নে আরও মনে রাখা জরুরি
মুখ নিয়মিত পরিষ্কার করে টোনার ও ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে রাখতে হবে। অ্যালোভেরা বেসড টোনার আর ময়শ্চারাইজার ত্বক স্নিগ্ধ রাখবে।
ত্বকে জ্বালাপোড়া হলে বা লাল হয়ে গেলে বরফের টুকরা চেপে ধরে রাখা যায়। পাতলা কাপড়ে বরফ মুড়ে লাল হয়ে যাওয়া অংশে ধীরে ধীরে লাগালে আরাম পাওয়া যাবে।
শিয়া বাটার, কোকো বাটার, জোজোবা অয়েল ত্বকে বাড়তি সুরক্ষা জোগায়। তাই মাস্ক পরার আগে মুখত্বকে ময়শ্চারাইজার মেখে নিতে হবে।
ভারী মেকআপ করলে তা ঘামের সঙ্গে মিশে ত্বকে বিক্রিয়া করতে পারে। তাই মেকআপ খুব হালকা রাখতে হবে। ফাউন্ডেশন, কমপ্যাক্ট যতটা সম্ভব কম মাখলে এ সমস্যা এড়ানো যাবে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠার পর যেসব সাধারণ সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেগুলোর মধ্যে একটি হলো চুল পড়ে যাওয়া। এর থেকে বাঁচতে পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি ঘরোয়া দুটি টোটকা ব্যবহার করা যায়।
প্রতিদিন পেঁয়াজ থেঁতো করে তার রস চুলের গোড়ায় লাগাতে হবে। এই রস একটা তুলায় মাখিয়ে তারপর স্ক্যাল্পে লাগিয়ে, পরে শ্যাম্পুতে ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যাবে।
হাফ কাপ পেঁয়াজের রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে ৩০ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হয়। সপ্তাহে তিন দিন এইভাবে পেঁয়াজের রস লাগালে উপকার মিলবে।
পেঁয়াজে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল, সালফার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। সালফার নতুন চুল গজানো, চুল পড়া বন্ধসহ অন্যান্য চাহিদা পূরণ করে। রক্তসঞ্চালনেও গতি সঞ্চারিত হয়।
সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: মৌসুম
জুয়েলারি: আনজুম’স
ওয়্যারড্রোব: অদ্রিয়ানা এক্সক্লুসিভ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ফারাবী তমাল