ডিল ব্রেকার I মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স
যাত্রা শুরু হয়েছে সম্প্রতি। অল্প দিনেই ভোক্তাদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। বিশ্বমানের ঘড়ির সম্ভার নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক সাফায়েত চৌধুরী জেসন। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতা…
ক্যানভাস: শুরুর গল্প জানতে চাই…
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : শিল্প এবং সৃজনশীলতার সমৃদ্ধির জন্য পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। আমরা ঘড়ি তৈরির সৃজনশীলতা এবং শিল্প সম্পর্কে বিশেষ অনুরাগী। ঘড়ির সংগ্রাহকও। কোম্পানির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাহিন রহমান স্নাতক শেষ করে একটি উদ্যোগ উদ্বোধনের পরিকল্পনা করছিলেন। তিনি বিদেশে পড়াশোনা করেছেন এবং ঘড়িশিল্পের আন্তর্জাতিক মান সম্পর্কে জানতেন। যা তিনি বাংলাদেশের বাজারে খুঁজে পাননি। তিনি বাজারটি বিশ্লেষণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তিনি কেবল একটি শোরুম স্থাপন করে ব্যবসা শুরু করতে চাননি। ইন্ডাস্ট্রি বদলাতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি বাজারটির একটি বিশ্লেষণমূলক মূল্যায়ন করেন। লাক্সারি মার্কেট থেকে পেশাদারদের নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। এভাবে মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স বাংলাদেশের প্রথম লাক্সারি ওয়াচ বুটিকটি শুরু হয়।
ক্যানভাস: ‘মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স’ নামকরণ কেন?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : মালিকের নাম মোহাম্মদ। আর যেহেতু এটি পরবর্তী প্রজন্মের উদ্যোগে, তাই মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স নাম রাখা হয়। এই ব্যতিক্রমী নাম আমাদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এসেছে।
ক্যানভাস: কোন কোন ঘড়ির ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করছেন আপনারা?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : বিভিন্ন শ্রেণির ঘড়ির জন্য মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স-এর দুটি শাখা আছে। লাক্সারি ওয়াচ বুটিক (এলডাব্লিউবি) এবং ওয়াচ কালেকশন (ডাব্লিউসি)। আমাদের এলডাব্লিউবি বিভাগে জেনিথ, মন্টব্ল্যাঙ্ক, ট্যাগ হয়্যার, ওরিস, মোভাডো এবং ফ্রেডেরিক কনস্ট্যান্ট-এর মতো ৬টি লাক্সারি সুইস ব্র্যান্ডের অনুমোদিত ডিলারশিপ রয়েছে। অন্যদিকে, ডাব্লিউসি-এর ব্র্যান্ডগুলো মিডসেগমেন্টর। বর্তমানে ডাব্লিউসিতে আল্পিনা, ভিক্টোরিনক্স এবং এভিয়েটর আছে সুইস ব্র্যান্ডের মধ্যে। এর পাশাপাশি জার্মানির জেপেলিন, ডেনমার্কের নর্ডগ্রিন এবং সুইডিশ ব্র্যান্ড ট্রিওয়ার ডিলারশিপও আনা হয়েছে।
ক্যানভাস: বিভিন্ন ক্যাটাগরির ঘড়ির মধ্যে কোনটি কাস্টমারদের বেশি আকর্ষণ করে?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : ঘড়ির পছন্দ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। এটি সম্পূর্ণরূপে একজনের ব্যক্তিগত রুচি এবং ক্রয়ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। এমন কিছু লোক আছেন যারা আনন্দের সঙ্গে একটি ঘড়ির জন্য মিলিয়ন ব্যয় করেন। আবার অনেকের কাছে ঘড়ি নিছকই একটি প্রয়োজনীয় জিনিস, যা শুধু সময় দেখার জন্য ব্যবহৃত হয়। তারা বেশি টাকা খরচ না করে ফাংশনাল ঘড়ি কেনেন।
সাধারণত, আমাদের বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ট্যাগ হয়্যার তরুণ নির্বাহীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। অবস্থাসম্পন্নরা জেনিথ বেশি পছন্দ করেন। মোভাডো বিবাহের উপহারের জন্য পছন্দের ব্র্যান্ড। অন্যদিকে যারা বিলাসবহুল ব্র্র্যান্ডে কার্যকারিতা এবং যুক্তিসংগত দামের ভারসাম্য খোঁজেন, তাদের অনেকের পছন্দ ওরিস এবং ফ্রেডেরিক কন্সট্যান্ট।
আমাদের ওয়াচ কালেকশন ব্র্যান্ডগুলো যেমন জেপ্লিন, আল্পিনা ইত্যাদি। একটি কার্যকরী ঘড়ির সন্ধান করেন এবং সেটার জন্য বেশি টাকা খরচ করতে চান না- এসব তাদের জন্য।
ক্যানভাস: ব্রাইডাল উপযোগী কোনো ব্র্যান্ডের ঘড়ি আছে কি? সেগুলো কী?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : সব ব্র্যান্ডেরই বর-কনের জন্য একাধিক ডিজাইন থাকে, যেগুলোকে আমরা কাপল ঘড়ি বলি। আমাদের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ট্যাগ হয়্যার, মোভাডো, ওরিস এবং ফ্রেডেরিক কন্সট্যান্ট অনেক ডিজাইনের কাপল ঘড়ি করে। এ ছাড়া মোটামুটি সব ব্র্যান্ডেরই ম্যাচিং ডিজাইন থাকে।
ক্যানভাস: ঘড়ি ব্যবহারের বিবর্তনটা কেমন দেখছেন?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্সের যাত্রা খুব বেশি দীর্ঘ নয়। আমরা প্রায় দুই বছর ধরে বাজারে আছি। শুরু থেকেই তৎকালীন ঘড়ির বাজারে পরিবর্তন আনার ইচ্ছা ছিল। বাংলাদেশ থেকে ঘড়ি কিনতে গ্রাহকদের মধ্যে নির্ভরযোগ্যতার অভাব দূর করতে চেয়েছি। এমন একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম, যা একই সঙ্গে ঘড়িপ্রেমী এবং সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয় হবে। মনে হয় আমরা সেই চেষ্টায় কিছুটা হলেও সফল হয়েছি। আগে বিদেশ থেকে যারা সুইস ঘড়ি কিনতেন, তারা এখন মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স থেকে কিনছেন। পাশাপাশি ঘড়ি ব্যবহারের সংস্কৃতিও আগের থেকে পরিবর্তিত হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম এখন ঘড়ি ব্যবহারে এবং এ-সংক্রান্ত তথ্য জানতে বেশ আগ্রহী। সবকিছু মিলে বাংলাদেশের ঘড়ির বাজারের ভালো একটি পরিবর্তন গত কিছুদিনের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে।
ক্যানভাস: মূলত কোন শ্রেণির কাস্টমারদের কথা চিন্তা করে ঘড়ি আমদানি করেন আপনারা?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : সব শ্রেণির কাস্টমারদের জন্য ঘড়ি আনার চেষ্টা করি। কোনো নির্দিষ্ট সেগমেন্টকে টার্গেট করে নয়। আমরা সব বিভাগকে পূরণ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের ১১টি ব্র্যান্ড দুটি পৃথক উইংয়ের মাধ্যমে কমবেশি সমস্ত সেগমেন্ট কভার করে।
ক্যানভাস: বাজারে মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স কেন ব্যতিক্রম?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : আমরা নির্ভরযোগ্যতা, সঠিক মূল্যায়ন এবং ব্র্যান্ড এক্সপেরিয়েন্সকে বেশি গুরুত্ব দিই। খুচরা বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আমাদের কাস্টমারদের প্রিমিয়াম ফিল দেওয়ার জন্য প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। আমাদের সেলস এক্সিকিউটিভদের ঘড়ির পাশাপাশি গ্রাহকসেবার ওপরও বিশদ ট্রেনিং দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য শুধু ঘড়ি বিক্রি নয়, আমরা চাই গ্রাহকেরা মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স থেকে যেন নির্ভরতা এবং সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি নিয়ে যান। আমাদের শক্তি হলো সততা, নির্ভরযোগ্যতা, ভ্যালু ফর মানি এবং প্রিমিয়াম এক্সপেরিয়েন্স।
ক্যানভাস: কোভিড-১৯-এ মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স-এর সার্বিক অবস্থা কেমন?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : এখন বিশ্বজুড়ে দুর্যোগপূর্ণ সময় চলছে। বৈশ্বিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে আমরাও কিছুটা প্রভাবিত হয়েছি। তবে সময়টা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল শোরুম করেছি। ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং তাদের ভার্চ্যুয়াল অভিজ্ঞতা অনুভব করার জন্য আমাদের একটি ডেডিকেটেড টিম রয়েছে, যা আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইটের কাজ করে। আপনি এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে আমাদের সব ঘড়ি, ফিচার এবং দাম জানতে পারবেন। আপনার যদি কোনো বিশেষ প্রশ্ন থাকে, সেটা জানাতে পারেন। আমাদের টিম আপনাকে সব ইনফরমেশন দিয়ে সাহায্য করবে। লকডাউনে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ছিল। আমরা ক্লায়েন্টদের সুরক্ষিত রাখতে প্রতিটি অনলাইন মাধ্যমকে কার্যকরী করার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি, শোরুমে ঘড়ি দেখতে আসা ক্লায়েন্টদের সুরক্ষারও সমস্ত ব্যবস্থা রেখেছি। আশা করি, শিগগিরই এই মহামারি শেষ হয়ে যাবে এবং আমরা আবারও নিরাপদ জীবনে ফিরে আসব।
ক্যানভাস: মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স-এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট। দেশের শীর্ষস্থানীয় এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় ওয়াচ স্টোর হতে চাই। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
ক্যানভাস: কতটি আউটলেট আছে?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : বর্তমানে আমাদের একটি স্টোর। তবে অদূর ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি স্টোর খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
ক্যানভাস: ঘড়ির প্রাইস রেঞ্জ?
সাফায়েত চৌধুরী জেসন : ওয়াচ কালেকশনের ব্র্যান্ডগুলো ১২০০০ থেকে ১৫০০০০ টাকা পর্যন্ত দাম থাকে। লাক্সারি ব্র্যান্ডগুলো ৫০০০০ থেকে ১৫০০০০০ টাকা দাম হতে পারে। তবে কেউ চাইলে ইএমআই সুবিধাও গ্রহণ করতে পারেন। আমরা একাধিক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ০% সুদে ১২ মাসের ইএমআই অফার করি। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গেও মাঝে মাঝে কিছু বিশেষ অফারও ক্যাম্পেইন করি।
ছবি: মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স