ব্লগার’স ডায়েরি I অতিথিদের জন্য
করোনা-বাস্তবতা পাল্টে দিয়েছে অনেক কিছুই। প্রি-প্ল্যানড ওয়েডিংয়ের ট্রেন্ড ম্লান হয়ে এসেছে। আয়োজনের জাঁকজমক কমেছে; বরং বেড়েছে সাবধানতা। উদযাপনে খানিকটা ভাটা পড়লেও থেমে থাকেনি বিয়ে। উল্টো আয়োজনের ভিন্নতায় অনুষ্ঠানগুলো হয়ে উঠেছে আরও আন্তরিক। আনন্দ বেড়ে গেছে বহুগুণ। পার্টি সেন্টার বা পাঁচ তারকা হোটেলে নয়, বাড়িতেই এখন হচ্ছে অনুষ্ঠান। ছোট, পরিপাটি, কিন্তু সৌন্দর্যের ছোঁয়ায়। যার প্রভাব স্পষ্ট বর-কনের সাজপোশাকসহ সব বিষয়ে। সে ক্ষেত্রে আমন্ত্রিত অতিথিদেরও বিষয়টা মাথায় রেখে পোশাক নির্বাচন করা উচিত। সাজ যেন কনেকে ছাপিয়ে না যায়। এ জন্য একটু কৌশলী হওয়া দরকার। অতিরিক্ত সাজগোজ যেমন চলবে না, তেমনি খুব বেশি সাদামাটা দেখানোও বিয়েবাড়িতে বেমানান।
এখানে এথনিক আউটফিটই যথার্থ। উৎসবের শুরুর অনুষ্ঠানগুলো, যেমন হলুদ অথবা মেহেদিতে আমন্ত্রিত হলে সারারা বা ঘারারা সেট থাকতে পারে তালিকার শীর্ষে। এগুলো স্বাচ্ছন্দ্য আনবে। হাঁটা-চলা, এমনকি নাচের সময় কোনো অস্বস্তি সৃষ্টি করবে না। সারারা এবং ঘারারা- দুটোই ফ্লোয়িং প্যান্ট স্টাইলে তৈরি। কিন্তু সামান্য পার্থক্য আছে শিলুয়েটে। সারারা আগাগোড়াই অনেক ঘেরওয়ালা। কিন্তু ঘারারা হাঁটু অব্দি আঁটসাঁট, তারপর বাকিটা ফ্লেয়ার বা ঘেরসহ। সারারা পরার পর অনেক সময় স্কার্টের ইলিউশন তৈরি হয়। লং বা শর্ট- দুই ধরনের কুর্তার সঙ্গেই সহজে টিমআপ করে নেওয়া যায়। ঘারারার সঙ্গে ভালো দেখায় মিড থাই লেন্থের কামিজ। এতে হাঁটুর কাছের বর্ডারটাও ঢেকে যায়, কিন্তু পুরো লোয়ার বডিতে সুন্দর একটা শেপ তৈরি করে। এই ফ্লোয়িং প্যান্টগুলোর সঙ্গে কামিজটা বেছে নেওয়া যায় দুইভাবে। প্রথমত, বটমের সঙ্গে ম্যাচিং হতে পারে কামিজের কম্বিনেশন। কো-অর্ডিনেটেড সেট হিসেবে। দ্বিতীয়ত, কনট্রাস্ট কামিজও চমৎকার দেখাবে স্টাইলিংয়ের সময়। যেমন: মেরুন কিংবা রয়্যাল ব্লুর সঙ্গে গোল্ডেন সারারা পরে নেওয়া যায়। তবে ফ্যাব্রিক হওয়া চাই উৎসবসম্মত। মসলিন, শিফন, সিল্ক থেকে ভেলভেট- সবই চলবে বিয়েতে। অবশ্য, অনেক বেশি এমবেলিশড পোশাক এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এ ক্ষেত্রে মিনিমালিস্টিক অ্যাপ্রোচ যথাযথ। পোশাকের রঙ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কনেদের পরার প্রচলিত কালারগুলো বাদ দিলে নিজস্বতা ফুটে উঠবে। কালার প্যালেটের প্যাস্টেল রংগুলো এখন ট্রেন্ডের দৌড়ে এগিয়ে। সেখান থেকেই পছন্দের একটা রঙ বেছে নেওয়া যেতে পারে।
বিয়েতে শাড়ি সব সময়ের পছন্দের তালিকায় থাকে। সিল্ক দেবে ক্ল্যাসিক রয়্যাল লুক। এমবেলিশড শিফন বা নেট শাড়িও অনায়াসে আভিজাত্য আনবে সাজে। সে ক্ষেত্রে বর্ডার আর আঁচলজুড়ে কারুকাজ থাকলে ভালো, ওভার দ্য টপ দেখাবে না। বোহিমিয়ান ভাইব তৈরি করতে চাইলে গায়ে জড়ানো যায় হ্যান্ডলুম সিল্ক শাড়ি। লুকে চিরন্তন ঐতিহ্য বজায় রাখতে চাইলে কাতান, বেনারসি, জামদানি, মসলিনের মতো শাড়িই ভরসা। সাজে এগুলো আলাদা আভিজাত্য তৈরি করে। তবে মনে রাখতে হবে, অনেক বেশি ঝকমকে নয়, বরং কম নকশার শাড়ি পরে সৌন্দর্য বাড়ানো যেতে পারে।
পোশাক বাছাইয়ে খেয়াল রাখতে হবে, জুতসই গয়না আর অ্যাকসেসরিজ যেন মানানসই হয়। তবেই লুক পরিপূর্ণতা পাবে। কিন্তু এমনভাবে সাজা যাবে না যেন, দেখলে মনে হয় কনের সঙ্গে কম্পিটিশন চলছে। এতে বরং অতিথিদের মধ্যে আলাদা একটা স্টেটমেন্ট তৈরি হবে।
আসমাউল হোসনা তিশা
ফেসবুক: tisha.asma
ইনস্টাগ্রাম: kingtisha_08