skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ফ্যাশন ডিজিটাল ইন্ডিয়া কতুর উইক ২০২০

বদলে যাওয়া সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ের পোশাকেও ঘটেছে পরিবর্তন। তাই দৃশ্যমান হলো বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত ফ্যাশন উৎসবে। ভারতও পিছিয়ে থাকেনি। লিখেছেন ফাহমিদা শিকদার

জমকালো সব পোশাক নিয়ে প্রতিবছরের জুলাই মাসে আয়োজিত হয় ইন্ডিয়া কতুর উইক। করোনা মহামারির জন্য এ বছরের আয়োজনটি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। তবে সব বাধা অতিক্রম করে ফ্যাশন ডিজাইনার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার উদ্যোগে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ডিজিটাল ইন্ডিয়া কতুর উইক। ১৮ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা এবারের উৎসবে ১২ জন স্বনামধন্য ডিজাইনার ফ্যাশন ফিল্মের মাধ্যমে নিজেদের কালেকশন দেখিয়েছেন। প্রতিটি ফ্যাশন ফিল্ম ছিল অসাধারণ এবং বৈচিত্র্যময়। বরাবরের মতো এবারও উৎসব আর বিয়ের পোশাকের দৃষ্টিনন্দন কিছু ট্রেন্ড উঠে এসেছে এই ফ্যাশন উইক থেকে।
মনীশ মালহোত্রা
এবারের সংগ্রহে তিনি মোগল স্টাইলের পোশাকে ব্যবহার করেছেন পিস্তাশিয়ো গ্রিন, টিল, ডাস্কি পিংক, গ্রে, মেরুনের মতো আধুনিক কালার প্যালেট। এতে লেহেঙ্গার পাশাপাশি মেয়েদের জন্য ছিল কলিদার কুর্তা, ইজার সালোয়ার, খাদা দোপাট্টা, ঘারারা আর ছেলেদের শেরওয়ানি, আংরাখা, জামা এবং ভারী শাল। খাঁটি কটন সিল্ক, মাশরু, ভেলভেট আর মসলিন কাপড়ের উপর ছিল সোনা ও রুপার জরির সূচিকর্ম। ‘রুহানিয়াত-এ সেলিব্রেশন কলড লাইফ’ নামের এই ফ্যাশন ফিল্মে শো স্টপার ছিলেন জাহ্নবি কাপুর।
কুনাল রাওয়াল
প্রথমবারের মতো ইন্ডিয়া কতুর উইকে সম্পূর্ণ মেনস ওয়্যার কালেকশন নিয়ে হাজির হয়েছেন তিনি। তার ডিজিটাল শোকেস ‘হাইড অ্যান্ড সিক’ ধারণ করা হয় মুম্বাইয়ের আইকনিক এশিয়াটিক লাইব্রেরির সামনে। প্রথাগত নান্দনিকতার সঙ্গে আধুনিকতার মিশেলে গড়া কালেকশনে ছিল লিন কাট এবং আকর্ষণীয় শিলুয়েটের শেরওয়ানি, যোধপুরি স্যুট, শর্ট পাঞ্জাবি ও জ্যাকেট। সঙ্গে ছিল কুনালের সিগনেচার ফ্রেঞ্চ নট এমব্রয়ডারি। রঙের ভেতর প্রাধান্য পেয়েছে মিলিটারি অলিভ, প্যাস্টেল, নিউট্রাল, নেভি ব্লু এবং সাদা।
জে জে ভালায়া
তুরস্কের বিখ্যাত শহর বুরসা ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের প্রথম রাজধানী। পাঞ্জাবি ডিজাইনার জে জে ভালায়ার এবারের কালেকশনের নামও তাই। অটোমান-প্রাণিত শীতের বিয়ের পোশাকের এই সংগ্রহে ছিল জমকালো শাড়ি, লেহেঙ্গা আর শেরওয়ানি। সিল্ক ও ভেলভেট ফ্যাব্রিকের উপর সিল্ক সুতা, মুক্তা, পুঁতি, জারদৌসি, ক্রিস্টালের ব্যবহারে করা অসাধারণ সব কারুকাজ। শাড়ি আর লেহেঙ্গার উপর স্টেটমেন্ট বেল্টের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো।
রাহুল মিশ্র
এবারের সংগ্রহের নাম ‘লোটাস পন্ড’, অর্থাৎ পদ্মপুকুর। তার ফ্যাশন ফিল্মটি ধারণ করা হয় রাজস্থানের তিজারা ফোর্ট প্যালেসে। পদ্মপুকুরের বাস্তুতন্ত্রের অনুপ্রেরণায় গড়া মিনিমাল সংগ্রহটির মোটিফ ছিল জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। হালকা প্যাস্টেল রঙের শাড়ি, গাউন, লেহেঙ্গা, কুর্তা, জ্যাকেট, পাঞ্জাবি, কোটি, শেরওয়ানিগুলোতে অ্যাপ্লিকের কাজ ছাড়া খুব একটা ভারী নকশা দেখা যায়নি।
শান্তনু অ্যান্ড নিখিল
প্রথাগত অথচ নান্দনিক বিয়ের পোশাকের সংগ্রহ দিয়ে চমক দেখিয়েছেন। এই ডিজাইনার জোড় মেয়েদের গাউন, লেহেঙ্গার জন্য বেছে নিয়েছেন হালকা জর্জেট ও শিফন ফ্যাব্রিক। সঙ্গে ছিল মেটালিক এমব্রয়ডারি, সূক্ষ্ম গথ অ্যাপ্লিক আর ক্ল্যাসিক জারদৌসি। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে ছেলেদের অ্যাসিমেট্রিক কুর্তা এবং যোধপুরি কোট।
অমিত আগারওয়াল
স্বঘোষিত ‘ট্র্যাডিশনালিস্ট’। তবে এবার বেশ ‘ফিউচারিস্টিক’ পোশাকের সম্ভার দেখা গেছে কালেকশনে। জলজ প্রকৃতি প্রেরণায়। পরিবেশবাদী এই ডিজাইনার সংগ্রহের সব কটি পোশাক তৈরিতে ব্যবহার করেছেন রিসাইকেল পলিমার ফ্যাব্রিক। ডিপ মেটালিক ব্লু, গ্রিন পার্পল ও লাইট মেটালিক সিলভার, গোল্ডের রঙের বাহারি লেহেঙ্গায় বৈচিত্র্যময় জ্যামিতিক লাইন এবং স্ট্রাইপ ডিজাইনের উপস্থিতি মুগ্ধতা ছড়িয়েছে।
আঞ্জু মোদি
তিনি এনেছেন ঐতিহ্যবাহী পোশাকের সংগ্রহ ‘সিন্দুরি’। তার ডিজিটাল শোকেস মনে করিয়ে দেয় ‘বুলবুল’ সিনেমার কথা। বালিকা থেকে কনে এবং নারী হয়ে ওঠার গল্পই উঠে আসে এই ফ্যাশন ফিল্মে। মাশরু সিল্ক, বেনারসি, জামদানি, পশমিনা কাপড়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা এবং আনারকলিতে ছিল মুকেশ, জারদৌসি, দবকার মতো ধ্রুপদি সূচিকর্ম।
ট্রেন্ড
এবারের কতুর উইকে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে দু-ধরনের পোশাকই দেখা গেছে। গত বছরে বিয়ের পোশাকে প্যাস্টেল শেডের উপস্থিতি লক্ষণীয় হলেও এবার রাজকীয় হালে ফিরে এসেছে উজ্জ্বল লাল রঙ। আসছে বিয়ের মৌসুমে লাল লেহেঙ্গাই বেশি দেখা যাবে।
কনট্রাস্টের দিন শেষ। এবার হালকা ও গাঢ় শেডের টোন অন টোন লেহেঙ্গা বেশি দেখা গেছে। ছিল বৈচিত্র্যময় ব্লাউজ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে ত্রিমাত্রিক বক্ষবাস। অ্যাপ্লিকের কাজ বা স্ট্রাকচারাল মোটিফের সূচিকর্মের এ ধরনের ব্লাউজ বিয়ের সাজে অন্য মাত্রা আনতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
গয়নার ট্রেন্ডে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। বহাল থাকছে ভারী চোকার। মডার্ন ব্রাইডদের জন্য এসেছে ফ্লোরাল ও ফেদারের হেডপিস এবং স্টেটমেন্ট বেল্ট। দোপাট্টা পরার ঢঙে এসেছে পরিবর্তন। লেহেঙ্গার দোপাট্টা মাথায় না পরে কেপ স্টাইলে ঘাড়ের উপর রাখা হচ্ছে। বেল্ট দিয়েও আটকিয়ে পরতে দেখা গেছে।
আসন্ন বছর ছেলেদের বিয়ের পোশাকের বাজার দখল করতে আসছে আধুনিক ডিজাইনের ভিন্ন কাটের শেরওয়ানি এবং যোধপুরি কোট।
নিউইয়র্ক ব্রাইডাল ফ্যাশন উইক ফল ২০২০
৭ থেকে ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নিউইয়র্ক ব্রাইডাল ফ্যাশন উইক ফল ২০২০। এ বছর ডিজাইনাররা ভার্চ্যুয়াল জুম প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে নিজেদের কালেকশন প্রদর্শন করেন। ব্রাইডাল ফ্যাশন উইকের নতুন ভার্চ্যুয়াল ফরম্যাটটির পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল দ্য ব্রাইডাল কাউন্সিল এক্স পালকোয়েস্ট এবং কাউন্সিল অব ফ্যাশন ডিজাইনারস অব আমেরিকার রানওয়ে ৩৬০ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। করোনাকালীন ছোট বিয়ের আয়োজন আর করোনা-পরবর্তী বিয়ের বড় উৎসবের কথা মাথায় রেখেই মিনিমালিস্ট ও ম্যাক্সিমালিস্ট- দুই ধরনের পোশাক দিয়ে নিজেদের কালেকশন সাজিয়েছেন ডিজাইনাররা।
নতুন বাস্তবতায় এবারের ব্রাইডাল ফ্যাশনে ঘুরেফিরে এসেছে মিনিমালিস্ট ব্রাইড কনসেপ্ট। সামাজিক দূরত্বের ছোট বিয়েতে পরার জন্য মিডি লেন্থ গাউনের সঙ্গে লিটল হোয়াইট ড্রেস। প্লেইন কাটের পাশাপাশি এসব গাউনে গ্লিটার ফ্রিঞ্জ, ফেদার, বো, স্টেটমেন্ট জুয়েল ওয়ার্ক ও রাফলের ব্যবহার দেখা গেছে। মডার্ন ব্রাইডদের জন্য এসেছে আকর্ষণীয় ডিজাইন আর প্যাটার্নের প্যান্ট স্যুট, জাম্প স্যুট ও সেপারেট ট্রাউজার টপস।
ম্যাক্সিমালিস্ট ব্রাইডদের জন্য ছিল ব্যালেরিনা-প্রাণিত বলগাউন, এ লাইন গাউন। গাউনের কাটে ছিল বেশ ভিন্নতা। কাটআউটের সঙ্গে যোগ হয়েছে পিকাবু স্লিট সাইড কাট। নেকলাইনে নতুন সংযোজন ওয়াইড সেট শোল্ডার স্ট্র্যাপ। গতবারের মতো এবারও ছিল থ্রিডি ফ্লোরাল প্রিন্ট। ড্রিমি কাপ স্লিভ, এক্সট্রাভ্যাগেন্ট পাফ স্লিভ, আর ডিটাচেবল স্লিভ এবারের নতুন আরেকটি ট্রেন্ড। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের বছর বিয়ের সাজে এসবই বেশি দেখা যাবে।
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top