skip to Main Content

ফিচার I সারগামে সুন্দর

শ্রুতিসুখের জন্য যেমন, তেমনি রূপচর্চার রসদ হিসেবেও অতুলনীয়। গবেষণায় মিলেছে সেই প্রমাণ

জাপানিজ বহুজাতিক পার্সোনাল কেয়ার কোম্পানি সিশেইডো সম্প্রতি সৌন্দর্যচর্চায় সংযোজন করেছে ‘অ্যাকুইস্টিক বিউটি কেয়ার’। শব্দ দিয়ে রূপচর্চার অভিনব এক পদ্ধতি। মূলত কানের জন্য স্বস্তিদায়ক সব রিদমকে ওয়াটার ড্রপলেটের শব্দের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয় জাপানিজ অমতেনাশে সাউন্ড। অ্যাসথেটিক মিউজিক সফটওয়্যারের সাহায্যে। ব্র্যান্ডটির দাবি, এসব শব্দের ব্যবহার ত্বককে সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত করে তোলে। ফলে ট্রিটমেন্টে ব্যবহৃত সৌন্দর্যপণ্যগুলো ত্বকে আরও বেশি কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলটাও তাই মেলে নজরকাড়া।
বিশ্বের নামীদামি বিউটি স্যালনগুলোর সার্ভিস লিস্টে এখন যোগ হয়েছে সাউন্ড হিলিং ফেশিয়াল। নানা ধরনের ক্রিস্টাল, হার্ব, এসেনশিয়াল অয়েল আর স্মাজিংয়ের সঙ্গে সুর এবং সংগীতের ব্যবহার ত্বকচর্চায় বেশ আগে থেকেই অনুসৃত হয়ে আসছে। এখন সেই পুরোনো প্রক্রিয়াগুলোই আধুনিকায়নের মাধ্যমে সৌন্দর্যচর্চায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, নানা ধরনের ত্বকসমস্যা সারাইয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাউন্ড হিলিং ফেশিয়াল ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়। মুখত্বকের পেশিগুলোকে চাঙা করে তোলে। ফলে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ভাব এড়ানো যায়। বলিরেখা, সূক্ষ্ম রেখা দূর করতেও দারুণ কার্যকর সাউন্ড হিলিং ফেশিয়াল। ডাবল চিন আর চোখের পাতা ঝুলে পড়ার মতো সমস্যাতেও সমান ফলপ্রদ এ ফেশিয়াল। ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সহায়ক, ফলে লোমকূপগুলো ছোট দেখায়, উজ্জ্বলতাও বাড়ে অনেকখানি।
এ ছাড়া প্রতিদিনকার রুটিনে নিয়মিত গান শোনা দারুণভাবে প্রভাবিত করে ত্বককে।
 নিয়মিত শরীরচর্চায় দেহ আর মনের পাশাপাশি ত্বকও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকে। বয়স ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে ত্বক ৪০ বছরে গিয়েও তরুণদের মতো দেখাবে। কারণ, নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে ত্বক-কোষের বয়স সহজে বাড়ে না। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা অনুযায়ী, মোটিভেশনাল বা নন-মোটিভেশনাল মিউজিক- দুটোই ওয়ার্কআউটের সময় দীর্ঘায়িত করতে সাহায্য করে। উপভোগ্যও হয়। সরাসরি প্রভাব পড়ে ত্বকের সুস্থতায়।
 স্ট্রেসের ফলে দেহের কর্টিসল হরমোনের উৎপাদন বেড়ে যায়। এতে ত্বক আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা হারায়। হয়ে ওঠে রুক্ষ, শুষ্ক। এ ছাড়া কর্টিসলের কারণে ব্লাড সুগারের মাত্রাও বাড়ে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে কোলাজেন আর ইলাস্টিনের ওপর। এর ফলে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যেতে শুরু করে। বাড়ে বলিরেখা আর সূক্ষ্ম রেখা। কর্টিসলকে বশে রাখতে মিউজিক কাজ করে ম্যাজিকের মতো। গবেষণায় জানা গেছে, পছন্দের কোনো গান শুনলে বায়োকেমিক্যাল স্ট্রেস রিডিউসার তৈরি হয় দেহে। ফলে স্ট্রেস থেকে মুক্তি মেলে। ত্বক সমস্যাগুলোও কমতে শুরু করে।
 ত্বক সুন্দর রাখার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি ঘুম। নিয়মিত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার বিউটি স্লিপ ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। বাড়ায় উজ্জ্বলতা। গবেষণায় জানা গেছে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে অন্তত ৪৫ মিনিট ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক শুনলে তুলনামূলকভাবে ভালো ঘুম হয়। এ ক্ষেত্রে মোৎসার্টের মিউজিক খুবই কার্যকর।
 অর্ডে হেপবার্ন বলেছিলেন, ‘হ্যাপি গার্ল আর দ্য প্রিটিয়েস্ট’। মানুষ খুশি হলে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামক ‘ফিল গুড’ নিউট্রোট্রান্সমিটার নির্গত হয়। দেহ আর মনের পাশাপাশি ত্বকের সুস্থতাতেও দারুণ কার্যকর এটি। ডোমাপিন নির্গত হলেই ত্বককোষের মাইক্রোসার্কুলেশন বৃদ্ধি পায়। এটি ত্বকের সুস্থতা সুরক্ষিত রাখে। বাড়তি দীপ্তি যোগ করে চেহারায়।
শুধু গান শুনেই যে সুন্দর হয়ে ওঠা যায়, তা কিন্তু নয়। গাইতে পারলে তা আরও কার্যকর হয়। সম্প্রতি স্কিন অ্যান্ড ওরাল কেয়ার ডিভাইস ব্র্যান্ড ফোরিও একটি রিসার্চ প্রজেক্ট পরিচালনা করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল গান গাওয়ার ফলে ত্বক কীভাবে উপকৃত হয়, তা বের করা। ফল ইতিবাচক। পছন্দের গানের সঙ্গে গলা মেলানো শুধু মুডই বুস্ট করবে না, ত্বককেও করে তুলবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। প্রতিদিন নিয়ম করে পাঁচ মিনিট গান গাইলে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ধীর হয়। দেখা দেয় বাড়তি দীপ্তি। গান গাইলেও মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসৃত হয়, যা ত্বকের জন্য ফলপ্রদ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, ৩০ দিন ধরে নিয়ম করে গান গাইলে ফেশিয়াল মাসল টোনড আপ দেখায়। রক্তসঞ্চালন বাড়ে বলে কমে আসে বুড়িয়ে যাওয়া ভাব। শুধু শুনেই নয়, গান গেয়েও কর্টিসল বশে রাখা যায়। ফলে ত্বকে ব্রণের বাড়াবাড়ি কমে। পাঁচ মিনিট গাইলেই চলবে। কিন্তু স্ট্রেসের মাত্রা অত্যধিক হয়ে গেলে ১৪ থেকে ২০ মিনিট গান গাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আরও ভালো ফল মিলবে যদি ক্যারিওকিতে দল করে গান গাওয়া যায়।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: নাজিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top