ফিচার I ব্র্যান্ড বাই সিঙ্গার
সংগীতজগতের তারকারা তাদের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন একেকটি বিউটি ব্র্যান্ডের। সেগুলোর জনপ্রিয়তাও উঠেছে তুঙ্গে
সৌন্দর্য এবং সংগীত ওতপ্রোত। মিউজিক আর্টিস্টদের লুকের ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, হোক সেটা অপেরা কিংবা জাঁকজমকপূর্ণ কোনো ভিডিও। কোনো কোনো মিউজিশিয়ান লুকের জন্যই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তারা সেটি ধরে রাখতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরি করতেও উদ্যোগী হন। এমনই কয়েকজন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর রয়েছে প্রতিষ্ঠিত বিউটি কিংবা স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড।
ফেন্টি বিউটি বাই রিহানা
ব্র্যান্ডটি বাজারে এলে অনেকেই সংশয়ে পড়েন। কারণ, তারকাদের প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলো গুণগত মানের চেয়ে বেশি চলে তাদের নামেই। তবে ফেন্টি বিউটি বাজারজাত হলে এবং সেফোরা স্টোরের শেলফে জায়গা করে নেওয়ার পর এর মান নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন থাকে না। সৌন্দর্যবিশেষজ্ঞরা এই পণ্য ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহী করে তোলেন। রিহানা ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ফেন্টি বিউটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর কসমেটিক এবং স্কিন কেয়ার রেঞ্জ- দুটোই বেশ জনপ্রিয়। কারণ, পৃথিবীর সব ধরনের স্কিন টোনের বিউটি প্রডাক্ট রয়েছে এতে। শুরুতে ৪০টি ভিন্ন শেডের ফাউন্ডেশন দিয়ে ব্র্যান্ডটির যাত্রা, এখন ৫০টিতে দাঁড়িয়েছে। কনসিলারের ক্ষেত্রেও একই, তাদের ৫০টি ভিন্ন ভিন্ন শেড সব ধরনের স্কিন টোনের ভোক্তাকেই একটা ভালো অনুভূতি দেয়। এ কারণেই যাত্রা শুরুর বছরে টাইম ম্যাগাজিনের অন্তর্ভুক্ত সেরা উদ্ভাবনের তালিকায় জায়গা করে নেয় ফেন্টি বিউটি।
রেয়ার বিউটি বাই সেলিনা গোমেজ
‘ইউ আর রেয়ার’ এমন ট্যাগলাইনে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে চালু হয় সেলিনা গোমেজের ব্র্যান্ডটি। তিনি বিশ্বাস করেন, আমরা সবাই অনন্য এবং একে অপর থেকে আলাদা, কিন্তু এখন প্রায় সবাই সৌন্দর্য নিয়ে একধরনের অবাস্তব প্রত্যাশার মায়াজালে আটকে যাচ্ছে, যার কারণে নিজের সত্তাকেই মেনে নিতে পারছেন না নিজেরাই। কিন্তু রেয়ার বিউটি ব্র্যান্ডটি এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, যার মাধ্যমে নিজস্বতা তুলে ধরতে পারবেন আর আপনার ত্রুটিগুলোর মাঝেই নিজের সৌন্দর্য খুঁজে পেতে সমর্থ হবেন। প্রতিষ্ঠার এক দিনের মাথায় ইনস্টাগ্রামে এক মিলিয়ন ফলোয়ারই জানান দেয় রেয়ার বিউটির সাফল্য। লিপ বাম এবং লিপ ক্রিম থেকে শুরু করে ৪৮টি ভিন্ন শেডের ওয়েটলেস ফাউন্ডেশন আর কনসিলার- সবই রয়েছে এর রেঞ্জে। মেকআপের কোমল ফর্মুলার পাশাপাশি তাদের অনন্যসাধারণ প্যাকেজিংও উঠে আসে আলোচনায়। এ ছাড়া রেয়ার বিউটির লিপস্টিক, আইশ্যাডো আর ব্লাশগুলোও হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়। আরও নতুন নতুন প্রডাক্ট আনা নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছে ব্র্যান্ডটি। এই আপকামিং প্রডাক্ট লাইনের সবচেয়ে উপরে রয়েছে এমন মাসকারা ফর্মুলা, যা একেবারেই জমাট বাঁধবে না, হবে ক্লাম্প ফ্রি! পণ্যগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সেফোরা আউটলেটে এবং এই দুটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
হাউস ল্যাবরেটরিজ বাই লেডি গাগা
ওভার দ্য টপ মেকআপ আর আউটফিটের জন্য খবরের পাতায় থাকেন লেডি গাগা। তার নিজস্ব বিউটি ব্র্যান্ড হাউস ল্যাব নিয়ে আসেন ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে। প্রতিষ্ঠানটির প্রডাক্ট লাইন খুব বেশি বড় নয়। তবে প্রতিটি পণ্য মানের দিক থেকে অন্য যেকোনো হাইএন্ড মেকআপ প্রডাক্টের মতোই। হাউস ল্যাবের আলট্রা ক্রিমি লিপ লাইনার ফর্মুলার কারণে এটা লিপস্টিক হিসেবেও পুরো ঠোঁটে ব্যবহার করা যায়। এই ব্র্যান্ডের লিকুইড টু পাউডার পার্ল গ্লিটার আইশ্যাডো খুবই জনপ্রিয়। অন্যান্য গ্লিটার আইশ্যাডোর মতো এই আইশ্যাডোতে একদমই ফলআউট হয় না। এ ছাড়া তাদের ওয়েবসাইটে লেডি গাগার সুপারবোল হাফটাইম শোতে পরিধেয় আই স্টিকারের আদলে তৈরি একটা স্টিকার পাওয়া যায়। মেকআপ আরও সহজ করে তোলার জন্য রয়েছে একটা আই আরমার কিট, যেখানে আইলাইনারের পাশাপাশি উইংড আইলাইনার স্টিকারও রয়েছে। এ ছাড়া এর লিপ কালারগুলো বেশ পিগমেন্টেড। হাউস ল্যাবের প্রডাক্টগুলো আমাজন থেকে পাওয়া যায়। বড় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম, যারা একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে নিজেদের প্রডাক্ট সরাসরি বিক্রি করে।
এমডিএনএ বাই ম্যাডোনা
ম্যাডোনার লাক্সারি স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড। ২০১৪-তে এশিয়ায় যাত্রা শুরু করলেও যুক্তরাষ্ট্রে আসে ২০১৭ সালে। জাপানের বিউটি টেক সংস্থা এমটিজির সহায়তায় ম্যাডোনা এই স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডের প্রডাক্ট লাইন তৈরি করেন। শুরুতে মোট সাতটি প্রডাক্ট আনা হয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর ছিল একটা আই মাস্ক এবং একটা সিরাম, যা খুব কার্যকরভাবে ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সক্ষম। তাদের একটা ক্লিনজার আছে, যেটি মাস্ক হিসেবেও কাজ করে। একটু বেশি নিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে মুখে মাস্ক বানিয়ে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললেই ডিপ ক্লিনজিংয়ের কাজ হয়ে যাবে। এ ছাড়া ব্র্যান্ডটির প্রডাক্ট রেঞ্জে রয়েছে স্কিন রেজুভিনেটর সেট, আই সিরাম ইত্যাদি।
প্রো ডিএনএ বাই প্যারিস হিলটন
ম্যাডোনার মতোই আরেকজন গায়িকা স্কিন কেয়ারে উৎসাহীর পরিচয় দিলেন। ২০১৮-তে প্রতিষ্ঠিত হয় প্যারিসের স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড প্রো ডিএনএ। তিনি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজের সূত্রে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে সঠিক উপাদানের পরিমিত মিশ্রণে কিছু স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট নিয়ে আসেন। ব্র্যান্ডটির প্রডাক্ট রেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় গোল্ড পিলঅফ মাস্কের জার। সামগ্রীগুলো দামি হলেও অনেক কার্যকর। ডার্মাটোলজিস্টরা এটা ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
নিজস্ব মেকআপ ব্র্যান্ড না থাকলেও অনেক মিউজিশিয়ান বিভিন্ন হাইএন্ড মেকআপ বা স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন। ম্যাকের মধ্যস্থতায় যোগ দিয়েছেন সেলিনা গোমেজ থেকে শুরু করে লর্ডে, এলি গউলডিং, হেলসি, মারিয়া ক্যারেসহ অনেকে।
শিরীন অন্যা
ছবি: ইন্টারনেট