ফিচার I ব্র্যান্ড বাই সিঙ্গার
মিউজিক্যাল চার্টের শীর্ষে ওঠার পাশাপাশি তারা দখল করে নিয়েছেন ওয়ার্ল্ড ফ্যাশনের ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ব্যবসার বড় একটা অংশ। নিজস্ব লেবেল দিয়েই। বিস্তারিত জাহেরা শিরীনের বর্ণনায়
যুগে যুগেই পছন্দের সংগীত তারকাদের স্টাইলিংয়ে প্রভাবিত হয়েছেন ভক্তরা। ফলে তৈরি হয়েছে নিত্যনতুন ট্রেন্ড। পাল্টে গেছে ফ্যাশনের ধারা কিংবা যোগ হয়েছে নতুনত্ব। আশির দশক থেকে বড় বড় সব ফ্যাশন ব্র্যান্ড আর ডিজাইনাররা ঝুঁকেছেন ক্লাব টু ক্যাটওয়াকের কনসেপ্টে। এমনকি মিউজিক্যাল সাবকালচার থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি হয়েছে আইকনিক সব ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। মিউজিশিয়ানদের ব্যক্তিগত স্টাইল উঠে এসেছে ফ্যাশন লেবেল আর ডিজাইনারদের মুড বোর্ডে। কোলাবোরেশনও কম হয়নি দুই ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে। যার ধারাবাহিকতায় ক্রমেই ফ্যাশন হয়ে উঠেছে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ‘নিউ ইনকাম স্ট্রিম’। অনেক সংগীত তারকাই তা নিয়ে গেছেন দৃশ্যমান উচ্চতায়। কোলাবোরেশন, এনডোর্সমেন্ট বাদেও লঞ্চ করেছেন নিজের বিলিয়ন ডলারের ফ্যাশন লেবেল। যেগুলো জনপ্রিয়তা আর মুনাফার অংকে টক্কর দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বড় বড় সব ব্র্যান্ডকে।
‘শন জন লেবেল’ বাই ডিডি
শন জন কম্বস। ওয়ার্ল্ড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ডিডি নামেই সুপরিচিত এই র্যাপ সুপারস্টার। ১৯৯৮ সালে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করেন তিনি। লঞ্চ হয় ‘শন জন লেবেল’। পুরোদস্তুর স্পোর্টসওয়্যার কালেকশন নিয়ে। শুরু থেকেই স্ট্রিট অ্যাপ্রোপ্রিয়েট কিন্তু লাক্সারিয়াস ছিল প্রতিটি পোশাক। সুস্পষ্ট হিপহপ কালচার আর ওত কতুরের অনবদ্য মিশেল। তাতেই হিট ব্র্যান্ড। প্রথম দুই বছরে, ২০০৪-এ ডিডি জিতে নেন সিএফডিএ মেনজওয়্যার ডিজাইনার অব দ্য ইয়ারের খেতাব। ব্র্যান্ডের মুনাফা ২০০ মিলিয়ন ডলার। দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে আজ অব্দি। পোশাকের পাশাপাশি এই ব্র্যান্ডের প্রডাক্ট লাইনে যুক্ত হয়েছে সুগন্ধি আর ঘড়ি।
রকাওয়্যার বাই জে জি
২০০০ সালের শুরুর দিকে হিপহপ এলিটদের ফ্যাশন স্টেপল ছিল আরবান লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘রকাওয়্যার’-এর পোশাক। স্বত্বাধিকারী ছিলেন ওয়ার্ল্ড হিপহপ মিউজিকের সবচেয়ে প্রভাবশালী তারকা জে জি। ব্র্যান্ডটি দারুণ জনপ্রিয় সিগনেচার ব্যাগি জিনস, ফার লাইন পাফার কোট আর এমব্লেজোনড ট্র্যাক জ্যাকেটের জন্য। আরবান এসথেটিকসের অনুপ্রেরণায় তৈরি ওভারসাইজড পোশাক এর প্রধান একটি আকর্ষণ। ব্র্যান্ডটির বার্ষিক বিকিকিনি প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার। সব বয়সের পোশাকের পাশাপাশি এদের রয়েছে আইওয়্যার, হ্যান্ডব্যাগ, হেডওয়্যার, সুগন্ধি, ইন্টিমেট এবং সুইমওয়্যার। ২০০৭ সালে জে জি ‘রকাওয়্যার’-এর স্বত্ব বিক্রি করে দেন আইকনিকস ব্র্যান্ড গ্রুপের কাছে, ২৪ মিলিয়ন ডলারে। তবে ব্র্যান্ডটির প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, মার্কেটিং আর লাইসেন্সিংয়ের তদারকি এখনো জে জি নিজেই করে থাকেন।
বিলিয়নিয়ার বয় ক্লাব এবং আইসক্রিম বাই ফেরেল উইলিয়ামস
১৩ বার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জেতা আমেরিকান মিউজিশিয়ান ফেরেল উইলিয়াম। ফ্যাশন বিশ্বে তার প্রবেশ ২০০৫-এ। জাপানিজ ফ্যাশন ডিজাইনার নিগো-এর সঙ্গে পার্টনারশিপে তারা বাজারে নিয়ে আসেন দুটি স্ট্রিটওয়্যার লাইন- বিলিয়নিয়ার বয় ক্লাব এবং আইসক্রিম। পপ আর্ট, কার্টুন আর কিচ থেকে অনুপ্রাণিত ব্র্যান্ডটির প্রতিটি পোশাক উজ্জ্বল প্যাস্টেল রঙের। ব্র্যান্ডগুলোর গ্রাফিক টি-শার্টের কালেকশনও বিশ্বজুড়ে দারুণ সমাদৃত।
ভিক্টোরিয়া বাই ভিক্টোরিয়া বেকহাম
স্পাইস গার্ল খ্যাত জনপ্রিয় সংগীত তারকা ভিক্টোরিয়া বেকহাম ২০০৮ সালে চালু করেন তার নিজস্ব লেবেল। টেইলরড ফেমিনিন সব ড্রেস কালেকশন নিয়ে। সে বছরই নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে প্রদর্শিত হয় সেসব পোশাক। এর তিন বছর পর ব্রিটিশ ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ডে ভিক্টোরিয়া জিতে নেন ডিজাইনার অব দ্য ইয়ারের খেতাব। ২০১১ সালে আরেকটি সাব-ব্র্যান্ড লঞ্চ করেন তিনি ডিফিউশন লেবেল নামে। ক্যাজুয়াল আর হাইএন্ডের মিশেলে তৈরি রেডি টু ওয়্যার ড্রেস কালেকশন দিয়ে শুরু হয় এর যাত্রা। এরপর প্রডাক্ট রেঞ্জে যুক্ত হয়েছে হরেক রকমের অ্যাকসেসরিজ এবং হ্যান্ডব্যাগ।
ম্যাটেরিয়াল গার্ল বাই ম্যাডোনা
মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ‘কুইন অব পপ’ ম্যাডোনা। ১৯৮৫ সালে রিলিজ পায় তার ক্যারিয়ারের সেরা সিঙ্গেল ‘ম্যাটেরিয়াল গার্ল’। বিখ্যাত এ গানের নামানুসারেই ২০১০ সালে এই তারকা লঞ্চ করেন টিন ফ্যাশন লেবেল। উজ্জ্বল রঙ, চাঙ্কি জুয়েল আর রিপড ফ্যাব্রিকের মিশেল ব্র্যান্ডটির বিশেষত্ব। আশির দশকে ম্যাডোনার আইকনিক পাঙ্ক রক স্টাইলের সুস্পষ্ট ছাপ পাওয়া যায় প্রতিটি পোশাকে।
ফেনটি বাই রিহানা
ফোর্বসের ‘লিস্ট অব রিচেস্ট সেলফ মেইড ওমেন ইন আমেরিকা’তে তালিকাভুক্ত আছে এই বারবেডিয়ান সংগীতশিল্পীর নাম। বর্তমানে ৬০০ মিলিয়নের কাছাকাছি রিহানার মূল্যমান। ফ্যাশনে তার যাত্রা লঞ্জারে ব্র্যান্ড ‘স্যাভেজ x ফেনটি’ দিয়ে। ২০১৮ সালে। ইনক্লুসিভ এ ব্র্যান্ড দারুণ সাড়া ফেলে বিশ্বজুড়ে। বছরখানেক পর ফ্রেঞ্চ ফ্যাশন গ্রুপ এলভিএমএইচের অধীনে লঞ্চ হয় রিহানার প্রথম লাক্সারিয়াস ব্র্যান্ড। শুধু ফেনটি নামে। বিভিন্ন রেঞ্জের রেডি টু ওয়্যার, অ্যাকসেসরিজ, সানগ্লাস আর জুয়েলারি নিয়ে। এলভিএমএইচ ভেঞ্চারের প্রথম ব্ল্যাক ওমেন ব্র্যান্ড হিসেবে। প্যারিসের পপ আপ স্টোর ছাড়াও বিশ্বজুড়ে অনলাইন স্টোর রয়েছে ফেনটির। এ পর্যন্ত ব্র্যান্ডটির মোট মুনাফা ৫৬০ মিলিয়নের কাছাকাছি।
ছবি: ইন্টারনেট