ছুটিরঘণ্টা I পুষ্প-উপত্যকা
এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা পথ হারিয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন ফুলে ঢাকা মনোরম এই স্থান। ভারতের উত্তরাখন্ডে। অন্য রকম সেখানকার পাহাড়ের চূড়া আর নদীর রঙ। লিখেছেন ফাতিমা জাহান
এমনকি কখনো হয়, একটা আস্ত বন ফুলে ডুবে আছে। চারদিকে শুধু রঙের বিচিত্র তরঙ্গ। পুষ্পরাজি ঢেকে দিয়েছে পাহাড়। সূর্যও খানিকটা রঙ ধার করে টিমটিম করে আলো দিচ্ছে এই বিশাল বনভূমিকে।
পাহাড়ের পুরোটা দখল করে রেখেছে ছোট ছোট কলি, ফুল আর তাদের কাছে আসা ভ্রমর। এমন জায়গার দেখা কি মেলে সহজে!
ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি না, জেগেই আছি। এখন বেলা এগারোটা, ফুলের জগতে ডুবে গেছি। মাথা অবধি লম্বা লম্বা ফুল গাছ এই বিশাল ভ্যালি বা উপত্যকায়। সব গাছ ফুলে নুয়ে পড়ছে। পাহাড়কে ভালোবেসে নৈবেদ্য সাজাচ্ছে, আরাধনায়, প্রার্থনায় পাহাড়ের মন জয় করবার কত না চেষ্টা। এই মনোরম স্থানটি হলো ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের ‘ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস’।
কীভাবে এলাম এই অবারিত পুষ্প উপত্যকায়!
দিল্লি থেকে ফ্লাইট ছিল দেরাদুন অবধি। দেরাদুনের রূপ মনোমুগ্ধকর। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা বনভূমি। খুব শান্ত আর প্রায় নির্জন। ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস যেতে হলে এগোতে হবে আরও কিছু দূর। দেরাদুন থেকে এর ব্যবধান প্রায় তিন শ কিলোমিটার। ট্যাক্সি করে গোবিন্দঘাট, তারপর পাহাড়ে ট্র্যাকিং। ১৭/১৮ কিলোমিটার হেঁটে তবেই যাওয়া যাবে এই পুষ্প-উপত্যকায়। ট্যাক্সিতে দেরাদুন থেকে গোবিন্দঘাট যেতে সময় লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা।
এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি পেতে বেশি সময় লাগে না। সকালে রওনা দিয়েছি, আশা করা যায় সন্ধ্যার মধ্যেই পৌঁছাতে পারব। মাত্র ৪৫ কিলোমিটার যেতেই পার হতে হলো ঋষিকেশ। গঙ্গার তীরে ভারতের একটি তীর্থস্থান। চলন্ত ট্যাক্সি থেকে যত দূর চোখ যায় দেখে নিলাম। ফেরার পথে এখানে থামব। এখন আমাকে প্রসূন দল ডাকছে।
পুরো পথটাই পাহাড়ি। কোথাও মেঘের দল ঢেকে রেখেছে, কোথাও টিপটিপ বৃষ্টি অথবা ঝলমলে রোদ।
আগস্ট। পুষ্প-উপত্যকায় ফুল ফোটার মৌসুম। এর আগে বা পরে এলে নদী, পাহাড়, মেঘ, বনানী- সবকিছুর দেখা মিলবে, তবে উপত্যকাজুড়ে ফুলের দেখা পাওয়া যাবে না। দেড় শ কিলোমিটার পার হলে দেখা যাবে ‘অলকানন্দা’। জয় গোস্বামীর সেই কবিতার জন্য এই নদী হয়ে গেছে আমার হৃৎস্পন্দন,
‘অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে।’
এই প্রথম দর্শন, অথচ দেখে মনে হচ্ছে কত কালের চেনা। গাড়ি চলছে তখন পাহাড়ের উপরাংশ দিয়ে, নিচে এঁকেবেঁকে চলে গেছে অলকানন্দা। একেক বাঁকে একেক রূপ তার, ঠিক যেন কিশোর বয়সের চঞ্চলতা। কখনো সবুজ পাহাড়ের পা জড়িয়ে ধরেছে, আবার কখনো দুকূলকে দিয়ে চলেছে সতেজতা। সে সজীবতায় গাঁয়ের কৃষক ফসল ফলায়, পাহাড়ের গা কেটে কেটে অনায়াসে হয় স্বর্গের সিঁড়ি। সেখানে সবুজ শস্য যেন প্রকৃতির বরদান। আর মাথার উপরে ঝুলন্ত নীল আকাশ।
যেখানে অলকানন্দা চারপাশ ছড়িয়ে শীতলতা বিছায়, সে জায়গাটার নাম দেবপ্রয়াগ। খানিকটা এগোলে রুদ্রপ্রয়াগ। এখানেও অলকানন্দা যেন এক অলকাপুরীর মতো কলকল বয়ে যাচ্ছে। রুদ্রপ্রয়াগের রূপ আলাদা, গন্ধ ভিন্ন, পাহাড়ের উষ্ণতাও পৃথক।
দুপুরের খাবার খেতে রুদ্রপ্রয়াগে ট্যাক্সি থামল। প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য মনের খিদে আরও বাড়িয়ে দিল।
জোশিমঠ পৌঁছাতে সন্ধে হয়ে গেল। ট্যাক্সিচালক বললেন জোশিমঠে কোনো হোটেলে রাত কাটাতে। কারণ, আজ আর এগোনো যাবে না, সামনে পাহাড়ধসের আশঙ্কা আছে রাতে। গাড়ি চালিয়ে যাওয়া বিপজ্জনক। পাহাড়ি এলাকার এমন আচরণের সঙ্গে আমি পরিচিত। তাই ট্যাক্সিচালকের কথা মেনে নিলাম। তাকে ছেড়ে দিতে হলো সেখানেই।
পরদিন খুব ভোরে উঠে আরেকটা ট্যাক্সি ধরে চললাম গোবিন্দঘাট। এক ঘণ্টার পথ। খুব দ্রুত পৌঁছলাম। ভাড়া চুকিয়ে ব্যাকপ্যাক কাঁধে ঝুলিয়ে শুরু করলাম হন্টন। শুরু হলো উপত্যকায় যাবার পাহাড়ি পথে ট্র্যাকিং। এখান থেকে ঘাংগারিয়া ১৩ কিলোমিটার। হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে বা হেলিকপ্টারে করে যাওয়া যায়। হেলিকপ্টারে যেতে অল্প সময় লাগে ঠিকই, তবে এই রোমাঞ্চকর ট্র্যাকিং কোনোমতেই মিস করতে চাইছিলাম না। আশপাশজুড়ে পাহাড়। উত্তরাখন্ডের এই স্থান তীর্থভূমি হিসেবে সুপরিচিত। এখানকার মূল রাস্তা থেকে সোজা গেলে মিলবে বদ্রিনাথ ও কেদারনাথ তীর্থ। ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারসের খুব কাছে শিখ সম্প্রদায়ের পবিত্র তীর্থ হেমকুন্ড সাহিব।
ট্র্যাকের জন্য পাহাড়ের চড়াই-উতরাই পথ পাথর দিয়ে বাঁধাই করে দেওয়া হয়েছে। তীর্থযাত্রীদের জন্যও সুবিধা। কারণ, এ পথে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারসের ট্র্যাকারদের চেয়ে হেমকুন্ড সাহিব যাবার তীর্থযাত্রীর সংখ্যাই বেশি।
আসল যাত্রা শুরু হলো এবার। আশপাশে সহযাত্রী দু-চারজন তো আছেনই। সবাই হেমকুন্ড সাহিব যাবেন। কেউ কেউ আবার হেমকুন্ড সাহিব আর ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস- কারও কারও গন্তব্য দুটোই। অনেক সময় বৃষ্টি, পাহাড়ধস ইত্যাদি কারণে সামনে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। পাহাড়ে ট্র্যাকিং করেছি অনেক, তাই তেমন কষ্টসাধ্য কিছু নয় আমার জন্য। দুধারে সবুজ পাহাড়, মাঝখানে পথ। কখনো পাহাড় কেটে রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের সুবিধার জন্য। আশপাশে কয়েকটা গ্রামও আছে। সেখানকার নারীরা উত্তরাখন্ডের ঐতিহ্যবাহী ঘাগরা চোলি পরে, মাথায় স্কার্ফ বেঁধে পাতা কুড়িয়ে পিঠ বোঝাই করে চলছে। কেউ ভেড়া চরাচ্ছে। চারদিকে পাইনগাছের আচ্ছাদন, ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে একটা বা দুটো কাঠের ঘর।
যাত্রীদের হাঁটার জন্য পাথরে বাঁধাই করা পথ খুব সুন্দরভাবে তৈরি হয়েছে। পাহাড়ি পিচ্ছিল মাটি বা খাড়া পাথরের পথ হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তবে এই রাস্তায় রেলিং আছে বলে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ভয় নেই। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এখানকার উচ্চতা প্রায় বারো হাজার ফুট। যত এগোব ততই উচ্চতা বাড়বে। যারা হেঁটে যেতে সক্ষম নন, তারা ঘোড়া ভাড়া করে সহিসসহ পথ পাড়ি দিচ্ছেন। তেরো কিলোমিটার পাড়ি দিতে হবে। সহজ কথা নয়। এমন নয় যে পথ সমতল। কোথাও বেয়ে উপরে উঠতে হয়, কোথাও নামতে হয় নিচে। তাই পথিক খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন। মাঝখানে বিরতি নেওয়া যায় অস্থায়ী চায়ের দোকানে। আশপাশের গ্রামবাসী চালান এসব চা-বিস্কুটের দোকান। চা পান করে চাঙা হয়ে আবার যাত্রা। আমি ধীরে ধীরে পথ চলছিলাম। আশপাশের দৃশ্য এতই মোহময় যে থেমে না দেখলে দেখা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। পাহাড়ি এলাকার মেজাজ জানি। এখন ঝলমলে রোদ তো এক ঘণ্টা পর গোমড়ামুখো মেঘ বা ঝরঝর বৃষ্টি। ট্র্যাক করতে করতে প্রায় সাত কিলোমিটার পার হলে পড়বে লক্ষ্মণ গঙ্গা নদী। স্রোত কোথাও উত্তাল। বড় বড় পাথরের মাঝ দিয়ে ভয়ানক গর্জন করতে করতে বিশাল নদী ধেয়ে চলছে। খুব খর¯্রােতা। যে নদী যত রাগী, ততই যেন তার রূপ ঝরে পড়ে। আবার কখনো একটু দূরেই একদম শান্ত, যেন সব কাজ সেরে অবসরে বসে কুলকুল বইছে গল্প শোনাবার জন্য। একই নদী, অসামান্য জাদু তার। পার হতে হয় হেঁটে। সে জন্য উপরে ব্রিজ আছে। দূরের পাহাড়ের চূড়া নদীর রঙের মতোই সফেদ বরফে আচ্ছাদিত।
নদীতীরের পাথুরে পথ পেরোলে আবার শুরু চড়াই যাত্রা। আশপাশে দু-একজন পথযাত্রী আছেনই। তেরো কিলোমিটার পথ মনের আনন্দে পার হতে দুপুর গড়িয়ে গেল। এখানে দুপুরে তাপমাত্রা থাকে ২০ আর রাতে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাইরে এখন ঠান্ডা হাওয়া বইছে। মেঘও ছেয়েছে। মানে আকাশের মুখ ভার, তাড়াতাড়ি নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে হবে। একটা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ এবারও পার হতে হলো। কিন্তু যেখানে পাহাড়ের সারি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একটার পর একটা পর্দা দিয়ে রেখেছে, সে রহস্য ভেদ না করে কীভাবে ঘাংগারিয়া পৌঁছাই!
ততক্ষণে পাহাড়ের উপরাংশে উঠে গেছি। নিচে শুভ্র নদী, চারপাশে সবুজ পাহাড়ের মায়াজাল, একটু একটু করে আলো হারাচ্ছে বিকেল, ধীরে ধীরে শীতল হচ্ছে বাতাস। এরই মধ্যে ক্রমশ গাঢ় হতে থাকে পাইন বনের সুগন্ধ!
মূলত সব যাত্রীরই তেরো কিলোমিটার ট্র্যাক শেষ করতে করতে বিকেল হয়ে যায়। ঘাংগারিয়ায় তাই রাত কাটাতে হয়। এখান থেকে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে। কিন্তু শরীর ততক্ষণে ক্লান্ত। ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারসে প্রবেশের মূল গেট দুপুর বারোটায় বন্ধ হয়ে যায়। তাই ঘাংগারিয়ায় রাতের আকাশ দেখার জন্য রয়ে গেলাম। থাকার জন্য বেশ কয়েকটা হোটেল আছে এখানে। খুব ঠান্ডাও পড়েছে। সন্ধে সাতটার মধ্যে সব নিশ্চুপ, শুধু শোনা যায় কুয়াশা আর মেঘের আলাপ। দূরের কিছু দেখার উপায় নেই।
ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারসের মূল ফটকে যেতে হলে পার হতে হয় আরও দুই কিলোমিটার পথ। গোবিন্দঘাট থেকে আসার পথের মতোই এখানকার রাস্তা। পথে দেখা মিলতে পারে কুলি বা পোর্টারের, তারা নিজেদের পিঠে মানুষ বহন করে নিয়ে যান পুষ্প-উপত্যকায়। যে ভ্রমণকারী হেঁটে পাহাড়ের উপর যেতে পারেন না, অথচ প্রকৃতির রূপ দেখার অদম্য উচ্ছ্বাস আর মনোবল আছে, তাদের জন্য এ ব্যবস্থা। শারীরিক দুর্বলতা তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না। এ রকম বয়স্ক কয়েকজনকে দেখলাম কুলিদের পিঠে বহন করা ঝুড়িতে পা ঝুলিয়ে দিব্যি চলছেন স্বপ্নপূরণের আশায়।
পাথরের সিঁড়ি বেয়ে অনেকখানি উঠলে কিছুটা সমতল সরু পথ। মাঝ বরাবর রিনঝিন বয়ে চলছে পুষ্পবতী নদী। নাম শুনলেই এক অদ্ভুত আবেশ আসে মনে। সবুজ পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলছে কোথাও কোথাও পাথরখ-কে অল্প ভিজিয়ে। কোথাও উত্তাল, বন্ধনহীন। অজ¯্র জল আছড়ে পড়ে যেন বলছে, পথিক এসো, ফুল ফুটিয়েছি, দেখে যাও এবেলায়!
চারদিকে শুধুই সবুজ বনভূমি আচ্ছাদিত পাহাড় আর উপত্যকা। মেঘবৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে কেমন যেন এক লাফে কৈশোর থেকে তারুণ্যে মেতে উঠেছে। এ বনাঞ্চলে প্রায় পাঁচ শ প্রজাতির গাছ আছে। বেশির ভাগই ফুলগাছ। গ্রীষ্মকালে অকৃপণ ফুল ফোটায় প্রকৃতি, ঝরে যায় মৌসুমের শেষে। সবই চলে নিসর্গের নিয়মে।
এই পুষ্প-উপত্যকা ১৮৬২ সালে আবিষ্কার করেছিলেন ব্রিটিশ অফিসার এডমান্ড স্মিথ। পর্বতারোহণ শেষে ফেরার সময় রাস্তা হারিয়ে ফেলেন তিনি। পথ খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পান এই বিশাল পুষ্পভান্ডার। তখন থেকে ধীরে ধীরে পরিচিত হতে থাকে ভ্রমণকারীদের কাছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ হাজার ৪০০ ফুট উঁচু প্রকৃতির প্রাণ এই কুসুম উদ্যান।
আকাশের মন ভার। রোদের দেখা নেই। চারপাশ ছাপিয়ে মেঘ রাশি রাশি ইচ্ছে জমা করছে। প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে আসার পর মিলল এক সবুজ উপত্যকা। মাঝখানে সাদা সরু ফালি কাটা পুষ্পবতী বয়ে চলছে। উপত্যকাকে দেয়াল করে রেখেছে সবুজ পাহাড় আর শিলাখন্ডের মাথায় মেঘ-বরফের মুকুট। এ রকম উপত্যকায় ফুল না থাকলেও এমনিতেই একটা যুগ কাটিয়ে দেওয়া যায়। অবশ্য বছরে ছয়/সাত মাস এখানে বরফে আচ্ছাদিত থাকে।
যে জন্য আসা, সে রকম ফুলের দেখা মিলল না, এদিক-সেদিকে ছড়ানো-ছিটানো কয়েকটা লতাগুল্মে ফুল ধরে আছে। ঠিক জানি না, সত্যিই ফুটেছে কি না। কয়েকজন কুলি বললেন, আরও দুই কিলোমিটার এগোতে হবে। ফুলের বিছানা তৈরি সেখানে। আমি দমবার পাত্র নই। আবার শুরু হলো ট্র্যাকিং। এতক্ষণে মেঘে আর টিপটিপ বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে। আমি এগোই দুচোখে এক জীবনের স্বপ্ন নিয়ে। দুপায়ে সব দুরন্তপনা। আমাকে পুষ্প-উপত্যকা কখনোই ফিরিয়ে দেবে না।
আচমকা একটা সরু পথের মাঝ দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়ল- দুপাশে সারিবদ্ধ গাছে লক্ষ কোটি গোলাপি, বেগুনি, হলুদ, লাল ফুল ফুটে আছে। গাছগুলোর উচ্চতা মাথাসমান। সরু পথ পেরোলে সামনেই পুষ্প-উপত্যকা, কোনো জনমনিষ্যি নেই। সামনে শুধুই ফুল। এ-ও কি সম্ভব! ধরণীর শরীরে ভরা ডালি। পুষ্প-উপত্যকা নিজের রূপ লুকিয়ে রেখেছিল এতক্ষণ। তার কাছে সবাইকে আসতে দেয় না। ঠিক তখনই ঝলমলে রোদ একটা সোনালি পোশাক পরিয়ে দিল প্রকৃতিকে। উপত্যকার ঢাল বেয়ে যেন রঙ গড়িয়ে পড়ছে।
অন্য পাশে তখন সবুজ পাহাড় মাথায় বরফ পেঁচিয়ে হাসছে আনন্দে।
পুষ্প উদ্যানে যত দূর চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। এ মৌসুমে কুসুমরাজি চাদর হয়ে উপত্যকাকে উষ্ণতা দিতে, পথিকের পথের ক্লান্তি দূর করতে, রঙিন এক স্বরলিপিতে নতুন তরঙ্গের রঙ সাজাতে। পাহাড়জুড়ে ছোট ছোট অর্কিড, পপি, প্রিমিলা, গাঁদা, ডেইজি, জেরানিয়াম, পিটুনিয়া, সেডিয়াম, লিলি, ক্যালেন্ডুলা, জিনিয়া- আরও কত যে নাম না জানা ফুল ফোটে সবার অগোচরে!
বহুদূর থেকে আসা পথিকের পথচলা সার্থক হয় এই পুষ্প-উপত্যকায় এসে। মন রঙিন হয়। এক রঙ আরেক রঙের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানটিকে আরও রঙিন করে তোলে। এক ফুল আরেক ফুলের চেয়ে বেশি সুন্দর হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে। এসব দেখতে দেখতে পাহাড়, উপত্যকা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় পরের মৌসুমে আরও বেশি ফুল ফোটাবে বলে।
ছবি: লেখক