skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I মনোরম ছত্তিশগড়

দর্শনীয় স্থানে ভরপুর। আছে ঐতিহাসিক নিদর্শন, বন, এমনকি বিপরীত প্রবাহের নদী। থাকা-খাওয়ার চমৎকার এক ব্যবস্থা। লিখেছেন পাঞ্চালী দত্ত

ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং প্রত্নতত্ত্বে ভরা ছত্তিশগড় রাজ্য। এখানকার বিলাসপুর শহরের আশপাশে রয়েছে দর্শনীয় অনেক জায়গা।
সারি সারি গাছের পাতা শীতের ভোরে কুয়াশা মেখে সদ্য স্নাত। সোনালি রোদের ঝিলিক গায়ে লাগিয়ে সেজে উঠেছে ছাতিমগাছের পাতারা। ফুল ঝরে গেছে হেমন্তে। কিন্তু ছাতিমগাছেরা সবুজ পাতা বিস্তার করে রয়েছে দ্য আনন্দ ইম্পেরিয়াল হোটেলের চত্বরে। এই সৌন্দর্য পান করতে হয় দুচোখ ভরে। বিলাসপুর ছত্তিশগড়ে রয়েছে আরামদায়ক এই চার তারা হোটেল। ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসে। কোভিডের সতর্কতা মেনে হোটেলটি কাজ করে চলছে, এ জন্য তাদের ঝুলিতে জুটেছে পুরস্কারও। অতিথি দেব ভব- ভারতবর্ষের এই বিশ্বাস ও সনাতনকে আঁকড়ে ধরে সেবা দিয়ে চলেছে হোটেলটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে দ্য আনন্দ ইম্পেরিয়াল। তাই কাজের সূত্রে বা পর্যটনে- যেভাবেই আসুন না কেন, এখানে সব সুবিধা পাওয়া সম্ভব।
শান্ত স্নিগ্ধ খোলামেলা পরিবেশে যেকোনো সামাজিক বা করপোরেট অনুষ্ঠান এই হোটেলে হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয় ও মোহময়। ৭০টা ছিমছাম সাজানো রুম, ব্যাঙ্কোয়েট হল, সবুজে মোড়া লন রয়েছে এখানে। ২০০০ থেকে ২৫০০ অতিথি অনায়াসেই জায়গা করে নিতে পারে। অতিথিদের মনোরঞ্জনের পাশাপাশি রসনাবিলাসের কথা না বললেই নয়। এখানে রয়েছে মাল্টিকুজিন রেস্তোরাঁ, নাম মড়ঁৎসবঃ মষড়নধষ।
বিশ্বের নানা রকম সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায় এখানে। রয়েছে দারুণ একটি ক্যাফে। শীতের সকালে কফির চুমুকে সারা দিন ক্লান্তিহীন রাখার মদদ জোগাবে কফির নানা ফ্লেভার।
ছত্তিশগড়ে দর্শনীয় স্থান হলো বিলাসপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের মালহার। এখানে রয়েছে প্রাচীন মন্দির, যেমন- পটলেশ্বর, দেবারি, দিন্দেশ্বরী। চার হাতবিশিষ্ট বিষ্ণুমূর্তি এ জায়গার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিগ্রহ। এ ছাড়া মালহারে আছে একটি মিউজিয়াম, যেখানে বহু প্রাচীন ভাস্কর্যের সংগ্রহ রয়েছে। বিলাসপুরের আরেকটি ছোট্ট জায়গার নাম তালা। সেখানে আছে ৭ ফুটবিশিষ্ট রুদ্রশিবের পাথরের মূর্তি। এটাকে দেবরানি এবং জেঠানি মন্দিরও বলা হয়। কথিত আছে, পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ শতাব্দীতে রাজা রাজপ্রাসাদের দুই রানির নির্দেশে এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। দেবরানি মন্দিরটি লাল পাথরে গুপ্তান শৈলীতে নির্মিত। জেঠানি মন্দির কুষাণশৈলীর। বিলাসপুর থেকে ২৫ কিমি দূরত্বে রতনপুর। অসংখ্য মন্দির, জলতালা দিয়ে ঘেরা ছোট্ট শহর; সেখানে মহামায়া মন্দির। বাহান্ন সতীপিঠের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ১২ থেকে ১৩ শতকে এই মন্দির রতনপুরের কালাচুরিস রাজত্বের সময়ে তৈরি করা হয়েছিল, তখন ছত্তিশগড়ের নাম ছিল কোসাল। এ কারণে, মহামায়া স্থানীয়ভাবে কসালেশ্বরী দেবী নামেও পরিচিত। আছে রতনপুর ফোর্ট। তদারকির অভাবে যদিও সেটি অনেকটাই মøান, তবু সেখানে দেখা যাবে নানা রকম ভাস্কর্য। ফোর্টের সিংহদ্বারের ভগ্নাবশেষে খোদাই করা কিছু মূর্তি এখনো অবিশিষ্ট। গণেশের মূর্তি ও নানা রকম পাথরের মূর্তি দিয়ে সাজানো গণেশদ্বারের দেয়াল। এ ছাড়া দুর্গের ভেতরে রয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, শিবমন্দির, হাম্মাম (স্নানাগার), সবুজে ঘেরা সাজানো বাগান, কুয়ো এবং ফোর্টের প্রধান কিছু জায়গার ধ্বংসাবশেষ।
শাল, বিজা, সাজা ও বাঁশের ঘন জঙ্গলে ঘেরা অচানকমার ন্যাশনাল টাইগার রিজার্ভ। বিলাসপুর থেকে ৭০ কিমি দূরত্বে তার অবস্থান। বেঙ্গল টাইগার, লেপার্ড, নীলগাই, সম্বর, ডোরাকাটা হায়েনা, চিতল (বহু দাগবিশিষ্ট হরিণ), বাইসন- এ রকম নানা ধরনের পশুর বিচরণ এই সংরক্ষিত জঙ্গলটিতে। ৪০ কিমি দূরে কোতমি সোনার। অসাধারণ একটি কুমিরের পার্ক, ১২০ একর জায়গা জুড়ে। ৮৫ একরই জলে পরিপূর্ণ। ২০০টির ওপর প্রাপ্তবয়স্ক কুমির এবং অসংখ্য ছানা সেখানে রয়েছে। এ ছাড়া এখানে দেখা যায় নানা ধরনের পরিযায়ী পাখি।
সরগুজা জেলার প্রসিদ্ধ পাহাড়ি এলাকা মৈনপাট। এখানে নদী উল্টো দিকে বয়ে চলে। তাই এই জায়গাকে উল্টাপানিও বলা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে এ ধরনের ৬৪টি জায়গা রয়েছে, যেখানে মাধ্যাকর্ষণের থেকেও বেশি চুম্বকীয় শক্তির প্রভাবে জল বিপরীত দিকে বইতে থাকে। বিলাসপুর থেকে গাড়িতে মাত্র ৫ ঘণ্টার জার্নি। এ ছাড়া খুতাঘাট ড্যামটিও দেখার মতো একটি জায়গা।
নৈসর্গিক রূপ, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, সবুজের সমারোহ- সব মিলিয়ে ছত্তিশগড় আকর্ষণীয় একটি পর্যটন স্থান। কলকাতা থেকে সাড়ে নয় ঘণ্টার জার্নি। এখানেই দ্য আনন্দ ইম্পেরিয়াল হোটেল। সেখানে রয়েছে গ্লোবাল ফুড- বাঙালি থেকে কন্টিনেন্টাল, ইতালিয়ান- সব রকম খাবার। ফ্রি ব্রেকফাস্ট বুফেতে নানা রকম পছন্দের মেনুর সঙ্গে থাকে বিভিন্ন লো ক্যালরি স্যালাড। ডিনারেও আছে বুফের সুবিধা।
কৃতজ্ঞতা : রাজীব রায় চৌধুরী, জেনারেল ম্যানেজার, দ্য আনন্দ ইম্পেরিয়াল হোটেল
ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top