রূপরসদ I সিবিডি অয়েল
নেশাজাগানিয়া উদ্ভিদ হলেও এর ব্যবহার এখন দেহত্বকের পরিচর্যায়। অ্যাকনে থেকে শুরু করে প্রায় সব সমস্যা সারাইয়ের দাওয়াইও বটে। জানাচ্ছেন সারাহ্ দীনা
রূপচর্চায় ভেষজ ব্যবহারের প্রচলন বেশ আগে থেকেই। হালের সিবিডি অয়েলও নতুন নয়। ব্রিটিশদের নিয়মে গাঁজা মাদকের তালিকায় যুক্ত হওয়ার পর এই উদ্ভিদ নিয়ে আর সেভাবে জনসমক্ষে চর্চা হয় না। কিন্তু গুণ কি লুকিয়ে রাখা যায়! আয়ুর্বেদের শাস্ত্র থেকে সিবিডি তেল তাই যোগ হয়েছে সৌন্দর্যচর্চায়।
ক্যানাবিডিওল সিবিডি নামেই পরিচিত। টেট্রাহাইড্রক্যানাবিনল (টিএইচসি) হলো গাঁজায় পাওয়া প্রধান সাইকো অ্যাকটিভ উপাদান। এই গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় সিবিডি। প্রাথমিকভাবে এটা পাউডার হিসেবে থাকে। মসৃণ। এর সঙ্গে যোগ করা হয় তেল। জলপাই, হেম্প অথবা নারকেল তেলের মিশ্রণে তৈরি হয় সিবিডি অয়েল। গাঁজা গাছ থেকে পেলেও এই উপাদান মাদক হিসেবে কাজ করে না।
ত্বকে প্রায়ই বিচিত্র সমস্যা দেখা দেয়। এগুলোর মধ্যে অ্যাকনের প্রকোপ বেশি। বিভিন্ন প্রদাহ এর জন্য দায়ী। সিবিডি তেলের প্রদাহরোধী এবং ত্বকের নিচে তেল উৎপাদন (সেবুম) কমানোর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব গুণের কারণে সবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেলের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। এতে ত্বক অনাকাক্সিক্ষত অ্যাকনে থেকে রক্ষা পায়।
ত্বকের শুষ্কতাও একটি সাধারণ সমস্যা। অনেকে জন্মসূত্রে এতে ভুগে থাকে। শীতের আগে-পরেও কেউ কেউ ভোগে। এর সমাধান রয়েছে সিবিডি তেলে। এটি ত্বকে মসৃণতা দেয়। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বয়সের ছাপ দূর করতেও এই তেল সক্ষম। রিংকেল নিয়ে একটা বয়সের পরে ভাবনা থাকেই। সিবিডি অয়েল ত্বকের অনাকাক্সিক্ষত ভাঁজ দূর করে। কোমলতার সঙ্গে সঙ্গে বলিরেখা থেকেও মুক্তি দেয়।
সংবেদনশীল ত্বকে যেকোনো কিছু ব্যবহারেই হতে হয় দ্বিগুণ সচেতন। পান থেকে চুন খসলেই সমস্যা দেখা দেয়। এমন ত্বকের যত্নে সিবিডি সহায়ক হতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।
মানসিক চাপ ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলেও ত্বক মলিন হয়। সিবিডি অয়েল এ ক্ষেত্রে হতে পারে ভালো দাওয়াই। এই তেল ব্যবহারে মন প্রসন্ন হয়। অনিদ্রার মাত্রা কমে আসে। ফলে ত্বকে খারাপ প্রভাব কম পড়ে।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিবিডি বডি লোশন রয়েছে। এ ছাড়া উপাদানটি দিয়ে তৈরি হয় ময়শ্চারাইজিং ক্রিম, ফেস প্যাক, লিপ বাম, মাসকারা।
সিবিডির পণ্য কিনতে চাইলে প্রথমেই কাক্সিক্ষত কসমেটিকসের লেবেলে মনোযোগ দিতে হবে। ‘ক্যানাবিস অয়েল’ লেখা দেখে নেওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, হেম্প অয়েল আর সিবিডি অয়েল কোনোভাবেই এক নয়।
এটি কেনার ক্ষেত্রে প্যাকেজিংয়ের দিকেও লক্ষ রাখা দরকার। এই তেল সরাসরি রোদ এবং আলোর স্পর্শে গুণগত মান হারায়। তাই ট্রান্সপারেন্ট প্যাকেজিং এড়িয়ে বরং খুঁজে নিতে হবে নিরাপদ প্যাকেট।
কিছু ব্র্যান্ডের সিবিডি অয়েলের মোড়কে লেখা থাকে সিবিডি আইসোলেট। এর মানে, এই পণ্যে সিবিডি অয়েলের বাইরে কিছুই ব্যবহার করা হয়নি। কোনো রকম এক্সট্রা ফ্লেভারও নেই।
কিছু পণ্যে ‘ফুল স্পেকট্রাম সিবিডি’ লেখাও চোখে পড়ে। এর অর্থ সিবিডির সঙ্গে কিছু পরিমাণ হেম্পের টিএইচসি, ক্যানাবিনয়েডস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি থাকতে পারে।
এর বাইরে ‘ব্রড স্পেকট্রাম সিবিডি’ লেখাও দেখা যায় লেবেলে। মানে এই পণ্যে টিএইচএস শনাক্ত করা যায়নি। যদি কোনো পরীক্ষায় সম্ভব হয়, তাহলেও তার পরিমাণ অবশ্যই ০.০৩% এর নিচে হবে।
মডেল: আদিবা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন
আমি একজন ফার্মেসী ব্যাবসায়ী, আমি পন্যটি কি ভাবে পাবো।