ফিচার I কম্ফি ট্রেন্ড
গৃহযাপনের এক আরামদায়ক আউটফিট। এখন এতে এসেছে বৈচিত্র্য। সৌন্দর্যও যোগ হয়েছে নতুন মাত্রায়
কোভিড পরিস্থিতিতে ২৪ থেকে ৩১ বছর বয়সীরা ঝাকানাকা পার্টির চেয়ে ঘরে বসে ‘নেটফ্লিক্স অ্যান্ড চিল’ করতেই বেশি পছন্দ করে। ওটিটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ার পেছনে এই মিলেনিয়াল গ্যাং রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ সময় তারা ঘরোয়া ফ্যাশন নিয়েও বেশ সচেতন। আরাম আর সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে এই বয়সের ফ্যাশনিস্তারা নিজেদের বিশেষত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। পোশাক, অ্যাকসেসরিজের রঙ, প্যাটার্নের পরিবর্তনে নিজস্বতাকে ভালোভাবে স্থায়ী করতে পারেনি অন্য কোনো জেনারেশন। হোক তা পার্টি মুড, কিংবা আলসে আড্ডা।
লাউঞ্জওয়্যারের প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেকেই। ডিজাইন নিয়ে হাজার রকম এক্সপেরিমেন্ট চলছে সব সময়। কিন্তু এই লাইনের প্রধান বিষয় আরাম। কম্ফি ফিলিং। মেনজওয়্যারে হোক কিংবা ফিমেল ওয়্যারে। সারা দিনের ফরমালের পরে আয়েশ করে গা এলিয়ে বসার মতো হতে হবে লাউঞ্জওয়্যার।
এখনকার লাউঞ্জওয়্যার কেবলই বিশ্রামের জন্য নয়। লেট নাইট কফি কিংবা আর্লি মর্নিং আউটিংয়ের জন্যও জুতসই। এর বাইরে যোগ হতে পারে উইকেন্ড আড্ডা, বন্ধুদের লং ড্রাইভ, রুফটপ সংগীতসন্ধ্যা। এ সময়ের মানুষের চাহিদা বহুমাত্রিক। ঘর-অফিস আর ক্লান্ত দেহে ঘুমের বাইরেও তাদের রয়েছে দারুণ এক জগৎ। যেখানে স্যুট-বুট, ক্যাজুয়াল, স্মার্ট ক্যাজুয়াল- কোনোটাই মানানসই নয়, সেসব জায়গায় লাউঞ্জওয়্যার দারুণ অপশন হতে পারে।
আমাদের দেশের লাউঞ্জওয়্যারে জনপ্রিয়তার দৌড়ে পাজামা বেশ এগিয়ে আছে। কারণ, ওই একটাই- আরাম। তবে তাতেও চাই স্টাইলিস্ট প্যাটার্ন। কাটিং, রং, পাইপিং আর বোতামের ব্যবহারে স্মার্টনেস নিয়ে আসা যেতেই পারে। এক রঙ কিংবা চেক নয়, বেছে নেওয়া যায় প্রিন্ট। রংবেরঙের ছাপা পাজামাকে বোরিং থেকে ব্রেকিং দ্য বাউন্ডারিজ করে তুলতে পারে। তবে শুধু সৌন্দর্য কেন, ভাবতে হবে প্রয়োজন নিয়েও। বাসায় ফিরে যান্ত্রিক জীবনের অনেকটাই বয়ে বেড়াই আমরা। মুঠোফোন রেখে তো কোথাও পালানোর জো নেই। তাই পাজামাতে পকেট থাকুক।
পাজামা ও শার্টের মেলবন্ধন বেমানান নয়। দারুণ মানিয়ে যাবে চিনোসের সঙ্গেও।
১৯৩৪-এ হুডি এলো ফ্যাশন দুনিয়ায়। এর জনপ্রিয়তা রোলার কোস্টারের সঙ্গে তুলনীয়। আশির দশকের হিপহপের সময় দারুণ জনপ্রিয় ছিল হুডি। এরপরে ফ্রন্ট লাইন ফ্যাশন আইটেম থেকে জায়গা করে নিল ঘরের কাপড় হিসেবে। কিন্তু এখন হুডি পরে দিব্যি ঘুরে আসা যায় বাইরে থেকে। আর উইকেন্ডে সারা দিনই সঙ্গী হতে পারে এই পোশাক। লাউঞ্জওয়্যারের এই উপকরণ কোনোভাবেই শুধু ঘরে বসে থাকার নয়। হুডির সঙ্গে সোয়েটপ্যান্টের কম্বিনেশন করে নেওয়া যায়। সোয়েটপ্যান্ট বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নজর দেওয়া যায় হাই ওয়েস্ট ডিজাইনগুলোর দিকে। এই ডিজাইন দিতে পারে ব্যতিক্রমী লুক।
১৯২৫-এর আগে সোয়েটশার্টের কথা কেউ জানত না। এখন অবশ্য এলাম, দেখলাম, জয় করলাম- শব্দ তিনটি এই শার্টের ট্যাগ লাইন হতে পারে অনায়াসেই। লাউঞ্জওয়্যারে ডিয়ার সোয়েটশার্টের বিকল্প নেই। কালার হুইলের যেকোনো শেডের সোয়েটশার্ট হতে পারে ট্রেন্ডি।
ইনারওয়্যার এখন আলোচনার উল্লেখযোগ্য বিষয়। ফ্যাশন লাইনের গুরুত্বপূর্ণ আইটেমও। নিত্যদিনের ওয়্যারড্রোব প্ল্যানিং লিস্টে থাকলেও এখনকার মতো গুরুত্ব পায়নি আগে কখনো। মেনজওয়্যারের ট্রেন্ড সিকাররা ইনারওয়্যারকে নিয়ে এসেছে আলোচনায়। বক্সার, ওয়াই ফ্রন্টারস অথবা ব্রিফস- যেটাই হোক, খেয়াল রাখতে হবে আরামের দিকে। শেমলেস জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দিন দিন, আরামের কথা বিবেচনা করেই।
লাউঞ্জওয়্যার লাইনে বেশ কিছু নতুনত্ব এসেছে, এর তালিকা বাড়বে বলেই মনে হয়। বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো ফোকাস করছে এ ধরনের উপকরণে। ইতিমধ্যে ডেসমন্ড অ্যান্ড ডেম্পসে তৈরি করেছে ক্ল্যাসিক পাইপড পাজামাস, ড্র স্ট্রিং কটন ট্রাউজার। এসব ডিজাইনে তারা সিজনাল ইন্সপিরেশন রেখেছে।
ভেলভেট বাই গ্রাহাম স্পেন্সারের লাউঞ্জওয়্যার লাইনে ট্র্যাক স্যুট, হুডি আর আনফুসি টি-শার্ট রয়েছে। নরম কটনের এসব পণ্য কম্ফিওয়্যার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
ব্র্যান্ড দেরেক রোজ নিয়ে এসেছে ট্র্যাডিশনাল কটন এবং সিল্ক পাজামা। এর সঙ্গে আছে ক্যাসমেয়ার হুডিস এবং ক্ল্যাসিক কটন টি-শার্ট। ট্রাউজারে আছে লেইড ব্যাক সোয়েটপ্যান্ট।
১৯৮০ সাল থেকে লাউঞ্জওয়্যার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে হ্যানরো। দারুণ ম্যাটেরিয়াল আর মজবুত সেলাইয়ের কারণে সব সময়েই এই ব্র্যান্ডের শরণাপন্ন হচ্ছে মেন ফ্যাশনিস্তারা।
লাউঞ্জওয়্যার থ্রি কোয়ার্টারের সঙ্গে সকস পরলে নি লেংথ মানাবে ভালো। জুতার ক্ষেত্রে ক্লগস, স্লাইডস, ফ্লিপ-ফ্লপ, স্যান্ডেল এবং স্নিকার মানানসই। রঙের বৈচিত্র্যের দিকেও দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে, পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে।
সারাহ দীনা
মডেল: সূর্য ও মাহি
ছবি: ফারাবী তমাল
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: লাউঞ্জ ওয়্যার বাই মেলিসা দেওয়ান