skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I ওয়েইনব্রেনার

ওয়েইনব্রেনার জুতা কোম্পানির শুরুটা বেশ চমকপ্রদ। এর প্রতিষ্ঠাতা আলবার্ট এইচ ওয়েইনব্রেনার একজন জার্মান অভিবাসী। ১৮৯২ সালে, মার্চের একদিন বনের মধ্যে হাঁটতে গিয়ে দেখেন, নরম মাটিতে আটকে থাকা ঝরাপাতায় তার পা বারবার পিছলে যাচ্ছে। ভাবলেন, এমন এক জোড়া জুতা দরকার, যা পরলে বনের পথে সহজে হাঁটা যায়। তখন ওয়েইনব্রেনারের বয়স ২৭, কাজ করতেন তার বাবার আউটসোল মেরামতের জন্য শিক্ষানবিশ হিসেবে।

সে বছরই জোসেফ ফেইফারের সঙ্গে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। এই দুজন উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে একটি ছোট প্রতিষ্ঠান খোলেন ‘ওয়েইনব্রেনার অ্যান্ড ফেইফার’ নামে। উদ্দেশ্য, বুট জুতা মেরামত ও বিক্রয়। আট বছর পর তা উৎপাদনকারী কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ১৯০০ সালে ১,৫০০ ডলারে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া স্থানীয় একটি জুতা কোম্পানি কিনে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ওয়েইনব্রেনার ও ফেইফার মিলে যে নতুন কোম্পানি গঠন করেছিলেন, তার নাম ছিল আলবার্ট এইচ ওয়েইনব্রেনার কোম্পানি। এত দ্রুত এর বৃদ্ধি ঘটে যে ১৯০২ সালে প্রতিদিন ৬০ জোড়া জুতা তৈরি হতো আর ১৯০৫ সালেই তা পৌঁছায় ২,৫০০ জোড়ায়। ১৯০৯ সালে ওয়েইনব্রেনার ১,৫৮,০০০ বর্গফুটের একটি নতুন কারখানায় স্থানান্তরিত হয়। সে সময় জুতাটির নকশা অন্যান্য কোম্পানিও অনুকরণে প্রবৃত্ত হয়েছিল। ১৯১০ সালে তৈরি করা হয় এর ট্রেডমার্ক ডিজাইন। ফলে স্টাইলে বৈচিত্র্য আসতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন পদাতিক বাহিনীর জন্য সামরিক বুট উৎপাদন করে, এমন দৃষ্টান্ত জুতা কোম্পানির ইতিহাসে প্রথম। ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি থরোগুড ওয়ার্ক বুট চালু করে এবং সেটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর মধ্য দিয়ে ওয়েইনব্রেনার সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত ব্র্যান্ডে পরিণত হয়।
১৯৩৫ সালে উইসকনসিনের মার্শফিল্ডে একটি নতুন কারখানার নির্মাণ শুরু হয়, যাতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০০০ জোড়া বুট উৎপাদিত হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নজর দেওয়া হয় উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তির ওপর। ফলে ব্যবহার করা হয় ইস্পাত। জুতার সামনের দিকে জুড়ে দেওয়া হয় ধাতব ক্যাপ, প্রতিরক্ষামূলক আউটসোল ইত্যাদি। বয়স্কাউটদের জন্য ডিজাইন করা ‘হাইক এন ক্যাম্প’ বুটের উৎপাদন শুরু করে ১৯৬৪ সালে। এটি এখনো কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বুট। এর নকশা ও শৈলী আজও জুতাশিল্পের দিক থেকে সেরা বলে বিবেচিত। ২০০০ সালে কর্মীরা কোম্পানিটির মালিকানা গ্রহণ করেন। আজ ওয়েইনব্রেনার আমেরিকার বৃহত্তম ‘মেইড ইন ইউএসএ’ জুতা কোম্পানি। এর রয়েছে ১২৫টি স্টাইল। তারা অন্যান্য দেশের প্যাটার্ন এনে এখন ২৫০টি ডিজাইনের জুতা উৎপাদন করে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বাটা ওয়েইনব্রেনার ব্র্যান্ডের জুতা বিক্রি করে থাকে। তবে সব ডিজাইনের নয়। এমনিতেই যে লক্ষ্য নিয়ে এই ফুটওয়্যারের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা থেকে বহুদূর বিবর্তিত ও প্রসারিত হয়েছে। জুতার পাশাপাশি স্যান্ডেল শু তৈরি করছে ব্র্যান্ডটি। অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষার সচেতন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পশুর চামড়া ব্যবহার থেকেও সরে এসেছে ব্র্যান্ডটি। সোলও আগের মতো নেই। সিনথেটিক ম্যাটেরিয়ালের উপরে এটি এখন বেশি জোর দিচ্ছে।

 ফ্যাশন ডেস্ক
মডেল: জয়
ছবি: ফারাবী তমাল
ফুটওয়্যার: বাটা
মেকওভার: পারসোনা মেনজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top