skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I সুসময়ের প্রতীক্ষা

অতিমারির অবসান না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতিই পোশাকবিশ্বের নিয়ন্ত্রক হয়ে থাকবে। ইতিমধ্যে সেই ইশারা মিলেছে। টেকসই, আরামদায়ক, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও সুস্থতাবান্ধব ফ্যাশনই দেখা যাবে আসন্ন মৌসুমে। লিখেছেন শেখ সাইফুর রহমান

কোভিড-১৯ নামের অদৃশ্য এক শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে গোটা বিশ্ব। টিকার সুসংবাদের সঙ্গে দুঃসংবাদও কম নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোই বেসামাল। ফ্যাশন সম্পর্কে এখন কিছু বলা কঠিন, সংগতও নয়। কারণ, এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের সিংহভাগ মানুষের কাছে এটি বিলাসের অন্য নাম। যদিও প্রতিদিনের জীবনে ফ্যাশনের প্রভাব উপেক্ষণীয় নয়। যেহেতু মৌলিক চাহিদার বাইরেও সুন্দর হয়ে থাকার জন্য মানানসই পোশাক তো পরতেই হয়।
করোনা পরিস্থিতি যাপনের ধারাকেই আমূল বদলে দিয়েছে। হোম অফিস নামক ধারণা এখন বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত। বাড়িতে বসে অফিস করলেও নিয়মিত অংশ নিতে হচ্ছে নানা সভা, সেমিনার, সম্মেলনে। ফলে যেনতেন পোশাক-আশাক পরলেই হচ্ছে না; রীতিমতো সেজেগুজে থাকতে হয়। তবে হ্যাঁ, এই সাজগোজে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। এমনকি, বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি পোশাকের ফরমাল আর ক্যাজুয়ালের সীমারেখাকে অনেকটাই মুছে দিয়েছে। করোনাকাল এই পালে আরও হাওয়া লাগিয়েছে। ফলে একেবারে আটপৌরে পোশাক-আশাকই এখন ফরমালে রূপান্তরিত।
আজকাল মানুষ মন ভালো হয় এমন সব হালকা রঙের প্রতি অনুরক্ত থেকে মৌলিক পোশাকেই নিজেকে ফিট আর ফ্যাশনেবল রাখার চেষ্টা করছে। এ জন্য বেশি বিক্রির তালিকায় ছিল লেগিংস, অ্যাকটিভ ওয়্যার, সাইক্লিং শর্টস, সোয়েটশার্ট, শর্টস, ট্যাংটপ, প্যান্ট আর ঢিলেঢালা পোশাক। জিনস স্বমহিমায় থাকলেও বিক্রি যথেষ্ট কমে গেছে। কারণ, অ্যাথলেজার তুলনায় অনেক বেশি আরামদায়ক। এ জন্য এটাই হয়ে উঠেছে নিউ ফরমাল।
লকডাউন উঠে গেলে মানুষ কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি; বরং দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় আবারও বি¯্রস্ত বিশ্ব।
ফলে বিশেষজ্ঞরা নানা ট্রেন্ড নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করলেও মানুষের মনে সেই শান্তি নেই। তবু সুমনের গানের পুনরাবৃত্তিতে বলতে হয়: কখনো সময় আসে, জীবন মুচকি হাসে।
সেই সময়ের অপেক্ষায় সবাই। এই অতিমারি বল্গাহীন জীবনের রাশ টেনে ধরার শিক্ষা দিয়েছে। তাতে ফাস্ট ফ্যাশন বা দ্রুত পরিবর্তনশীল ফ্যাশনে ক্রমেই ভাটার টান যে আসবে, সেটা অনুমেয়। আগামীর ট্রেন্ডে সেটাও একটা লক্ষ করা যাবে। সবাই খুঁজছে, আগ্রহী হচ্ছে ভালো এবং অল্পের প্রতি। কারণ, মানুষ জরুরি পণ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সেখানে টেকসই বিষয়টিই প্রাধান্য পাচ্ছে।
ফ্যাশন সময়ের নির্ণায়ক। ফলে এই অতিমারি অবসানে পরিবর্তন অবশ্যই সূচিত হবে। যেমনটি ঘটেছিল গত শতাব্দীর প্রথম দিকে স্প্যানিশ ফ্লুর সংক্রমণজনিত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তীকালে ফ্যাশন দুনিয়া পেয়েছিল দিওরের নিউ লুক। এবারও সেই প্রত্যাশা সবার। যদি অতিমারির অবসান ঘটে।
অন্যদিকে টিকা নেওয়ার পরও মাস্ক পরতে হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় বিশেষজ্ঞরা। ফলে মূল ট্রেন্ডে মাস্ক থেকে যাচ্ছে। তাই মাস্ক হয়ে উঠবে আরও ফ্যাশনেবল। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে এই অনুষঙ্গ পরার ধারাটিও থাকবে। তবে কাপড় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জোর দিচ্ছে সংক্রমণমুক্ত পোশাক তৈরির দিকে। ব্র্যান্ডগুলোও ঝুঁকছে সেদিকে। নতুন ট্রেন্ডও লক্ষ করা যাবে। যাকে বলা হতে পারে প্রোটেকটিভ ট্রেন্ড। কারণ, পোশাকে, অনুষঙ্গে জীবাণু প্রতিরোধী বিশেষত্ব থাকবে।
আসন্ন বসন্ত ও গ্রীষ্মের পোশাকের ট্রেন্ডে সুস্থতার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। অতিমারি কাটিয়ে ওঠার প্রয়াস থাকবে বলেই এই ধারাকে বলা হচ্ছে ওয়েলনেস ট্রেন্ড।
পোশাক যাতে আরামদায়ক হয়, সে চেষ্টাও গুরুত্ব পাবে। যেহেতু মানুষ বেশি সময় বাইরে থাকতে পারছে না, এমনকি লকডাউন হচ্ছে যখন-তখন, নিট ট্রাউজার এবং নিটের টপ টি-শার্ট বা পোলো শার্টই থাকবে চাহিদার তালিকায়।
রিসাইকলড ম্যাটেরিয়ালের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। নতুন নতুন উদ্ভাবন নজরে আসবে। হাতে তৈরি পণ্যের চাহিদা বাড়বে। নতুন এই বাস্তবতায় ফ্যাশন জগতে বিপ্লব সূচিত হতে পারে। ডিজাইনাররাও এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও কোলাবোরেশনের মধ্য দিয়ে নতুন পণ্য উদ্ভাবন এবং তৈরিতে মনোযোগী হচ্ছে।
দেখা যাবে ঢিলেঢালা পোশাক। কখনো সেটা আবার বেঢপও হতে পারে। রাউন্ড শেপও আসন্ন মৌসুমে থাকবে ট্রেন্ডে। কমে আসবে কাজ; বরং মিনিমালিস্টিক অ্যাপ্রোচ দেখা যাবে ডিজাইনারদের সৃজনে। রঙেও থাকছে পরিমিত উপস্থিতি। প্রাকৃতিক রঙ ও তন্তু প্রাধান্য পাচ্ছে। এমনকি প্রকৃতি হবে প্রেরণার উৎস। প্রচুর প্রিন্ট দেখা যাবে; যদিও তা কয়েক বছর ধরেই ফ্যাশনে রয়েছে। তবে এ বছর সেই ধারা অব্যাহত থাকবে নতুন আঙ্গিকে।
ফ্যাশনের প্রতিটি মৌসুমে বিভিন্ন দশকের ট্রেন্ড আংশিক বা পূর্ণভাবে ঘুরেফিরে আসে। এ বছর ফ্যাশনে ফিরবে সত্তর। সেই দশকের বোহো শিক নতুন করে জয় করবে ক্রেতাদের মন। তবে কারও কারও ডিজাইনে আশি ও নব্বইয়ের উপস্থিতিও লক্ষ করা যাবে।
পোশাক আর অনুষঙ্গে সাদাকালো চেক আবার আসবে। তবে গাঢ় আর হালকা নানা শেড থাকলেও এগুলোর মধ্যমণি হবে কালো। ফিরবে স্বমহিমায়। পাশাপাশি থাকবে গোলাপি, প্যাস্টেল, নীল, হলুদ। আবার এশিয়ার ট্রেন্ড বলছে, নীলের সঙ্গে প্যাস্টেল পার্পল, প্যাস্টেল গ্রিন, সাদা ও সবুজের উপস্থিতি থাকবে। আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্মে হলুদের সঙ্গী হবে গ্রে। মজার বিষয় হলো, প্যানটনের রঙের আভাসে এই দুটোকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ২২ বছরে এমনটি ঘটল দ্বিতীয়বারের মতো।
এশিয়ার ট্রেন্ডে নানা ধরনের কাপড়ের পাশাপাশি ছাপা আর ডুরে যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে টাইডাই। আবার দুই ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক হাফ অ্যান্ড হাফ প্রাধান্য পাবে প্রাচ্যে। কার্গো পকেটও আবার দেখা যাবে। তবে এশিয়া কিংবা ইউরোপে মেটালিক ফ্যাব্রিক তার উপস্থিতি জানান দেবে।
বাংলাদেশের দিকে তাকানো যাক।
মাস্ক ইতিমধ্যেই যথেষ্ট ফ্যাশনেবল হয়ে উঠেছে। ধারাটি অব্যাহত থাকবে এ বছরেও। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মাস্ক পরার চল ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বিয়ের পোশাকেও সে ধারা বহমান। বলা দরকার, উপলক্ষভিত্তিক ফ্যাশনের ধারায়ও এখন ভাটার টান। যদিও দেশীয় ফ্যাশনে দেখা যাচ্ছে বিচিত্র উদ্ভাবন। সবই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জুরহেমের শোতে যেসব পোশাক দেখা গেছে, সেগুলোতে পষ্ট ছিল আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডের অনুসরণ। পাশ্চাত্য পোশাকের দেশি ব্র্যান্ডগুলোতেও এই ধারা দেখা যাবে আগামী বছরে। এখানে কোনো ফোরকাস্ট নেই, ইচ্ছেমতো রং ব্যবহারের চলই প্রাধান্য পাবে। তবে দেশীয় ফ্যাশনে এই অতিমারির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু সেটা কাটিয়ে উঠে নতুন সময়ের মতো কাজ করার জন্য সবাই কতটা প্রস্তুত, সেটা অচিরেই বোঝা যাবে। এখন টেকসই, পরিবেশবান্ধব, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ফ্যাশনকে গুরুত্ব দেওয়ার সময়। সারা বিশ্বই এখন সে পথেই যাচ্ছে।
sksaifurrahman@gmail.com
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top