skip to Main Content

ফিচার I বসন্তবরণ দেশে দেশে

প্রেম ও সৌন্দর্যের এই ঋতুকে স্বাগত জানাতে পৃথিবীর নানা দেশে রয়েছে উৎসবের রীতি। সজীব প্রকৃতির মতোই প্রাণোচ্ছল তরুণ-তরুণীরা এতে অংশ নেয়। লিখেছেন রাইসুল রাণা

বসন্ত নবজীবনের প্রতীক। শীতের ধূসরতা পেরিয়ে সবুজ শ্যামল রঙিন দিনের সূচনা হয় এ সময়। গাছে গাছে ভরে ওঠে সতেজ পল্লব আর বাহারি রঙের ফুল। গোটা প্রকৃতি সাজে নতুন রূপে। বসন্তকে বরণ করে নিতে পৃথিবীজুড়ে নানান উৎসবের আয়োজন হয়ে থাকে। এমনই কয়েকটির পরিচয় তুলে ধরা হলো :
হানামি
চেরি ব্লসম উৎসব নামেও পরিচিত। হানামি একটি জাপানিজ সংস্কৃতি। যার মাধ্যমে বসন্তকে বরণ করে নেওয়া এবং সাকুরা অর্থাৎ চেরি ব্লসমের সৌন্দর্যকে স্বাগত জানানো হয়। সাকুরাকে বলা হয়ে থাকে বসন্তের ফুল ও নতুনত্বের প্রতীক। এলাকাভেদে উৎসবটি শুরু হয় এপ্রিলে বা মের মাঝামাঝিতে।
এই উৎসবে জাপানিরা প্রস্ফুটিত চেরি গাছের নিচে একত্র হয়। বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন পদের খাবার, পানীয় ও গানবাজনার আয়োজন করে থাকে। ইয়োজকুরা নামক একধরনের আলোকবাতি দিয়ে রাতে গাছগুলোকে সাজানো হয়।
সংক্রান
থাই নববর্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতিবছর এপ্রিলের মাঝামাঝিতে তিন দিনব্যাপী এই উৎসব হয়ে থাকে। থাইরা মনে করে, সব মলিনতা দূর করার এবং পরিবার, প্রতিবেশী ও বয়স্কদের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এটি উপযুক্ত সময়। উৎসব চলাকালে লোকেরা স্থানীয় আশ্রমগুলোতে খাদ্যাদি নিয়ে যায়, বুদ্ধমূর্তিগুলোকে ধৌত করে। থাই যুবকেরা ভাগ্যের উন্নতির জন্য নিজ হাতে বৃদ্ধদের স্নান করায়। ওয়াটার গান দিয়ে জলযুদ্ধ, হইহুল্লোড় এই উৎসবের প্রাচীন ঐতিহ্য।
হোলি
বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো হিন্দুধর্মে আছে ঋতুভিত্তিক উৎসবও। এসবের একটি হলো হোলি। একে বসন্তোৎসবও বলা হয়ে থাকে।
ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে শুরু। এ রাতে খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে এক বিশেষ বহ্ন্যুসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসব হোলিকাদহন বা নেড়াপোড়া নামে পরিচিত। পরদিন সকাল থেকে শুরু হয় হোলিখেলা। পাড়া প্রতিবেশী সবাই একত্র হয়ে রঙিন পানি ও আবির মেখে হোলি উৎসব উদ্্যাপন করে।
নওরোজ
বসন্তের প্রথম দিন থেকে শুরু। নওরোজ ফার্সি শব্দ। যার বাংলা পরিভাষা নতুন দিন। এই উৎসব মূলত ইরানি ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদযাপিত হয়ে থাকে। এটি ইরানের সবচেয়ে আনন্দঘন উৎসব। সে কারণে এটিকে বলা হয় ঈদে নওরোজ। এই উৎসবে ঈদের আগের দিনগুলোর মতোই ইরানিদের মধ্যে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। নতুন জামাকাপড় পরা, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ এবং হাফট সিন নামক বসন্তের এক প্রকার বিশেষ খাবারের আয়োজন এই উৎসবের একটি অংশ।
টিউলিপ টাইম
আমেরিকায় বসন্তোৎসব শুরু হয় হল্যান্ডে টিউলিপ ফোটার সময়ে। ইউরোপের নয়, এটি আমেরিকার মিশিগানের ছোট একটি শহর। এখানে প্রতিবছর ষাট লক্ষাধিক টিউলিপ উৎপন্ন হয়। উল্লেখযোগ্য এই টিউলিপ উৎসবে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।
মেক্সিকান কার্নিভ্যাল
মেক্সিকোর জনপ্রিয় উৎসব। এর মাধ্যমে দেশটির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। মেক্সিকোর উপকূলীয় শহরগুলোতে বর্ণিল শোভাযাত্রা হয়ে থাকে। সপ্তাহব্যাপী এই উৎসবে বিভিন্ন প্রকার খাবার ও পানীয় এবং গানবাজনার আয়োজন করা হয়। মূলত এই উৎসবের মধ্য দিয়ে মেক্সিকানরা পৃথিবীজুড়ে বসন্তের প্রথম দিনটি বরণ করে নেয়।
মারজানা
­­ষোড়শ শতাব্দীতে উৎসবটি পোল্যান্ডে চালু হয়। বসন্তের প্রথম দিনটি বরণ করে নিতে সে দেশের জনগণ বিচিত্র ধরনের পোশাক পরে রাস্তায় বের হয়। উৎসবটি মারজানা নামে পরিচিত। মূলত এটি একটি কাঠের তৈরি পুতুল। যেটিকে শীতকালীন বিষণ্নতার প্রতীক বলে মনে করা হয়। এই পুতুল নিয়ে রাস্তায় বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন চলে। শেষে নদীতে বিসর্জনের মাধ্যমে বসন্তোৎসব উদযাপন করা হয়।
বাবা মার্থা
বুলগেরিয়ান শব্দ। যার অর্থ মার্চ মাসের দাদিমা। উৎসবটি মার্চের প্রথম দিন পালন করা হয়। লোককথায় প্রচলিত আছে, বাবা মার্থা একজন বৃদ্ধ বদমেজাজী নারী। তাকে যথাযথভাবে স্মরণ না করলে সে শীতকালের ঠান্ডা ও রুক্ষতা আরও বাড়িয়ে দেবেন। এখন বুলগেরিয়ানরা দিনটিকে বসন্তোৎসব হিসেবে উদযাপন করে।
এই দিন বসন্তের কোমলতাকে স্বাগত জানাতে সবাই লাল সাদা ব্রেসলেট পরে। যা সুস্বাস্থ্য, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক।
ফ্লোরিড
দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকালের স্থায়িত্ব সেপ্টেম্বর-নভেম্বর পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়া এই গোলার্ধে অবস্থিত একটি দেশ। প্রতিবছর চার লক্ষাধিক দর্শনার্থী বসন্তকালের ফুল উৎসবে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় সমবেত হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে মাসব্যাপী এই বসন্তোৎসব চলে।
ক্যানবেরায় অবস্থিত কমনওয়েলথ পার্কে প্রতিবছর ১০ লক্ষাধিক ফুল ফোটে। যা এক অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্যের সৃষ্টি করে। উৎসবটিতে কনসার্ট, শিল্প প্রদর্শনী, উদ্যানসংক্রান্ত কর্মশালা ইত্যাদি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হয়।
পয়লা ফাল্গুন
বাংলাদেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ ঋতুর দেশ। গ্রামবাংলায় প্রতিটি ঋতুর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এগুলোর মধ্যে বসন্তকে বলা হয় ঋতুর রানি।
প্রাচীনকাল থেকে এই অঞ্চলে বসন্তবরণ উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে বাংলাদেশে তা পালনের ইতিহাস বেশি দিনের নয়। ঋতুটিকে স্বাগত জানাতে পয়লা ফাল্গুন উদযাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থী ফাল্গুনের প্রথম দিনে ব্লকপ্রিন্টের রঙিন শাড়ি পরে অনুষদ প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়। তারা নাচ-গান ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে পয়লা ফাল্গুন উৎসবের সূচনা করে।
ক্রমেই এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বৃহৎ উৎসবে পরিণত হয়েছে। দিনটিতে মেয়েরা কপালে রঙিন টিপ, হাতে রঙিন চুড়ি, হলুদ বা কমলা শাড়ি পরে এবং ছেলেরা হলুদ, লাল, কমলা পাঞ্জাবি পরে ঘুরতে বের হয়।
এ দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদ বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করে। রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
লাস ফ্যালাস
স্পেনের লাস ফ্যালাস ডি ভ্যালেন্সিয়ায় এই উৎসব পাঁচ দিন ধরে উদ্্যাপিত হয়। মধ্যযুগ থেকে এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিবছর ভ্যালেন্সিয়া শহরের সেন্ট যোসেফের সম্মানার্থে এটি উদ্যাপিত হয়ে থাকে। যিনি ছিলেন একজন কার্পেন্টার। তার স্মরণে বৃহদাকারের পুতুল তৈরি করা হয়। যেটি ফ্যালাস নামে পরিচিত। উৎসব শেষে সেটি আগুনে পোড়ানোর রীতি। স্থানীয়রা বৈচিত্র্যময় পোশাক পরে রাস্তায় বের হয়। বিভিন্ন পদের খাবার, গানবাজনা, আতশবাজি এতে ভিন্নমাত্রা যোগ করে।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top