আলাপন I নিজের মতের বিরুদ্ধে অভিনয় করলে ফল ভালো হয় না- আফজাল হোসেন
শিল্পের পথেই হেঁটেছেন। মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমা, বিজ্ঞাপন- সর্বত্রই সাফল্য ধরেছেন হাতের মুঠোয়। জীবনের ছয় দশকের শেষে এসে আজও তিনি তরুণ। নতুন প্রজন্মের আদর্শ। অনেক পরিচয় যার নামের পাশে উজ্জ্বল, তিনি আফজাল হোসেন। ১৯৫৪ সালের ১৯ জুলাই সাতক্ষীরার পারুলিয়া গ্রামে তার জন্ম। আর্ট কলেজে পড়ার সময় মঞ্চ দিয়ে শুরু অভিনয়জীবন। লিখেছেন গল্প, কবিতা, উপন্যাস, স্মৃতিগদ্য। গুণী এই মানুষটি জীবনের নানা বাঁকের গল্প বলেছেন ক্যানভাস পাঠকদের জন্য। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
ক্যানভাস : শিল্পের প্রতি আপনার আগ্রহ জন্মাল কীভাবে?
আফজাল হোসেন: লেখাপড়া ছাড়া আমার বহু বিষয়ে আগ্রহ ছিল। কৌতূহল ছিল। বাবার ছবি আঁকার হাত ছিল। তিনি অবসরে প্রেসক্রিপশন প্যাডে ছবি আঁকতেন। তারপর ছিঁড়ে ফেলে দিতেন। ফেলে দেওয়া ওই আঁকাগুলো আমি কুড়িয়ে জমিয়ে রাখতাম। সেগুলো অনুসরণ করতাম। আব্বা কলমে ছবি আঁকতে পারতেন। অক্ষরগুলো নতুন ডিজাইন করতে পারতেন। অক্ষরগুলো ভিন্নভাবে লেখাও একটা শিল্প ছিল। আমি তার লেখা, আঁকা অনুসরণ করতাম। আমার ছবি আঁকার পেছনে এটাই বড় সূত্র।
ক্যানভাস : আর্ট কলেজে ভর্তির পেছনে কারও অনুপ্রেরণা ছিল?
আফজাল হোসেন: আমার এক কাকা আব্বার ছোট ছিলেন। তিনি বিলেতে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়তেন। আমাদের পরিবার থেকে তিনিই প্রথম দেশের বাইরে যান। তিনি গ্রামে বেড়াতে এলে তার কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল যে আমার পড়াশোনায় একদম মন নেই। আমাকে যেন তিনি বুঝিয়ে বলেন। তিনি আমার ছবি আঁকা দেখে বলেছিলেন, তোমাকে আর্ট কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হবে। পড়াশোনাটা ঠিকমতো করো। এই প্রথম আর্ট কলেজের নামটা শুনলাম। আব্বা বলেছিলেন, ভালোভাবে পাস করতে পারলে আর্ট কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হবে। পাস করলাম। আব্বা খোঁজখবর নিয়ে দেখলেন, শিল্পকলায় যারা পড়াশোনা করে, তাদের তেমন কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তখন তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি করাতে সম্মত হননি। কিন্তু আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম, আর্ট কলেজেই পড়ব। আর কোনো বিষয়ে পড়ব না। তখন সেই কারণে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। পকেটের টাকাপয়সা শেষ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আমাকে ফিরতে হয়েছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে আব্বা হয়তো ভেবেছিলেন যে এতটা করা ঠিক হবে না। ওর যদি পালিয়ে যাওয়ার মতো দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তাহলে উচিত হচ্ছে তাকে পড়তে দেওয়া। তখন তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি করাতে রাজি হলেন।
ক্যানভাস: সত্তরের দশকের মাঝামাঝি আপনি মঞ্চে অভিনয় শুরু করেছেন, তখন কি আর্ট কলেজের পাঠ চুকিয়েছেন?
আফজাল হোসেন: আর্ট কলেজে পড়া যখন শেষ, সেই সময় আর্ট কলেজের রজতজয়ন্তী হয়েছিল। সে জন্য একটা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল, আমি তার সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। আমরা একটা প্রস্তাব করেছিলাম, সাত দিনব্যাপী যে উৎসব হবে, সেখানে একটা নাটক রাখার জন্য। নাটক লিখে দিয়েছিলেন আল মনসুর। নাম বিদায় মোনালিসা। তার সঙ্গে যুক্ততা তৈরি হয়েছিল শিল্পী মারুফ আহমেদের মাধ্যমে। তিনি প্রখ্যাত অভিনেতা এনাম আহমেদের ছেলে। মারুফ ‘আবার তোরা মানুষ হ’-তে অভিনয় করেছিলেন। সেই নাটকে মঞ্চের পেছনে এবং মঞ্চায়নের জন্য যে ধরনের সহযোগিতা লাগে, তা করেছিল ঢাকা থিয়েটার। তার পরিচালক ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। পরে আমরা যাকে নাট্যগুরু হিসেবে পেয়েছি। আমি আর্ট কলেজে নাটকে অভিনয়ও করেছিলাম। অভিনয় দেখে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি সিরিয়াসলি অভিনয় করতে চাও কি না?’ থিয়েটার বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। বিষয়টা স্ট্রাইকিং বলে মনে হলো। তারপর ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হই। সেই শুরু।
ক্যানভাস : টেলিভিশন জগতে এলেন কখন এবং কীভাবে?
আফজাল হোসেন: টেলিভিশন তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ দেখতেন না। কিন্তু সেই সময়ে বিখ্যাত প্রযোজকেরা ছিলেন। তারা সংখ্যায় অনেক ছিলেন, এবং প্রত্যেকেই হয়তো সপ্তাহে কিংবা মাসে একটা করে নাটক করতেন। দর্শকদের প্রতি অত্যন্ত সম্মান ছিল প্রযোজকদের। দর্শকেরাই নাটকটি দেখবেন, সুতরাং সেটা একটা শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা হওয়া উচিত। তখন সাহিত্যনির্ভর নাটক হতো। অনেক পরীক্ষামূলক নাটকও তখন হয়েছে। পরবর্তীকালে নাটকের একটা পরিবর্তন এসেছে। টেলিভিশনের বাইরে নাটক প্রযোজনা শুরু হয়েছে। নাটকের ব্যাপ্তি অনেক বিশাল হয়েছে। ব্যাপ্তি যখন একটু বড় হয়, ক্ষুুদ্রাকার থেকে বড় হয়। তখন অনেক মানুষের সংযোগ ঘটে। অনেক মানুষের কাজ তৈরি হয়। ধরনটা তখন পাল্টায়।
ক্যানভাস : টেলিভিশনে আপনার প্রথম নাটক কোনটি ছিল?
আফজাল হোসেন: প্রথম অভিনীত নাটকটি আসলে প্রচারিত হয়নি। রেকর্ড হয়েছিল। বের্টল্ট ব্রেখটের রাইফেল। প্রযোজনা করেছিলেন শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি আমাকে টেলিভিশনে একটা আবৃত্তি করতে দেখেছিলেন। তখন টিভিতে তরুণদের একটা অনুষ্ঠান হতো। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তারা অংশগ্রহণ করতেন। সেই অনুষ্ঠানে আমি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটা আবৃত্তি করেছিলাম। সেটি শুনে তিনি আমাকে টেলিভিশনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তারপর একটা চিত্রনাট্য ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, তুমি এই নাটকে অভিনয় করবে। টেলিভিশনে অভিনয় করার যে রীতি, অডিশন দিতে হয়। ও রকম না। তিনি যেহেতু আমার আবৃত্তি শুনেছিলেন এবং জানেন যে আমি ঢাকা থিয়েটারে নাটক করি; তাই ওই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য চিত্রনাট্য দেন। সাত দিন মহড়ার পর নাটকটা করি।
ক্যানভাস : সিনেমা অঙ্গনেও আপনার বিচরণ ছিল জনপ্রিয় ধারায়। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
আফজাল হোসেন: আমার টেলিভিশনে বা মঞ্চে অভিনয়ের কোনো ইচ্ছা ছিল না। আর্ট কলেজের নাটকে অভিনয় করলাম, আমাকে বলা হলো, তুমি যদি অভিনয় করতে চাও, তবে ঢাকা থিয়েটারে আসো। সেখানে কাজ করছিলাম, আবদুল্লাহ আল-মামুন বললেন, তুমি টেলিভিশনে অভিনয় করো। আমার কোনো চেষ্টা বা আগ্রহ ছিল না। একইভাবে সিনেমায়ও এলাম। কাজী জহির বাংলাদেশের খুব বিখ্যাত প্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন। তিনি তখন একটি ছবি বানাচ্ছেন। নতুনদের নিয়ে কাজ করার চিন্তাভাবনা করছিলেন। টেলিভিশনের আমি ও সুবর্ণা মুস্তাফা থাকব। সিনেমার ববিতা থাকবেন। এইভাবে ছক কেটে তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন। যখন প্রস্তাবটা দেন, তখন অনেকে অবশ্য আমাকে বলেছিলেন সিনেমায় অভিনয় না করার জন্য। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, কেন নয়? না করার কারণটা ছিল এই যে, তখন অনেকে সিনেমাটাকে ভালো চোখে দেখতেন না। আমার মনে হয়েছিল, একটা বৃহৎসংখ্যক দর্শক যদি দেখে সেই মাধ্যমে অভিনয় করে তাদের কাছে পৌঁছানো যায়। এভাবেই শুরু। বেশ কয়েকটি ছবি করার পর আমার উপলব্ধি হয়েছিল, এই জায়গা আমার জন্য খুব একটা সুবিধার নয়। আমি যে রকম ভাবি, যে রকম চরিত্র আশা করি, যে রীতিতে অভিনয় করি, সেভাবে করার জায়গা এটা নয়। নিজের মতের বিরুদ্ধে অভিনয় করলে সেটার ফল ভালো কিছু হবে না। তাই একটা নির্দিষ্ট সময় পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমি আর ছবিতে অভিনয় করব না।
ক্যানভাস : ১৯৮৪ সাল থেকে বিজ্ঞাপন নির্মাণেও যুক্ত হয়েছেন। এ সম্পর্কে শুনতে চাই।
আফজাল হোসেন: আমাদের দেশে একটা মানুষ অভিনয় করে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারে না। আমি বলছি ওই সময়ের কথা। যখন আমরা কাজ করি, মঞ্চে, টেলিভিশনে নাটক করি। ওখানে কাজ করে যে পয়সা পাই, সেটা যাতায়াত করতেই চলে যায়। কিন্তু পয়সার জন্য কেউ কাজটা করত না। ভালোবাসা থেকেই করত। আবেগের কারণে করত। একটা সময় তো মনে হয় যে খেয়ে-পরে বাঁচব কী করে? একটা কাজ করা দরকার। মনে হতো কখনো চাকরি করতে পারব না। আমাকে একটা কাজ করতে হবে। সেই কাজে সৃজনশীলতার সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে হবে। শুধু পয়সা অর্জনের জন্য কাজ নয়। সে জন্যই মনে হয়েছিল বিজ্ঞাপনটাই উপযুক্ত। কারণ, আমি লেখালেখি করি। নিজে মঞ্চ পরিকল্পনা করি। নকশা করি। যেহেতু আমি আর্ট কলেজে পড়াশোনা করেছি। নকশার বিষয়টা আমি বুঝি। ছবি আঁকার কারণে রঙের বিষয়টা বুঝি। এই যে রঙ, রেখা, ছবি-নাটকে শিল্পনির্দেশনা, অভিনয়- এই সবের সমন্বয় করে খুব সহজেই একটা ভালো কাজের সুযোগ আছে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে। বিজ্ঞাপনে এগুলোই কোনো না কোনোভাবে দরকার হয়। আমার সাহসটা হয়েছিল, যখন এই প্রস্তুতি আছে, তাহলে এই কাজটা শুরু করি। আমার কেন জানি মনে হতো বিজ্ঞাপনে কাজ করবার মধ্যে অনেক কিছু আছে। তখনো বেশি কিছু হয়ে ওঠেনি। বিজ্ঞাপনটা বিজ্ঞাপনের জায়গায় আছে। মনে করেছিলাম যে একটা পরিবর্তন আনব। পেরেছিলাম বলেও মনে হয়। কারণ, বিজ্ঞাপনটা প্রচারের জায়গা অতিক্রম করে সাধারণ পরিবারে একটা বিনোদনে পরিণত হতে পেরেছিল। মানুষ যেমন টেলিভিশনে নাটক দেখত, গান শুনত, সে রকম বিজ্ঞাপন দেখত। আমি মনে করি, এটা একটা বড় সাফল্য।
ক্যানভাস: আপনি মডেলিংও করেছেন। এখন যারা মডেলিং করছেন, তাদের সঙ্গে আপনাদের সময়ের মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?
আফজাল হোসেন: তুলনা করা যাবে না। কারণ, সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়। সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে যে বিষয়টির কথা বলতে চাই, সেটি হচ্ছে, ভাবতে হবে এখানে আগে মডেলিং ছিল কি না? সামান্য দু-একজন করতেন শখের বশে। তাদের অনেক ধরনের ঝামেলাও পোহাতে হতো। এটা খুব একটা গ্রহণযোগ্য জায়গা ছিল না। বলা হতো, এটা খুব ভালো কাজ নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই ভুল ধারণা আমরা ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম। এটা ভেঙে যে কিছু ছেলেমেয়ে বেরিয়ে এলো, তারা আইকন হতে পেরেছিল- নোবেল, মৌ, তানিয়া, সুইটি। এখন পর্যন্ত তাদের নাম ও অস্তিত্ব আছে। তারা আকর্ষণটা তৈরি করতে পেরেছিল, মধ্যবিত্ত পরিবারে আমরা এই রকম একটা কাজ করে অবস্থানে পৌঁছাতে পারি। এই বড় ভূমিকাটি সেই সময়কার। আমি ওই সময়ের সঙ্গে এখনকার সময়ের তুলনা করতে চাই না। সময়ের সঙ্গে একটা ব্যবধান তো তৈরি হবেই। চাহিদাও বদলাবে। লক্ষ্যও বদলাবে। আমাদের সময়ে লক্ষ্য, চাহিদা, ধরনটাও আলাদা ছিল। এখন সময়টা প্রাকৃতিক নিয়মেই বদলাবে।
ক্যানভাস: আপনি কবিতা, উপন্যাস, গল্প, ভ্রমণকাহিনিসহ নানা বিষয়ে লিখেছেন। লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের গল্পটা শুনতে চাই।
আফজাল হোসেন: ছাত্রজীবন থেকেই লিখি। কবি হওয়ার জন্য নয়। এটা হচ্ছে ভালো লাগা থেকে। আমার যারা কাছের বন্ধুবান্ধব, তারা জানে যে আমি লিখি এবং নিজেদের মধ্যে পড়ি। কখনো প্রকাশের আগ্রহ আমার হয়নি। ফরিদুর রেজা সাগরের মাথায় নতুন নতুন আইডিয়া খেলে। তাদের একটা পত্রিকা আছে আনন্দ আলো। এই পত্রিকার একবার বর্ষপূর্তিতে একটা মজা করতে চেয়েছিল। প্রতিটি ইস্যুর সঙ্গে একটা করে কবিতার বই দেওয়া হবে। আমাকে বলল, তোমার কবিতাগুলো দাও, একটা বই বের করি। তারপর উপহার হিসেবে পাঠকদের কাছে আমরা পৌঁছে দেব। আমার প্রথমে সংকোচ হয়েছিল। পরে যখন মনে হলো, একজন বিখ্যাত কবির কবিতার বইও একসঙ্গে ১০ হাজার ছাপা হবে না আমাদের মতো দেশে। একটা ম্যাগাজিনের সঙ্গে এটা যখন একটা করে উপহার হিসেবে যাবে, আমি যদি ধরেও নিই যে কবিতা কেউ পড়বে না, তারপরও একধরনের আনন্দের, উত্তেজনার বিষয় থাকে, একসঙ্গে এতগুলো কবিতার বই ছাপা হবে। এবং মানুষের হাতে পৌঁছাবে। সেই কবিতার বইয়ের নাম ছিল ‘তিন রমণীর পাঠশালা’। এটা আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই। এসব কবিতার বই প্রকাশ পাওয়ার আগেই আমি গল্প ও উপন্যাস লিখেছি। প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সেটা একটা অভিনব গ্রন্থ। এই অর্থে অভিনব গ্রন্থ যে, তখন ইমদাদুল হক মিলন লেখক হিসেবে কেবল খ্যাতি লাভ করেছেন। তার লেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ লক্ষ করা যায়। আর আমি তখন অভিনয় করি আর লিখি। ভাবলাম, একটা গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করি। যেটায় মিলনের পাঁচটা আর আমার পাঁচটি গল্প থাকবে। একটা বই। উভয় দিকে গল্পগ্রন্থটির প্রচ্ছদ থাকবে। এদিকে মিলনের প্রচ্ছদ, আরেক দিকে আমার প্রচ্ছদ। পাঠক দুই দিক থেকেই বইটি খুলতে পারবেন। একদিক থেকে খুললে আমার পাঁচটি গল্প পড়বেন। আরেক দিক থেকে খুললে মিলনের পাঁচটি গল্প পড়বেন। এই গ্রন্থটির নাম ছিল ‘যুবকদ্বয়’। বোধ হয় আশির প্রথম দশকে এটা প্রকাশিত হয়েছিল।
ক্যানভাস : এখন কী লিখছেন?
এই মুহূর্তে আমি দুটি লেখা লিখছি। ধারাবাহিকভাবে একটি। যার শিরোনাম হচ্ছে ‘অল্প স্বল্প দীর্ঘ জীবন’। স্মৃতিচারণামূলক লেখা। যেটায় শৈশব থেকে এই পর্যন্ত নানান ঘাত-প্রতিঘাত, অভিজ্ঞতা সেগুলো লিখছি। বহুকাল আগে এটারই একটা অংশ হিসেবে লিখেছিলাম প্রথম আলোর ঈদসংখ্যায়। ওটার নাম ছিল ‘আমার প্রথমেরা’। সেটা হচ্ছে একটা জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে। এখন যেটা লিখছি সেটা শৈশব কাল থেকে এখন পর্যন্ত যে নানা অভিজ্ঞতা, সেসব নিয়ে। এ ছাড়া বিজ্ঞাপন বিষয়ে একটা দীর্ঘ লেখা লিখছি। লেখাটির নাম ‘বিষয় বিজ্ঞাপন’। সেটাও অভিজ্ঞতা। বিজ্ঞাপনের সঙ্গে আমার সংযুক্তি থেকে শুরু করে কীভাবে আমি এই পরিবর্তনগুলো দেখেছি, কীভাবে এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছি সেই বিষয়ে লেখা।
ছবি: মো. রাকিবুল হাসান