ফিচার I চিত্তাকর্ষক
স্বপ্ন, মুক্তি ও প্রকৃতির আস্বাদ রোম্যান্টিক ফ্যাশনের প্রধান বিবেচ্য। রঙ, নকশা আর অলংকরণে দেখা যায় সেই প্রতিফলন। লিখেছেন আহসান পাভেল
বসন্তে রোম্যান্টিক স্টাইল জুতসই। ফেমিনিটি, জমকালো টেক্সচার, কোমলতা এবং ভিনটেজ অনুপ্রাণিত পোশাকের সমন্বয়ে হয়ে থাকে এই স্টাইল। এখানে টেইলরিং, স্ট্রাকচার ও গ্রাফিকের প্রয়োগ থাকে কম। সে তুলনায় বেশি দেখা যায় সূক্ষ্ম পাতলা কাপড়, কুঁচি এবং লেইসের ব্যবহার।
রোম্যান্টিক স্টাইল প্রথম ধরা দেয় প্রাচীন গ্রিক সময়ে। তবে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ঊনিশ শতকে, ভিক্টোরিয়ান যুগে। এ সময় এর ডিজাইন ও প্যাটার্নে নানান মাত্রা যোগ হয়। তখন এই স্টাইলের পোশাকগুলোতে দেখা যায় হাই ওয়েস্টলাইন, মসৃণ সিলুয়েট, ফ্রেঞ্চ লেইস, এমবেলিশমেন্ট, এমব্রয়ডারি, বিলোয়িং স্লিভের ব্যবহার। বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষে এটি বেশ পোক্তভাবে ফ্যাশনে ফিরে আসে। ব্রিটিশ ফ্যাশন ডিজাইনার লরা অ্যাশলের হাত ধরে। এমন এক সময়ে এর আবির্ভাব হয়, যখন মডার্নিজম সবকিছুর কেন্দ্রে। তখন ফ্যাশন ছিল খুবই কাঠামোগত এবং জ্যামিতিক। লরা অ্যাশলের ডিজাইনগুলো ছিল বসন্তকালীন কালেকশনের। তার এই সংগ্রহের মাধ্যমে ফ্যাশনিস্তাদের চোখ ফেরে ফ্লোয়ি আউটফিটের দিকে।
স্টাইলিং টপ
বেল-স্লিভ ব্লাউজ: ভার্সাটাইল স্টেটমেন্ট ব্লাউজগুলোর একটি। ইউনিক এই টপের সঙ্গী হিসেবে জুতসই ফ্লোর লেন্থ মেক্সি স্কার্ট। এই দুয়ের কম্বিনেশন উপহার দেবে আল্ট্রা প্রিটি লুক। বেল-স্লিভ ব্লাউজের দীর্ঘ ও প্রবাহিত ফ্লেয়ারড হাতা তৈরি করে মার্জিত লুক। বিশেষত বেল শেপড মেয়েদের।
পাফি-স্লিভ টপ: রোম্যান্টিক ভিক্টোরিয়ান পোশাক। পেনসিল স্কার্ট বা স্কিনি প্যান্টের সঙ্গে এটি বেশি মানানসই।
লেইসি টপ: রোম্যান্টিক স্টাইলের পোশাকগুলোর প্রধান উপকরণের একটি লেইস ফ্যাব্রিক। এমন টপে লম্বা হাতার জন্য নিউট্রাল কালার প্যালেট ফ্যাব্রিক ভালো। শরীরের উষ্ণতা ধরে রাখতে টপের সঙ্গে বেছে নেওয়া হয় হালকা রঙের ব্লেজার। এ ধরনের টপ রাতের ইভেন্টগুলোতে বেশি ব্যবহৃত হয়।
সিলুয়েট: রোম্যান্টিক স্টাইলের সিলুয়েটগুলো পরা হয় বন্ধুদের মিট-আপ, পারিবারিক নৈশভোজের অনুষ্ঠানে, এমনকি কোথাও বেড়ানোর সময়। রোম্যান্টিক লুক তৈরির মূল কৌশল এটি, সাধারণ কিন্তু পরিপাটি। এই পোশাকগুলোর জন্য বেছে নিতে হবে সুতি ও লিনেনের মতো প্রাকৃতিক কাপড়। যা লুকে আরও ন্যাচারাল আর রিলাক্স অনুভূতি ছড়িয়ে দেবে। সাদামাটা ও জ্যামিতিক কাটের পরিবর্তে ড্রেপযুক্ত কাট দিতে হবে। এমবেলিশমেন্টে এমব্রয়ডারি, কুঁচি ও লেইসের ব্যবহার হয়ে থাকে।
ফ্লোয়ি ব্লাউজ: রোম্যান্টিক স্টাইল পছন্দ করেন এমন প্রতিটি নারীর ওয়্যারড্রোবে থাকে। ফ্লোরাল বা প্লেইন দুই ধরনের ফ্লোয়ি ব্লাউজই রয়েছে। যেগুলোর বাটন, কলার ও কাফে থাকে বিশেষত্ব। অলংকরণ হয় বো এবং কুঁচির মাধ্যমে। আর সাধারণ স্টাইলের ফ্লোয়ি ব্লাউজগুলোকে সুন্দর করে তোলা হয় এমব্রয়ডারির মাধ্যমে। ফ্লোয়ি ব্লাউজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায় ফ্লোয়িং স্কার্ট। এ ছাড়া জিনসের সঙ্গে এটি দেয় মডার্ন লুক।
ড্রেস ডিটেইল
সাধারণত দীর্ঘ ও ফ্লোয়ি হয়। এমবেলিশমেন্টে থাকে ফ্লোরাল এমব্রয়ডারি বা লেইস। রোম্যান্টিক ড্রেসের রয়েছে অগুনতি ফর্ম ও স্টাইল। ড্রেসে যাদের জ্যাজি ও লং পছন্দ, তাদের জন্য রয়েছে প্রিন্টেড মিডি ড্রেস। মডার্নাইজ ফ্যাশনে এর সঙ্গে ট্রেইনার ও বাইকার জ্যাকেটের কম্বিনেশন হতে পারে। ক্ল্যাসিক এবং অভিজাত লুক যাদের পছন্দ, তাদের জন্য এ-লাইন লেইস ড্রেস ভালো অপশন।
রাফলড ড্রেস: এই ফ্লোয়িং ফ্রক একই সঙ্গে গ্লামারাস ও রোম্যান্টিক। পোশাকটির সঙ্গে পায়ে থাকতে পারে কিটেন হিল। শরীরের উষ্ণতা ধরে রাখতে এই ড্রেসের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া যেতে পারে একটি ব্লেজার বা মোটো জ্যাকেট।
বেবিডল ড্রেস: রোমান্স আর ফান- উভয়ের স্বাদ এতে পাওয়া যায়। বাস্ট লাইনের ওপরটা চাপানো থাকে আর নিচের দিক ঢিলেঢালা। প্যাস্টেল চাঙ্কি স্যান্ডেলের সঙ্গে এই ড্রেস মানানসই।
অফ শোল্ডার ফ্লোরাল ড্রেস: রোম্যান্টিক স্টাইলের এই ড্রেসের চাহিদাও কম নয়। এতে ছোট ফ্লোরাল প্রিন্টের প্রতি আগ্রহ বেশি। এই পোশাকের সঙ্গে ফুটওয়্যারে মানানসই ফ্লাট স্যান্ডেল। জুয়েলারি যত হালকা রাখা যায় তত ভালো।
ইয়োক টপ ড্রেস: তরুণীদের জন্য মানানসই। সাধারণত এর এমবেলিশমেন্টে লেইসের ব্যবহার হয়। সহজ এই পরিধেয়র সঙ্গে থাকতে পারে হালকা শাল।
মিডি স্কার্ট
ওয়েস্টার্ন ফ্যাশনে ড্রেসের মতো স্কার্টও মেয়েদের ফ্যাশনের অপরিহার্য অংশ। এটি বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গেই ভালো মানায়। গ্রাফিক টি-শার্ট ও বাইকার জ্যাকেটের যেমন সঙ্গী করা যায়, তেমনি জোট বাঁধা যায় কেমিসোল টপ আর পাম্প শুর সঙ্গে।
বটম
রোমান্টিক স্টাইলের টপের সঙ্গে বটমে সাধারণত যুক্ত থাকে- পেপার-ওয়েস্ট স্কার্ট, টুল স্কার্ট, হোয়াইট স্কার্ট, ফ্লোর লেন্থ ম্যক্সি স্কার্ট এবং প্যাস্টেল শর্টস, প্যান্ট ও স্কার্ট।
কালার
অনেকেই বলে থাকেন, রঙ যত হালকা হবে, রোমান্টিক স্টাইল তত অনুভব করা যাবে। এই স্টাইলে ডিজাইনাররা বেছে নেন প্যাস্টেল ও উষ্ণ রঙগুলো। গোলাপি, কমলা, নীল, সবুজ, হলুদের বিভিন্ন শেড এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। নিউট্রাল কালার প্যালেটও রোম্যান্টিক ফ্যাশনে জুতসই। বিশেষত র্যাফেলড ড্রেস বা লেইসি ব্লাউজে। আধা ভিক্টোরিয়ান স্টাইল ফুটিয়ে তুলতে ড্রেসের কম্বিনেশন হতে পারে অল হোয়াইট। প্রিন্টের বেলায় বিভিন্ন ধরনের ফ্লোরাল প্রিন্টেড ফ্যাব্রিক ব্যবহৃত হয় রোম্যান্টিক স্টাইলে। সে ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় ছোট ফুলের প্রিন্ট।
অ্যাকসেসরিজ
হালকা স্কার্ফ: রোম্যান্টিক স্টাইলে নিজেকে আরও মোহনীয় করতে হালকা স্কার্ফ হতে পারে জুতসই। এটি কাঁধে বা মাথায় জড়িয়ে রাখা যায়। চুল বেঁধে রাখা বা পনিটেইল করতে স্কার্ফ জুড়ে দেওয়া যেতে পারে।
প্যাডেড হেডব্যান্ড: নিজেকে আকর্ষণীয় ও ফেমিনিন লুকে আনতে এই স্টাইলে অ্যাকসেসরিজের তালিকায় রাখা যেতে পারে প্যাডেড হেডব্যান্ড। যেকোনো রোমান্টিক লুকেই এটি জুড়ে দেওয়া যায়।
মডেল: আনিকা
ছবি: ফারাবী তমাল
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: তায়সা এবং ভায়োলা