ফিচার I গুয়া শা’র গুণে
অ্যাট হোম সেলফ কেয়ারের ট্রেন্ডিং টেকনিক অ্যান্ড টুল। ফেশিয়াল ম্যাসাজের জন্য জাদুকরি
বহু যুগ আগের ক্ল্যাসিক্যাল চায়নিজ মেডিসিনে প্রথম খোঁজ মেলে গুয়া শা’র। তখন থেকেই এটি প্রচলিত নিরাময় প্রক্রিয়া হিসেবে। চায়নিজ ভাষায় গুয়া শব্দের অর্থ চেঁছে নেওয়া আর শা বলতে বোঝায় লালচে হয়ে ওঠা। গুয়া শা’র প্রক্রিয়াটাও ঠিক তেমনই। মূলত একটি মসৃণ পাতলা ত্বকবান্ধব পাথরের পাত দিয়ে ত্বক চেঁছে নেওয়া হয়। এতে ত্বক লালচে হয়, সেরে যায় নানান সমস্যা। গুয়া শা’র মূল ধারণা এটাই। প্রাচীনকালে পুরো শরীরের জন্য তা ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন গুয়া শা বেশি ব্যবহৃত হয় মুখ আর গলার ত্বকের জন্য। ফেশিয়াল থেরাপি হিসেবে স্কিন স্ক্র্যাপিং, স্পুনিং অথবা কয়েনিংয়ে বিউটি টেকনিক নানান নামে পরিচিত। এর গুণাবলিও অগণিত-
ত্বকের রক্তসঞ্চালনকে উদ্দীপ্ত করে
কোলাজেন উৎপাদনের হার ত্বরান্বিত করে
ত্বকের সূক্ষ্মরেখা আর বলিরেখা হালকা করে দেয়
চোখের ফোলাভাব সারায়
ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায়
চোখের চারপাশের কালো ভাব সারায়
সাময়িকভাবে ত্বককে টান টান করে তোলে
উজ্জ্বলতা বাড়ায়
মুখের পেশিগুলোকে সুডৌল করে
মুখত্বকের পেশিগুলোর অবসাদ দূর করে
গুয়া শা’র কৌশল সঠিকভাবে জানা গুরুত্বপূর্ণ। এতে কাক্সিক্ষত ফল মিলবে দ্রুত। প্রথম দেখায় সহজ মনে হয় বটে, কিন্তু সঠিক মুভমেন্ট, অ্যাঙ্গেল আর প্রেশার এই প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে তোলে বহুগুণে। ভুল হলে ত্বকের অভ্যন্তরে ক্ষত হয়ে যেতে পারে। সঠিকভাবে এই প্রক্রিয়ায় পরিচর্যা করতে চাইলে এর প্রধান নিয়মগুলো মেনে চলতেই হবে। গুয়া শা স্টোনকে মুখত্বকের সমান্তরালে রেখে বুলিয়ে নিতে হয়। খুব চাপ দিয়ে নয়, করতে হবে আলতো হাতে। প্রক্রিয়া শুরুর আগে মুখে ও গলায় ত্বকবান্ধব ফেস অয়েল বা সেরাম মেখে নিতে হবে। তারপর একই ধরনের স্ট্রোকে গুয়া শা টুল দিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করতে হয়। স্ট্রোকগুলো ছোট বা বড়- দু ধরনেরই হতে পারে। তবে তা আলতো হাতে ফেদারলাইক স্ট্রোক হওয়া প্রয়োজন। এতে ত্বকের অভ্যন্তরের স্তরে থাকা লিম্ফেটিক ফ্লো আর ড্রেইনেজ সিস্টেম উদ্দীপ্ত হবে। জমে থাকা বাড়তি ফ্লুয়িড নিঃসরণে সহায়তাসহ ত্বককে তারুণ্যোজ্জ্বল করে তুলবে। সারাবে সমস্যা। ত্বকের ডিটক্সিফিকেশনের জন্য অনেকেরই খুব পছন্দ গুয়া শা টেকনিক। ম্যাসাজ শুরু করতে হবে গলা থেকে। আপওয়ার্ড অ্যান্ড আউটওয়ার্ড স্ট্রোকে চোয়াল, চিবুক আর মুখের চারপাশ হয়ে আস্তে আস্তে উঠে যেতে হবে কপাল অব্দি। গালের অংশ এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সুইপ মোশনে নাকের পাশ থেকে বুলিয়ে নিতে হবে গুয়া শা টুল। আড়াআড়িভাবে চোখের নিচে আর আইব্রাওয়ের ওপরও ম্যাসাজ করে নিতে হবে। আপওয়ার্ড স্ট্রোকে কপাল থেকে চুলের ধার পর্যন্ত বোলাতে হয় এটি। ত্বকের প্রতিটি অংশে তিন থেকে পাঁচবার স্ট্রোকিংই যথেষ্ট।
গুয়া শা’র টুলগুলো পুরো প্রক্রিয়ার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। হরেক রকম মিলবে বাজারে। কিন্তু বেছে নিতে হবে ত্বকের প্রয়োজন বুঝে। কী দিয়ে তৈরি হয়েছে সেটা যেমন জরুরি, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ টুলের কার্ভ বা বাঁকগুলো। মুখের যে অংশে ব্যবহার করা হবে, সে জায়গার কার্ভগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া চাই। টুলের চওড়া অংশ দিয়ে মূলত চিকবোন ম্যাসাজ করা হয়। তুলনামূলক ছোট কার্ভগুলো ব্রাও বোন আর চোখের নিচের অংশের জন্য। ভি শেপ কার্ভটি ব্যবহৃত হয় চোয়ালে। তাই বিশেষজ্ঞরা এমন গুয়া শা টুল বেছে নেওয়ার কথা বলেন, যেটাতে একই সঙ্গে অনেকগুলো কার্ভ থাকে। টুলের প্রতিটা কার্ভ মসৃণ হতে হবে, নচেৎ ত্বকে ক্ষত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। হাতে ধরতেও যেন আরামদায়ক হয়। এতে করে ত্বকে বুলিয়ে নেওয়ার কাজটা অনায়াসে সেরে ফেলা যাবে। আর কোন উপাদানে তৈরি গুয়া শা টুল, তা জানা থাকলে পছন্দসইটি বেছে নেওয়াতে সুবিধা হবে।
জেড
প্রাকৃতিকভাবে কুলিং স্টোন হিসেবে পরিচিত এটি। গুয়া শা টুলের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপাদান। এটা ত্বকে এমন ধরনের তাপমাত্রা তৈরি করে, যা দেহত্বকের স্বাভাবিক তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর ব্যালেন্সিং প্রোপার্টি ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখতে দারুণ। ত্বকে কনটুরিং এবং লিফটিং ইফেক্ট চাইলে জেডের তৈরি গুয়া শা টুল কার্যকর অপশন। ত্বক পরিষ্কারক হিসেবেও সহায়ক।
রোজ কোয়ার্টজ
প্রাকৃতিকভাবে প্রশান্তিদায়ক জেমস্টোনে তৈরি গুয়া শা। সৌন্দর্যপণ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বেশি উপযোগী। ব্রণ, অ্যাকনে বা রোজাশিয়ার মতো ত্বকসমস্যায় অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে। তবে ব্যবহারের আগে এ হিলিং স্টোন ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিলে কার্যকারিতা আরও বাড়ে।
গ্রিন অ্যাভেনটারিন
ত্বকের বলিরেখা সারাইয়ের পাশাপাশি নতুন ত্বক কোষ উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে এই জেমস্টোনে তৈরি গুয়া শা। হ্যাপি স্কিন ভাইব সৃষ্টিতে অনবদ্য।
বিয়ান স্টোন
গুয়া শা টুল তৈরির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপাদান। পাওয়া যায় চায়নার সিবিয়ান নামের গ্রামে। এটি সর্বোচ্চ রেটের ইলেকট্রনিক পালস তৈরি করতে সক্ষম। ওজনেও বেশ ভারী। তাই স্ট্রেস রিলিফের জুতসই অপশন।
অ্যামেথিস্ট
এতে তৈরি গুয়া শা ত্বকে কুলিং ইফেক্ট দেয়। চোয়াল আর কপালের দুপাশের ত্বককোষের অবসাদ দূর করে। ত্বকের জ্বালাপোড়া কমিয়ে আরাম দেয়।
ত্বকের ধরন আর সহ্যক্ষমতা বিবেচনায় সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এ বিউটি টেকনিক সেরে নেওয়া যায়। তবে অ্যাকটিভ অ্যাকনে, রোজাশিয়া, একজিমার মতো ত্বকসমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় গুয়া শা ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়াও জরুরি।
জাহেরা শিরীন
মডেল: মোহিনী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন